বঙ্গাইর দোকানে গিয়েছি-- শুনেছি উনি নাকি খাটি গরুর মাংস বিক্রি করেন-- কোন ভেজাল নেই--তারপর ও সন্দেহ হচ্ছিল--- বললাম ' ভাই ৫০০ টাকা বেশি রাখেন ,নির্ভেজাল দিন--- কর্মচারী ফিক করে হেসে দিল--- পানের পিক ফেলে দিয়ে বলল কেন ভাই কি হয়েছে?? বললাম'' যদি বলি লন্ডন থেকেই এসেছি শুধু এই মাংস খাওয়ার জন্যে বিশ্বাস করবেন?? বলল,কি যে বলেন, নেন এগুলো লাগবেনা, নিশ্চিন্তে যান।।
বাসায় আসলাম--- আম্মা আগের মত রান্না বান্নাতে সময় দিতে পারেন না--বার্ধক্যের জীর্ণতায় পেয়ে বসেছে--- বায়না ধরলাম তোমাকেই আজ রাঁধতে হবে-- কি আর করা,বকা ঝকা করে অগত্যা তাই শুরু করলেন-- মুখে মুচকি হাসি -----বলতে লাগলেন "" কেন রে লন্ডনে কি গরুর মাংস নাই , বউমা কি রান্না করেনা?? তাকে তো শিখিয়েই দিয়েছিলাম" --- বলি, তা তো করেই-- সেও তোমার মত করে, কিন্তু তোমার হাতেরটা তো আলাদাই তাই না?? রান্নাঘরের একপাশে চেয়ার টেনে বসে পড়লাম--- আহা-- ধীরে ধীরে মায়ের হাতের শৈল্পিক রান্নার স্পর্শে চারিদিক মৌ মৌ করতে লাগলো-- খিদে পেট চু চু করছিল--- কৈশোরে চলে গেলাম-- গরুর ভুনা রান্না হচ্ছে ---পড়ার টেবিল থেকে উঠে মাঝে মাঝে গিয়ে ঢু মারছি , কখন আম্মা ডাক দিবেন--- দারুচিনি এলাচির কি সুঘ্রাণ ! পড়ায় কি মন বসে !
আম্মাকে বলতে লাগলাম-- জানো আম্মা তোমার হাতের রান্না খাওয়ার জন্যেই এইবার এসেছি--- অতএব নো রেস্ট। আম্মা হাসেন-- বলেন হয়ে গেল টেবিলে গিয়ে বস।।
মোবাইল এ অ্যালার্ম বেজে উঠলো--- উঠে দেখি কোথায় আম্মা কোথায় কি মাংস ভুনা--- জানালার বাইরে লন্ডনের আকাশ-- আমার স্বপ্ন ভাঙ্গার দুঃখে সেও যেন আজ আনমনা।।
আম্মা তোমাকে খুব মিস করছি---ভীষণ।।
এই লিখাটা সব সন্তানদের প্রতি যারা মাকে ছেড়ে বাইরে আছেন অথবা মাকে হারিয়েছেন--- আর সব সন্তানদের কাছেই নিজ নিজ মায়ের রান্নাই সবচেয়ে প্রিয়-- ব্যাপারটা জীনেটিক-- স্রস্টা প্রদত্ত।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৩৩