somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রণয় সম্ভার ঃ বহুমাত্রিক দৃষ্টিতে ফিরে যাওয়া আকাশের শেষ রঙ

১৮ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অশ্ব ঘোষ (তারিখঃ ১৮ জুলাই ২০১৫, ৫:২২ পূর্বাহ্ন)
০১.
এ ঠিক পাঠাভিজ্ঞতা নয়; আবার সমালোচনাও নয়; এ দুয়ের মাঝামাঝি; বলা যায় সহপাঠ। কবিতাগ্রন্থের সাথে সাথে এগুনো। এর সাথে কথা বলা। মনে মনে। ঊহ্য সেই সংলাপেরই নামান্তর হবে বোধ করি এই লেখা। প্রথাগত কোনো টোনে বা শিরোনামে আমি একে বাঁধতেও চাই না। যাই হোক, পূর্বকথন রেখে পশ্চিমকথনের দিকে যাওয়া যাক। ফেব্রুয়ারী, ২০১৪-তে অগ্রদূত থেকে প্রকাশিত হয়েছে নব্বই দশকের অন্যতম কবি রহমান হেনরীর প্রণয় সম্ভার নামক এই কবিতাগ্রন্থটি। গ্রন্থের দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদটি করেছেন মোস্তাফিজ কারিগর।
গ্রন্থের নাম প্রণয় সম্ভার হলে সাধারণত আমরা যে প্রেম ও প্রণয়ের আধিপত্যভরা প্রেক্ষাপটের কথা ভেবে বসি এই গ্রন্থ পাঠে সেই চিরাচরিত ধারণা কিছুটা বিঘিœত হবে। প্রণয় শব্দটির ভেতরে কবি, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়, ঢুকিয়ে দিয়েছেন এক বিরাট প্রেক্ষাপট। ফলে প্রণয় শব্দটিও চলে যায় বহুমাত্রিকতার দিকে কেননা তখন তা কেবল আর প্রেমিকার বা প্রেমাষ্পদের একক আধিপত্যে থাকে না। প্রেমকে কেন্দ্র করে কম্পাসের ঘূর্ণায়মাণ কাঁটার মতো ঘুরতে থাকে। অথচ অন্য কাঁটাটি প্রেমে স্থির। এই কথা বলতে গিয়ে ইংরেজ কবি জন ডানের একটি কবিতার কথা মনে এলো। মনে যখন এলোই শেয়ারও করা যাক আপনাদের সাথে। জন ডানের বহুল পঠিত সেই কবিতাটির নাম A Valediction: Forbidding Mourning. এই কবিতায় এমন চারটি পংক্তি আছে যেখানে কবি তাকে এবং তার প্রেমিকাকে কম্পাসের দুটি কাঁটার সাথে তুলনা করেছেন এবং বলেছেনঃ If they be two, they are two so/ As stiff twin compasses are two;/Thy soul, the fixed foot, makes no show/ To move, but doth, if the other do. আমার মনে হয়েছে, প্রণয় সম্ভারের ক্ষেত্রেও অনেকটা এমনই ঘটেছে, প্রেম কেন্দ্রে আছে ঠিকই কম্পাসের একটি কাঁটা অধিকার করে, ঘূর্ণায়মান কাঁটাটি কিন্তু প্রদক্ষিণ করছে জগৎ। চরাচর। রাত্রির ভেতর থেকে জেগে ওঠা দিন। দিনের গহন থেকে অকস্মাৎ লাফ দিয়ে বেরিয়ে আসা অন্ধকারবহুল রাত। অবশ্য এমন একটা ইঙ্গিত গ্রন্থটির ব্যাক কভারের সংক্ষিপ্ত গ্রন্থ-পরিচিতিতে উঠে এসেছে। একবার সেদিকেই তাকানো যাক। “প্রণয় সম্ভার এ কবির প্রেমের কবিতাগুলোর একটি বাছাই সংকলন। প্রণয়ধর্মিতা সত্ত্বেও এসব কবিতায় দীক্ষিত পাঠকমাত্রই খুঁজে পাবেন বহুমাত্রিক এবং বহুরৈখিক ব্যঞ্জনা ও বিস্তার।” এটুকুই যথেষ্ঠ পাঠকের কাছে। একটা প্রস্তুতি তৈরি হয়ে যায় যা পরবর্তীতে গ্রন্থপাঠে তাকে সাহায্য করে। পূর্বানুমান বলতে একটা কথা তো আছেই। বিশেষত কবিতায় যদি এটা মিলে যায় তাহলে পাঠকের জন্য ব্যাপারটা অনেকটাই সহজ হয়ে ওঠে কেননা ভাষাকে অর্থের কাছে নিয়ে যাবার যে চেষ্টায় সকল কবিই নিবিষ্ট থাকেন, সেখানে কমিউনিকেশনের খানিকটা গ্যাপ থাকতেই পারে। জীবন ক্রমাগত যতই জটিল হচ্ছে, কবিতাও তার পূর্ব-পরিচিত অবয়ব ঘুরিয়ে সেই জটিলতাকে প্রকাশের দিকে নিয়ে যেতে চাইছে। তাই হয়তো আধুনিক যুগ থেকেই আম-জনতা বলতে আমরা যাদের বুঝি তারা কবিতায় আর স্বস্তি খুঁজে পান না। কেননা আধুনিক পরবর্তী যুগের কবিতা পাঠ করতে হলে, পাঠকের পক্ষে সামান্য প্রস্তুতি থাকা ভালো; যে প্রস্তুতি তাকে কবিতাটির আরো কাছে নিয়ে যাবে। কবিতা ও সে, খানিক দূরত্ব রেখে হলেও একটি জায়গায় মিলিত হতে পারবে। কিন্তু যদি একেবারেই প্রস্তুতি না থাকে তাহলে বারবার হোঁচট খেতে হবে। আছড়ে পড়তে হবে এবং এইভাবে হোঁচট খেতে খেতে আর আছড়ে পড়তে পড়তে পাঠক নিজেই সরে যাবেন কবিতাপাঠ থেকে। অবশ্য আমি মনে করি, সামান্যতম হলেও প্রস্তুতি থাকা পাঠকের পক্ষে বিশেষ উপকারী। এই যে প্রণয়ের ভেতরে অপ্রণয়, স্বদেশ, বিশ্ব, চেতন, অবচেতনের উপস্থিতি- এর ইঙ্গিত আমরা গ্রন্থের শুরুতে কবির জবানীতেই টের পাই। শাদাকথা হিসাবে তিনি আমাদের বলেন, “.... নির্বাচিত প্রেমের কবিতা আলাদাভাবে করারও একটা সুপ্তবাসনা ছিলো মনে, সে-কারণেই কিছু কবিতা আলাদাভাবে রাখা হয়েছিলো। বইটি শেষ-অব্দি প্রণয় সম্ভার নামে আলোতে আসছে।.......... প্রণয় সম্ভার প্রেমের কবিতা হ’লেও, দীক্ষিত পাঠকমাত্রই লক্ষ করে দেখবেন, এই কবিতাগুলো আক্ষরিক অর্থে নিছক প্রেমের কবিতা, এমনটি মেনে নেবার কোনও কারণ নেই।” ফলে আমাদের জন্যে একটা যাত্রাপথের রেখা উঁকি দিয়ে বসে। আমরাও সেই পথেই হেঁটে যেতে পারি।
গ্রন্থের প্রথম কবিতাটির দিকেই তাকানো যাকঃ
মৃহূর্ত মুহূর্তে কেটে যায়/ দিনরাত্রি, মাস ও বৎসর/ গমের, যবের দিন
বৃক্ষ নাই, পাখি ও পুষ্পের মুখে/ ফলের শস্যের কোনও অধিবার্তা নাই।
অন্তত এই কবিতার সাপেক্ষে প্রেমের এমন একটা পটভূমি আমরা পাই যেখানে সময় শুধু কাটেই মাত্র, স্মারক রাখে না; পাখি ও ফুলের কাছে শস্যের কোনও অধিবার্তা নাই। কিন্তু তৃতীয় পংক্তিতে আমরা দেখি যে গম ও যবের কথা বলা হয়েছে আবার পঞ্চম পংক্তিতে যখন বলা হচ্ছে ফলের শস্যের কোনও অধিবার্তা নাই, তখন, বিশেষত যারা ডিকনস্ট্রাকটিভ মেথডে বিশ্বাসী তারা বলবেন, এ তো স্পষ্ট স্ববিরোধীতা হয়ে গেলো। শব্দ, বাক্য ও ভাষার অন্তর্গত দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে যারা সাহিত্য বিশ্লেষণ করতে চান, তাদের জন্যও এখানে একটা খেল অপেক্ষা করছে। গম ও যবের দিন দিন কাটছে মানুষের, কিন্তু পাখি ও পুষ্পের মুখে শস্যের কোনও অধিবার্তা নাই বলে পাখি ও ফলের দিনের দিকেই কবি ইঙ্গিত করেছেন স্পষ্ট। তারমানে স্ববিরোধীতা তো নয়ই বরং একটা শ্রেণিকরণ তৈরি হলো। অথচ আমরা জানি পাখি ও পুষ্পের সাথে প্রেম উঠে আসে। অন্তত প্রথাগতভাবে আমরা এমনটাই দেখে এসেছি বহু আগে থেকে। এই কবিতায়ই আরেকটু এগুনো যাক।
এই বিভূতিভূষণে কী অনুদার কৃপণের মতো তোমার দেহরেখা! ও স্বদেশ আমার, ও আমার প্রিয়তমা, এইসব ক্ষমতা ও অক্ষমতার পঙ্কনিক্ষেপী বাদানুবাদ থেকে, বিসংবাদের চিরায়ত পলিকেটনিক থেকে বহু দূরে, আলোকসংবেদী ওই ঘ্রাণময় শরীর আমি পাল্টে দেবো চিরসবুজ পাতায়-ভরা নিপুণ যাদুতে;......... অবাস্তবতা যদি একটা বেতফল, তার খোসা ছাড়ালেই ভেতরে চকচক করে জিভে-জল-আনা বাস্তবতা।
আবার কবিতাটির দ্বিতীয় অংশে তাকে আমরা বলতে শুনিঃ
লিঙ্গনির্বিশেষে, প্রণয়বান প্রতিটি মানুষ একেক রকমের উপাসনালয়।
সামগ্রিকভাবে কবিতাগ্রন্থটির পাঠানুভূতি ভাগ করার আগে আমি মনে করি প্রথম কবিতা থেকে যতটুকু নির্দেশনা নেয়া সম্ভব তা আমাদের নেয়া হলো। এবার চলুন সামনের দিকে এগুনো যাক।
০২.
ব্যক্তিগতভাবে আমি কবিতার কনটেন্টের উপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করে থাকি। কেন জানি না, আমার মনে হয়, বক্তব্য যদি কিছু নাই থাকে, তাহলে কিছু না বলাই ভালো। কিন্তু সমকালে কনটেন্টের দিক থেকে দেখলে কবিতা অত্যন্ত নাজুক জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে। কনটেন্টের ভেতর দিয়েই প্রতিফলিত কবির চিন্তাধারা। দৃষ্টিভঙ্গি। এবং সামগ্রিকভাবে তার দর্শন। আমি আগেও খেয়াল করেছি, তার অন্য যেকতটি কবিতাগ্রন্থ আমার পড়া হয়েছে, সেগুলোর সাপেক্ষে দেখেছি, বেহুদা প্যাঁচালে তিনি অভ্যস্ত নন। কেবল চিত্রকল্প নির্মাণ, কেবল ভিনদেশী রঙের আঁচর দিয়ে কবিতা সাজাতে অভ্যস্ত নন। এটা বোধের ফসল। সহজে এই গুণ করায়ত্ব করা যায় না। যেভাবেই হোক, অবশ্যই অত্যন্ত এটা অর্জন সম্ভব, কবি রহমান হেনরী, তা করায়ত্ব করেছেন। এখানে বলে রাখা ভালো, অনেকেই অমুকের কবিতায় তমুকের প্রভাব খোঁজেন। খোঁজেন তারা অনুজ কবিকে হেয় প্রতিপন্ন করতে চান। দেখাতে চান, তার নিজের দেখার কোনো চোখ নেই। অগ্রজেরা যা দেখে গেছেন তিনি তারই অনুপ্রাস সৃষ্টি করছেন মাত্র। আমি অবশ্য উল্টোভাবে বিষয়টাকে দেখি। বাংলা কবিতা একটা বিশাল ধারা। এখানে পূর্ব-কবির সাথে উত্তর-কবির কোনো না কোনো সাদৃশ্য, চিন্তাধারার মিল বা একই চিন্তার অমিল থাকতে পারে। এটা দোষের কিছু নয়। বরং আমরা দেখেছি যে, কোনো ভাষার কবিতা এভাবেই এগিয়ে যায়। নিজস্বতার ক্ষেত্র তৈরি করে থাকে। ফলে একটা রিলে রেসের সাথে একে অনেকেই তুলনা করে থাকেন। একটা প্রজন্ম যেন অব্যবহিত পরের প্রজন্মের কবি বা কবিদের কাছে হ্যান্ডফ্যাগটা সমর্পন করে যান। পরের প্রজন্মের কবিদের দায়িত্ব হচ্ছে তার সাধ্য মতো চেষ্টা করা। স্বভাবকবি, চারণকবিদের যুগ এখন আর নেই। এখন কবিতা কেবল অনুভূতির সুড়সুড়ি জায়ানোর কথা চিন্তা করে না। বুদ্ধির, ভাবনার বা কনটেন্টের একটা বিশাল জায়গা থাকে যাতে করে বোঝা যায় কবির ব্যক্তিগত দৃষ্টিপাতের ক্ষমতা। অবশ্য আজকাল যে কাউকেই কবি হিসাবে চালানো যায়। হেটোমেঠো দুই একটা পংক্তি রচনা করলেই হলো। ব্যস তাকে দিয়ে দাও কবি আখ্যা। শুধু তাই নয়, এও শোনা যায়, অমুক কবি জীবনানন্দকে অতিক্রম করে গেছেন, তমুক কবি বিনয়কে। তাহলে দেখা যাচ্ছে এটা একটা অতিক্রমণের খেলা। আমি তা মনে করি না। আমি মনে করি, বহুমুখীতা এবং বৈচিত্র্যের ভিত্তিতে একজন শক্তিমান কবি অর্জন করে নেন নিজস্বতা। তিনি তার কোনো পূর্বজ কবির সাথে কোনো মতেই দ্বন্দ্বে নামেন না যে তাকে বা তার পথ ধরে তাকে অতিক্রম করে যাবেন। এখনো পর্যন্ত আমরা যতদূর জানি, বাংলা কবিতার ধারা সূচিত হয়েছে চর্যার সময় থেকে এবং আজ অবধি তা বহমান। এখানে রিপিটেশন আসতেই পারে। এমনও হতে পারে বহু আগে লিখে যাওয়া কোনো কবিতারই পুনর্লিখন হচ্ছে বর্তমান সময়ের কোনো কবির কবিতায়। যদি বর্তমান কবির লেখায় সেই আত্মস্থ করে নেবার মতো শক্তি থাকে তাহলে এটা তার কবিতাকে আরো শক্তিশালী করে তোলে কেননা একটা ধারার প্রবণতা টিকে থাকে তার মধ্য দিয়ে। এ প্রসঙ্গে মায়া এঞ্জেলোর একটা কবিতার কয়েকটা পংক্তির দিকে তাকানো যেতে পারে।
Too fat to whore,/Too mad to work, /Searches her dreams for the /Lucky sign and walks bare-handed/Into a den of bureaucrats for her portion./‘They don’t give me welfare,/I take it.’ অসম্ভব নারীবাদী, আমলাতন্ত্র বিরোধী একটি কবিতা। আমেরিকান কবিতার ধারায় এমন কবিতা আমরা বহু আগে থেকেই পড়ে আসছি। বহুবার পড়েছি। তারপরও শেষ দুইটি পংক্তিতে এসে তিনি যে মোচড়াটা দেন তার ফলেই অন্যদের থেকে তিনি পৃথক হয়ে যান। এটা আমরা খেয়াল করি কবি রহমান হেনরীর কবিতায়ও। বাংলা কবিতার বিশাল ধারার যে তিনি একটা অংশমাত্র, এ সম্পর্কে তাকে প্রবলভাবে সচেতন বলে মনে হয় এবং এভাবেই তিনি পৃথকও হয়ে গেছেন সমকালীন বা অন্য সময়ের কবিদের থেকে। গ্রন্থভূক্ত প্রথম কবিতাটির দিকেই আবার তাকানো যাকঃ
সেই ছিলো আমার একমাত্র ফাল্গুন, সমগ্রজীবনখ-ে সেই একটাই আধখানা রাত। ইতিহাসের পৃষ্ঠা মাড়িয়ে, নির্বিকার হেঁটে, ভবিষ্যতের দিকে চলে যাবার জন্য ওটুকুই কি যথেষ্ট নয়?
০৩.
একজন কবি যখন কবিতা লিখেন, তখন তিনি মূলত তার অতীতকে রিরাইট করেন। এই অতীত আবার বিশাল এবং সর্বগ্রাসী। এর ভেতরে গুস্তাভ ইয়ুঙের রেসিয়ালি রিপ্রেসড মেমোরিকে যেমন পুরে দেয়া যায়, নিজের অভিজ্ঞতাকেও পুরে দেয়া যায়। এ যেন ইয়েটসের সেই বিশাল এবং ব্যাপ্ত স্পিরিটাস মুন্ডির কনসেপশনের মতোই সর্বব্যাপী যেখানে, একজন কবির চেতন এবং অবচেতনে অসংখ্য বিষয়, দৃশ্য, আর আর সব কিছু জমা হতে থাকে। কবিতা লেখার মুহূর্তে সেখান থেকেই স্বাভাবিকভাবে একট ফো চলে আসে। ইতোমধ্যে বলেছি, এই অর্জিত অতীতের মধ্যে থাকে অভিজ্ঞতা, আর এই অভিজ্ঞতা কেবল ইন্দ্রিয়জ অভিজ্ঞতা নয়, এই অভিজ্ঞতা পাঠলব্ধও হতে পারে। আসুন কবিতাটির দিকে আবার তাকানো যাকঃ
অবকাশযাপন বা ভাবনা-বদলের জন্য শুধু ইনানী বিচ নয়, ইতিহাতের পৃষ্ঠাগুলোতেও চষে বেড়ানো যেতে পারে; জন্মভূমি- প্রপঞ্চময় শুধু এই একটা শব্দের জন্য হাসিমুখে প্রাণ দিয়েছে অগণিত মানুষ; মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছে গণতন্ত্র, মুক্তি ও সাম্যবাদের স্বপ্নে; শুধু প্রিয়তম নারীর জন্যও জীবন বিসর্জনের কাহিনী কম নেই।
এখানে প্রণয়ের মধ্যে ঢুকে গেছে দর্শন, ইতিহাস ও প্রেমের সর্বস্বতা। তবু মূখ্য হয়ে উঠেছে কবির দৃষ্টিকোণ। অভিজ্ঞতা। এগুলোর তার স্বকীয়তার লক্ষণ যে লক্ষণগুলো ডেডিকেশনের মাধ্যমেই কেবল অর্জন করা সম্ভব। আমার মনে হয় কবি রহমান হেনরীর সেই যোগ্যতা আছে।
০৪.
অনেকে হয়তো হয়তো ভাববেন কবিতাগ্রন্থর কথা বলতে গিয়ে আমি কেবল একটি কবিতারই কথা বারবার বলছি কেন। এর কারণ দুটো, মূখ্যত কবিতা গ্রন্থেটিতে এমন অনেক কবিতা আছে যেগুলো আলাদাভাবে আলোচিত হবার দাবী রাখে; গৌণত, তিন শত ছিয়াত্তর পৃষ্টা সম্বলিত এই গ্রন্থটিতে প্রায় তিন শত কবিতা স্থান পেয়েছে। যদি আগাপাশতলা কথা বলতে চাই তাহলে হয়তো একটি পৃথক গ্রন্থ হয়ে যাবে যার কলেবর প্রণয় সম্ভারের চেয়ে বড়ো হওয়া অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু সমস্যার কথা হলো, সেই স্থান সংকুলান করার মতো জায়গায় আমরা এখনো যেতে পারিনি। অন্তত ছোট কাগজের দৃষ্টি থেকে দেখলে। আমি কেবল ক্যাঙারুর মতো লাফিয়ে যাবো। তবে নিজের প্রতি বা নিজের পাঠের প্রতি অসততা প্রদর্শন করে নয়। বরং যতটা সম্ভব সততা ধারণ করে।
০৫.
প্রেম ও প্রণয়ের প্রসঙ্গে আসা যাক। যদিও আগেই বলেছি, কবি রহমান হেনরীর প্রণয় কেবল তথাগত, প্রথাগত প্রণয় নয়। আরো বেশি কিছু। তারপরও প্রথাগত, তথাগত প্রেমকে ডিঙিয়ে তিনি অধিক বিস্তারের দিকে যান নি। চমৎকৃত হওয়ার মতো বেশ কিছু প্রেমের কবিতাও আছে গ্রন্তে। কয়েকটির দিকে তাকানো যাক।
মনে হলো দেখতে গেছি ভুল/ কিন্তু পথে তোমার ছেঁড়া চুল/ বাগান হয়ে ফুটেছে সবখানে/
দৃশ্যাবলি স্বপ্নে দেখা ভেবে/ ভ্রমণ আমার এ-যাত্রা ভ-ুল
স্বপ্ন এবং বাস্তবতার মানে/ লিখেছি লাল পাতায় ও চিরকুটে
আড়াল খুলে বলো তো মুখ ফুটে/ জীবন যেদিন রক্তজমাট ঝুল/ সাংকেতিকের পত্রখানা নেবে?
(পত্রসংকেত)
সে কি তবে ঝড়ের গতির দিকে উড়ে ওঠা পাখি?/প্রণয়ের শহীদমিনার?
(বিরোধাভাস)
রাত্রিমাত্রই যদি ছন্দ, আমরা তো অভিন্ন কবিতা! আসমানই যদি / একমাত্র ছাদ, আমরা তো একই গৃহে পরস্পর হারানো মানুষ!
(বিরোধাভাস)
শাড়ি খসে পড়ে যাচ্ছে দেহ, দেহ খসে পড়ে যাচ্ছে শাড়ি;/ আমি তো দরিদ্র অতি/ মনও অস্থিরমতি/ দর্শকসারিতে বসে কতক্ষণ খেলা সইতে পারি?
(আনন্দিতা)
এহেন মুহূর্তে তুমি, প্রিয়তমা, / ডেকে বলছো, পঙ্ক্তি হাতে টানটার সম্মুখে দাঁড়াও/ এসো কবি, তোমার প্রণয় শক্তি প্রমাণ-প্রসিদ্ধ করে দাও!
(ব্রজসুন্দরীর উদ্দেশ্যে বারো-পঙক্তি)
এখানে উল্লেখ করার মতো একটা বিষয় হলো, এই কবিতাগ্রন্থের কেন্দ্রে অবস্থিত যে প্রেম তা কিন্তু একরৈখিক নয়। বরং বহুরৈখিক। বলা চলে প্রেম ও প্রণয়ের সব স্টেজের কথাই যেন বহুমাত্রিকতায় ধরা দিচ্ছে কবিতাগুলোতে। আবার ফেরা যাক কবিতায়।
যে-তুমি দূরের, একটু কাছে চলে এসো/ দূরত্ব কমাতে গিয়ে, ক্রোধে ও ক্ষমাতে গিয়ে/ পুরোপুরি কান্না নয়, কিছুটুকু হেসোÑ/ রক্তামৃতে আজও কিছু গরল যোগাও। (যে-তুমি দূরের অভিমান)
সমুদ্রে তোমার শাড়ি ভেসে যাচ্ছে সাংঘর্ষিক ঢেউয়ে . . . . .
(সমুদ্রে তোমার শাড়ি)
শয়নকক্ষের জলে, তোমার না-থাকা জুড়ে / অথৈবেদনামগ্ন রাত্রি ফুটে আছে
যদি-না মমতা দিতে পারো, ভালোবাসা অসম্ভব হয়,/ ঘৃণার জহরে নীল কোরো না এ অলিন্দ-নিলয়;/ নিরিবিলি দুঃখ এসে ঘিরেছে যে স্বপ্নখামার/
পুষ্টি দিয়ো না তার কীট-আগাছাকে।
(রাত্রি ফুটে আছে)
নিরিবিলি অন্ধকার গাঢ় হলে, মনে হয়:/ আমি ও তোমার ছায়া মুখোমুখি বসে আছি/ দু’জনেই পান করছি দু’হাজার দশে ঢালা
বিষণ্ন ওয়াইন
(মোহনায় রাত্রি নামে)
দেবদারু চুল যদি কাশফুলে পৌঁছে যায়/ ক্ষতি নেই; আমি তো তোমাকে কাছে পেতে চাই-/ জীবনের যে-কোনও বাঁকেই!
(ধীরেসুস্থে এসো)
শাড়ির প্রতি এই প্রলোভন আর ছিলো না আগে/ যেদিন জানি, শাড়ির ভেতর সমস্ত ঘর-বাড়ি/ সেই থেকে না, আমার মনে এমন কাঁপন জাগে!
(অনেক বছর পর কয়েকটি প্রেমপত্র)
যে-ছায়া তুই ফেলে গেলি/ তারও খুব বিষণ্ন স্বভাব/ একটুও হাসিমুখ নয়।
দেহ তারও উষ্ণতা প্রধান/ তারও খুব দাম্পত্য স্বভাব/ উন্মত্ত গভীর রাতে/ রতিটতি হ’লে, তারপর হাসে,/ অনর্গল কথাবার্তা বলে;
আমি তোর ছায়াটিকে / মাঝে মাঝে বিবাহ করেছি।
ছায়া-সতীনের ঘর, নিশ্চয়তা দিতে পারি, ভালো লাগবে তোর;/ এই লোভে একবার ফিরে তো দেখিস!
আমার শয়নকক্ষে গোলাপের বংশবৃদ্ধি পাবে।
(ছায়া-সতীন)
সকলের আয়ু নিয়েÑতুমি একা বেঁচে থাকোÑঅনন্ত যৌবনা.../ দৈব-বাণীর মতো দিয়ে যাচ্ছি বর:/ অম্লান থেকে যাবে তোমার হৃদয়খানিÑ অতি মহিমান্বিত এক নীল যাদুঘর!
(ব্রজসুন্দরীর কথা)
প্রাণপণ সিঁড়ি ভাঙছি আমি;/ সিঁড়ি ভাঙছি,/ সিঁড়ি ভাঙছি,/ সিঁড়ি ভাঙছি...
সাহারার চেয়ে দীর্ঘতম- এত বড় সিঁড়ি!/ যুগ-যুগান্তর কাটছে.../ তোমার দূরত্বে তবু/ কিছুতেই পৌঁছতে পারছি না
(ঐ)
তবু আছো - এটুকু সান্ত¦না ভালো লাগে-মাঠের হৃদয়ে শুয়ে আছো;/ নির্ঘুম রাত্রিভর সেই আহ্লাদে আজও এই দুই চোখে স্বপ্ন নেমে আসে।
(পদ্যের প্রহর)
সেই কথাটি লুকিয়ে রাখি, প্রাণের ভেতর প্রাণে,/ সেই কথাটির সূত্র ছড়াই ফুলের কানে কানে
সেই কথাটির মানে-/ এক যদি হয়, দুইটি হৃদয়, তখন লোকে জানে...
(সেই কথাটি)
ভুলতে তোমায় এসেছিলাম বনে/ অন্তরালে কোন ফাঁকে, কোন ক্ষণে, / ছড়িয়ে গেলে, জড়িয়ে গেলে মনে!
(ছড়িয়ে গেলে, জড়িয়ে গেলে মনে)
যদি চাও-/ স্বেচ্ছামৃত্যু বেছে নিতে রাজি;/ মৃত্যুর উপায় তুমিই সরবরাহ দিও!
যদি চাকু হয়-/ মনে রেখো, চাকুর ধারালো দিক/ আনন্দদায়ক হওয়া চাই...
(শর্ত)
একা, তবু বিষণ্ন প্রমাদ/ নিয়ে বসে আছি স্বপ্নদগ্ধ ঘরে, / ঘর ও গলিতে চাঁদ গলে গলে গড়ে পড়ে।
ধরা যাক, শিল্পী তুমি, ফাহমিদা অথবা হেলেনা;/ চাঁদ এসে কতবার ফিরে গেল-তুমি তো এলে না।
(রাত্রির কূটাভাস)
এই ফুল পেয়েও শুঁকিনি নাকি, না-পেয়ে পস্তাই?/ আল্লার কসম গুরু, ইচ্ছা করে নটী হ’য়া যাই!
(আশ্চর্য কুসুম)
সে তার শয্যায় শুয়ে একদিন জেনে যাবে/ আর কোনো জটিল অসুখে, একটি যুবক খুব একা একা/ হেঁটে যাচ্ছে ক্রমাগত অন্ধকারে, দুধের সরের মতো কুয়াশায়.../
হেমাঙ্গিনী ব্রিজের রাত্রিতে...
(হেমাঙ্গিনী ব্রিজের রাত্রিতে)
আগেই বলেছি যে, কবি রহমান হেনরীর প্রণয় সম্ভার একরৈখিক কোনো প্রেমের কবিতাগ্রন্থ নয়। এখানে নিপাট প্রেমের মধ্যেও মিশে আছে বিশ্বচেতনা, সামাজিকতার অনুপ্রাস, কল্পনার আতিশয্য যেখানে বঞ্চিত প্রেমের বিষাদ আর বুদ্ধির দীপ্তি ছলকে ছলকে ওঠে। তার কল্পনার সেই দ্যুলোকের দিকেও একবার তাকানো যাক।
শৈশবের মার্বেলগুলো হারিয়ে ফেলেছি ছেলেবেলাতেই। সম্বল ছিলো: দুটো
আয়না। একটা হারিয়ে গেছে। শেষ আয়নাটা ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছো তুমি।
এখন কাচ বলতে আমার জন্য বাকি রইলো:
জগন্ময় জলের কাহিনী
(কাচ-বিরহ)
একান্ত মুহূর্তে তুমি টের পেয়ে যাওÑকার আমানত হ’য়ে থাকে কার বুকে!
(ব্রজসুন্দরীর কথা)
নদীটির ওইপাড়ে থাকো/ দিগন্ত ওখানে এত লাল!/ নির্জন লালিমায় আঁকো/ চিরদিনÑআমারই কঙ্কাল!
(পদ্যের প্রহর)
তার প্রেমের মধ্যে অঙ্কিত হয়ে আছে বিষাদও যে বিষাদকে বলা হয় ইউরোপীয় রেনেসার সবচেয়ে বড়ো মৌলিক রসের আবিস্কার। সেক্সপিয়ারের মার্চেন্ট অব ভেনিস যারা পড়েছেন তাদের নিশ্চয়ই স্মরণে আছে এন্টোনিওর সেই বিখ্যাত উক্তি, আই নো নট হোয়াই আই এ্যাম সো স্যাড নাউ। কিম্বা বলা যেতে পারে দ্য ভিঞ্চির কথা যিনি তার বিখ্যাত চিত্রকর্ম মোনালিসার মধ্যে পুরে দিয়েছিলেন সেই মৌলিক রস যা কিনা ইউরোপে অচর্চিত ছিলো বহুকাল। গ্রীসীয় কাসিসিজমের যুগ থেকে যার পুনর্জাগরণ হয় ইউরোপে। প-িতেরা ওই সময়টাকেই বলে থাকেন ইউরোপীর রেনেসার যুগ যে যুগের অন্যান্য মৌলিক পুনরাবৃত্তির মধ্যে বিষাদের ডালপালাও ছিলো। ছায়া ছিলো। সেই বিষাদের ছায়াও এত দূর সময়ের তফাতে এসে কবি রহমান হেনরীর প্রেমের কবিতায় পড়েছে যার কিছু কিছু উদাহরণ ইতোমধ্যেই আপনারা পেয়ে গেছেন পূর্বোক্ত উদ্ধৃতিগুলোর কোনো কোনোটার মাঝেই। তবু আরেকবার ফেরা যাক। বিষাদের কাছে। কবি রহমান হেনরীর একান্ত বিষাদ যা তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন প্রণয় সম্ভার গ্রন্থের মাধ্যমে।
আজও এক মায়াবী বারান্দা জুড়ে / একমাত্র হলুদ শাড়িটি উড়ছে/ স্মৃতির হাওয়ায়
একটি অস্থির মুখ/ গোধূলির ছায়া হয়ে আছে
গোলাকৃতি মার্বেলের মতো/ ধাবমান মাস ও বৎসর গড়াতে গড়াতে চলে যায়/ শুধু সেই হলুদ শাড়িটি ওড়ে আর সেই ছায়াঘন মুখ/ ক্রমশ বিলীন হতে হতে রাত্রি হয়ে যায়/
কার শাড়ি এমন হলুদ?/ অপসৃয়মাণ সেই গোধূলির ছায়ামুখ কার?
(মায়াবী বারান্দা)
হয়তো হলুদ শাড়ি ওড়ানো বারান্দা আর গোধূলির ছায়ামুখ নিয়ে তার শেষ প্রশ্ন দুটোই আমাদের মনে ছড়িয়ে দ্যায় বিষাদ। আমরা সেই হলুদ শাড়ি বা বারান্দা বা শাড়িটির বিলীন হতে রাত্রি হয়ে যাওয়া- এর কোনোটাই প্রত্যক্ষ করিনি। তবু বিষাদের লতাপাতা আমাদের আঁকড়ে ধরে। আর আমাদের মনের গহীনেও উড়তে আরম্ভ করে একটি হলুদ শাড়ি, মায়াবী বারান্দাজুড়ে, রাত্রির নেমে আসা দেখি, ডেকে আনা অন্ধকারের ভেতর হলুদ শাড়িটি নিজে হারিয়ে যায়, তাও বুঝি দেখি। কবির দৃষ্টিকোণ থেকে একে বিষাদ বলা না গেলেও, পাঠকের দৃষ্টিকোণ থেকে একে বিষাদের ঘন অনুপ্রাস বলা যেতে পারে কারণ বিষাদের কোন কারণ থাকে না। কারণ থাকলে তা আর বিষাদ না। আমাদের জন্য কার্যকারণহীনতার বাতাস ও অন্ধকার উড়ে আসে সেই হলুদ শাড়ির বারান্দা থেকে যা আমাদের কাছে সম্পূর্ণ বিমূর্ত। তাই আমাদের জন্য এক অদ্ভুত বিষাদের জন্মদাত্রী। কবির জন্য হয়তো নয় কেননা তিনি হয়তো সেটা প্রত্যক্ষ করেছেন। কেবল বিষাদ নয়, বুদ্ধির ধারালো ফলাও যেন তার কোনো কোনো প্রেমের কবিতায় ঝিকিয়ে ওঠে বারবার। কারো কারো চোখে হয়তো পড়বে পূর্বোক্ত উদ্ধৃতিগুলোর কয়েকটিতেই এই কোয়ালিটি উঁকি দ্যায়। তুব বিশেষত্বের জন্য একবার দেখা যাক এই কবিতাটির দিকে।
চিকিৎসা সফল হ’লে, শেষে মনে হয়Ñ/ ডাক্তার পারে না, আর্দ্র নার্স কাড়ে/ রোগীর হৃদয়।
(নার্স পারে)
জননীকে ঘিরেও তার সুন্দর একটি কবিতা আমার চোখে পড়েছে। ঈদিপাসীয় কমপ্লেক্সের দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, সম্পূর্ণ প্রাচ্যীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা মাকে দেখা নিয়ে একই কবিতাটি আমাকে উদ্বেল করেছে। শেয়ার করা যাক।
নানার মৃত্যুদিনে মা জন্মেছিলেন নিভৃতকক্ষের অনুষ্ণ আলোয়/ তিনি জানতেন গর্ভ কীভাবে রূপান্তরিত হয় একটা লবণসমুদ্রে/ জানতেন, এভাবে এসে পড়াটা ঠিক হয়নি তার/ যদি স্বেচ্ছাধীন নয়
পুনরুত্থানের কী যন্ত্রণা, জানতেন তিনি।/ সারাটা জীবন মা ছিলেন সেই লবণপাহাড় যার ছায়ায়/ মিটমিট করে জ্বলে ওঠা/ অনুল্লেখ্য একটা গুল্ম: আমি
(জন্মবৃত্তান্ত)
০৬.
বাংলা কবিতার কালপরম্পরায় সহসাই যে বৈশিষ্টটি চোখে পড়ে না তা হলো বৈশ্বিক চেতনা। অনেকের কবিতায় যে বৈশ্বিক চেতনা প্রতিফলিত হয় নি এমনটা আমি দাবী করবো না। তবে সমস্যার কথা হলো যখনই বৈশ্বিক চেতনার প্রসঙ্গে যেতে হয় তখনই কবি এত বেশি উচ্চকিত হয়ে ওঠেন যে, তখন কবিতা থেকে দূরে সরে গিয়ে মনে হয় কোনো স্লোগান পড়ছি। কিন্তু কবিতার সাথে সঙ্গতি বজায় রেখে খুব কম কবিই এই চেতনাকে লালন ও পরিপালন করতে পেরেছেন বাংলা কবিতায়। বৈশ্বিক চেতনা বলতে আমি আসলে কী বোঝাতে চাইছি, এটা উদাহরণের মাধ্যমে আরেকটু কিয়ার করা যাক। নাজিম হিকমতের এ্যানজিনা পেক্টোরিস কবিতাটি উদ্ধৃত করছি, তাতে বোঝা যাবে আমি আসলে কবিতায় বৈশ্বিক চেতনার লালন ও পরিপালন বলতে কী বোঝাতে চাইছি। এমনটা হতেই পারে যে, আমার সাথে কারো দৃষ্টিকোণ নাও মিলতে পারে। আমি যেভাবে কবিতায় বৈশ্বিক চেতনার উপস্থিতি খুঁজে নিতে চাই, হয়তো তার উল্টোধারাতেও কেউ কেউ হাঁটতে পারেন। এটা আসলে অনেকটাই ব্যক্তির উপর নির্ভর করে। তার দৃষ্টিকোণের উপর নির্ভর করে। যাই হোক, নাজিম হিকমতের ইংরেজী ভাবানুবাদ থেকে উদ্ধৃত করা যাক।
If half my heart is here, doctor,
the other half is in China
with the army flowing
towards the Yellow River.
And every morning, doctor,
every morning at sunrise my heart
is shot in Greece.
And every night, doctor,
when the prisoners are asleep and the infirmary is deserted,
my heart stops at a run-down old house in Istanbul.
And then after ten years
all I have to offer my poor people
is this apple in my hand, doctor,
one red apple,
my heart.
And that, doctor, that is the reason
for this angina pectoris-
not nicotine, prison, or arteriosclerosis.
I look at the night through the bars,
and despite the weight on my chest
my heart still beats with the most distant stars.
অর্ধেক হৃদয় যদি এইখানে থাকে, তবে হে চিকিৎসক,
বাকী অর্ধেক আছে চীনে
সৈন্যদলের সাথে সাথে এগিয়ে যাচ্ছে
হলুদ সমুদ্রের দিকে।
এবং প্রতি সকালেই, হে চিকিৎসক,
গুলিবিদ্ধ হৃদয় আমার পড়ে থাকে
গ্রীসে।
আর প্রতি রাতে, চিকিৎসক,
যখন বন্দীরা ঘুমিয়ে পড়ে, আরোগ্যশালাও স্তব্ধ হয়ে যায়,
আমার হৃদয় থেমে যায় ইস্তাম্বুলের পরিত্যক্ত এক পুরোনো বাড়িতে।
এবং তারপর দশটি বছরে পরে
হতভাগ্য জাতিকে আমার, দেবার মতো যা থেকে যায়
তা-হলো আমার হাতের এ আপেল, চিকিৎসক,
একটিমাত্র আপেল-লাল,
আমার হৃদয়।
এবং ওটাই আসল কারণ, চিকিৎসক,
আমার হৃদপিণ্ডে ব্যথার,
নিকোটিন নয়, বন্দীশালা নয়, ধমনির সংকীর্ণ হয়ে আসা নয়।
গরাদের শিকগুলোর ফাঁকফোকর দিয়ে আমি তাকাই রাত্রির দিকে
এবং বুকে প্রচুর ভার বোধ করা সত্ত্বেও
আমার হৃদয় সমতালে চলতে থাকে ওই দূর নক্ষত্রগুলোর সাথে।
(স্বকৃত অনুবাদ)
এটা হয়তো কাসের লাস্ট বেঞ্চে বসে থাকা সেই ছাত্রটির মতো উদাহরণ দেয়া হলো, যে তার পাশের সহপাঠীকে ঘুষি মেরে বোঝাতে চেয়েছিলো, ঘুষি কাকে বলে; উল্লেখ্য সেই কাসে ফার্স্ট বয় নাকি, ঘুষি কাহাকে বলে, এর উত্তরে বলেছিলো, ঘুষি বলিতে বজ্রমুষ্ঠির মাধ্যমে এক প্রকারের আঘাতকে বোঝায়। আমি কাসের ফার্স্ট বয় কোনোদিন হতে পারি নাই। তাই দুর্বলতম ছাত্রের মতো বোঝাতে চাইলাম, কবিতায় বৈশ্বিক চেতনার উপস্থিতি কাকে বলে। বৈশ্বিক চেতনার লালন মানে, কাব্যিকতা বিসর্জন দেয়া নয়, কবিতার ভেতর দিয়ে বিশ্বকে দেখা।
যাই হোক, কবি রহমান হেনরী প্রণয় সম্ভারে এমন কিছু কবিতা, এমন কিছু কবিতাংশ রচনা করেছেন, যাতে আমার মনে হয়েছে, কাব্যিকতাতে বিসর্জন না দিয়েই তিনি বৈশ্বিতকাকে ধারণ করতে পেরেছেন, লালন করতে পেরেছেন, উপস্থাপিত করতে পেরেছেন তার কবিতায়। সরাসরি তার কবিতার দিকেই তাকানো যাক আবার।
আমাদের সূর্যমুখিক্ষেতগুলো বিজেপির / ফিসফাসে আগ্রহ পেতে দিয়ে সীমান্তে সীমান্তে ঝুঁকে গ্যাছে।
(আজ তাকে)
আদিগন্ত স্বপ্নোদ্যানে, কোনও এক জন্মে আমি তোমাকে পেয়েছি/ ক্ষণকাল, দূরদেশে; তারপর অকস্মাৎ/ হারিয়ে ফেলেছি বার্লিনে, পূর্ব-ইউরোপে;/ অতিকায় জলদেশ পার হ’লে পৃথিবীর মহান দানব/ আমাদের স্বপ্নগুলো সুস্বাদু ফলের মতো কড়মড়/ চিবিয়ে চিবিয়ে খায়; তুমি তার অঙ্কশায়িনী;
(কোনও এক জন্মে পাবো)
ব্রোঞ্জের যুদ্ধজাহাজ এসে দাঁড়ালো বন্দরে;/ ফলাফলে-উত্তাল সমুদ্র হলো আমাদের মন, / ঝড়ের স্বভাব সেই বৈদেশিক হাওয়া লেগে/ দুলে-ওঠা নৌকার পালের মতো নেচে উঠলো ঢেউ-/ তরঙ্গের ফেনিল উচ্ছ্বাস আজ আমাদের প্রেমার্ত-হৃদয়;
সমুদ্রেরও পঞ্জিকা রয়েছে-/ একাত্তরে বঙ্গোপসাগর আর দু’হাজার আট-এ/ এরা কিন্তু এক নয়-একইরূপ জল-ঢেউ-ঢেউয়ের বিস্তার-/ তবু নয়; জলে-ঢেউয়ে অভিন্ন বিস্তার নয় এরা-
গুপ্ত জাহাজ এসে দাঁড়ালো বন্দরে;/ এত সশস্ত্র কোমল-এত কাব্যময়-/ আমরা এর ভক্তবৃন্দ, প্রেমিক হলাম-আবেগ-অস্থির;
আর দ্যাখো, দাউ দাউ পুড়ে যাচ্ছি ঝাঁক ঝাঁক মনÑ/ মিলিশিয়া গোলার আঘাতে; নানাবর্ণ তেজ-এ/ ক্ষেপনাস্ত্র গেঁথে যাচ্ছে রোমে, রোমকূপে;
ভালোবাসা-হৃদয়ের এত সাংঘর্ষিক!
(ত্রাণসুন্দরী)
এখানে লক্ষ্য করার মতো বিষয় হলো, আন্ডারলাইনকৃত শব্দটি-রোমে; এই রোম গায়ের পশম হতে পারে, হতে পারে রোম নগরী। উভয় অর্থেই কবিতাটির প্রতীকী ব্যঞ্জনা সমান থাকে। বলার মতো আরেকটা বিষয় হলো, আজকের যুগ কবিয়াল বা স্বভাব কবিদের যুগ নয়। কেবল স্বভাবসুলভ কাব্য করে গেলে, যথার্থ প্রাসঙ্গিকতা অর্জিত হয় না। বৈচিত্র্য চাই। বৈশ্বিক চেতনাসমৃদ্ধ এই কবিতাগুলোয় অবশ্যই কবিকে প্রতীকের আশ্রয় নিতে হয়েছে। ত্রাণসুন্দরীর একই অঙ্গে কত রূপ তা তিনি আমাদের দেখাতে চেয়েছেন। আমরাও দেখলাম। প্রতীকের কথাই যখন এলো, তাহলে এই কবিতাটির কথা না-বললেই নয়।
উল্টে তাকায় চোখের আড়ে আড়ে/ একটি মেয়ে, হৃদয়ে টান মারে-/ ধরতে গেলেই / দৌড়ে পালায় / স্তনের অহংকারে!
(গণতন্ত্র)
শুধু প্রতীকের ব্যবহার নয়, সামাজিক চেতনাসমৃদ্ধ এমন আরো কিছু কবিতা খুঁজে পাওয়া যাবে এই কবিতাগ্রন্থে। যেগুলোর কথা না বললেই নয়, যে পংক্তিগুলোর কোনোমতেই অস্বীকার করার মতো নয় (আমার কাছে) সেগুলোর দিকে স্পোরাডিকভাবে একটু তাকানো যাক।
একটি হলুদ পাতা খসে পড়ছে সময়ের অভিনত শিরে।
(একটি হলুদ পাতা)
লোহার তার দিয়ে এ গাছেই বাঁধা ছিলো একটা কাঠের বাক্স। এর
তলা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতেই তো ফুরিয়ে গেলো গোটা একটা জীবন! কী আশ্চর্য!
এতকাল চিনতেই পারিনি! আজ এতগুলো বছর পর, সেই কাঠের বাক্সটা পচে খ’সে
পড়তেই, জানা গেল, আ রে! এটাই তো সেই ডাকবাক্স!
(চিঠি)
নিদেনপক্ষে তুমি নয়টি পাথর পাবে আজীবন.../ দশম পাথর থাক, / থেকে যাকÑ
আঙুলের সাহচর্য থেকে বহু দূরে...
(অন্যান্য উপসর্গ)
হবে না জাদুর নৌকা? তড়তড় বেগে ধেয়ে এসে, / পরিত্যক্ত প্রেমিকেরে পুনঃ ভালোবেসে-/ হৃদয় উঠিয়ে নিয়ে, চলে যেতে অনন্তের দেশে!
(প্রতীক্ষা)
বৈশ্বিক চেতনার কথা বলতে গিয়ে প্রতীকের কথা এলো। আর চেতনার প্রসঙ্গে সবচেয়ে জরুরী (কারো কারো মতে) হলো, সমকালচেতনা, সামাজিকতার চেতনা। একজন কবি মৌন হলেও একজন সমালোচক। তিনি দেখেন এবং তার দেখা দৃশ্যগুলোই ঘুরে ফিরে আসে তার কবিতায়। যে পরিপার্শ্বে তিনি বেড়ে উঠছেন, যার ঘাত-প্রতিঘাত তাকে আন্দোলিত করছে, তাকে কি উপেক্ষা করা যায়! অনেকেই অবশ্য স্বেচ্ছায়, খানিকটা বীতশ্রদ্ধ হয়েই হয়তো, এগুলোকে এড়িয়ে চলেন, নন্দনতাত্ত্বিক এক ভুবনের দিকে। তবে কবি রহমান হেনরী বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে যান না। অনেক সময়েই দেখা যায় নিরেট বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি তার কবিতায় উঠে আসে। অবশ্যই সংবাদ পত্রের রিপোর্টের মতো করে নয়। তার নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যাত হয়ে। কবিতার আশ্রয়, প্রশ্রয় নিয়ে। ত্রাণসুন্দরীতেই এর ছোঁয়া আমরা পেয়েছি। আরো কিছু পংক্তির কথা বলা যেতেই পারে।
যতবার টস করো / হেরে যাই, শুধু হেরে যাই.../ পরাজিত করে রেখে গ্যাছো;
আমি আর ভাগ্য নির্ধারক মুদ্রা/ পথের ধুলায় শুয়ে আছি
শুরুতে দেখিনি/আজ দেখছি/ মুদ্রার উভয় পিঠে একই চিহ্ন আঁকা!
(ভাগ্য-নির্ধারক-মুদ্রা)
(আমার কম্পিউটারে হ+ন লিখতে গেলেই কেমন একটা অদ্ভুত রেখা ভেসে ওঠে তাই উপরের কবিতাটিতে আন্ডারলাইনকৃত বানানটা এভাবে লিখলাম; কবি এবং পাঠক উভয়ের কাছে এজন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি।)
সময়ের গর্ভ থেকে দেবশিশুটির হাসি নেবো শুধু/ জননীর বেদনা নেবো না-/ এতটা কাঙাল আজও হতে পারছি কই?
(স্বীকারোক্তি)
আদৌ হবো না বিক্রি এরকম বলেছি কি?/ উপযুক্ত মূল্য পেলে তোর কাছে বিক্রি হতে চাই;
মুক্তবাজার যুগে/ হৃদয়ের পণ্যমান কম যায় কিসে!/ চাহিদা-যোগান মেপে মূল্য স্থির হোক/ ক্ষতি নেই;
তবে / এখানে সামান্য একটা ব্যতিক্রম হবে-/ পণ্যই স্বাধীনভাবে ভোক্তা বেছে নেবে...
(বাজার অর্থনীতি)
তোর বলতে কবি কাকে বোঝাতে চাইছেন তার উপর নির্ভর করছে কবিতাটির অর্থ ও বিস্তার। যেহেতু নামকরণ করা হয়েছে বাজার অর্থনীতি তাই আমি ধরে নিয়েছি, সামাজিকতার এমন একটা স্তরের কথা তিনি বোঝাতে চাইছেন যেখানে পণ্যই বেছে নেবে পছন্দমাফিক ভোক্তা। প্রথাগতভাবে যেমনটা চলে আসছে, যথা, ভোক্তা তার পছন্দমাফিক পণ্য বেছে নেন; এর উল্টো একটা দিকের কথা তিনি বোঝাতে চাইছেন বলেই আমার মনে হয়েছে। ফলে প্রেম আর বাজার অর্থনীতি প্রতীকের সঙ্গত ব্যবহারের কারণে একটা জায়গায় এসে দাঁড়ায় যেখান থেকে প্রেম ও বাজার অর্থনীতি উভয় বিষয়কেই দেখা যেতে পারে। অবশ্য সামাজিক চিন্তাধারার পাশাপাশি দর্শনের দৃষ্টিকোণ থেকেও কবিতাটিকে ব্যাখ্যা করা যায়। ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেকেরই প্রায় একটা দর্শন থাকে। কেউ সেটাকে জেনে বুঝে লালন করেন, কেউ না জেনে, কেউ বা অবচেতনে। কবিরও দর্শন থাকে যা উঠে আসে তার কবিতার মধ্য দিয়েই। প্রণয় সম্ভার-এর সেই জায়গাগুলোকে একবার দেখা যাক।
না হারালে, কীভাবে তোমাকে ফিরে পাবো? কীভাবে আমাকে খুঁজে তিনি ফের
আবির্ভূত হবে?
(মহড়া)
হারিয়ে ফেলা মানুষ কিংবা কোনও একটা সুর খুঁজতে খুঁজতেই তো ক্ষয়ে-বয়ে
যায় আমাদের একেকটা জীবন!
(ব্রজসুন্দরীর কথা)
এই যে আপনাকে দেখছি! এই দেখা ধারণাসম্মত; / আপনি মানে অন্য কেউ, তিনি হয়তো আপনারই মতো।
(দেখা/ এই ক্রিয়াপদগুলি আর যে যে ধারণার জন্ম দেয়)
স্তন্যপায়ী শিশু আমি, চিন্তা করো, বনে বনে ঘুরি, / কে এক জননীপশু দুগ্ধবিষে টনটন স্তন খুলে/ আমাকে শাবক করে নিলো সেই থেকে/ পশুপাত্রে অরণ্যযাপন... নারীতে ফিরেছে আস্থা,/ নারীবাক্যে মুগ্ধ হলো মন।
(অরণ্য যাপন)
০৭.
এছাড়াও আরো অনেক বিষয় রয়ে গেছে যেগুলো এই লেখায় উল্লেখ করা সম্ভব হলো না বিভিন্ন কারণে। প্রণয় সম্ভারের সাইকোলজিক্যাল দিকগুলো নিয়ে কথা বলা হলো না, আত্মস্বীকৃত আত্মনবায়নের যে পদ্ধতিতে কবি আস্থা স্থাপন করেছেন বলে কয়েকটি কবিতায় বোঝা যায় -তা নিয়েও কথা বলা হলো না। কোনো কোনো কবিতায় তার ঘোর নির্মাণের চমৎকার কৌশল নিয়ে কথা বলা হলো না।
যারা সমকালীন বাংলা কবিতার পাঠক, বা অন্তত সামান্য ধারণা রাখেন, তাদের কাছেও কবি রহমান হেনরীকে নতুন করে পরিচিত করিয়ে দেবার কোনো কারণ নেই। তিনি যথেষ্ট পরিচিত এবং আলোচিতও। আমি কেবল একটিমাত্র কবিতাগ্রন্থের সাপেক্ষে কবি রহমান হেনরীর বৈচিত্র্যকে ধরতে চেয়েছি, জানি না কতটুকু সফল হলাম। তবে শেষ করার সময়ও প্রণয় সম্ভার-এর কবিতা দিয়েই শেষ করতে চাইঃ
আমরা সন্তান চাই। স্বাস্থ্যবান শিল্পের সন্তান.../ অনন্ত আশায় আছি, স্বপ্নে স্বপ্নে জেগে আছি বিনিদ্র শতক;/ আর এর মূলে এক তৃপ্তিকর সঙ্গমের যৌথ কারুকাজ!
তা’হলে স্বপ্নের কথা আসে কেন?/ সঙ্গমের প্রসঙ্গ উঠুক!
(সঙ্গমের প্রসঙ্গ উঠুক
-----------০০০-------------
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পুরোনো ধর্মের সমালোচনা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেই নতুন ধর্মের জন্ম

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:১৫

ইসলামের নবী মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে এক বছরের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে প্রবেশনে পাঠানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×