আমি বিবাহিত-- এর আগে আমার আরেকটা বিয়ে হয় ---- বাল্যবিবাহ-- তবে যেমন খুশি তেমন সাজো তে--- পিচ্চি আমি--ক্লাস টু তে পড়ি-- আমার দিদিমনি আর উনার বান্ধবীরা মিলে বিয়ের পিঁঢ়িতে বসিয়ে দিলেন-- কনে ছিল আমাদের ক্লাসেরই আরেক মেয়ে--- পপি-- মনে পড়ে-- শত মানুষের ভিড়ে বসে আছি---হাতে রুমাল-- মাথায় বরের টুপি-- পাশে বসা পপি জমকালো কাতান পড়ে মাথা নিচু করে বসে আছে-- সবার পায়ে ধরে গিয়ে গিয়ে আমরা দুজন সালাম করছি-- সালামি ও পেলাম অনেক--- ঘটনা এখানে শেষ হলে দুঃখ ছিল না-- ফাজিলদের কোন বয়স নেই-- এই পিচ্চিকালেই অনেক ফাজিলদের সামলাতে হয়েছিল।। তারপর এক দিন ভর্তি হয়ে গেলাম পাইলট স্কুলে।। ঐখানে মেয়ে মানুষ বলা যায় এলিয়েন দেখার মতই।।
দিন গেল--- ঐ ঘটনা সবাই ভুলে গেল--- কিন্তু দু জন ভুলেনা--- আদার ব্যাপারী আর আরেক জন-- তাকে নিয়েই আমার এই প্রারম্ভিকতা।। আজ আদার ব্যাপারী এর একটা লিখা দেখে চোখে জল আসলো-- বললাম'' নারে ওর কথা লিখতে গেলে ফেসবুকে জায়গা হবেনা, এত সৃতি ওর সাথে ।।
জিন্দাবাজারে পৃথ্বীরাজে বসে আছি-- আর ও কয়েকটা বন্ধুর সাথে--- কফি খাচ্ছিলাম--- একটা ছেলে আমার দিকে এগিয়ে এসে আচমকা বলে উঠলো '' কিতারে পপির জামাই''-- ভোঁদাই বনে গেলুম--- চিনিনা জানিনা এই ছেলেটা এসব কি বলছে---!! বললাম'' ভাই দেখ ফাজলামির একটা নিয়ম আছে, অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে বলল'' ঐ তুই ডাকতর না?? আমি বললাম হ্যাঁ-- তুই হেড সারের ছেলে না?? বললাম আজ্ঞে হ্যাঁ, বলল দাঁড়া তঁর পাছায় একটা লাথি মারি; বলে সত্যি সত্যি লাথি মেরে দিল-- এই হল মাহিন।। ১০ বছর পর দেখা-- সে আমাকে চিনতে পেরেছে কিন্তু আমি পারিনি।।
আড্ডা জমে উঠলো-- এভাবে তার পাড়ায় ও যাওয়া শুরু হল--- বাল্যকালের বন্ধু -- তাই বন্ধুত্ব যেন আরও বেশি জমে উঠলো---
আস্তে আস্তে সে আমার ছবি আঁকার ভক্ত হয়ে গেল--- বলল আর্ট চাই-- বললাম দিয়ে দেব ক্ষণ--- শিল্পকলায় একটা একজিবিসন হবে তাই কয়েকটা ছবি আঁকলাম-- এরই মাঝে একদিন আসলো বাসায়--- বলা নেই কওয়া নেই ছো মেরে হোন্ডায় করে পালিয়ে গেল। পিছনে অনেক ডাকলাম--- শুনেনি। পরে বাসায় গিয়ে দেখি ড্রয়িং রুমে শুভা পাচ্ছে আমার অঙ্কিত শিল্পকর্ম--- বত্রিশ দাত বাহির করে বলল '' দোস্ত মাইন্ড করেছিস?? খালাকে ডেকে বলল '' আম্মা ওই আমাকে এটা গিফট করেছে-- আমার দোস্ত খুবই ভালো-- না চাইতেই সবাইকে আর্ট দেয়-- আরেকবার বত্রিশ পাটি দেখাল।। ''
আমার ছোট বোনের বিয়ে লাগলো-- ও ফটো গ্রাফার ছিল-- যা দিয়ে হাত খরচ চালাত--- পর পর দুটি বিয়ে সে কাভার করে দিল-- দিতে চাইলে বলল'' দিয়ে দিস কোন ফকির কে'' -----
Abu Sayed Ansarey আর আমি ড্রয়িং রুমে বসে গল্প করছিলাম--সামনে ছিল চা বিস্কিট-- বাইরে হোন্ডার শব্দ এসে থামল-- কিছু বুঝার আগেই দেখি দরজা ফাঁক করে মাথা ঢুকাল মাহিন-- আমার দিকে একবার আর সায়িদের দিকে একবার তাকিয়ে কিছু না বলেই সামনে রাখা সায়িদের চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে এক চুমুকে চা শেষ করে বিস্কিট সব কটা পকেটে ভরে চলে গেল। আমি আর সাইয়িদ মুখ চাওয়াচাওয়ি করে বসে রইলাম অনেকক্ষণ।।
সোনাতলায় হাঁটছি দু বন্ধু--- একটা ঘরের পাশ দিয়ে যেতে যেতে গন্ধ পেলাম মাছ ভাজির-- বলল '' দাঁড়া এই ঘ্রাণ উপেক্ষা করা যায় না-- লাফ দিয়ে ঐ বাসার জানালার গ্রিলে গিয়ে উঠলো--অনেক্ষন চেষ্টা করে এক টুকরো মাছ মুখে পুরে ফেলল।। বললাম'' দোস্ত , যদি ধরা খেতি তাহলে??'' বলে -- ধরা খেলে আরও বেশি খেতে পারতুম-- তয় এভাবে খাওয়ার মজাই আলাদা।। ''
লন্ডন থেকে একটা লাল গেঞ্জি উপহার পেয়েছিলাম-- একটা ইংলিশ মেয়ে দিয়েছিল-- কেন দিয়েছিল বা কিভাবে কি হয়েছিল সেটা নাই বা বললুম-- এই গেঞ্জিটার প্রতি ছিল তার খুব আকর্ষণ--- পরে গেছি বাসায় একদিন। জোর করে গেঞ্জিটা গলা দিয়ে নিয়ে গেল-- আয়নায় দাড়িয়ে বলতে লাগলো'' তুই সুন্দর ছেলে ---তোদের এসব পড়তে নেই-- জীনে আছর করবে'' আমি বললাম , তাহলে আমাকে কিছু একটা দে পরে তোঁ বাসায় যাই।। অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে বললে এটাই তঁর শাস্তি, খালি গায়ে তুই বাসায় যাবি''--- ভাগ্যিস নিচে সেন্ড গেঞ্জি ছিল-- ওইদিন ঐভাবেই বাসায় আসি।।
এটাই ছিল আমার সাথে তার শেষ মাহিনি।। আমি ঢাকায় চলে যাই পড়তে-- যখন শুনলাম সে অসুস্ত -- তখন অনেক দেরি হয়ে যায়-- দেখা করলাম-- কথা গুলো জড়িয়ে যাচ্ছিলো--- বলল দোস্ত ঢাকায় তঁর সাথে আবার দেখা হবে---আর দেখা হইনি।। না ফেরার দেশে চলে গেল আমার বাল্যকালের খ্যাপাটে বন্ধু মাহিন। সেই আমাকে বেশি খেপাত পপিকে নিয়ে।। হুমায়ূনের উপন্যাসে হিমুকে জানি-- বাস্তবে মাহিন ছিল হিমুর চেয়ে ও অনেক উদার অনেক সুন্দর।। আদার ব্যাপারী এর সাথে দেখা হয়, ঘুরে ফিরে কেন জানি মাহিন চলে আসে।। মাহিন তুই যেখানেই থাক ভালো থাকিস আর আমার এই লিখাটা একটু পড়ে দেখিস। এখন আর কেউ তঁর মত এসব করেনা-- টাকা দিয়েও করানো যায় না। ভালো থাকিস বন্ধু।।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৮:৪১