* দিনশেষে নিজেকে কিছু প্রশ্ন করা যেতে পারে--
আজকে কি কোন কিছু দান করেছি কাউকে?
প্রিয় কিছু কাউকে ভালোবেসে দিয়েছি?
আল্লাহর জন্য ভালোবেসে?
আজকে কি আমি কারো হাসিমুখ হবার কারণ হতে পেরেছি? একজনেরও?
* সলাতুল ফযরের সময়ে দিগন্তে আলো ফোটার আগেই সমস্ত পাখিরা উঠে পড়ে, আল্লাহর কৃতজ্ঞতায় নিজেদের নিয়োজিত করে, তাসবিহ পাঠ করে সমস্ত প্রাণীকূল। তাদের কিচিরমিচির শব্দে প্রকৃতি একটা অদ্ভুত মাত্রা পায়।
হতভাগা আমরা সমস্ত প্রাণীজগতের মাঝে সবচেয়ে বেশি নি'আমাত ভোগ করি, কুর'আন নাযিল হয়েছে আমাদেরই উপরে, যে কুর'আন পাহাড়ের উপরে নাযিল হলে তা ভয়ে ফেটে চৌচির হয়ে যেত! কত বড় কথা এটা, আমাদের উপলব্ধিতেও আসেনা। তবু আমরা সলাত কায়েম না করে ঘুমিয়ে রই। পাখিরা অলস নয়, তারা তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী পথে বেরিয়ে পড়ে, শূণ্য হাতে সকালে বের হয়ে রাতে ভরা ভরাপেটে বাড়ি ফেরে। আল্লাহ আমাদের অলসতা থেকে মুক্তি দিন, কৃতজ্ঞ বান্দা হবার, সুন্দর উপায়ে তার যিকির করার এবং যারা সবসময় সলাতে মুকিম থাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবার তাওফীক দান করুন।
* আল্লাহ যে আমাকে কত অজস্র নিয়ামাতের মধ্যে রেখেছিলেন তা আমি তখন পর্যন্ত টের পাইনি যখন সেগুলো থেকে মাত্র অল্প কয়েকটি নিয়ামাত আল্লাহ তুলে নিলেন।
* ইসলামিক মানুষগুলার কষ্ট অন্যমাত্রার। সে চাইলেও তার প্রতি অন্যদের করা অন্যায়ের জবাব ইচ্ছামতন দিতে পারে না। অন্যায়ের জবাবে তাকে ন্যায় করতে হয়। সবর করতে হয়। হয়ত কোনদিন নির্বোধদের অন্যায়ের জবাব দেয়াও হয়না। অভদ্র লোকদের উপরে অনৈসলামিক উপায়ে শোধ নেয়াও যায়না। আল্লাহ ঈমানদারদের অবশ্যই পুরষ্কৃত করবেন... এবং তা হবে উনার ইচ্ছামতন সময়ে।
* সফল মানুষদের জীবন জানতে আমার অনেক পছন্দ। সেখানে তাদের দৃষ্টিভংগি এবং কর্মপদ্ধতি জানা যায় যা জীবনে খুব উপকারে আসে। জীবনী যদি হয় সাহাবীদের (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) তাহলে সেটা অন্যরকম জীবনীশক্তি দান করে হৃদয় ও মনে।
অনেকদিন পর আসহাবে রাসূলের জীবনকথা পড়তে গিয়ে মনে হলো, তাদের আখলাক ছিলো অনন্য। তারা অনর্থক কথা এড়িয়ে চলতেন, যতটুকু না হলেই না, তার বেশি সম্পদ রাখতেন না, লালায়িত হতেন না। এবং তারা খুবই দানশীল ছিলেন। গরীবের কাছে গিয়ে সাধ্যমতন বেশি বেশি দান করা তারা দায়িত্ব মনে করতেন, দান করে আত্মতৃপ্তি নিতে যেতেন না।
আল্লাহ আমাদের উত্তম আখলাক দান করুন এবং তার প্রিয়ভাজন হবার তাওফীক দিন।
* আমরা মুসলিমরা 'হ্যাপি এন্ডিং'-তে বিশ্বাস করি। এখনকার ওয়েস্টার্ন লিটারেচারের মূল রচনারসমূহের বেশিরভাগই ট্রাজেডি। এসবের ফিনিশিংগুলো দুঃখের, কষ্টের, হতাশার ও অপ্রাপ্তিতে ভরপুর। কিন্তু আমাদের কুর'আনে যেসব গল্প উদ্ধৃত হয়েছে সবই সুন্দর ্গল্প যেগুলোতে ভালো মানুষদের বিজয়ের কথা উল্লেখ করা আছে। এই গল্পগুলো আমাদের আশাবাদী হতে শেখায়। আর আল্লাহ এগুলোর মাঝেই রেখেছেন সব সেরা গল্প।
আমাদের এই দুনিয়া তো প্রকৃত বাসস্থান নয়। আমাদের আসল ঠিকানা জান্নাতে ছিলো। আমরা তো এই নীচ, বাজে, ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীতে নয় বরং অনেক অনেক উঁচুতে, সেই জান্নাতের দিকে নজর দিয়ে রাখি। আমাদের দৃষ্টি এখান থেকে কেবল উপরের দিকেই যায়। ইনশাআল্লাহ সেখানেই ফেরার মাধ্যমে আমাদের "হ্যাপি এন্ডিং" হবে। কোন দুঃখ কষ্ট তখন স্পর্শ করবে না। কেবল শান্তি আর শান্তি বিরাজ করবে....
* আশেপাশের মানুষগুলোকে আজকাল কেমন যেন বিপর্যস্ত, অসুস্থ লাগে। হাসপাতালে রোগী দেখেও তাদের চেহারায় তেমন বিকার হয় না, এমনকি মৃত মানুষের লাশ, খাটিয়া, কবর দেখলেও তেমন ভ্রূক্ষেপ হয়না। ক্বালবগুলো মলিন হয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত। মুসলিমরা তো বটেই, গোটা পৃথিবীর মানুষই এখন তাদের ভুগছে আধ্যাত্মিকতা অভাবে, ডুবে গেছে ম্যাটেরিয়ালিজমে। ভোগবাদে ডুবে আত্মা যাচ্ছে মরে।
এর সম্ভবত একটি কারণ হলো, আমরা খুব বেশি যান্ত্রিকতায় ডুবে আছি, প্রকৃতি থেকে দূরে চলে গেছি। আল্লাহ কুরআনে আমাদেরকে যে উদাহরণগুলো দিয়েছেন সেগুলো খুবই প্রাকৃতিক। মশা- মাছি, চাঁদ-সূর্য, সমুদ্র, পাথর, মাকড়শা, রাত-দিন, আসমান, জমিন এরকম অনেক কিছুর মাঝে আল্লাহ আমাদের চিন্তার খোরাক দিয়েছেন। প্রকৃতির সান্নিধ্যে গেলে আমার হৃদয় অনুভব করতে শেখে। ভোরের সুন্দর হাওয়া ও স্নিগ্ধ আলো হৃদয়কে প্রশান্ত করে। এ থেকে তো এখনকার নগরবাসী বঞ্চিত থাকে ঘুমিয়ে থেকে এবং ঘরের ভেতর ঢুকে থেকে।
আমাদের দরকার যান্ত্রিকতার হাত থেকে বাঁচতে কিছুদিন পরপর হলেও যতটা সম্ভব সুন্দর আল্লাহর সৃষ্টি এই প্রকৃতির কাছাকাছি যাওয়া। আকাশ-নদী- সমুদ্র এবং পাখপাখালির সান্নিধ্য যতটা পাওয়া যাবে, হৃদয়ে উপলব্ধি জেগে উঠবে যে আমরা কত তুচ্ছ, আল্লাহর সৃষ্টিজগত কতটা বিশাল এবং আল্লাহ কত সুন্দর করে সমস্ত সৃষ্টিজগতের প্রতিপালন করেন... সুবহানাল্লাহ!
--- ( স্বপ্নচারী আব্দুল্লাহ 'র লেখা থেকে সংগ্রিহীত )
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:৫২