somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুআ-মুনাজাত : কখন ও কিভাবে- পর্ব ৫

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
দুআ-মুনাজাত : কখন ও কিভাবে- পর্ব ৫


১ম পর্ব Click This Link
২য় পর্ব Click This Link
৩য় পর্ব Click This Link
৪র্থ পর্ব Click This Link

দুআ কবুলের অনুকূল অবস্থা ও সময়
কিছু সময় রয়েছে যাতে দুআ কবুল করা হয়। এমনি মানুষের কিছু অবস্থা আছে যা দুআ কবুলের উপযোগী বলে হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে। এমনি কিছু সময়ের কথা নীচে আলোচনা করা হল।

১-আযানের সময় এবং যুদ্ধের ময়দানে যখন মুজাহিদগণ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ান।

হাদীসে এসেছে :
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : দুটো সময় এমন যাতে দুআ ফেরত দেয়া হয় না অথবা খুব কম ফেরত দেয়া হয়। আযানের সময়ের দুআ এবং যখন যুদ্ধের জন্য মুজাহিদগণ শক্রের মুখোমুখি হন। (আবু দাউদ)

২- আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :
আযান ও ইকামাতের মধ্যবর্তী সময়ে দুআ ফেরত দেয়া হয় না। সুতরাং তোমরা দুআ কর। (তিরমিজী ও আহমদ)

৩- সিজদার মধ্যে

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন
বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে নিকটবর্তী হয় যখন সে সেজদারত থাকে। সুতরাং তোমরা এ সময় বেশি করে দুআ কর। (আবু দাউদ ও নাসায়ী)

৪- ফরজ সালাতের শেষে

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করা হল :
কোন দুআ সবচেয়ে বেশি কবুল করা হয়? তিনি বললেন, শেষ রাতে এবং ফরজ সালাতের শেষে। (তিরমিজী)

৫- জুমআর দিনের শেষ অংশে

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
জুমআর দিন বারটি ঘন্টা। এর মধ্যে এমন একটি সময় আছে, সে সময় একজন মুসলিম বান্দা যা আল্লাহর কাছে চায়, তা-ই তিনি দিয়ে দেন। তোমরা সে সময়টি আছরের পর দিনের দিন অংশে তালাশ কর। (আবু দাউদ, নাসায়ী)

৬- রাতের শেষ তৃতীয়াংশে

রাত এমন একটা সময় যখন প্রত্যেকে তার আপনজনের সঙ্গে অবস্থান করে। এ সময় একজন মুমিন ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক গভীরতর করার সুযোগ গ্রহণ করে থাকে। আর এটা এমন এক সময় যখন দুআ কবুল করার জন্য আল্লাহর ঘোষণা রয়েছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :
রাতের এমন একটা অংশ আছে যখন মুমিন বান্দা আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের যা কিছু চায় আল্লাহ তা দিয়ে দেন। আর এ সময়টা প্রতি রাতে। (মুসলিম)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন :
আমাদের প্রতিপালক প্রতি রাতে পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন, যখন রাতের এক তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকে। তখন তিনি বলেন : কে আছে আমার কাছে দুআ করবে আমি কবুল করব? কে আমার কাছে তার যা দরকার প্রার্থনা করবে আমি তাকে তা দিয়ে দেব? কে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে আমি ক্ষমা কেও দেব।

৭- দুআ ইউনুস দ্বারা প্রার্থনা করলে

(ইউনুস আ.) এর দুআ হল যা তিনি মাছের পেটে থাকা অবস্থায় করেছিলেন; “লাইলাহা ইল্লা আনতা ছুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জলিমীন।“ (আপনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, আপনি পবিত্র, সুমহান। আমিই তো অত্যাচারী। (তিরমিজী)

৮- মুসলিম ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার জন্য দুআ করা

আল-কুরআনুল কারীম ও হাদীসে সকল মুসলিমের জন্য দুআ করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। বিশেষ করে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিপদগ্রস্ত মুসলিমদের জন্য দুআ করা আমাদের দায়িত্ব। হাদীসে এসেছে :
আবু দারদা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন : মুসলিম ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের জন্য তার অনুপস্থিতিতে দুআ করলে তা কবুল করা হয়। দুআকারীর মাথার কাছে একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত ফিরিশতা থাকে। যখনই তার ভাইয়ের জন্য কল্যাণের দুআ করে, দায়িত্বপ্রাপ্ত ফিরিশতা তার দুআ শুনে আমীন বলতে থাকে এবং বলে তুমি যে কল্যাণের জন্য দুআ করলে আল্লাহ অনুরূপ কল্যাণ তোমাকেও দান করুন। (মুসলিম)
এ হাদীস দ্বারা যেমন আমরা দুআ কবুলের বিষয়টি বুঝেছি, এমনিভাবে অপর মুসলমান ভাইদের জন্য দুআ করার বিষয়টিও গুরুত্ব দেয়ার কথা শিখেছি। এতে যার জন্য দুআ করা হবে তার যেমন কল্যাণ হবে, তেমনি যিনি দুআ করবেন তিনি লাভবান হবেন দুদিক দিয়ে, প্রথমত তিনি দুআ করার সওয়াব পাবেন। দ্বিতীয়ত তিনি যা দুআ করবেন তা নিজের জন্যও লাভ করবেন।

৯- সিয়ামপালনকারী, মুসাফির, মজলুমের দুআ এবং সন্তানের বিরুদ্ধে মাতা-পিতার দুআ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :
তিনটি দুআ কবুল হবে; এতে কোনো সন্দেহ নেই। সন্তানের বিপক্ষে মাতা-পিতার দুআ, মুসাফিরের দুআ এবং মজলুম বা অত্যাচারিত ব্যক্তির দুআ। (বুখারী-আল আদাবুল মুফরাদ, আবু দাউদ, তিরমিজী)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মুআজ ইবনু জাবালকে ইয়েমেনে গভর্নর করে পাঠান তখন তাকে কয়েকটি নির্দেশ দেন। তার একটি ছিল :
সাবধান থাকবে মজলুম বা অত্যাচারিত ব্যক্তির দুআ হতে। জেনে রেখ! তার দুআ ও আল্লাহর মধ্যে কোনো অন্তরায় নেই। (বুখারী ও মুসলিম)
মজলুমের বদ দুআ থেকে নিজেকে বাঁচাতে হবে সর্বদা। এর অর্থ এটা নয় যে, মজলুমকে দুআ করতে দেয়া যাবে না। বরং রাসূলের বাণীর উদ্দেশ্য হল, কখনো কাউকে সামান্যতম অত্যাচার করা যাবে না। নিজের কাজ-কর্ম, কথা দ্বারা কেউ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, এটার প্রতি সতর্ক থাকা হল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর এ হাদীসের উদ্দেশ্য। যদি আমার দ্বারা কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে সে হবে মজলুম বা অত্যাচারিত। সে আমার বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে দুআ করলে তা অবশ্যই কবুল হবে। এটা ভয় করে চলতে পারলে এ হাদীস স্বার্থক হবে আমাদের জন্য।

১০- আরাফা দিবসের দুআ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :
সর্বোত্তম দুআ হল আরাফার দুআ।
জিলহজ্ব মাসের নয় তারিখে যারা আরফাতে অবস্থান করেন তাদের দুআ কবুল হয়। এটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বহু সংখ্যক হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।

১১- বিপদগ্রস্ত অসহায় ব্যক্তির দুআ

বিপদগ্রস্ত অসহায় তথা আর্তের দুআ কবুল করা হয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যখন মুশরিক আর্ত মানুষের দুআ কবুল করেন তখন মুসলমানের দুআ কেন কবুল করবেন না। আবার যদি সে মুসলিম ঈমানদার ও মুত্তাকী হয় তখন তার দুআ কবুলে বাধা কি হতে পারে?
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :
কে আর্তের প্রার্থনায় সাড়া দেয়? যখন সে তাঁকে ডাকে এবং কে বিপদাপদ দূর করেন। (আন নামল : ৬২)

১২- হজ্ব ও উমরাকারীর দুআ এবং আল্লাহর পথে জিহাদে অংশগ্রহণকারীর দুআ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :
আল্লাহর পথে জিহাদকারী যোদ্ধা, হজ্বকারী এবং উমারাহকারী আল্লাহর প্রতিনিধি। তারা দুআ করলে আল্লাহ কবুল করেন এবং প্রার্থনা করলে আল্লাহ দিয়ে থাকেন। (ইবনু মাজাহ)


চলবে, ইন শা’ আল্লাহ .................................

মূল: ফায়সাল বিন আলী আল-বা’দানী
অনুবাদ: আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
---- Preaching Authentic Islam in Bangla থেকে সংগৃহীত ।।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×