somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আরিফ রুবেল
জীবন বৈচিত্রময়। জীবনের বিচিত্র সব গল্প বলতে পারাটা একটা গুন আর সবার সেই গুনটা থাকে না। গল্প বলার অদ্ভুত গুনটা অর্জনের জন্য সাধনার দরকার। যদিও সবার জীবন সাধনার অনুমতি দেয় না, তবুও সুযোগ পেলেই কেউ কেউ সাধনায় বসে যায়। আমিও সেই সব সাধকদের একজন হতে চাই।

হালদা - নদী এবং জীবনের গল্প [দর্শক প্রতিক্রিয়া]

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সম্ভবত এ বছরের সেরা চলচ্চিত্রটি আজ দেখে ফেললাম। ঢাকা অ্যাটাকের দুর্দান্ত সাফল্য কিংবা ডুব বিতর্ককে পাশ কাটিয়ে নির্মাণ শৈলী, গল্পের ঠাসবুনন এবং হৃদয় স্পর্শ করা অভিনয় সব মিলিয়ে আমার দেখা এ বছরের সেরা সিনেমা 'হালদা'। মূলত হালদাপাড়ের জেলে সম্প্রদায়ের সংকট এবং হালদার ক্রমাগত দূষন হালদা চলচ্চিত্রের উপজীব্য হলেও সব কিছু ছাপিয়ে এটি প্রেমের গল্প, জীবনের গল্প।

গল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দর্শককে আটকে রাখার যে দক্ষতা পরিচালক তৌকির আহমেদ দেখিয়েছেন তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবীদার। ওনার নির্মিত 'অজ্ঞাতনামা' ব্যবসাসফল না হলেও পরবর্তিতে টেলিভিশন প্রিমিয়ার এবং ইউটিউব রিলিজের পর ব্যপক দর্শকপ্রিয়তা পায়। বিশেষ করে ফজলুর রহমান বাবুর অন্যবদ্য অভিনয় একই সাথে দর্শককে হাসিয়েছে, কাঁদিয়েছে। এমন চমৎকার একটা চলচ্চিত্র স্রেফ প্রচারের অভাবে ব্যবসায়ীকভাবে মার খেয়ে যাওয়াটা আমাদের চলচ্চিত্রের জন্য সত্যিই দুঃখজনক ছিল। বিশেষ করে বাংলা চলচ্চিত্রে বিনিয়োগ ক'দিন আগ পর্যন্তও লস প্রযেক্ট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিল। যাই হোক সেই ক্ষত কাটিয়ে তিনি আবার আমাদের আরেকটি চমৎকার চলচ্চিত্র উপহার দিয়েছেন এজন্য তাকে অনেক ধন্যবাদ।

ট্রেলার:



মূল আলোচনায় আসা যাক। কেমন লেগেছে হালদা ? কেমন হয়েছে হালদা ? এক কথায় বললে অসাধারণ। সিনেমার কোন চরিত্রই বাহুল্য মনে হয়নি কিংবা কোন সিন মনে হয়নি না হলেও চলত। একইভাবে অভাববোধটাও ছিল না। হয়ত ছিল, কিন্তু গল্পে এতটাই মজে ছিলাম যে আসলেই খুটিনাটি অত দেখার সুযোগ মস্তিষ্ক আমাকে দেয়নি। মোদ্দা কথা কন্টিনিউটি ছিল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। সেই অর্থে হালদা একটি বিনোদনমূলক চলচ্চিত্রও বটে। তবে সেই বিনোদন হালকা বা চটুল বিনোদন নয়। হালদায় আপনি জোর করে হাসানোর কোন চেষ্টা দেখবেন না, কিন্তু হাসির দৃশ্য এখানে আছে, আছে একশন দৃশ্যও। তবে সব কিছু ছাপিয়ে যেটা আছে সেটা হল প্রেম। মনপুরার পর এমন একটি প্রেমের গল্প দর্শকদের মনে থাকা অনেক দিনের শূন্যস্থান পূরণ করবে বলে আমার বিশ্বাস।



প্রেমের পাশাপাশি আরেকটি গল্পও এখানে পাশাপাশি সমান্তরালে চলতে থাকে। যেটা আপনার কখনই অসামঞ্জস্যপূর্ন মনে হবে না। বরং একটা আরেকটার পরিপূরক। যেমন পানি ছাড়া সরবত হয় না, তেমনি হালদায় প্রেমের গল্প দেখানো হচ্ছে সেখানে হালদাকে নিয়ে গল্পটা না বললে প্রেমটাও থাকে না। সেই অর্থে চলচ্চিত্রের নামকরণ শতভাগ সার্থক। যে প্রেমের শুরু হত না হালদা না থাকলে, সেই প্রেমটা শেষও কিন্তু হয় হালদায়। তবে মনে প্রশ্ন থেকে যায় এই যে প্রেমের শেষ বললাম প্রেম কি আদৌ সেখানে শেষ হয়। আমার মনে হয় এই প্রশ্নটা হালদা দেখে বের হওয়া সব দর্শকের মাথাতেই ছিল। শেষ দৃশ্য দেখে আমরা এতটাই হতবিহ্ববল ছিলাম যে করতালি দিতে কিছুটা দেরী হয়ে গিয়েছিল।


গম গম লার

আপাদমস্তক চাটগার ভাষায় দৃশ্যায়িত হওয়া এই সিনেমা বুঝে ওঠাটা প্রথম প্রথম একটু কঠিনই মনে হচ্ছিল। তবে সাবটাইটেল অনেকখানি সহায়তা করেছে, যদিও কিছু বানান ভুল ছিল। আর সাবটাইটেলে মুভি দেখার একটা সমস্যা হচ্ছে ঠিকঠাক উপভোগ করা যায় না। যাই হোক ভাষাগত এই দূরত্ব (আমি বৃহত্তর বরিশালের, বড় হয়েছি ঢাকায়) প্রায় পুরোটাই লাঘব হয়েছে অভিনেতাদের প্রানবন্ত অভিনয়। সিনেমাটোগ্রাফির কথা নাই বললেই নয়। আমি বোদ্ধা সমালোচক নই। সামান্য দর্শক মাত্র। আমার কাছে সিনেমাটোগ্রাফি মানে চোখের মুগ্ধতা। এই মুগ্ধতা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অটুট ছিল। বিশেষ করে আলোছায়ার খেলা, বৃষ্টি, গানের দৃশ্যায়ন, কস্টিউম সব মিলিয়ে চমৎকার এক মনোমুগ্ধকর সিনেমা। পাশাপাশি আবহ সংগীতও ছিল ভালো লাগার মত।


প্রেমের আগুন

অভিনয়ের কথা একটু বিস্তারিত প্রয়োজন। হালদার মূল চরিত্র অভিনয় করেছে তিশা, মোশাররফ করিম এবং জাহিদ হাসান। এছারো গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে আছেন ফজলুর রহমান বাবু, দিলারা জামান, রুনা খান প্রমুখ। চরিত্র বিচারে এদের কেউই কারো থেকে কম নয়। সবার মধ্যে যেন একটা প্রতিযোগীতা ছিল প্রাণবন্ত অভিনয়ের। তবে তিশার অভিনয়ই এখানে সবচেয়ে ভালো লেগেছে। ফজলুর রহমান বাবু বরাবরের মতই দুর্দান্ত। নেগেটিভ রোলে জাহিদ হাসান এবং রুনা খান দু'জনই চমৎকার অভিনয় করেছেন। যদিও জাহিদ হাসানের চাটগার ভাষার কিছুটা অমিল ছিল অন্যান্যদের চাইতে। তবে সেই অমিল সামান্যই এবং চোখে পড়ার মত নয়। জাহিদ হাসানের মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন দিলারা জামান যাকে আমার একই সাথে দ্বৈত চরিত্র মনে হয়েছে। ভালো খারাপের মিশেল।

এবার আসা যাক, ভালো লাগার কিছু দৃশ্য এবং গান। পুরো মুভিটাই ভালো লেগেছে তবে মুভির শেষদিকে হাসু এবং বদির একান্তে কাটানো কিছু সময়ের দৃশ্য এবং হালদা নদী ও নদীপাড়ের কিছু দৃশ্য ছিল অসাধারণ। দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল সামনের বছরের ট্যুরিস্ট আকর্ষনের অন্যতম জায়গা হতে যাচ্ছে হালদা। গানগুলোর কথা কি বলব ! যে ইউটিউব ভার্সনগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি সেগুলো এডিটেড ভার্সন। মুভিতে গানগুলো আরো সুন্দর এবং অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক। বিশেষ করে প্রেমের আগুন গানটায় পিন্টু ঘোষ যে দরদ ঢেলেছেন তা শ্রোতাকে টেনে রাখে চুম্বকের মতন। আবার নোনা জল গানটায় যে বেদনার ছোঁয়া পাওয়া যাবে সেটা আপনার অন্তরে দহন জাগাবে।


নোনা জল

পরিশেষে, হালদার যে অন্য গল্প সেটা নিয়ে কিছু বলা যাক। হালদা আমাদের মাছেদের অভয়ারন্য। এখানে মাছ ধরা নিষেধ। অন্য নদী থেকে মাছেরা দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে হালদায় আসে ডিম ছাড়তে। বছরের নির্দিষ্ট সময়ে বিভিন্ন জাতের মাছ এখানে ডিম ছাড়ে। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের লোভ আর অপরিকল্পিত নগরায়ন এই নদীটিকে মেরে ফেলছে। ঠিক যেমন আমাদের অন্য নদীগুলোকেও আমরা মেরে ফেলছি। কিন্তু এর ফল কি ? গুটিকয় মানুষের লোভের বলি হয়ে মাছের এই অভয়ারন্য ধ্বংস করে যার লাভ করার সে তো তার আখের গুছিয়ে ফেলছে কিন্তু সাধারণ মানুষ, জেলে ? তাদের ভবিষ্যত কি ? এই প্রশ্নগুলোই নির্মাতা করেছেন বিভিন্নভাবে। আমাদের ভাবা উচিত। নিজেদের ক্ষতি কি এভাবে অব্যাহত থাকবে নাকি আমরা রুখে দাড়াবো? রুখে দাড়াবো সমাজপতিদের অন্যায় দাপট?

হলে গিয়ে দেখে আসুন। নইলে পরে আফসোস করবেন।


সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১৫
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×