নিজেই পুরো থ হয়ে গেলাম…
গতরাতে চিন্তা করলাম একটু তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়বো,রাত এগারোটার দিকে এক বন্ধু ফোন দিয়েছে ব্লাড লাগবে বি পজেটিভ যদিও সে জানতনা আমার রক্তের গ্রুপ। বারবার বলে যাচ্ছে ম্যানেজ করা যাবে.…?
আমিঃ হ্যাঁ অবশ্যই…!
বন্ধুঃ আমি রোগীর স্বজনকে কথা দিয়ে দিয়েছি,তোকে অবশ্যই ম্যানেজ করে দিতে হবে।
আমিঃ রাত তো এক ধরনের হয়েছে কাকে ফোন দি,তাছাড়া আমার ব্লাড গ্রুপও বি পজেটিভ।
বন্ধুকে রোগী সম্পর্কে ডিটেইল জিজ্ঞাসা করতে বল্লাম,যদিও ব্লাড নিয়ে কাজ করলে এইসব কিছুর খোঁজ নিতে হয়,
ব্লাল্ড ব্যাংকে গেলাম,রোগী সম্পর্কে তার স্বজন সম্পর্কে আরো জানতে চাইলাম…
নাম তার নবী হোছাইন বাড়ি খুনিয়া পালং,তুলাবাগান পুলিশ ফাঁড়ি পার হয়েয় বাসা।
কাজ করে দিন মজুরের তার স্ত্রী বাচ্চা হয়েছে একটা নয় দুটাই মানে জমজ বাচ্চা,দুজনই ছেলে।নবী খুবই গরিব যাহোক ধার,কর্জ করে চিকিৎসা নিচ্ছে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে।
আহবানে ব্লাড দিতে গেলাম সাথে বন্ধুটাও আছে,আছে নবী হোছাইসহ উনার এক আত্মীয়।
কথা বলছিলেম নবীর আত্মীয়র সাথে উনার নাম রহিম।
কথা বলতে বলতে রহিম ভাই আমার বলতে লাগলেন ভাই আপনি তো রক্ত দিবেন, বিনিময় কি দিতে হবে…?
অবাক হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম,মন মেঝাজ তো খারাপ হচ্ছেই।
যাক নিজেকে সামলে নিয়ে মজা নিতে লাগলাম ভাই আমরা তো রক্ত দি প্রতি ব্যাগ ২০০০ টাকা।
আপনি কত দিবেন …?
হ্যাঁ, রহিম ভাই ভালই দর কষাচ্ছেন এক,দের হাজার।
একটি দাম নিধারণ করা হয়েছ তার মধ্যে দেখতে পেলাম নবীর মুখে হাসি,নবী হেঁসে রহিমকে বল্ল ভাই ১৫০০ টা টাকা ভাইয়ে বাঁচায় দিলো,এখন ১৫০০ টাকা আমি কো থেকে দিব নবী রহিমের থেকে জানতে চাইলো।
তারমধ্যে আমি উল্টে গেলাম আমি রক্ত দিতে পারবো না।
না ভাই আমার সম্ভব হচ্ছে না তাই দিতে পারছি না।
তিক্ত কথা বলছিলাম এবং উনাদের মুখের দিকে তাকাচ্ছিলাম।
নবী হোছাইনের দু-চোখে জল জমতে থাকলো, ভাই ভাই ভাই বলেই আবেদন করতে লাগলো,ভাই ২০০০ টাকা পুরোই দিব তবু রক্তটা দেন।
বার বার আমার সমস্যা কথা জানতে চাইছে।
শুরু করলাম সমস্যা কথা ভাই এতো রাতে আমাকে ফোন করেছেন আর আমি এসেছি,ফোনে কি আমাকে টাকার কথা বলেছেন…?
নবীঃ না।
আমিঃ তো আমি টাকা নেবো কেন,তাছাড়া আমি তো টাকার বিনিময়ে রক্ত দেয় না। আপনার যখন টাকা কথা বল্লেন তবেই আমি আমার মতামত ফিরিয়ে নিয়েছি,
ভাই আমাকে মাফ করবেন আমি আপনাদের রক্ত দিতে পারবনা।
নাবীর চোখে দেখি পানি গড়াচ্ছে.…
আর সহ্য করতে পারলাম না দু এক বাক্য বকা দিয়েয় বল্লাম এই রকম কোনদিন কারো কাছে বিনিময় দিয়ে রক্ত নেওয়ার আবেদন করবেন না।
রাত সাড়ে বারোটা ব্লাড ব্যাংকে গিয়ে ব্লাডটা দিয়ে দিলাম।
নবীসহ রোগীর আসা সকলের মুখে হাঁসি ফুটলো।
বিঃদ্র- এই লিখাটা লিখেছি,
খুনিয়া পালং এর একজন ব্লাড দেওয়ার কথা ছিল, ৩০০০ টাকা দাবী করাতে নবী ঐ লোকের রক্ত নিতে ব্যার্থ হয়েছিলেন।
হাসপাতালের বারান্দার বসে কাঁদছিল নবী কেন কাঁদছে তা জিজ্ঞেস করতে গিয়ে পিন্টু জানতে পারলো নবী একজন দিন মজুর বাড়ি পালং স্ত্রীর অপারেশন হয়েছে বি পজেটিভ রক্তের প্রয়োজন,কক্সবাজারে তেমন কেউ পরিচিত নাই,গ্রামের বাড়ি থেকে এক লোককে ঠিক করেছে রক্ত দিবে ৩০০০ ঠাকায়।
পিন্টু তা জানতে পেরে আমাকে ফোন করে নবীর সমস্যাটি সমাধান করল,আমি নিজেও সন্তুষ্ট।
পরিশেষ আমি দেখতে পেলাম নবী সহ তার আত্মীয়দের মুখে হাঁসি,আর আমার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা দেখে আমি মুগ্ধ।
এই মানবতার কাজে টাকার/বিনিময়ের প্রশ্ন আসবে কেন…?