somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেহেস্তের টিকেট এত সোজা? - 1

২৯ শে নভেম্বর, ২০০৬ সকাল ৭:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার বরাবর মনে হয় খুব গুরুত্বপূর্ণ কুরআনের আয়াত আর হাদীসগুলোর প্রচার হয় কম। যেগুলোর প্রচার হয়, সেগুলোতে ভাবনার খোরাক কম। আধুনিক যুগের জন্য যথার্থ। আধুনিক যুগে আল্লাহ আমাদের 'শখের আল্লাহ'। আমরা আল্লায় ধরণা দেই বিপদে পড়লে। স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট স্ট্র্যাটিজি হিসেবে। জীবনের কোন এক সময় কলেমা পড়ে নিব, শেষ জীবনে হজ্জ্ব করে নিব, ব্যাস আমাদের আখিরাত নিরাপদ--এই রকম একটা মনোভাব নিয়ে থাকতে ভালোবাসি। সূরা ইয়াসীন শোয়া লক্ষ বার পড়লে কি হবে, নামাযে হাত নাভির কত ইঞ্চি উপরে বাঁধতে হবে, এই সব ছোট খাট জ্ঞান নিয়ে আত্মপ্রসাদে ভুগি, তর্কাই, এক জীবন পার করে দেই। যারা আমাদের শাসন করে এই পৃথিবীতে, তারা এতে মহা খুশী, কি দরকার দু'পেয়ে জন্তুগুলোর মাথায় বড় বড় আইডিয়া ঢুকিয়ে, এই তো বেশ ভালো আছে! অথচ একজন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের মনে প্রশ্ন জাগাই স্বাভাবিক, শুধু মাত্র এই কাজগুলো করার কারণে কেউ বাগানে যাবে, না করার কারণে কেউ আগুনে পুড়বে কেন?

কিছু দিন আগে যেই হাদীসটা পড়ে অবাক হয়ে ভেবেছি, কেন এত গুরুত্বপূর্ণ একটা হাদীসের প্রচার এত কম, সেটা এরকম:

Allah's Messenger (PBUH) said: If the world is about to end and one of you has a palm tree plant in his hand, he should plant it before he dies, if he can.

ছোট্ট তিন লাইনের হাদীসটা নিয়ে বইয়ের পর বই লেখা যাবে। এই ছোট্ট হাদীসটা আমাদের ভাবনা, পৃথিবীকে দেখার দৃষ্টিকে বদলে দিতে বাধ্য।

নিজেকে চিন্তা করুন সেই অবস্থায়: আপনি বুঝতে পারছে পৃথিবী এখনই ধ্বংস হয়ে যাবে, সব শেষ হয়ে যাবে, সব। সারা পৃথিবী ভেঙে গুড়িয়ে সমান হয়ে যাবে, গাছ, পাহাড়, বাড়ি ঘর সব কিছু মাটিতে মিশে যাবে। তারপরেও, তারপরেও কেন মুহাম্মদ (সা), আমাদের হাতে তখন কোন গাছের চারা থাকলে, সম্ভব হলে সেটা লাগাতে বলেছেন? আমাদের কি তখন গাছের চারা ফেলে দৌঁড়ে গিয়ে নামাজে দাঁড়ানো উচিত ছিল না? কই, তিনি কেন তাহলে উল্টো কথা বললেন?

কেন?

ভাবুন, ভাবুন, ভাবুন!

আর ভাবনার দিগন্তকে প্রসারিত করুন। আমরা তো বৃক্ষ দিবস ছাড়া গাছ লাগাই না। এখানে গাছ লাগানোকে তুলনা করুন যে কোন সৃষ্টিশীল কাজের সাথে। মানবতার কাজে লাগবে এমন যে কোন সৃষ্টিশীল কাজ।

মুহাম্মদ (সা) ইসলাম আমাদের ভীষণ রকমের পরজীবনমুখী করতে চায়। 'পরজীবনমুখী' কথাটার অর্থ খুবই নিগূঢ়। আমরা আমাদের মাথা ঘাটাতে চাই না এই নিগূঢ় তত্ত্ব বুঝে। বুঝতে চাই খুব সরল ভাবে, এই পৃথিবীর কিছুতেই আমাদের আগ্রহ থাকবে না। কোনমতে মরে যেতে পারলেই বাঁচা যাবে। ডাইরেক্ট জান্নাতে গিয়ে পড়বো। এমন ভাবনা হতেই পারে, এই পৃথিবী থেকে পালাতে ইচ্ছা করতেই পারে, যেহেতু রসুল (সা) বলেছেন, মহাসাগর থেকে পাখি ঠোঁট দিয়ে যতটুকু পানি তুলতে পারে, আমাদের পৃথিবীর জীবনটা আখিরাতের তুলনায় ততটুকুই ছোট। ক্ষণিকের।

আমাদের এই জীবনটা এতই ছোট্ট তা ঠিক অথচ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ যে! এই ক্ষনিকের পৃথিবীর খুঁটি নাটি সব কিছুর প্রতিদান, প্রতিফল ভোগ করতে হবে আখিরাতে। তাই এই জীবনের এক মুহূর্তও নষ্ট করা যাবে না। সারা সেমিস্টারের পড়ার পরে দুই ঘন্টা পরীক্ষার উপর আমাদের কত কিছু নির্ভর করে ঠিক সে রকম। আমরা পরীক্ষার হলের মতো যেন প্রতি মুহূর্তকে কাজে লাগাতে হবে পরজীবনের জন্য। কাজগুলো শুধু নামাজ, রোজা না, আমাদের জীবনের প্রতিটা সৃষ্টিশীল কাজ, যা কিছু আরেকজন মানুষের কল্যাণে আসবে, সে সবই 'ইবাদত'।

এই সব সৃষ্টিশীল কাজগুলো শেষ নি:শ্বাস ফেলার আগ পর্যন্ত থামিয়ে দেয়ার নিয়ম নেই! শুধু মাত্র প্রতিদান পাওয়ার তীব্র আকাংখা একজন মানুষকে এই দুনিয়ার প্রেক্ষিতে পুরোপুরি নি:স্বার্থ ভাবে সৃষ্টিশীল কাজ করিয়ে নিতে পারে।

অথচ... আমরা শুনি, কিছু মানুষ ধ্বংসের মাধ্যমে বেহেস্তের টিকেট কিনতে চাইছে? সত্যিই কি পাচ্ছে?

ওরা কি রাসুলের এই হাদীসটা শুনে নি যাতে শেষ নি:শ্বাস পর্যন্ত সৃষ্টিশীল কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন রাসুল (সা), পৃথিবীতে প্রতিদানের আশা ছেড়ে দিয়ে?

ওরা কি জানে না কুরআনের সেই বাণী:

"That if any one slew a person - unless it be for murder or for spreading mischief in the land - it would be as if he slew the whole nation: and if any one saved a life, it would be as if he saved the life of the whole nation". (Noble Quran 5:27-32)
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
২২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×