ঘুম থেকে উঠেই সুসংবাদটি শুনতে পেল সুমন।তার মা-ই তাকে সংবাদটি দিল।আন্তর্জাতিক ছবি প্রদর্শনীতে তার তোলা ছবি প্রথম স্থান অধিকার করেছে।অনেক দিন আগে সুমনের মামা তাকে জন্মদিনে একটি ক্যামেরা উপহার দিয়েছিল।তার পর থেকেই সুমনের ছবি তোলা শুরু।প্রদর্শনীর কথা শুনে কিছু না ভেবেই তার তোলা সবচাইতে ভাল ছবিটি পাঠিয়ে দিয়েছিল সে।সারাটা দিন বন্ধুদের সাথে অনেক সুন্দর কাটল সুমনের।রাতে শোবার সময় ছবিটির কথা মনে পড়ে গেল সুমনের।ছবিটি ছিল একটি বৃদ্ধার।বেশ কিছু দিন আগে সে গিয়েছিল তার গ্রামের বাড়ীতে।বিকাল বেলা সে ঘুরতে বেরিয়ে ছিল। সাথে ছিল তার প্রিয় ক্যামেরাটি।উজ্দেশ্য বিহীন ভাবে হাটতে হাটতে সে চলে এসেছিল একটি কুড়ে ঘরের সামনে। সেখানে দেখতে পেল একজন বৃদ্ধা অদ্ভুত ভংগিতে দরজার সামনে বসে আছে।চোখে মুখে খেলা করছে এক অদ্ভুত বিষন্নতা।প্রায় ডুবে যাওয়া সূর্যের রক্তিম আভা , জানালা দিয়ে ঢুকে পড়া মায়াময় অপার্থিব আলো আর বৃদ্ধার রহস্যময়তা ছবি তোলার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।সুমন আর দেরি করলনা।দৃশ্য টিকে ক্যামেরা বন্দী করে ফেললো সে।আর সে ছবিটি-ই আজ তার কাজের স্বীকৃতি দিল।হটাৎ করে বৃদ্ধাটির কথা খুব বেশি মনে পড়ল সুমনের।
পরদিন বৃদ্ধাটির সংগে দেখা করবার জন্য সুমন রওনা দিল গ্রামের বাড়ীর উদ্দেশ্যে।বিকাল বেলা মামাতো ভাইয়ের সাথে হাটতে হাটতে বৃদ্ধাটির বাড়ীতে পৌছাল তারা।যেতে যেতে শুনল বৃদ্ধাটির করুন কাহীনি।তিনি থাকতেন তার একমাত্র ছেলের সাথে। বেশ কিছু দিন আগে তার ছেলেটি মারা যায় এক অজানা রোগে।সন্তান হারা মা এখন পাগল প্রায়। সারাদিন বসে থাকে আর কি যেন ভাবে। কারো সাথেই কথা বলেননা তিনি।এভাবে কথা বলতে বলতে তারা চলে আসল কুড়ে ঘরটির সামনে।সেখানে তারা দেখতে পেল আরেকটি করুন দৃশ্য।বৃদ্ধাটি আজ বসে আছে ঘরের ভেতর।সামনে একটি খাবার শূন্য থালা। বৃদ্ধাটি এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে থালাটির দিকে।তার চোখে এক অদ্ভুত অভিব্যক্তি লক্ষ করল সুমন।বৃদ্ধাটি হটাৎ তাদের দিকে তাকাল, তাকাল সুমনের কাধে ঝোলানো ক্যামেরাটির দিকে। কিছু না ভেবেই বৃদ্ধাটি একটু মুচকি হাসল। হাসিটি অবশ্য কাঁটা হয়ে বিধল সুমনের কাছে।মনে হল বৃদ্ধাটি যেন তাকেই উপহাস করছে।যেন বলছে "তোমরা আমাদের দুঃখ দূর্দশা কে পুঁজি করে পন্য করোনা। আমাদের কষ্টগুলো আমাদের জীবনের-ই প্রতিচ্ছবি।এ গুলো তোমরা বুঝবেনা।আমাদেরকে সহানুভূতি না জানাও, আমাদের কষ্ট গুলোকে অন্যের আনন্দের কারন করোনা।" সুমনের ভাবনায় ছেদ পড়ল বৃদ্ধাটির নড়াচড়ায়। আগের থেকে আরো শুকিয়ে গেছে বৃদ্ধাটি।'শূন্য থালা আর রূগ্ন দেহ ' আজ চমৎকার একটি প্লট সুমনের কাছে।আজকের ছবিটা আরো আবেদন মূলক হতে পারে।সুমন আবার তাকায় বৃদ্ধাটির দিকে। এবার সে লজ্জা পায়, আর কিছুই ভাবতে পারলনা সুমন।
কিছু কথা : আমার এ লেখাটি লেখা হয়েছিল ২০০১ থেকে ২০০২ এর ভেতরে।লেখাটি পাঠিয়েছিলাম একটি পত্রিকায়, কিন্তু ছাপা হয়নি। তার পর থেকে আর কোথাও পাঠানো হয়নি।বেশ কয়েক দিন থেকে লেখাটি খুজছি কিন্তু কোথাও পেলাম না।অবশেষে আবার লিখতে বসলাম। জানিনা কত টুকু মিল আছে আগের লেখাটির সাথে।
সামহ্যয়ার-কে অসংখ্য ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ সকাল ৯:২৮