somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

☻প্রবাদ/প্রবচনে নারী: সেকাল-একাল☻

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রবাদ/প্রবচন ব্যবহারে অনেকেই বেশ পটু হয়ে থাকেন। আর আগের দিনের মানুষদের কাছে প্রবাদ বিশেষ মেনে চলা নীতির মতো ছিলো।

আগের দিনে নারীকে দেখা হতো হেরেমবাসিনী হিসেবে, শুধুই যুক্তিহীন আবেগ প্রবণ, দূবোর্ধ্য, স্পর্শকাতর হিসেবে। অকল্যাণ যা কিছু হয় সব নারীর দোষে।

আমাদের প্রথাগত সমাজে নারী চরিত্র কেমন তা কয়েকটি প্রবাদের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

☻ভাই বড় ধন
রক্তের বাধন
যদিও বা পৃথক হয়
তবে, নারীর কারণ
☺ভাই যে কারো বেশ আদরের ধন তা বলাই বাহুল্য কিন্তু ধরেই নেয়া হয় যে বিয়ের পর (স্বাভাবিক সামাজিকতা) ভাই ততোক্ষণই কাছে থাকবে যতোক্ষণ কোন নারী তার উপর কোন নঞর্থক প্রভাব বিস্তার করবে না। কিন্তু সাধারণত এমন ভাবা হয় না যে পৃথক ভাইও কোন কারেণ হতে পারে নারী দ্বারা প্রভাবিত না হয়েই।

☻নদীতে নদীতে দেখা হয়
কিন্তু বোনে বোনে
দেখা হয় না।
☺সাধারণত নারীদের বিয়ের পর তাদের স্থান হয় স্বামীর ঘরে সেখানে তারা স্বামীর হুকুমের বাইরে কিছু করার ক্ষমতা রাখে না (যদিও বর্তমানে এই অবস্থার উন্নতি হচ্ছে)। আর এর ফলে বোনে বোনে চাইলেও দেখা হয় না। যেটা সাধারণত পুরুষদের বেলায় ঘটে না।

☻জাতের নারী কালো ভালো
নদীর জল ঘোলা ভালো।
☺সাধারণত আগে (বর্তমানেও অনেক ক্ষেত্রেই) পাত্র পক্ষ নারীর জাত দেখে মুলত বিয়ের সম্বন্ধ আনতো। এক্ষেত্রে নারী কতোটা শিক্ষিত বা কতোটা গুণী তার চেয়ে বেশি তার জাত ভালো কিনা তা দেখা হতো। এক্ষেত্রে হিন্দুদের মধ্যে শুদ্র শ্রেণীরা বেশি অবহেলিত ছিল। বর্তমানে যার উত্তরণ হচ্ছে।

☻পুরুষ রাগলে হয় বাদশা
নারী রাগলে হয় বেশ্যা।
☺পুরুষরা যদি রেগে ঘর ছাড়ে তবে সে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু নারী যেহেতু হেরেমবাসিনী তাই সে রাগ করে ঘর ছাড়লে তার শরীর বিক্রী করে জীবন চালানো ছাড়া আর কোন গতি থাকে না। কিন্তু বর্তমান সময়ে নারী শিক্ষিত হচ্ছে, অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে। কাজেই এক সময়ের এই প্রচলিত প্রবাদটি এখন আর গ্রহণ যোগ্য হতে পারে না।

☻উচঁ কপালী চিঁড়ল দাঁতী
লম্বা মাথার কেশ
এমন নারী করলে বিয়ে
ঘুরবে নানান দেশ।
☺এখানে নারীর বাহ্যিক রুপকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে বিয়ের ক্ষেত্রে। অথচ গুণ থাকলে যে, বাহ্যিক রুপ কোন ব্যাপার না তা বর্তমান সময় গুলোতে অনেকটাই প্রমাণিত।

☻রান্ধিয়া বারিয়া যেই বা নারী
পতির আগে খায়
সেই নারীর বাড়িতে শীঘগীর
অলক্ষী হামায়।
☺রান্না করার পর ততক্ষণ পর্যন্ত একজন স্ত্রী খেতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তার স্বামী খাবে। বর্তমাণ সময়ের অনেক শ্বাশুরীদের মাঝেও এই প্রবণতা দেখা যায় যে, আগে তার পুত্র খাবে তারপর তার পুত্রবধু খাবে। এতে সাধারণতই নারীরা গ্যাস্ট্রিক সহ নানারকমের শারীরিক সমস্যায় ভুগে থাকে। এখন নারী/পুরুষ উভয় কেএষত্রই সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে এই অবস্থা অনেকাংশেই হ্রাস পাচ্ছে।

☻পতি বিনে
গতি নেই
☺এই প্রবচনটিতে প্রকাশ পায় যে, পতি ছাড়া নারী চলতে পারে না। লৈঙ্গিক শ্রমবিভাজন আর জেন্ডার অসম সম্পর্কের মধ্যে নারীকে স্বামীর মুখাপেক্ষী থাকতে হয়। এই অবস্থা সত্যিকার অর্থে এখনও অনেকাংশেই সত্যি। তারপরও নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের ফলে এই অবস্থার কিছুটা উন্নতি হচ্ছে।

☻পতির পায়ে থাকে মতি
তবে তারে বলে সতী
☺বিয়ের আগে নারীর সতীত্বের ধারণা নির্ভরশীল তার শরীরকে বাচিয়েঁ চলার উপর আর বিয়ের পর নারীর সতীত্ব রক্ষার ধরণ পাল্টে তা হয়ে যায় স্বামী নির্ভর। এখানে স্বামী অর্থাৎ পুরুষদের সতীত্বের বিষয়ে কখনোই কিছু শোনা যায় না সাধারণত।

☻পতি হারা নারী
মাঝি হারা তরী
☺নারী যে নিজের মতো করে জীবন যাপন করার ক্ষমতা নেই, এই ধারণাটাকে প্রতিষ্ঠিত করতেই এই প্রবচনটির সৃষ্টি হয়েছে বলে ধরে নেয়া হয়। এখানে নারীকে তরী আর পতিকে মাঝির সাথে তুলনা করা হয়েছে। নারীর শিক্ষা বিস্তার, অর্থনৈতিক সামর্থ্যই পারে একমাত্র এসকল ধারণা থেকে তাকে বের করে আনতে।

☻পথি নারী বিবর্জিতা
☺খুবই দুঃখজনক বিষয় হলো এই প্রবচন দ্বারা চলার পথেও নিজের আপন নারী কুলকেও বিবর্জিত করে চলার ধারণঅকে প্রতিষ্ঠিত করে। যেই নারী আলোর মুখই দেখেনি সে ঠিকমতো পথ চলতে পারবে না এটাই স্বাভাবিক বিষয়। হেরেমবাসিনী বন্দিনীর পক্ষেতো পথ চলার অভ্যাস/অভিজ্ঞতা কোনটাই থাকার কথা নয়। বর্তমাণ সময়েও অনেক নারীরাই আধুনিক, শিক্ষিত হওয়ার পরও পুরুষের উপর নির্ভর করে পথ চলতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এই অব্যবস্থা থেকে নারীকে যেমন বেরিয়ে আসতে হবে, পুরুষদেরও সচেতন হবে নারীকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে।

☻পদ্মমুখি ঝি আমার পরের বাড়ি যায়
খেদা নাকি বউ এসে বাটার পান খায়
☺এখানে যদিও পরিষ্কার করে লৈঙ্গিক বিষয়টা উঠে আসে নি...এটা কোন পুরুষ বা নারীর মুখ থেকে আসা তারপরও সমাজের বউ-শ্বাশুড়ীর টানাপোড়েনের মুখরোচক বিষয়ই এর মূখ্য। নিজের মেয়ে যেমনই হোক তার দোষ যেমন মায়েদের চোখে পড়ে না, ঠিক তেমনই পরের মেয়ে যখন পুত্র বধু হিসেবে আসে তখন তার দোষগুলো খুব সহজেই শ্বাশুরীদের চোখে পড়ে। আর শ্বাশুরীদের এই মনোভাব বোঝাতেই সম্ভবত এই প্রবচনটির প্রচলন। এর থেকে আসলে বেরিয়ে আসা এখনও সম্ভব হয়ে উঠেনি। আজকে যেই নারী পুত্রবধু আগামীতে সেই শ্বাশুরী হয়ে একই ভুমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে। এর থেকে সমাধানের পথ খুঁজতে সচেতনতার, মানবিকতার বিকল্প নেই।

ধন্যবাদ।।

উৎস:

প্রবাদ/প্রবচন: মুরুব্বীদের কাছ থেকে এবং সেলিনা হোসনে ও মাসুদুজ্জামান সম্পাদিত জেন্ডার বিশ্বকোষ, ২য় খন্ড প্রথম প্রকাশ, ফেব্রুয়ারী ২০০৬

প্রথম প্রকাশ : ১৩ ই জুন, ২০১৩ রাত ১১:২৬

সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:১৬
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ছবি এআই জেনারেটেড।

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকারের বিয়াইন

লিখেছেন প্রামানিক, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?

কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।

রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।

রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন

দাসত্বের শিকল ভাঙার স্বপ্ন দেখা এক ক্রান্তদর্শী ধূমকেতু ওসমান হাদী।

লিখেছেন মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল), ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪২

বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে যে ধরণের রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তাহলো বিদেশী প্রভুরদের দাসত্ব বরণ করে রাজনৈতিক দলগুলোর রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দেশের মানুষের উপর প্রভুত্ব করা , আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×