সেই প্রথম কৈশোরে দুয়েক বছর ঢাকার শেওড়াপাড়ায় ছিলাম। বিন্দুবৃত্ত গলি। এক তালা বাড়ি। বইয়ের পোকা নিষাদ আপুদের বাড়ি। বর্ণনাতীত উপভোগ্য ছিলো সময়গুলো। পাখির মতো ডানা মেলে উড়ে বেড়াতাম। হ্যা, উড়েই বেড়াতাম ডানা মেলে। নির্ভার নিশ্চিন্ত। ঢাকার বিখ্যাত স্থাপনাগুলোর দুয়েকটা ওখান থেকে দেখা। তীব্র রকমের রোমাঞ্চকর ও আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতাগুলো। ভালো একজন বন্ধু পেয়ে গিয়েছিলাম। সেই সব ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখিয়েছিলো। অনেকটা ট্যুর গাইডের মতো সাহায্য করেছিলো সে সব আলোকোজ্জ্বল আনন্দ ভ্রমণে। অতিমাত্রায় লজ্জিত বোধ করছি বলতে যে, তার নামটাও আজ ভুলে গেছি। নাহ, কিছুতেই মনে পড়ছে না! সত্যি, বড্ড লজ্জাজনক। সামান্য নামটাও মনে রাখতে পারিনি! ঢাকার সংসদ ভবন, চন্দ্রিমা উদ্যাণ, চিড়িয়াখানা ইত্যাদি ওর বদৌলতেই দেখার সৌভাগ্য হয়েছিলো।
সে সময় আমেরিকান প্রোফেশনাল রেসলার ডোয়াইন জনসন ওরফে দি রকের বিরাট ক্রেজ তৈরি হয়েছিলো দেশজুড়ে। বিশেষভাবে রকের হেয়ারস্টাইল ভীষণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো কিশোর তরুণদের মাঝে। ফেস কাটিং যেমনই হোক সবাই ওরকম হেয়ার স্টাইল রাখতে পছন্দ করতো। প্রতিটি সেলুনেই রকের বিশেষ একটি ছবি ঝুলতে দেখা যেতো। দি রক ও শূন্য দশক পরষ্পর অঙ্গাঙ্গী জড়িয়ে আছে আমার স্মৃতিতে। রেসলিংয়েরও ফ্যন ছিলাম। সপ্তাহে একদিন হতো একুশে টিভিতে। ডিস সংযোগে স্পোর্টস চ্যানেল ইএসপিএন নিয়মিত দেখাতো। পারতপক্ষে মিস করতাম না। রক ছাড়াও আরও দুয়েকজন ছিলো প্রিয়। এদের মধ্যে বিল গোল্ডবার্গ, স্টিভ অস্টিন অন্যতম।
ফিচার ফোন মানুষের হাতে উঠতে শুরু করেছে। শূন্য দশকের শুরুর দিকের কথা। বড়সড় লম্বাকৃতির বাটন মোবাইল ফোন। ফোনে কথা বলা, টেক্সট মেসেজ বিনিময়, ফোনবুক সুবিধা ও টাইম পাসের জন্য দুতিনটি ফ্রী গেম। এই তো। হাতে হাতে ঘুরছে মোবাইল। হাওয়ায় উড়ছে শূন্য দশক। এভাবে এক পর্যায়ে ফিনল্যান্ডের বিখ্যাত মোবাইল ফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নোকিয়া আগাগোড়া দখল করে নিলো বাংলাদেশের মোবাইল ফোন বাজার। সে সময় দেশে ব্যবহৃত ফোনগুলোর আশি শতাংশই ছিলো নোকিয়ার তৈরি বিভিন্ন ফিচার ফোন। আহা, কে ভেবেছিলো, নোকিয়ার মতো মোবাইল ফোন নির্মাতা এরকম জায়ান্ট আর মাত্র এক দশক পরই টাচস্ক্রীন, স্মার্টফোনের জামানায় সমস্ত মার্কেট শেয়ার হারিয়ে দেউলিয়া হতে চলেছে!
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:২৯