somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দা পেইন্ট !

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

( লেখাটা পূর্বে সামুতে পোস্ট করেছিলাম । কিছুদিন পর দেখি আরও কিছু লেখার সাথে এটাও গায়েব ! ক্যামনে কি ! পুনরায় পোষ্টানোর জন্য দুঃখিত । )


এক ।।

অলিয়াজ ফ্রসেজ , বিকেল তিনটা ।
' পেইন্ট টা অসাধারন তাইনা ?'
পেছন ফিরে তাকালাম । শরীর ঘেঁষে অল্পবয়সী এক তরুণী দাড়িয়ে আছে । চোখে ভারী চশমা । গিটারের স্ট্রিঙের মতো টানটান হয়ে আছে শরীরটা । একটু টোকা দিলেই যেন ছিঁড়ে যাবে । উত্তেজনায় কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে । নিশ্বাসের সাথে সাথে ঋজু পথে কপাল বেয়ে নেমে আসছে ঘামের উষ্ণ নোনা ধারা ।
' হুম ! অসাধারন !অতুলনীয় ।' মৃদু স্বরে বললাম ।
তরুণী পেইন্টিংটার দিকে এগিয়ে গেলো । ' এই অংশটুকু দেখুন । দেখুন ছেলেটার চোখ কি চমৎকার করে আঁকা হয়েছে ।কি গভীর কালো চোখ ! এতো সুন্দর চোখ এই পৃথিবীর কারো হতে পারেনা , কখনো না । '
আমি ভালো করে পেইন্টিংটার দিকে তাকালাম । ছবিতে আবছা ভাবে একটা ছেলের অবয়ব আছে বটে , কিন্তু চোখ ' দেখা তো দুরের কথা মুখটা পর্যন্ত ভালো করে বোঝা যাচ্ছেনা । পেইন্টিংটার বা ' পাশের মেয়েটাকেই বরং অস্থির লাগছে । পারফেক্ট শেপ । রঙের কি অদ্ভুত সুন্দর কম্বিনেশন ! একবারের জন্য ও মনে হচ্ছেনা আমি একটা পেইন্টের সামনে দাড়িয়ে । এ যেন জীবন্ত কোন ক্যানভাস ! An Alive Paint !
' ছেলেটার হাতের দিকে দেখুন , এইযে , বা হাত । কব্জির একটু উপরে । দেখেছেন ? কাটা দাগ টা কি অদ্ভুত ভাবে আঁকা । গ্রে কালারটা কি চমৎকার ফুটেছে তাইনা ?'
আমি ইতস্ততবোধ করছি । কাটাদাগ -ফাগ কোন কিছুই আমার চোখে পরছেনা । মেয়েটা এসব পাচ্ছে কোথায় !
আমি বিব্রতকণ্ঠে বললাম , 'ইয়ে আসলে ছেলেটার ছবিটা আমার কাছে তেমন পরিষ্কার না । কিন্তু মেয়েটার ছবিটা সুন্দর । ভীষণ সুন্দর । '
তরুণী বিস্মিত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাল । ' আপনি ওখানে একটা মেয়েকে দেখতে পাচ্ছেন ! কই আমি তো তেমন কিছুই দেখতে পাচ্ছিনা। ছেলেটার পাশে দাঁড়ানো মানুষটা কেমন জেনো ঝাপসা । '
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি । তরুণীটি ও চুপচাপ দাড়িয়ে । চোখ দিয়ে বিস্ময় ঝড়ে পরছে ।
কেমন জেনো ঘুম ঘুম লাগছে । পাশে দাঁড়ানো তরুণীটি ভাঙ্গা ভাঙ্গা কণ্ঠে বলছে ,' Someday death will take us to another Star ! .
আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো পেইন্টে আঁকা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছি । কি অদ্ভুত হিউম্যান জিওমেট্রি !
আমি ক্ষীণস্বরে একবার বললাম _' I dream my paint and i paint my dream ! '
আমি জানিনা কথাটা হটাত কেন বললাম । ভ্যান গগ আপনি কি জানেন ?


দুই ।।


'ওমা আপনার রুমের অতো সব ছবি কোথায় গেলো ?'
' আপনি নিজেই একসময় জেনে যাবেন ! '
' তাই ! ঠিক আছে ।আজ কিসের ছবি আঁকছেন ? ' গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে জিজ্ঞেস করল নাওমি ।
'যন্ত্রদায়ী এক নারীর ছবি ! the portrait of a painful lady !হাসতে হাসতে বলল অর্ক ।
ভ্রূ কুচকে , চোখ ছোট করে অর্কের দিকে তাকাল নাওমি । 'তা সেই ভাগ্যবতীটি কে শুনি ! '
'উহু আপনি নন । ' ক্যানভাসে তুলির দুটো টান দিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলো অর্ক । ' এ সেই মানবী যার গাল আর্টিস্টের দুঃখ বোঝেনা । যার ঠোঁট রঙের কনসেন্ট্রেশন বোঝেনা ,চোখ বোঝেনা Abstract Geometry !এটা তার পোর্ট্রেট । '
নাওমি মিটিমিটি হাসছে । ' আপনার কথায় কেমন যেন সুররিয়ালিজমের গন্ধ পাচ্ছি ।বিংশ শতকের শুরুতে কিছু পাগল পেইন্টার উল্টা পাল্টা কি সব একে গেছে তা নিয়ে এতো মাতামাতির কি আছে বুঝিনা মশাই ! আপনারা পেইন্টাররা সব কয়জন উন্মাদ ! '
অর্ক চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো । জানলার পাশে সরে দাড়াতেই সূর্যের আলো চোখে মুখে পড়লো । নাওমি অর্কের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে ।লম্বা চুল , খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি , কোটরের গভীরে থাকা লাল চোখ সবকিছু মিলিয়ে প্রথম দেখাতেই মানুষটাকে একজন আর্টিস্ট মনে হয় । একেবারে খাটি আর্টিস্ট ।
অর্ক হাঁটতে হাঁটতে বলল , ' নাওমি !দুটো কথা ! প্রথমত সুররিয়ালিস্ত আর্টিস্টরা একটু পাগলই হয় । সুররিয়ালিজম মানে কি জানেন নিশ্চয়ই । Surrealism creates somthing more real than the reality itself .হা হা । পাগলামি ছাড়া আরকি ! '
নাওমি বলল ,' আর দ্বিতীয়ত ?'
'দ্বিতীয়ত _ আমি কোন রংমেস্ত্রি না । আমি একজন আর্টিস্ট । Artist explores from soul while painter do it with hands !কাজেই আমাকে পেইন্টার না বললেই ভালো লাগবে । '
'রাগ করলেন ? ' মুখ অন্ধকার করে জিজ্ঞেস করল নাওমি ।
' আরে ধুর ' অর্ক হাসতে হাসতে বলল , 'সুররিয়ালিজম হল বিমূর্ত ব্যাপার । আপনাকে অনুভব করতে হবে । সাল্ভাদর দালির The persistence of Memory আমার দেখা শ্রেষ্ঠতম সুররিয়ালিস্তিক আর্ট ! '
'ওই অনুভবের ব্যাপারটা আমাকে দিয়ে হবেনা, মশাই । দালির Sleep ,Crucifixion , Geopliticus এর মতো চিত্রকর্ম গুলোও আমাকে তেমন টানেনা ।তবে ছবি গুলো দেখে মজা পাই । কেমন যেন হাসি হাসি লাগে । '
অর্ক অবাক হয়ে তাকাল , ' বলেন কি ! লি মিলার , রোসা রোনালডা অথবা ফ্রিডা কাহলো তাদের চিত্র কর্ম কেমন লাগে ? আফটার অল মার্কিন সুররিয়ালিজমের এরাই পথিকৃৎ তার উপর তিন জনেই নারী ! '
নাওমি হাসল । ঘন চুল গুলো আঙ্গুল দিয়ে চিরে দিতে দিতে বলল , মেক্সিকান আর মার্কিন নারী সুররিয়ালিস্তদের চিত্রের মধ্যে একটা বিমূর্ত ভয় ,আকাঙ্ক্ষা ,প্রত্যাশাকে চক্কর খেতে দেখি । Abstract Art হয়েও রিয়ালিটির শৃঙ্খলাকে উপেক্ষা করতে পারেনি ফ্রিডা বা রোসা _ রা । এটা আমাকে কষ্ট দেয় । তবে এদের মধ্যে ফ্রিডার চিত্রকর্মগুলো আমার ভালো লাগে । বিশেষ করে ১৯৩৯ এ আঁকা তৈলচিত্র Los dos fridas .
এছাড়া হেলেন লিনডারবারগের সেলফ পোর্ট্রেট টাও অস্থির ! তবে যাই বলুন না কেন , সুররিয়ালিজমকে আমার কাছে পাগলামি ই মনে হয় । আর দালি ছিল সবচে বড় সুররিয়ালিস্তিক পাগল ! হা হা হা । '
অর্ক একটা সিগারেট ধরাল । তারপর ডান পায়ের উপর বা' পা টা রেখে সাহেবি কেতায় বসল । ' Dada Movement এর কথা শুনেছেন ?'
নাওমি আলতো করে মাথা নাড়লো । সে শোনেনি ।

গলা খাঁকারি দিয়ে অর্ক বলতে শুরু করল , ' দাদা আর সুররিয়ালিজম প্রায় একই সময়ের আন্দোলন । সুররিয়ালিস্তিক আন্দোলন ছিল বুর্জুয়াদের বিরুদ্ধে । আন্দোলনকারীদের অনেকেই ছিলেন কম্যুনিস্ট । আবার অনেকেই ছিলেন ফ্রয়েডপন্থী অর্থাৎ Omnipotence Of Dream in the Undirected play of thought . অন্যদিকে Dada Movement ছিল অত্যন্ত কিম্ভূতকিমাকার গোছের আন্দোলন । সুইজারল্যান্ড এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই আন্দোলনের সূচনা । পুরো আন্দোলনটা ছিল মূলত An organized insulting of European civilization by its Middle class young . এই ইন্টেলেকচুয়াল আন্দোলন
আমার কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ । ইউরোপ জুড়ে মধ্যবিত্ত তরুণরা তাদের পাতি বুর্জুয়া মানসিকতা ঝেড়ে ফেলতে পেরেছিল এটা কিছুটা হলেও একটা চমৎকার ঘটনা ।'
অর্ক কথা বন্ধ করে নাওমির দিকে তাকাল । ' চা খাবেন ?'
নাওমি মাথা নেড়ে বলল ,' হুম । খুব খাওয়া যায় । '
চা হাঁতে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলো অর্ক । সামনে তুলির আঁচড়ের অপেক্ষায় পড়ে আছে খালি ক্যানভাস । একটু দূরেই খাটের উপর কিশোরীর মতো পা তুলে বসে আছে নাওমি ।
অর্ক ভ্রূ কুচকে জিজ্ঞেস করল , ' চা কেমন হয়েছে ?পাশ হবেতো ? '
নাওমি ফিক করে হেসে ফেলল । ' সেই হয়েছে । এক্কেবারে লেটার গ্রেড ! ও '' দাদা আন্দোলনের কথা বলছিলেন । আমার মনে হয় এই আন্দোলনকারীদের উপর ১ম বিশ্বযুদ্ধের প্রবল প্রভাব ছিল । সে সময়কার অর্থনৈতিক দুরাবস্থা অনেকের মধ্যে হতাশার তৈরি করেছিলো । যার ফলে সোভিয়েত ইউনিয়নে বলশেভিকরা কামিয়াব হয়েছিল । বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে ইতালি জুড়েও কম্যুনিস্ট আন্দোলন ছড়িয়ে পরে । এছাড়া ব্রিটেন , জার্মানি , ফ্রাঞ্চ সহ পুরো ইউরোপ জুড়েই একটা পরিবর্তনের সুর ছিল । মনে হয় Dada Movement তারই সাইড ইফেক্ট । '
অর্ক চোখ বড় বড় করে নাওমির দিকে তাকাল । ' চমৎকার ! আপনার অনুমান এক্কেবারে ঠিক । Dada ছিল মূলত নিহিলিস্ট ইন্টেলেকচুয়ালদের আন্দোলন ।এর দার্শনিক ভিত্তি ছিল Philosophy of negation ! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী Absurd Writtings এর সাথে Dada Writtings and Paintings এর একটা সামঞ্জস্য আছে ।
দুটো ধারাই মূলত Meaningless as well as Hopeless ! Dada Movement এর সময়কার একটা কবিতার দুটো লাইন ছিল এরকম _ _ And the fountain sings the same song , the lady has lost her smile in the woods .কোন অর্থ হয়না । বড্ড ননসেনসিকাল কথা বার্তা । এই সময়ের চিত্রকর্মের মধ্যে মার্চেল ডুসেমের To be looked at এবং পল লির Twittering Machine বেশ ভালো । ভালো মানে আতেলেকচুয়াল টাইপের আরকি ।
Dada Movement নিয়ে অনেক কথা বললাম । এতো কথা কেন বললাম জানেন ? আমার দাদা । মানে আমার বাবাব বাবা ছিলেন একজন অত্যন্ত নাম করা আর্টিস্ট । বিংশ শতকের শুরুর দিকে ব্রিটেনে চলে যান । সেখান থেকে জুরিখে । তখন জুরিখ ছিল আর্টিস্টদের বিশেষে করে বিপ্লবী আর্টিস্টদের তীর্থভুমি । সেখানে তিনি Dada MOvement এর সাথে প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত হয়ে পড়েন । তারপর বহুবছর নানান ইন্টেলেকচুয়াল মুভমেন্ট করেছেন , জেল খেটেছেন । শেষ মেশ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পাকিস্তানে ফিরে এলেন । তারপর ও বছর পনের বেঁচে ছিলেন ।
শেষের বছর গুলোতে তিনি নিজের ঘর ছাড়া আর কোথাও বেরুতেন না । এমন কি এক সাথে খাবার পর্যন্ত খেতেন না । ছাদের উপরের চিলেকোঠায় পিগমেন্ত আর পেইন্টিং এর মধ্যে ডুবে থাকতেন । কোন কোন দিন বিকেলে বা সন্ধ্যায় তার চিলেকোঠায় আমার ডাক পড়তো । তখন আমিও টুকটাক
ছবি আঁকি । দাদা মারা যাওয়ার কিছুদিন আগে এক সন্ধ্যায় তার চিলেকোঠায় ডাক পড়লো আমার । রুমে ঢুকতেই আমার চক্ষু চরাকগাছ ! তার আঁকা অসাধারন সব পেইন্টিংগুলো ছিঁড়ে কুচিকুচি হয়ে মেঝেতে পরে আছে । দাদা গভীর মমতায় ক্যানভাসের টুকরোগুলোর উপর হাত বোলালেন ।
দাদা আমার হাঁতে একটা ছবি তুলে দিলেন । আমি ছবিটার দিকে একনজর তাকালাম । অর্থহীন ছবি । উদ্ভট আঁকিবুঁকি আর রঙ্গের কেরামতি বাদে দেখার কিছু নাই ছবিটায় । দাদা আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন । বললেন , অর্ক ! একটা কথা মনে রাখিস একজন অসাধারন পেইন্টারের তার জীবনে কেবল একটাই অসাধারণ ছবি আঁকা উচিৎ । আর বাদ বাকি ছবি গুলোকে ধ্বংস করে ফেলতে হবে । Afterall Destruction is the most beautiful Art of the Universe !'
অর্ক জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে । নাওমি অর্কের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো , ' আপনার দাদা তো দেখি কট্টর Lemarchist ছিলেন মনে হয় ! বিবর্তনের ক্ষেত্রে তেমনটা শুনেছি । কিন্তু তাই বলে আর্টের জগতে লেমারকিজম ! আনবিলিবেবল ! '

অর্ক নরম স্বরে বলল , হা অনেকটা সেরকমই বলতে পারেন । শেষের দিকে ওনার মাথায় গণ্ডগোল দেখা দেয় । ওই ঘটনার পরের দিনই তিনি মারা যান । তার শেষ ছবিটা এখন ল্যুভর মিউজিয়ামে আছে । দাদার জীবনে আঁকা ৪৭ টা ছবির সারসংক্ষেপ হল তার আঁকা শেষ ছবি ' Mirror 47। কোন পেইন্ট ই মরে না নাওমি ! বেঁচে থাকার ভঙ্গিটা কেবল বদলায় ! '
'পেইন্টিং হয়তো মরেনা , বেঁচে থাকে , কিন্তু পেইন্টার ? তাদের তো মরতে হয় । অর্ক ! Mirror 47 এর পেইন্টার কি স্বাভাবিক ভাবে মারা গিয়েছিল নাকি _ ?'
অর্ক মৃদু হাসল । ' ধরে ফেলেছেন তাহলে ! বেনজোয়েল মেথিল একগোনাইন _ সোজা ভাষায় কোকেন ! ছয় গ্রাম প্রতিদিন । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকার সময় অভ্যাস করেছিলেন । জাঙ্কিদের কথা হয়তো শুনে থাকবেন । মার্কিন মুল্লকের বিখ্যাত নেশার দল । এরা পানির সাথে কোকেন মিশিয়ে সিরিঞ্জে ভরে শরীরে পুস করতো ।ওদের সাথে থেকেই এই কোকেন নিতে শুরু করেছিলেন । শুনেছিলাম সিগমুণ্ড ফ্রয়েড আর দাদা নাকি খুব ক্লোজ ফ্রেন্ড ছিলেন যদিও ফ্রয়েড দাদার চাইতে বয়সে বেশ বড় ছিলেন । দু জন নাকি একসাথে কোকেন ও নিতেন ।যাই হোক সেদিন ছিল শুক্রবার FA থেকে ফিরে
তার রুমে ঢুকেছিলাম ।যেয়ে দেখি __ । আট গ্রাম ছিল ওই দিন । পরিকল্পিত । ' 'আচ্ছা দাদা যে স্বাভাবিক ভাবে মারা যাননি সেটা বুঝলেন কি করে ? '
'ওই যে । নিজের আঁকা সব ছবি নষ্ট করে দিলেন । নতুন আঁকা শেষ ছবিটার কাজ ও শেষ । আপনাকে সেই ছবির দায়িত্ত ও বুঝিয়ে দিলেন । তারপরের দিনই মারা গেলেন । কেমন যেন গোছানো মনে হচ্ছিল সব কিছু । '
' Excellent !আপনি সত্যিই অত্যন্ত বুদ্ধিমতি মেয়ে ! তা বুদ্ধিমতি নাওমি এখন কি আপনি অনুমান করতে পারেন আমার ঘরে কেন আমার আঁকা কোন পেইন্ট নেই ? এখন কি বুঝতে পারছেন কেন আমার Waste বাস্কেটের ঢাকনা লাগানো যাচ্ছেনা ? '
নাওমি চমকে উঠে দাঁড়ালো । দৌড়ে অর্কের হাত দুটো জড়িয়ে ধরল । ' তার মানে আপনিও ? আপনার সব ছবি নষ্ট করে ফেলেছেন ? আপনিও আজ _ ?'
অর্ক দৃঢ় স্বরে বলল , ' না নাওমি ! আমি মরবনা । দাদা বলতেন পেইন্ট কখনো মরেনা স্রেফ বেঁচে থাকার ভঙ্গিটা বদলায় আমি দেখাব পেইন্টের সৃষ্টিকর্তা ও কখনো মরেনা স্রেফ বেঁচে থাকার ভঙ্গিটা বদলায় ! নাওমি ! আমার একটা জীবন্ত ক্যানভাস প্রয়োজন । যেখানে আমি তৈলচিত্র বা ফ্রেসকো নয় রক্ত দিয়ে ছবি আকব । যে ক্যানভাস কথা বলবে , সাড়া দেবে , চাপ দিবে , উত্তাপ ছড়াবে । আর আর যে ক্যানভাসটা বেঁচে থাকবে চিরদিন ! আপনি আমার সেই ক্যানভাস হবেন , নাওমি ? আমার জীবন্ত ক্যানভাস ? '
নাওমি নামের মেয়েটা কাঁদছে । ' আমাকে কি শুধু এই ক্যানভাসটার জন্নই প্রয়োজন , অর্ক ?'
আমি দেখতে পাচ্ছিনা , সম্ভবত অর্কের চোখের এককোনে ও জল জমেছে । অর্ক নাওমি কে জড়িয়ে ধরে আছে । বাতাসে ফিসফিসিয়ে একটা কণ্ঠ শোনা গেলো , ' নাওমি ! উহু ! আপনার ক্যানভাস এ আঁকা ওই রং , পরাবাস্তব দৃশ্যকল্প , তুলির একটা একটা টান এর চাইতে বেশি কিছু আমার আর চাওয়ার নেই । নাওমি ! আমি আপনাকে ভালোবাসি এবং ভালোবাসি । '
নাওমির ক্ষীণ কণ্ঠ শোনা গেলো , ' Someday Death will take us to another Star ! '
ভয়ঙ্কর যন্ত্রণা নিয়ে ঘুম ভাঙল অর্কের । চোখ খুলতেই দেয়ালের গায়ে ঝোলানো পেইন্টিংটার দিকে চোখ পরল । অদ্ভুত একটা ছবি । ছবিটা অস্পষ্ট । ছবির ডান দিকে আঁকা মেয়েটার ছবিই কেবল পরিষ্কার বোঝা যায় । কি অদ্ভুত সুন্দর মেয়ে । মনে হয় মানুষটাকে সে চিনে । ছবির নিচে ঝুলানো একটা কাগজ দেখতে পেল অর্ক । কাগজটা হাঁতে নিতেই বা হাতের কব্জির ঠিক উপরের কাটা জায়গাটা বেথা করতে শুরু করল । প্রচণ্ড বেথায় অজ্ঞান হওয়ার পূর্বমুহূর্তে চিরকুটের লেখাটা বিড়বিড় করে পড়ল অর্ক , ' I Dream my painting and I paint my dream .'


তিন ।।

la tristesse dursea to jours !
'নাওমি ! কি রে এর মানে কি ? প্রতিদিন একই কথা শুনি । ' আম্মু হাউ মাউ করে জিজ্ঞেস করল ।
আমি আম্মুর দিকে তাকিয়ে হাসলাম । বললাম , তুমি বুঝবেনা । ''আচ্ছা আম্মু একটা কথা বলতো আমার ঘরে যে ছবিটা টাঙ্গানো আছে ওটা কার ছবি ?'
' ওটা আবার কার ছবি হবে ! লতা ঝোপ ঝাড়ের ছবি । '
''আরে ধুর ! বলছি যে ছবিটা কে একেছে ?'
'বাব্বাহ ! আমি কি আর্ট বিশেষজ্ঞ নাকিরে ! কে একেছে কে জানে ! তোর দাদার আমল থেকেই নাকি ছবিটা এ বাড়িতে । কেন রে ? '
' না এমনি । ' ঝটপট জবাব দিয়ে নিজের রুমে চলে এলাম ।
সবাই বলে ছবিটা নাকি শুধু লতা পাতার । কিন্তু আমি সেই ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি । একটা ছেলে ছবির বা পাশে দাড়িয়ে আছে । ছেলেটার চোখ কি চমৎকার করে আঁকা হয়েছে ।কি গভীর কালো চোখ ! এতো সুন্দর চোখ এই পৃথিবীর কারো হতে পারেনা , কখনো না । 'ছেলেটার বা ' হাতের কব্জির উপরে একটা কাটা দাগ । কাটা দাগ টা অদ্ভুত সুন্দর ! গ্রে কালার কে এতো চমৎকার করে ফুটিয়ে তুলেছে যে অসাধারণ না বলে উপায় নেই !
নাওমি রহস্যময়ির মতো ছবিটার দিকে এগিয়ে গেলো । রুমের মধ্যে ভাঙ্গা ভাঙ্গা একটা কণ্ঠ শোনা গেলো _ Someday death will take us to another Star !
৯টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×