সালটা ২০৪৮............,
ক. ঠক! ঠক! ঠক! মহিদুল সাহেবের বাসার দরজায় তিনটি টোকা। মহিদুল সাহেব দ্রুত পায়ের স্যান্ডেল হাতে নিয়ে বাসার প্রধান দরজার কাছে চলে গেলো। উনি খুব সাবধান(!) দরজার খোলার বিষয়ে। এজন্য কলিংবেলও নষ্ট করে রেখেছেন রাতেই। দরজার ফুটো দিয়ে দেখলেন ওপাশে ৫/৬ জন যুবক,২ জন নারী আর সাথে কিছু পুলিশ। তিনি নিরব। নিরব থেকেই দরজা না খুলে সেভাবেই ঘরে চলে গেলেন যেনো বাইরের মানুষরা না বুঝতে পারে বাসায় কেউ আছে। বাসায় ঢুকেই সবাইকে "ওরা আসছে, আসছে" বলে চুপ করে ঘরের এক কোণে লুকায় পরলেন।আবারো দরজায় টোকা, ঠক! ঠক!! ঠক!!!। কিছুক্ষণ পর আবারো টোকা। তারপর আবার নিরবতা।
খ. আবিদ সাহেব খুব মনযোগ দিয়ে ফেসবুক ব্রাউজ করছেন। দেশের কি অবস্থা উনি এখন সব ফেসবুক থেকেই আপডেট নেন। দেশে আজ কতটুকু উৎসব আমেজ তা তিনি খুটিয়ে খুটিয়ে নিশ্চিত হচ্ছেন। ইদানিং উনার প্রভাব এলাকায় ভালোই বাড়ছে। ক্ষমতাসীন দলীয় নেতা হিসেবে তো তার এইটুকু আধিপত্য থাকতেই হবে। না হলে মানুষকে মুখ দেখাবেন কি করে। যাহোক উনার দাদা ২ বারের এমপি। উনার বাবা দেশের বাইরে না থাকলে পর্যাক্রমে হয়তোবা আজ উনি এমপি হতেন(!) যাইহোক আফসোস করার মতো ব্যাক্তি তিনি নন। এসব ভাবতে ভাবতেই কলিং বেল বেজে উঠলো, দাঁড়ান বলে তিনি দরজার খুলার জন্য উনার বাসার কাজের রোবট জন কে নির্দেশ দিলো, Hello! John, Open the Door please! এই জনকেই উনি প্লিজ বলেন। প্লিজ ছাড়া নাকি জন কোনো কাজ করে না। ৫ বছর আগে জনকে ২ লাখ টাকায় চায়না থেকে কিনে এনেছেন বাড়ির সব কাজের জন্য। যথেষ্ঠ কর্মঠ রোবট বটে!
আবিদ সাহেব হুংকার দিয়ে বলে উঠলেন, আ্রমার ছেলে মেয়ে ঘুমাচ্ছে কেউ ভোট দিতে পারবে না। এখন মাত্র বেলা ১২ টা বাজে ওদের ডাকাই যাবে না খবরদার। আপনারা আমার ভোট নিতে আসছেন দিলাম এখন আসতে পারেন। নিচু স্বরে নির্বাচন কমিশনারের লোকটি বলল, স্যার সকাল থেকেই আশে পাশের অনেক বাড়িতে গিয়েছিলাম, কেউ নাই, কেউ দরজা খুলে না। আপনি আমাদের সম্মানিত নাগরিক আপনি আমাদের একটু সাহয্য না করলে বিপদে পড়বো। হয়তোবা আমরা কেউ কেউ চাকরী হারাবো। অনেক টাকা বেতনের চাকরী স্যার! বউ বাচ্চাকে খাওয়াবো কি! আবিদ সাহেব আর যাইহোক কারোর কষ্ট খুব একটা সহ্য করতে পারে না। উনি এবার একটু নিচু স্বরে লোকটাকে জিজ্ঞেস করলেন, সকাল থেকে কয়টি ভোট কাস্ট করছেন? লোকটি জানায়, স্যার ৬ টি। আমাদের সম্মানিত প্রার্থীর বাড়ির সবাই ভোট দিয়েছেন।
আবিদ সাহেবের স্ত্রী ততক্ষণে ঘুম থেকে উঠে ড্রয়িং রুমে আসলেন। এসেই বিস্ময়কর দৃষ্টিতে বলে উঠলেন আজ কি নির্বাচন নাকি(!)
"জি! ম্যাম। জাতীয় নির্বাচন"- পুলিশ সদস্যটি জোড় করে হাসিমুখে জানালো। আবিদ সাহেবের স্ত্রী একটু গম্ভির হলেন। "আচ্ছা এই ভোট কিভাবে দিতে হয়?" প্রশ্ন করলেন মিসেস আবিদ। একটু উৎসুক হয়ে অফিসার দেখায় দেয় ইলেক্টনিক ডিভাইসে কিভাবে ভোট দিতে হয়। এমন সময় কিছু সাংবাদিক বাইরে ভিড় করা শুরু করলো। আবিদ সাহেব সবাইকে ভিতরে ঢুকতে নির্দেশ দিলেন। কেউ লাইভে থাকলো কেউ, কেউ বা ক্লিক ক্লিক করে ছবি তুললো। এমন সময় মিস আবিদ জানালো আচ্ছা তাহলে আমার প্রথম ভোট টা দিয়ে দেই। সবে ৪০ এ পা রেখেছেন মিসেস আবিদ। প্রথম ভোট দিচ্ছেন। সবাই খুশি। ভোট দিলেন মিসেস আবিদ।
সবাই খুশি কিন্তু এখনো কপালে ভাঁজ যায় নাই সেই অফিসারের। তিনি আমতা আমতা করে অনুরোধ করেন, স্যার আরেকটা ভোট হলে ভালো হয়............সংখ্যাটা খুব.........স্যার যদি একটু.........
মিসেস আবিদ হেসে বলেন, ওকে আরেকটা ভোট জন দিয়ে দিক। মিসেস আবিদ জনকে বলে, Please, John follow his instruction.
সাথে সাথে অফিসারটি সেই ভোট দেওয়ার যন্ত্রতে কি কি করলেন। যন্ত্রটায় কেমন লাল লাইট আর একটা সাউন্ড বেজে উঠলো। একটু পর John ভোট দিলেন।
সাথে সাথে সারাদেশে নিউজ হলো,
১। "ডিজিটাল জামানায় দেশ,
ভোট দিলো রোবট!"
২। ৪০ বছরে প্রথম ভোট দিলেন
সচেতন নাগরিক মিসেস আবিদ!
৩। উৎসব উদ্দিপনায় শেষ হলো নির্বাচন,
বাদ গেলো না একটি রোবটও!
৪। রোবটের ভোটে প্রথমবারের মতো
কে নিচ্ছেন ক্ষমতা?
৫। কিভাবে ভোট দিলেন রোবট? (দেখুন ভিডিও সহ)
গ. নির্বাচন শেষ। গল্পও শেষ। ভালো থাকুন। বেশি বেশি ভোট দিন। সুস্থ থাকুন।
বি.দ্রঃ- গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। কেউ ব্যাক্তিগত বা রাজনৈতিক ভাবে আঘাত পেলে দুঃখিত।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:৩৩