আমার এক বন্ধু, দেশের নিষিদ্ধ সংঘটন হিজবুত তাহরি করে--- লন্ডনে এটি এখনো নিষিদ্ধ হইনি বা নিষিদ্ধ হলে জানা নেই। কোন এক সময় তার সাথে অনেক চলাফেরা শুরু করি-- আড্ডায় যাই--- আরও বন্ধুদের সাথে, লন্ডন শহরে। মাঝে মাঝে ঘুরে ফিরে তার সংঘটনের কথা ফেরি করে। দেশে থাকতে আমি যেমন ইসলামিক দল কি, কত প্রকার এবং তা কাহাকে বলে বুঝেছিলাম তেমনি পরে শিল্পকলার মানুষ হিসেবে, সিলেট শিল্পকলা ঢাকা চারুকলার আঙ্গিনা আমার পদভারে মুখরিত হয়েছিল, তাই সব ধরনের স্বাদ আমার জানা আছে।অর্থাৎ ধার্মিক, অধার্মিক, নাস্তিক,মুক্তমনা, সুশীল কুশিল ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রসঙ্গে আসি, একদিন আড্ডার পর বলল, চল দোস্ত আমার একটা কনফারেন্স আছে, তুই বসে থাকবি, ভাবলাম ক্ষতি কি, দেখে আসি। ওইখানে অনেকের সাথে পরিচয় হল--- সম্ভবত সে আগে থেকেই আমার সম্পর্কে তাদের ব্রিফ দিয়েছিল।কি জানি বাপু, আমি যেখানে যাই সবাই আমাকে টার্গেট করে ফেলে ! ঘুরে ফিরে বক্তারা শুধু খালিফা স্টেট বাস্তবায়নের কথা বলছিলেন--- কিন্তু কিভাবে উনারা সেটা বাস্তবায়ন করবেন, সেটা পরিষ্কার করে বুঝাতে পারছিলেন না বা কিছুটা ধুঁয়াটে। যাদের সাথে পরিচয় হল, তারা ইসলামিক আন্দোলনের কর্মী বুঝার কোন উপায় ছিলনা। আধুনিক কেতাদুরস্ত, চিনস জিন্স,কনুইয়ের উপর মাসল দেখানো টি-শার্ট পরা। মুখে দাড়ি গোঁফের বালাই নেই। নামাজের সময় হলে, এদের একজনই ইমামতিতে দাড়িয়ে পরলেন, স্বাভাবিক ভাবে কোন মসজিদে এই বেশ ভুশার কারো পিছনে মনে হয়না মুসল্লিরা দাঁড়াতেন ! উল্লেখ্য--- দেশের কতিপয় ইসলামী আন্দোলনের নেতা কর্মীদের ও একই অবস্থা দেখে এসেছি।।
যাই হোক ওইদিন চলে আসলাম, আস্তে আস্তে উনাদের চার পাঁচজনের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি পেল--- তাদের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে একটা ধারনা পেতে শুরু করলাম--- উনাদের কথাবার্তাতে উঠে আসে, হিন্দি ছবির কথা, কোনটি হিট করল না করলো--- ফেসবুকে গেলে দেখা যায়, আমার আপনাদের মতই, বিবি-বাচ্চা সহ সেলফি কুপাচ্ছেন, গানের লিঙ্ক শেয়ার দিচ্ছেন ইত্যাদি। বুঝতে বাকি রইলনা উনারা কোন ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছেন ! তো একদিন বন্ধুকে বলে বসলাম, এই তোদের প্রধান কে, সে যা বলে উঠলো মাথায় ঝিম ধরল---- বলল, সে নিজেও জানেনা কে তাদের প্রধান, অর্থাৎ সে জানে শুধু তার লোকাল কমান্ডো কে-- আর লোকাল কমান্ডো জানবে তার উপরিস্থ কমান্ডকে--- এভাবেই চলে তাদের সংঘটন।! বললাম, তাহলে খিলাফত কিভাবে ঘটবে? বলল-- ''বিপ্লব''--- আর বুঝতে বাকি রইলনা, উনারা নিজেরাই যখন জানেন না উনাদের প্রধান কে সেই প্রধান ও হয়তো জানবেন না তিনি কাদের পৃষ্ঠ পোষকতায় বিপ্লব ঘটাবেন। যাই হোক আমি শিল্প চর্চার মানুষ, তাই শিল্পতেই ডুবে থাকলাম।
ঢাকা যজ্ঞে যেসব জঙ্গিরা নিহত হল-- তাদের বেলায় ও আমার একই প্রশ্ন। ইসলামিক জিহাদে তারা কতটুকু ইসলামিক বা ধার্মিক ছিল। তাদের ফেসবুক, টুইটার ঘুরে তাদের সম্পর্কে আর যাই মনে আসুক, ইসলামিক জিবনাচারে অভ্যস্ত ছিলেন এটা বলা যাবেনা।অতএব এদের পিছনে যারা তারা আদৌ কি ইসলাম চায় না কোন অদৃশ্য স্বার্থান্বেষীর ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে লিপ্ত ??
আজকাল, আমাদের অনেককেই দেখা যায়, ইসলামী আন্দোলন কে সমর্থন করেন, বা ইসলামী আন্দোলন করেন,ফেসবুক ফাটিয়ে দিচ্ছেন লিখায় লিখায়, কিন্তু ব্যক্তি জীবনে উনার প্রফাইল ঘুরে আসলে দেখা যায় উনি কেমন ইসলামিক ! ঘরের ড্রয়িং রুমে শোভা পাচ্ছে বিরাট স্ক্রিন, আর স্ক্রিনে অবিরাম চলছে নায়ক নায়িকাদের উদ্দাম নৃত্য, তিনি তাও গিলছেন, আবার চ্যানেল বদলিয়ে নিজামি কে ফাঁসি দেয়ার খবরে ইসলাম কে ধ্বংস করে দিল বলে হাপিত্যেশ করছেন। এটাই বাস্তব চিত্র।
তাই বলছি আমি মনে প্রানে চাইব ইসলাম কিন্তু চর্চায় মানবনা, এটা আমার দ্বারা সম্ভব নয়। যে কোন একটা পথ বেছে নিতে হয়। আর এই ভণ্ডামির জন্যেই আজ মুসলমানরা এত বিপর্যস্ত।
আপনার বাচ্চাকে হার্ডকোর মুমিন না বানিয়ে একজন ভালো বিবেকবান মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করুন। যদি বিবেক তৈরি হয়, তখন সে এমনিতেই সঠিক বেঠিক যাচাই করতে পারবে, নিজ ধর্ম সম্পর্কে শুদ্ধ জ্ঞ্যান অর্জনে অর্জিত করতে পারবে এবং তদ্বারা জান্নাতে যাবে। যদিও ঢাকার জঙ্গিরা নিরীহ মানুষদের জবাই করে বরাখ দ্বারা জান্নাতে চলে গেছেন। বলুন আমিন।!
বি দ্রঃ বন্ধু শব্দ অলীক হিসেবেই ব্যাবহার করেছি-- কোন বন্ধুকে দোষারোপ করতে নয়। আমাদের সমাজে অনেক বন্ধু আত্মীয় এভাবে বিপথগামী হচ্ছেন--- সময় এসেছে এদেরকে বুঝানোর।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ৮:২৫