somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কম্পিউটিঙের জাহান্নাম ছেড়ে...

১৫ ই মার্চ, ২০০৭ সকাল ৭:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার ক্লাস টাইম টেবিল দেখে এখন বড় স্বস্তি লাগে। ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, দুই পদের সাইকোলজি... সব মিলিয়ে সপ্তাহে বাইশ ঘন্টা। কিন্তু তবু, শান্তি লাগে। মনে দোলা লাগে ভাবলে, হাজার হোক, কম্পিউটিং তো নেই! কম্পিউটিং নেই! বুকের উপর গত দুই বছর চাপ হয়ে বসে ছিল যেই ভারি পাথর, তা তো নেই! সি ও এম পি দিয়ে শুরু সাবজেক্ট একটাও নেই। সিএসইর ওই অভিশপ্ত বিলডিঙে আমাকে আর ঢুকতে হয় না। ওই সিএসই ক্যাফেতে বসে অ্যাডামের হতাশ দৃষ্টির সামনে কনফিউজড হয়ে তাকিয়ে থাকতে হয় না ল্যাপটপের স্ক্রীনের দিকে। সিএসই, কম্পিউটার সাইনস এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিঙের ল্যাবগুলোর লিনাক্সওয়ালা মেশিনগুলায় এসহেইচওএস দিয়ে লগ ইন করতে হয় না, হয় না! লগ ইন করে আমি কেবল একটা কমান্ডই জানতাম... 'মজিলাএন্ড'। উফ, কি শান্তি কাকে বুঝাই, কেমনে বুঝাই!

মাথায় কি ক্যারা ঢুকেছিল জানি না, এইচ এস সির পরে যখন আমি সাবজেক্ট চয়েস নিয়ে খুব কনফিউজড, তখন 'বায়োইনফরমেটিকসের' নাম শুনেই নিয়ে নিলাম। আসলে ইউনিভার্সিটি ওপেন ডে তে ওদের কথা শুনেই গলে গেলাম, আমাকে ঘোল খাওয়ানো সহজ--'বায়োলজিক্যাল রিসার্চ আর কম্পিউটিঙের অপূর্ব মিলন', 'খুবই এমারজিং ফিলড', মাত্র চার বছরের কোর্স, গ্র্যাজুয়েশনের পরেই চাকরি নিশ্চিত। মিনিমাম বেতন বছরে পঞ্চাশ হাজার। আহ, আহ! আমি ছাতা প্রোগ্রামিঙ নিয়ে কখনই ফ্যাসিনেটেড ছিলাম না। যেটা ছিলাম সেটা হলো ক্যারিয়ার নিয়ে মারাত্মক কনফিউজড।

ছোটবেলা থেকে কতবার যে ভবিষ্যত নিয়ে ভাবনা চিন্তা বদলালো। শেষ মেষ অনেক চিন্তা ভাবনা শেষে, চিন্তাভাবনাহীন বেকুবের মত ঢুকে গেলাম পুরাপুরি নতুন ফিলডে--বায়োইনফরমেটিক্স। বেশ অনেকগুলো এলাকা নিয়ে এক সাথে কাজ বায়োইনফরমিটিশিয়ানদের... বায়োলজি, কেমিস্ট্রি, ম্যাথস, কম্পিউটিং।

কম্পিউটিং ল্যাবে প্রথম দিন ঢুকেই যথেষ্ট কনফিউশন সৃষ্টি করল লিনাক্স বস্তুটা। তার চেয়ে বেশি কনফিউজড হলাম মেয়ের সংখ্যা দেখে। অস্ট্রেলিয়ার মত একটা উন্নত দেশেও কম্পিউটিং ক্লাসে ছেলে আর মেয়ের অনুপাত 20:1... কে বিশ্বাস করবে? আমার ছেলেদের সাথে পড়াশোনা করতে সমস্যা নেই, কিন্তু পুরা ক্লাসে 20 জন ছেলে আর আমি একা মেয়ে? (আম্মাআআ) তাও যদি স্বাভাবিক ছেলেরা হতো। প্রথম দিন তড়িঘড়ি করে কাজ শেষ করে সবগুলা জোট বেঁধে দেখি কম্পিউটার গেইমস খেলে! আরে জ্বালা! আমি আমার জীবনে কম্পিউটার গেমস খুব কম খেলেছি। স্ক্রীনের ভিতর কল্পিত ঘুষি দেয়ার চেয়ে বাস্তব জীবনে পাশের মানুষটাকে ঘুষি দিয়ে আরাম পাই বেশি। কম্পিউটারের প্রতি আমার যা ভালবাসা আছে তার কারণ এটা 'অন্য মানুষের' প্রতি জানালা খুলে দেয়। যারা অন্য মানুষদের থেকে দূরে থাকতে কম্পিউটারের কাছে থাকে তাদের সাথে আমার মিলবে ক্যামনে বলুন?

প্রোগ্রামিং পুরা ব্যাপারটাকেও ভালবাসতে পারলাম না একদম। কম্পিউটারের আসলে এক ফোঁটা বুদ্ধি নাই, একটা কমা বা সেমিকোলন কম দেয়ায় সারা রাত নষ্ট করে দিতে পারে। পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দিতে পারে... নির্দয়! ওই বাগ খুঁজে বের করার যেই অন্ত:হীন ফ্রাস্টেশন... উফ, কখখনও ভুলব না! আমি পারলে কাঁদতে বসি আর কি। পুরা ব্যাপারটাই কেমন যেন, বড় বেশি 'অবাস্তব'। আমার মেট্রিক্স মুভ্যিটা ভাল লাগে নি, তার চেয়ে অনেক বেশি ভালো লেগেছে 'পারস্যুট অফ হ্যাপিনেস', যেটা দেখে চরিত্রের সাথে কাঁদতে পেরেছি। আমি মানুষের অনুভূতি প্যাঁচ বুঝি, বা বুঝার চেষ্টা করতে পারি, কম্পিউটারের শুকনা তারের প্যাঁচ বুঝা আমার কম্ম না। হয়তো পার পেয়ে যেতাম, যদি তেমন মানুষদের পেতাম যাদের সাথে থাকলে মন ভরে। সিএসইর ছেলেদের কেন এত বদনাম হাড়ে হাড়ে টের পেলাম!

গত বছর খুব সাহসী একটা কাজ করলাম। 'কি করতে চাই' প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে পার্ট টাইম ইউনিভার্সিটি করলাম (মায়ের সাথে দীর্ঘস্থায়ী বাকযুদ্ধ এবং গোস্বা পর্ব চলার পরে)। প্রতি সেমিস্টারে চারটার বদলে দুইটা সাবজেক্ট... নো কম্পিউটিং ! গত সেমিস্টারে সাইকোলজি করে যখন খুব খুব ভাল্লাগলো, তখনই নিউরোসাইনসের খোঁজ পেলাম। আমাদের মস্তিষ্কের 1000000 বিলিয়ন নিউরনের পাকনামিতে যত আচানক ব্যাপার হয়, সব কিছুর কারণ নির্ণয়ের চেষ্টায় থাকে এই নিউরোসাইন্টিস্টরা। অনেকটুকু সাইকোলজি, অনেকটুকু ফিজিওলজি, অনেকটুকু বায়োকেমিস্ট্রি, অনেকটুকু এনাটমি। যত দিন যাচ্ছে, ভালবেসে ফেলছি খুব। আমি মানুষের মত এত ইন্টারেস্টিং এবং অন্তহীন কিছুর খুব গভীরে ডুব দিয়ে কাটাবো একজীবন, ভাবতেই ভাল লাগছে খুব!
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০০৭ সকাল ৮:০০
২৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×