somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজ (আধা) হিপনোটাইজড হলাম!

১৩ ই মার্চ, ২০০৭ রাত ১২:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হিপনোটাইজ কনসেপ্টের সাথে প্রথম পরিচয় হয় হুমায়ূনের আজ রবিবার নাটক থেকে। এক বুড়া সবাইকে পেন্ডুলামের দিকে তাকায় থাকতে বলে হিপনোটাইজ করে ফেলে। তখন মনে আছে, গলার লকেট সহ চেইন খুলে নিয়ে ভাইয়া, মীরা, বাবা, মা, সবাইকে হিপনোটাইজ করার চেষ্টা করতাম। কাজ হতো না।

আজকে সাইকোলজি টিউটরিয়ালটা ছিল হিপনোটাইজ করা নিয়ে। প্রথমে পুরা ক্লাস ব্যাপী সবাইকে হিপনোটাইজ করার একটা চেষ্টা করা হল, তারপরে এই নিয়ে লেকচার। খুব মনযোগ দিয়ে, একান্ত মনে কোন কিছু ভাবলে, আমাদের মস্তিষ্ক সেটাকেই সত্যি ভাবা শুরু করে। সেটাই হিপনোটাইজড হওয়া। কেউ কেউ খুব সহজে হিপনোটাইজড হয়। তাদের মধ্যে খুব মনযোগ দিয়ে কাজ করার প্রবনতা থাকে, সহজে বিশ্বাস করার প্রবনতা থাকে, নতুন জিনিস পরীক্ষা করার ইচ্ছা থাকে, কল্পনা বিলাসী মন থাকে। এই গুণগুলো সবার সমান পরিমানে থাকে না, তাই সবাইকে হিপনোটাইজ করা একই রকম সহজ না। কাউকে খুব সহজে করা যায়, কাউকে কখনই করা যায় না।

আমাদের কাছে ভদ্রমহিলা প্রথমেই প্রতিজ্ঞা করে নিল উলটা পালটা কিছু করাবে না, তাই স্বস্তি পেলাম। তারপরে বলা হল পুরো গায়ের প্রতিটা পেশী নরম করে চেয়ারে গা এলিয়ে বসতে। আমি স্যান্ডেল খুলে বসলাম! কি হয় দেখি! তারপরে বলা হল হাতের তালুর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে। আমার ডান হাতের তালুতে একটা তিল আছে। লোকে বলে, তালুতে তিল থাকলে নাকি মানুষ বিদেশে যায়। এটার স্ট্যাস্টিক্যাল বেইস জানতে ইচ্ছা করছে। ভাবতে ভাবতে সেদিকে তাকিয়ে থাকলাম। খুব চেষ্টা করছিলাম মনযোগ দিয়ে এক সুরে বলে যাওয়া কথাগুলো শুনে যেতে। পারছিলাম না। একটা গোস্বা এসএমএস পেয়েছিলাম ক্লাস শুরুর আগে। প্রিয় কেউ আমার উপর রাগ করলে আমার খুব অস্থির লাগে। তবু চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু জ্বালা হল, ভদ্রলোক বলছে, 'তোমার ঘুম আসছে, ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসছে, তুমি চোখ খোলা রাখতে পারছ না'... আমার ঘুম আসছিল না

খুব চেষ্টা করলাম বিশ্বাস করতে। অত:পর, যখন বলল, 'তোমার চোখ বন্ধ, একদম বন্ধ, কিচ্ছু দেখতে পারছো না। তুমি গভীর ঘুমে আপতিত।' আমি তখন চোখ বন্ধ করে ফেললাম। গভীর ঘুমে না হলেও একটু ঘুম আসছিল বইকি!

তারপরে একসুরে বলা কথাগুলো বাঁ হাত উপরে তুলতে বলল। সোজাসুজি উপরে তোলা অবস্থায় কল্পনা করতে বলল, হাতের সাথে ভারি কিছু বাঁধা। হাত ভার সহ্য করতে পারছে না। নেমে আসছে। একটু একটু করে হাত নেমে আসছে। কি আশ্চর্য! আমার হাতটাও নামা শুরু করল। আমার একটু ভয় লাগল, চেষ্টা করলাম হাতটাকে স্থির রাখতে... আমি কি সত্যিই হিপনোটাইজড? আশ্চর্য, পারলাম না হাতকে স্থির রাখতে, কেউ একজন খুব জোড়ের সাথে নিচের দিকে টানছে।

এর পরে বলল, দুই হাত শক্ত করে এক সাথে ধরে রাখতে। এর পরে ভাবতে, হাত আলাদা করা যাবে না। এরপরে টেনে আলাদা করতে। ঠিক তখনই ভাবা শুরু করেছিলাম, আমি হিপনোটাইজড। কিন্তু হাত সহজেই আলাদা করে ফেললাম।

এরপরে বলা হল, ভাবতে, চোখ খোলা যাবে না। এবং চোখ খোলার চেষ্টা করতে। সত্যিই, খুব খুব চেষ্টা করলাম চোখ খুলতে। দুই চোখের পাতা সুপার গ্লু দিয়ে এক সাথে লাগানো ছিল। একটুও আলো আসতে পারল না, অনেক যুদ্ধ করেও খুলতে পারলাম না চোখের পাতা। বলল, মাথা নাড়ানো যাবে না--এতে বিশ্বাস করতে। তারপরে মাথা নাড়ানোর চেষ্টা করতে। মাথায় যেন কেউ দশ টনী ওজনের পাথর বসিয়ে দিল। খুব জোড় করে ঘাড়টাকে একটু একটু এদিক সেদিক নিলাম। দুই হাত উপরে তুলে যখন ভাবতে বললো হাতগুলো একটা অদৃশ্য শক্তি বলে একটা অন্যকে টানছে, তখন সত্যিই তাই হলো।

যখন আশ্চর্য হয়ে ভাবছি, ইশ, আমাকে হিপনোটাইজ করে ফেলবে এত্ত সোজা? পরেরটা বিশ্বাসই করব না। বলা হলো ভাবতে, মাথার উপর দিয়ে মাছি উড়ছে। হুট করে মনে হলো, ধুর হঠাৎ করে মাছি কোথথেকে আসবে। ব্যাস, কিছুতেই মাছি টের পেলাম না!

ক্লাসের একটা মেয়ে পুরা হিপনোটাইজড হয়ে গিয়েছিল, ঠিক এই পর্যায়ে বুঝা গেল। ও হাত দিয়ে মাথার উপর থেকে মাছি তাড়াচ্ছিল বিরক্ত হয়ে!

আধা ঘন্টার প্রক্রিয়াটা শেষে চোখ খুললাম। তখন বুঝলাম, হয়েছিলাম বুঝি বা আধা আধি হিপনোটাইজড। পুরাপুরি হই নি! হলে মন্দ হতো না অবশ্য!
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
১০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×