ছোট বেলায় একটা ভাব সম্প্রসারণ খুব পাড়তাম! আজ আবারো মনে পড়লো!
“অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে/ তব ঘৃণা তারে যেন তৃণ সম দহে"
একটা গল্প শুনাই,
এক সাগরের ধারে একটা দেশ ছিলো এবং সেখানে কিছু কিউট দায়িত্ববান নাগরিক ছিলো!
দীর্ঘদিন ধরে সেখানে যখন স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক দূর্নীতি হয়ে আসছিলো, সরকারী হাসপাতাল গুলো যখন ছিলো নামমাত্র, বেসরকারী হাসপাতাল গুলোতে চলতো ব্যবসা তখন তারা একদম চুপ ছিলো । নিজ বা নিজেদের উদ্যোগে কিছু প্যারাসিটামল/স্যালাইন বিতরণ বা কোথাও গরীবদের জন্য দুই একদিন মেডিক্যাল ক্যাম্প করে দিয়েই নাগরিক দায় সারাই তাদের কাজ ছিলো!! কিংবা বানিয়েছিলো তারা দুই/একটা হাসপাতাল!
যখন দেশের শিক্ষা ব্যাবস্থা কে ধীরে ধীরে পঙ্গু করে দেওয়া হলো, ভুড়ি ভুড়ি পাশ করানোর নামে আর বড় বড় বিল্ডিং বানিয়েই ফুলিয়ে ফাপিয়ে শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশান উন্নতি দেখানো চেষ্টা চলছিলো সব বুঝেও তারা নির্বাক ছিলো! কখনো দিয়েছিলো হাত তালি! কিংবা নিজেরা শো-অফ মার্কা স্কুল বানিয়ে দিলো! এতেই নাগরিক দায়-দায়িত্ব সেরে আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তুলতো!
সেই দেশে একসময় যখন চলছিলো ব্যাপক ব্যাংক লুট, শেয়ার মার্কেট লুট, দেশের লুটেরা যখন সে দেশের সরকারী প্রায় সকল ক্ষেত্রে লুটপাট করে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছিলো দেশকে পঙ্গু করে দিচ্ছিলো তখন সেই কিউট নাগরিকরা ত্রাণ দিতে ব্যস্ত ছিলো। কোথাও দুইটা ঘর বানাচ্ছে, কোথাও হাজার জনের খাবার বিতরণ করছিলো,কোথাও বা তুলে যাচ্ছিলো সেলফি! এতেই তাদের নাগরিক দায়িত্ব সেরে জাতীয় বীর ভাবা শুরু করেছিলো নিজেদের!
তারা সব সময়েই ভাবতো তারাই পারবো চেইঞ্জ করতে । কারণ সবাই নিজেদের সব কাজকেই পজেটিভ ভবতো! অবশ্য না ভাবার কোনো কারণ ছলো না! প্রত্যেকেই নিজ নিজ জায়গা থেকে এগিয়ে আসছিলো! এভাবেই তো সব বদলে ফেলা সম্ভব!
কিন্তু সেই দেশেও হঠাত করে মহামারী ছোয়াচে রোগ ব্যাপক আকার ধারণ করলো! এইবার চিত্র হলো ভিন্ন! দেশের সরকারের অর্থ ঘাটতি দাঁড়ালো ব্যাপক হারে! দেশের মানুষকে সরকারের পক্ষ থেকে খাদ্য দেওয়া সম্ভব হচ্ছিলো না! এমনকি ত্রাণ ও লুট হতে শুরু হলো ব্যাপক হারে ! হাসপাতাল গুলোর আসল চিত্র ফুটে উঠা শুরু করলো! কোথাও বেড নাই, অক্সিজেন নাই, আইসিইউ নাই! চারিদিকে হাহাকার! সেই তথাকথিত শিক্ষিতদের চেহারাও ফুতে উঠলো!
অথচ, নাগরিকরা সেই সব কাজের পাশাপাশি যদি একটু Speak Out করত ! শুধু সাহায্য না করে পাশাপাশি অন্তত একটু অধিকার নিয়ে সচ্চার থাকতো! দেশের মানুষের জন্য অধিকার আদায়ে নিজের কুরবানী দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতো বরং অল্পতেই অনেক বড় সাহায্য হতো ।
অবশ্য সে নাগরিকদের সেই সামর্থ ছিলো না! কারন তারা তাদের কাজগুলো সেই লুটেরাদের টাকাতেই এক প্রকার করতো! বরং একটু কথা বললেই অর্থ সহায়তা না পাওয়ার ভয় ছিলো! টু শব্দও করার সামর্থ্য ছিলো না!
যার দরুণ সেই মরামারির সময় , সে দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী আরও বহু পিছিয়ে পড়ে! হাতে ক্ষুদ্র দুই পিস রুটি, অসুস্থ মেয়েটি অক্সিজেন সিলিন্ডার না পেয়ে গরম হাড়ির ভাপ নিতে থাকে রাস্তা এমনকি মধ্যবিত্ত মেয়েটিও অসুস্থ বাবাকে আইসিইউ এর অভাবে রাস্তায় কাঁদতে থাকে!...!!!
আচ্ছা বলেন তো, ভন্ড কারা?? দোষ কার ছিলো সে দেশে?
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০২০ রাত ৯:৫৯