বিকৃত নাস্তিকতার প্রসারগুলো নিয়ে যদি আলোকপাত করা হয়, তাইলে আমার মনে হয় কম বেশী সবাই একমত হবেন যে, এর একটা র্যাপিড এক্সপানশন হইছে মূলত ব্লগ বা ফেসবুকের মত মিডিয়াগুলোর মধ্য দিয়ে।বর্তমানে সবচেয়ে বেশী এসেনশিয়াল থিম আপনার জন্য কোনটা? নাস্তিকতার উৎপত্তি? নাকি বিকৃত নাস্তিকতার ফলাফল? আমার মনে হয়, কনসিকুয়েন্স ধরে আগাইলে, বিকৃত নাস্তিকতার নেগেটিভ দিকগুলা আপনারা যতটা আতংকের সাথে নিবেন,তারচেয়ে নাস্তিকতার উতপত্তি ঘটে কীভাবে, এই দিকটারে অনেকেই কম গুরুত্বের সাথে দেখবেন। কারন, আপনার সমস্যা বিকৃত নাস্তিকতার বক্তব্যের সাথে !জেনারালাইসড নাস্তিক আপনেরে কোন ক্ষতি করে না!
কিন্তু টুইস্ট টা এইখানে ফোকাস করা প্রয়োজন। বিকৃত নাস্তিকতা কোথা থেকে আসবে , যদি না তার আগে নাস্তিকতা ব্যাপারটা কোন হিউম্যান মাইন্ডসেটে প্রভাব না ফেলে?
আই মিন, নাস্তিকতা আগে আসবে, তার পরে সেটা অন্যধর্মের অসারতা নিয়া চিন্তা করে এগ্রেসিভ এটাকের দিকে যাবে !
সম্ভবত বুঝাইতে পারলাম, বিকৃত নাস্তিকতার পূর্ব শর্ত,তাকে আগে অবশ্যই নাস্তিক হইতে হবে !
এখন প্রশ্ন হইতেছে,বাংলাদেশ কন্টেক্সটে নাস্তিকতার ব্যাপ্তিটা ক্যামোন? বা কিভাবে?
এর উত্তর পাইতে খুব বেশী বুদ্ধির দরকার নাই। খুব জেনারেলী চিন্তা করেন।যেই মুসলিম বা হিন্দু ছেলেটা ধর্মীয় দিক গুলা সম্পর্কে খুবই লাইট ধারনা রাখে, তারে যদি আপনে মুক্তমনা বা নাস্তিকতা রিলেটেড কোন একটা লিখা, বা কোন একটা সাইটের সাথে পরিচয় করায় দেন, এবং একটা রেগুলার টাইম বেসিসে সে ওই টপিক্সে লিখাপড়া শুরু করে, তাইলে গ্রাজুয়ালী সে তার নিজের ধর্ম সম্পর্কে একটা নেগেটিভ ধারনা পাইতে থাকবে।এবং সে ইমিডিয়েট নাস্তিক হবে না, বরং ফার্ষ্ট সাইটে , তার ধর্মের লজিক গুলা অসার হইতে শুরু করবে, সে হিন্দু বা মুসলিম যা-ই হোক।দেন,একটা টাইম পর, সে সৃষ্টিতত্তত্বের ধারনা নিয়া তার মনে একটা বিরুপ ধারনা তৈরী হবে।
যদি স্পেসিফিক একটা মুসলিম ছেলের নাস্তিক হওয়া চিন্তা করেন, তাইলে ফার্ষ্ট প্রবলেম যেইটা পাবেন , সেইটা হইলো তার ধর্মীয় জ্ঞান একেবারেই অল্প। ঈমান, ফারযিয়াত, সৃষ্টিকর্তার সাথে সম্পর্কের ব্যাপারগুলায় সে ছোটবেলা থেকেই দূরত্ব রেখে চলসে, এবং বয়সের একটা পর্যায় পার হবার পরে সে যখন এই সাইট গুলায় নিয়মিত যাওয়া শুরু করছে, ঠিক তখন থেকেই, ধর্ম সম্পর্কে তার জ্ঞান নন-প্রাকটিস কন্ডিশন থেকে, নেগেটিভ পারছেপশানের দিকে যাওয়া শুরু করছে।
মুসলিম ধর্মের পোলাপানগ্যুলার এই ডাইভার্সিফিকেশনের পেছনে আরেকটা কারন পাইলাম,সেইটা মাথায় আসছে এক হিন্দু ভাইয়ের যুক্তি থেকে।সে খুব স্পষ্ট ভাবেই বলছে, নাস্তিকরা ইসলাম কে যে পয়েন্ট গুলা ধরে আক্রমন করে, তার অন্যতম হাতিয়ার হইতেছে, প্রচলিত কতগুলা জাল হাদিস। এই হাদিস গুলা,ইলমের গভীরতা কম হওয়ার দরূন অনেক প্রাকটিসিং মুসলিমরেও কনভার্ট হইতে সাহায্য করে।
একটা জাল হাদীস দিচ্ছি ঃ
হুজুর (সাঃ) এরশাদ করেছেন, একদা জিব্রাঈল (আঃ) খাবার ভর্তি একটি ডেগ আমার কাছে নিয়ে এলেন । আমি তা থেকে কিছু খাবার গ্রহণ করলাম । তাতে আমার ভিতর চল্লিশজন পুরুষের পুরুষত্ব শক্তি এসে গেলো । (সূত্রঃ মাদরিজ উন নবূয়ত । শায়েখ আব্দুল হক মোহাদ্দেছে দেহলভী (রহঃ) । প্রথম খন্ড)
আরেকটা দিচ্ছি (এটা জাল নয়, তবে এর মূলবক্তব্যকেও উদ্দেশ্যমূলক ভাবে বিকৃত করা হয় ) ঃ
কাতাদা (রা.) হতে বর্ণিত:
আনাস বিন মালিক (রা.) বলেন, “নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] দিনে এবং রাতে চক্রাকারে তাঁর সকল স্ত্রীদের সাথে সহবাস করতেন এবং তাঁরা সংখ্যায় এগারো জন ছিলেন।”
আমি আনাসকে জিজ্ঞেস করলাম, “নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর কি এই পরিমাণ শক্তি ছিল? আনাস (রা.) উত্তর দিলেন, “ আমরা বলতাম যে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ত্রিশ জনের শক্তি দান করা হয়েছে।” আর সাঈদ কাতাদা (রা.) হতে বর্ণনা করেছেন যে, আনাস (রা.) তাঁকে শুধু নয়জন স্ত্রীর কথা বলেছেন। [সূত্র: সহিহ বুখারি, আরবী: ২৬৮, ইংরেজি: ১।৫।২৬৮, সুন্নাহ.কম: ৫।২১]
এই রেফারেন্স দিয়া নাস্তিকেরা যেটা বলেঃ
(" আরে ব্যাটা তোগো নবী তো একটা কামুক ।উপরের হাদিসটা তো এটাই প্রমান করতেছে ।এই জন্যই তো তোগোরে নবী ১১ টা বউ আর অসংখ্য দাসীবাদী রাখছিল । তোগো নবী একটা মাগীবাজ লম্পট ছাড়া আর কিছুই নয়, যে কিনা প্রতিরাতে ৯ জনার সাথে সহবাস করে ! হা হা হা ..................।তোদের ধর্মজীবিদের এইটা হলো, তিরিশ পুরুষের সমান যৌনক্ষমতাধারী ইছলামী শিশ্ন বনাম শিবলিঙ্গের লড়াই!! ।হা হা হা........................। তোরা ব্যাটা এসব মাগীবাজের খপ্পড়ে পড়ে ধর্ম নামের কুসংস্কার বিশ্বাস করিস, আমরা নাস্তিকেরা এসব কুসংস্কারও বিশ্বাস করি না, কোন মাগীবাজ ধর্মজীবির কথাও বিশ্বাস করি না...........................এই সব ধর্ম-টর্ম বাদ দিয়ে তোরাও নাস্তিক হয়ে যা ।)
লাইনগুলার জন্যে দুঃখিত।
তবে হাদীস গুলোর বিপরীতে যুক্তি টা এখন জানেনঃ
...আমরা সকলেই জানি নবীজি প্রথম বিয়ে করেন ২৫ বছর বয়সে, অতঃপর ৫৪ বছর বয়সে তিনি ২য় বিয়ে করেন।
যেখানে মাত্র ১ জন বাদে বাকি সবাই ছিল বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা অসহায় রমনী । ৫৪ থেকে ৬৩ বছর বয়সের মধ্যে নবীজি এসব বিধবা এবং তালাকপ্রাপ্তা অসহায় নারীদের বিয়ে করেছিলেন, মূলতঃ এসব অসহায় মেয়েদের মাথা গোজার ঠাই হয়, এজন্যে । কাম লালসার লোভে নয় । কেননা, ঐ তথাকথিত হাদিসটির ভাষ্য অনুযায়ী, নবীজি যদি এতোই কামুক হতেন, উনার কাম লালসা মেটানোর প্রয়োজন যদি এতোই হতো (!), উনার সেক্স পাওয়ার যদি এতোই হতো, তাহলে তো উনি ১৮ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যেই উনি ২০-৩০ টা বিয়ে করে ফেলতেন ।কেননা মানুষের যৌবনকাল তো আসলে ১৮ থেকে ৫২ বছরের মধ্যেই । অথচ উনার পূর্ণ যৌবন কালে উনি বিয়ে করেছিলেন মাত্র ১ টি ।
১৮ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে তাঁর এই পূ্র্ণ যৌবনকালে, কই তথন তো উনার একাধিক মেয়ের প্রয়োজন হলো না ?? এ থেকে বোঝা যায় নবী মোহাম্মাদ (সাঃ) কামুক ছিলেন না ।
অথচ উপরের হাদিসটি নবীকে একজন কামুক পুরুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে, যেটা নবীজির জীবনচারণের সাথে মোটেই খাপ খায় নাু । বরং এই হাদিসটিকে স্পষ্টতই নবী ও
তার পরিবার সম্বন্ধে অশ্লীল ও আপত্তিকর হাদিছ হিসেবেই এই হাদিসকে চিত্রায়িত করা যায় ।একারনেই এই হাদিসটি জাল এবং যুক্তিবোধহীন ।দ্বিতীয়ত প্রশ্ন হচ্ছে:
আনাস বিন মালিক (রা.) এই কথা কার কাছ থেকে শুনেছেন, স্বয়ং নবীজির কাছে থেকে, নাকি তাঁর কোন স্ত্রীর নিকট হতে? এই হাদিসে এ-সম্পর্কে কোন বক্তব্য নাই। অথচ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর স্ত্রীগণ ব্যতিত অন্য কারো পক্ষে বলা সম্ভব নয় যে, তাঁরা স্বামী-স্ত্রী সহবাস করেছিলেন কিনা (?)।
দ্বিতীয়তঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর প্রত্যেক স্ত্রীর জন্য পর্যায়ক্রমে একদিন/একরাত নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন। এটা সুবিদিত এবং নবীজির একেবারে ঘরের মানুষ আয়শা (রা.) নিকট থেকে বর্ণিত এ সংক্রান্ত হাদিসের কোন অভাব নেই, উদাহরণ হিসেবে নিচের হাদিসগুলো পেশ করা হলো:
যখনই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন সফরে যেতে চাইতেন, তিনি লটারি করতেন যে কোন স্ত্রী তার সঙ্গী হবে। যার নাম আসতো তিনি তাকেই নিতেন। তিনি তাদের প্রত্যেকের জন্য একদিন এবং একরাত নির্দিষ্ট করে দিতেন। কিন্তু সাওদা বিনতে জামআ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর স্ত্রী আয়শা(রা.)-কে তার (ভাগের) দিন এবং রাত দান করেছিলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে খুশি করার জন্য। [সূত্র: সহিহ বুখারি, আরবী: ২৫৯৩, ইংরেজি অনুবাদ: ৩।৪৭।৭৬৬, সুন্নাহ.কম: ৫১।২৭]
দিন-রাত বণ্টনের এই বিষয়টিকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এতটাই গুরুত্ব দিতেন যে অসুস্থ মৃত্যুপথযাত্রী অবস্থায়ও স্ত্রীদের অনুমতি ব্যতিত তিনি এর অন্যথা করেন নাই:
আয়শা (রা.) বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অসুস্থতার সময় তাঁর স্ত্রীদেরকে ডাকালেন। তাঁরা একত্রিত হলে তিনি বললেন: ‘আমি তোমাদের সকলের সাথে সাক্ষাত করতে অক্ষম। তোমরা যদি আমাকে আয়শার সাথে অবস্থান করার অনুমতি দিতে মনস্থ করো, তবে দিতে পারো।’ কাজেই তাঁরা তাকে অনুমতি দিলেন। [সূত্র: সুনান আবু দাউদ, আরবী: ১২।২১৩৭, ইংরেজি অনুবাদ: ১১।২১৩২, সুন্নাহ.কম: ১২।৯২]
কাজেই এক স্ত্রীর জন্য বরাদ্দকৃত সময়ে তিনি অন্য স্ত্রীদের সাথে সহবাস করবেন, এটা কিছুতেই বিশ্বাসযোগ্য নয়।
তবে কি- যে দিন এক স্ত্রীর পালা আসতো, সেদিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অন্য কোন স্ত্রীর সাথে সাক্ষাতও করতেন না? অবশ্যই করতেন, নিশ্চয়ই করতেন এবং প্রত্যেকের সাথেই সাক্ষাত করতেন। কিন্তু অন্য কোন স্ত্রীর সাথে ঐ দিনে/রাতে সহবাস করতেন না। না এটা আমার গলাবাজি নয়, আমার ব্যক্তিগত কোন ধারণাও নয়, বরং নবীজির একেবারে ঘরের মানুষের মুখের কথা। শুনুন তাহলে-
আয়শা (রা.) বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)আমাদের সাথে তার অবস্থানের সময়কে ভাগ করার ব্যাপারে আমাদের কোন একজনকে অন্য জনের ওপর প্রাধান্য দিতেন না। এটা খুব কমই হতো যে কোনদিন তিনি আমাদের সাক্ষাত দেন নাই। তিনি সহবাস ব্যতিরেকে প্রত্যেক স্ত্রীর কাছে আসতেন যতক্ষণ না যার দিন ছিল তার কাছে পৌঁছতেন এবং তার সাথে রাত কাটাতেন। [সূত্র: সুনান আবু দাউদ (হাদিসের প্রাসঙ্গিক অংশ), আরবী: ১২।২১৩৫, ইংরেজি অনুবাদ: ১১।২১৩০, সুন্নাহ.কম: ১২।৯০]
নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এঁর একেবারে ঘরের মানুষ আয়শা (রা.) এঁর এই বক্তব্যের পর, অন্য কারো বক্তব্য বা ধারণার আর কোন সুযোগ অবশিষ্ট থাকে না। কাজেই এক রাতে নয় জনের সাথে সহবাস করার গল্পটাও একেবারেই ভিত্তিহীন।
এখন আপনি-ই বলেন, যেই ছেলের এই যুক্তি সম্পর্কে কোন আইডিয়া নাই , সে কীভাবে নিবে ঐ দুইটা হাদীসকে?
উত্তরটা খুব সোজা, জ্ঞান না থাকার দরুন তার ডাইভার্ট হওয়াটাই স্বাভাবিক!
সুতরাং এই ব্যাপারগুলা খুব গুরুত্বের সাথে এখনি ভাবা প্রয়োজন।
আপনি নাস্তিকেরে গালি দেয়ার পূর্বে, নাস্তিকতার সম্ভাব্য পথ গুলা নিয়া চিন্তা করেন।ফুটা টা বন্ধ হইলে পানি লস হবে না এইটাই এই ষ্টেটাসের ম্যাসেজ।
অনেক কষ্ট করে যারা পড়লেন, তাদের ধৈর্যশীলতাকে সাধুবাদ।আশাকরি কিছুটা হলেও চিন্তার খোরাক পেয়েছেন।
আল্লাহ, পরবর্তী ষ্টেইপ গুলো কেয়ার করার জন্যে আপনাকে আমাকে যোগ্য করে তুলুন।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:৪৯