ফিদার--- পাইলট-- উইলসন---হিরো--- এগুলোই ছিল আমার কলম-- সুচাগ্র নিব-- কালির দোয়াতে নিব ঢুকিয়ে কালি ভরতে হতো---৩য় শ্রেণীতে যখন পাইলট স্কুলে ভর্তি হই, আব্বা একটা উইলসন কলম কিনে দিয়েছিলেন--- ক্লাসের আরও অনেকেই দেখতাম ফাউনটেন পেন দিয়ে লিখত--- সেই থেকে শুরু-- -
- বাবার হাতের লিখা অসম্ভব সুন্দর ছিল-- যারা আমার বাবাক দেখেছেন বা জানেন তারাই বলতে পারবেন এই বিষয়ে--- আব্বার কলম ছিল পাইলট --- সোনালি আপাদমস্তক-- মাঝে মাঝে লুকিয় লুকিয়ে কলমটা দেখতাম--- অদ্ভুত রকমের একটা মোহ ছিল এই কলমের প্রতি--- দিন যায়--- আরও দু একজনের কথাতে আবিষ্কার করলাম আমার হাতের লিখা ও আব্বার মতই হয়ে যাচ্ছে--- অতি উৎসাহে হাতের লিখা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে লাগলাম--- একদিন আব্বাও সার্টিফিকেট দিলেন আমার লিখা হুবুহু উনার মতই--- ভাবলাম জিনেটিক হয়তোবা---বন্দর বাজারের বইয়ের দুকানগুলোতে সব সময় শোভা পেত রকমারি আকারের ঝর্না কলম--- স্কুল ছুটির পর রিক্সা চাওয়ার সময় ফাকে ফাঁকে ঢু মারতাম আর কলমগুলোকে সযত্নে হাত বুলাতাম---মনে পড়ে-- একবার স্কুলে এক জাদুকরের আবির্ভাব হল--- খুব সুন্দর করে কলমের গায়ে খোদাই করে নাম বসিয়ে দিত-- মাত্র তিন টাকা--- আমরা প্রায়ই সবাই লাইন ধরে নাম খোদাই করালাম--- আহা-- সৃতিগুলো কেমন যেন খুদিত হয়ে গেল সেই সময়ে।।
পড়তে বসে কলম একটু অসভ্য আচরন করলেই তার সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ খুলে গরম পানিতে ডুবিয়ে এক এক করে পরিষ্কার করতাম--- সে ছিল কলম ধৌতকরণের এক মহাযজ্ঞ-- পড়া ফাকি দেয়ার আরেক মউকা।।
সে যাক, যুগ বদলে গেল-- আস্তে আস্তে ফাউন্তেন পেন আর কেউ ব্যাবহার করে না--- বল পয়েন্ট পেন দখল করে ফেলল সবকিছু--- আমার হাতের লিখাও পড়লো হুমকির মুখে-- তবুও অবিচল---আমাদের ক্লাসে মনো ওয়ার ছিল ঝর্না কলমের সাধক---কলমের কালিতে হাত মুখ সবসময় মাখামাখি---দিন বদলের দিনে সেই মনওার ও ঝর্না কলমের ছিল শেষ কাণ্ডারি--শুনেছি সে নাকি বড় ডাক্তার-- হয়তো এখনো ও ঝর্না কলমে প্রেসক্রিপশন দে--- দুর্লভ হয়ে উঠা কলমের অভাবে আমার লিখার স্টাইল ও বদলে যেতে লাগলো--- রুপান্তরিত হতে হতে হয়ে গেল শৈল্পিক ।।
এখনো ইচ্ছে করে প্রেম করতে--- কলম দিয়ে--- পাতার পর পাতা শৈল্পিক তুলিতে চিঠি লিখতে--- সেই আগের মতই--- কবিতা লিখতে--- সেই দিন আর নেই-- কলমের নিবের ডগায় যে ক্ষরণ জমা হতো সেই ক্ষরণের স্রোত আর নেই---
এখনো ফাউন্তেন পেন খুজি--- পাওয়া যায়-- নতুন আঙ্গিকে-- পার্কার--- ওইদিন , আনটিক একটা শপে ঢুকে পেয়ে গেলাম আজ থেকে চল্লিশ বছর আগের একটা ফাউন্তেন পেন--- অনেক দাম-- বাবাকে খুব মনে পড়লো--কিনে ফেললাম--- লিখা আর হয়না-- কিভাবে লিখবো ---এই যে কিবোর্ডে টাইপ করে লিখছি--- কলমটা পড়ে আছে ড্রয়ারে-- ধুসর সৃতি আর মলিন কাগজের টুকরোতে ।।
হাতের লিখার মত এত সুন্দর একটা শিল্প চর্চা হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের বাঙ্গালী সংস্কৃতি থেকে এই কষ্ট থেকেই আমার এই ক্ষরণ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ভোর ৫:৪১