আজ এপ্রিল ফুলস ডে…
'কাঁদো মুসলিম কাঁদো, জাগো মুসলিম জাগো'
-আবছার তৈয়বী
আজ পহেলা এপ্রিল। সারা দুনিয়ার খৃষ্ট-বিশ্বে বিশেষ করে পাশ্চাত্যে এ দিনটি April Fools day (এপ্রিলে বোকা বানানোর দিবস) হিসেবে পালিত হয়। এই দিনে তারা পরস্পর পরস্পরকে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানিয়ে ব্যাপক হাস্যরস ও কৌতুক করে থাকে। আত্মবিস্মৃত বাঙালি মুসলিমরা দিবসটি 'ফুলস ডে' বা 'ধোঁকা দিবস' বা 'বোকা দিবস' হিসেবে পালন করছে। বিভিন্ন দেশের মুসলিমকেও এ দিবসে অন্যকে বোকা বানিয়ে হাস্যরস করতে দেখা যায়। এটি একটি চরম অমানবিকতা এবং ধর্মীয় দৃষ্টিতে হারাম। ইসলামে কোন মানুষ দূরে থাক, পশু-পাখিকেও ধোঁকা দেয়া সম্পূর্ণ হারাম। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাহবিহী ওয়া বারাকা ওয়াসাল্লামা ইরশাদ করেছেন- 'আমি রসিকতা করি ঠিক, কিন্তু কখনো মিথ্যা বলি না'। তিনি আরও বলেছেন, 'ধ্বংস তার জন্য- যে লোক হাসানোর জন্য কথা বলে এবং তাতে সে মিথ্যার আশ্রয় নেয়।' সুতরাং এপ্রিল ফুলের নামে আমরা কেউই কাউকে প্রতারণা করবো না এবং মিথ্যার আশ্রয় নেবো না- এই হোক আজকের দিনের অঙ্গীকার। এপ্রিল ফুলস দিবসটি সৃষ্টির সাথে রয়েছে মুসলমানদের করুণ ও হৃদয়র্স্পশী এক ইতিহাস। ১লা এপ্রিলের এই ইতিহাস অন্যান্য জাতি জানলেও মুসলিম জাতির অনেকেই না জানার কারণে এই বিজাতীয় অপসংস্কৃতিকে আপন করে নিয়েছে।
ইউরোপীয় দেশ স্পেনে মুসলিম সেনাপতি তারিক বিন যিয়াদ এর নেতৃত্বে ৭১১ খ্রীস্টাব্দে ইসলামি পতাকা উড্ডীন হয় এবং মুসলিম সভ্যতার গোড়াপত্তন হয়। কুসংস্কার, অসভ্যতা ও অন্ধকারে নিমজ্জিত পুরো ইউরোপকে সংস্কার, সভ্যতা, মানবতা এবং জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত করে মুসলমানরা। সুদীর্ঘ প্রায় আটশ বছর পর্যন্ত সেখানে মুসলমানদের গৌরবময় শাসন বহাল থাকে। কিন্তু পরবর্তীতে ধীরে ধীরে মুসলিম শাসকরা ভোগ বিলাসে গা ভাসিয়ে দিয়ে ইসলাম থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। ফলে মুসলিম রাজ্যগুলো ধীরে ধীরে মুসলমানদের হাত ছাড়া হয়ে খ্রীস্টানদের দখলে যেতে থাকে। মুসলিম সাম্রাজ্যে নেমে আসে পরাজয়ের কালোছায়া। এরই ধারাবাহিকতায় আসে স্পেনের পালা। এক পর্যায়ে মুসলিম নিধনের লক্ষ্যে খ্রীস্টান রাজা ফার্ডিন্যান্ড বিয়ে করে পর্তুগীজ রাণী ইসাবেলাকে। যার ফলে মুসলিম বিরোধী দুই বৃহৎ খ্রীস্টান শক্তি সম্মিলিত শক্তি রুপে আত্মপ্রকাশ করে। রাণী ইসাবেলা ও রাজা ফার্ডিন্যান্ড খুঁজতে থাকে স্পেন দখলের মোক্ষম সুযোগ।
১৪৯২ খৃ. মুসলিম শাসন ও সভ্যতার গৌরবোজ্জল জনপদ স্পেনে খৃস্টানদের সম্মিলিত বাহিনী অসংখ্য নিরীহ নারী-পুরুষকে হত্যা করে। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়ে উল্লাস করতে করতে ছুটে আসে রাজধানী গ্রানাডায়। এ সময় ফার্ডিন্যান্ডের নির্দেশে আশপাশের সব শস্য খামার জ্বালিয়ে দেয়া হয়। আগুন দিয়ে পোড়ানো হয়- শহরের খাদ্য সরবরাহের প্রধান কেন্দ্র 'ভেগা উপত্যকা'। অচিরেই গোটা শহরে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। দুর্ভিক্ষ যখন প্রবল আকার ধারণ করে তখন প্রতারক ফার্ডিন্যান্ড ঘোষণা করলো, 'মুসলমানরা যদি শহরের প্রধান ফটক খুলে দেয় এবং নিরস্ত্র অবস্থায় মসজিদে আশ্রয় গ্রহণ করে তাহলে তাদের বিনা রক্তপাতে মুক্তি দেয়া হবে।'
সেদিন দুর্ভিক্ষতাড়িত গ্রানাডাবাসী অসহায় নারী ও নিষ্পাপ শিশুদের সম্ভ্রম ও জীবনের দিকে তাকিয়ে খৃস্টানদের আশ্বাসে বিশ্বাস স্থাপন করে খুলে দেয় শহরের প্রধান ফটক। সবাইকে নিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করে আল্লাহর ঘর পবিত্র মসজিদে। কিন্তু হায়! মানব সভ্যতার কলঙ্ক, বিশ্বাসঘাতক ফার্দিনান্দ মুসলমানদের সরল বিশ্বাসের সুযোগ পুরোপুরি গ্রহণ করে। শহরে প্রবেশ করে খৃস্টান বাহিনী মুসলমানদের প্রতিটি মসজিদে একযোগে তালা লাগিয়ে দেয়। এরপর মসজিদগুলোর চারদিকে আগুন ধরিয়ে বর্বর উল্লাসে মেতে ওঠে মানুষরূপী হায়েনাগুলো। অগণিত পুরুষ, মহিলা ও শিশু সেদিন অসহায়ভাবে আর্তনাদ করতে করতে জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারায়। মুসলমানদের সেদিনকার আর্তচিৎকার যখন গ্রানাডার আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে তুলেছিল সেদিন রাণী ইসাবেলা হেসে বলেছিলেন, 'হায়রে মুসলমান! তোমরা এপ্রিলের বোকা (April fool)। শত্রুর আশ্বাসে কি কেউ বিশ্বাস করে।'
শুধু এতেই ক্ষান্ত হয়নি খৃষ্টান নরপিচাশ ফার্ডিন্যান্ড ও রাণী ইসাবেলা। তারপরেও যেসব মুসলমান বেঁচে ছিল তাদেরকে জোর করে খৃষ্টান বানানো হয়। মসজিদগুলোকে গির্জায় রূপান্তরিত করা হয়। বুযদিল শাসক বুআবদিল্লাহ ন্যাক্কারজনক ভাবে দাসচুক্তিতে স্বাক্ষর করে পার পেতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত তিনিও রেহাই পাননি। খৃষ্টান ঐতিহাসিকদের লিখিত ইতিহাসে লেখা আছে, বুআবদিল্লাহর আত্মসমর্পনের দিনটি ছিল ১৪৯২ সালের ২রা জানুয়ারি। সেই হিসেবে ১লা এপ্রিলের মুসলিম হত্যাযজ্ঞের নির্মম ঘটনাটি মেলে না। আর এটা নিয়ে নাস্তিক ব্লগাররা মুসলমানদের করুণ ইতিহাসকে 'মিথ্যার বেসাতি' বলে উড়িয়ে দিতে চায়। কিন্তু বর্তমানে প্রচলিত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার যে এপ্রিলকেই জানুয়ারি হিসেব করে সে কথাটি বেমালুম চেপে যান। ক্যালেন্ডার বদলের সাথে এপ্রিলের ফুলসের যে থিমটি বর্তমানে আধুনিক খৃষ্ট বিশ্বে চালু আছে- তাও এটার সাথে মিলে যায়।
১৯৯৩ সালের পহেলা এপ্রিল গ্রানাডা ট্যাজেডির পাঁচশ বছর উদযাপন উপলক্ষে স্পেনে আড়ম্বরপূর্ণ এক সভায় মিলিত হয়েছিল বিশ্ব খৃস্টান সম্প্রদায়। সেখানে তারা নতুন করে শপথ নেয়- একচ্ছত্র খৃস্টবিশ্ব প্রতিষ্ঠার। বিশ্বব্যাপী মুসলিম জাগরণ ঠেকাতে গড়ে তোলে ‘হলি মেরি ফান্ড'। এরই ধারাবাহিকতায় গোটা খৃস্টবিশ্ব নানা অজুহাতে ইরাক, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, লিবিয়া, ইয়েমেন তথা মধ্যপ্রআচ্য ও আফ্রিকার অনেক দেশসহ সারা পৃথিবীর মুসলিম দেশগুলোতে একের পর এক আগ্রাসন অব্যাহত রেখেছে। কখনো তারা সরাসরি হস্তক্ষেপ করে, আবার কখনো মুসলমানকে মুসলমানের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়। প্রায় সকল মুসলিম দেশেই চলছে দুঃসাশন, অত্যাচার-অবিচার, হত্যাযজ্ঞ এবং জঙ্গীবাদ। এসবের মূলে কিন্তু তারাই রয়েছে। এক মুসলমানকে দিয়েই আরেক মুসলমানকে নিয়োজিত নিয়োজিত করেছে। অতএব, সামনে ভয়াবহ দূর্দিন। এই দূর্দিনে এসব নব্য ফার্ডিন্যান্ড- ইসাবেলাদের বিরুদ্ধে শান্তিকামী শক্তির চাই- সুদৃঢ় ঐক্য এবং জাগরণ। আর যদি তা করতে ব্যর্থ হই, তবে অচিরেই গ্রানাডার মতো বধ্যভূমিতে পরিণত হবে পুরো মুসলিম বিশ্ব। সুতরাং বেশি বেশি ভাবুন, কাঁদুন এবং জাগরিত হোন। নিজেদের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে আঁকড়ে ধরুন। বিভেদ নয়, ঐক্যের পথ খুঁজুন এবং নিজস্ব সংস্কৃতির চর্চা করুন।
বি.দ্র.: লেখাটি বেশি বেশি শেয়ার করুন এবং কপি করে অবিকৃতভাবে নিজেদের টাইমলাইন থেকে একযোগে পোস্ট করুন।
ছবি পরিচিতি: ১. কর্ডোভার প্রধান মসজিদ, যেটিতে আগুন দিয়ে মুসলমারদের পুড়িয়ে মেরেছিল।২. সেভিজার মসজিদ, বর্তমানে যেটিকে মিউজিয়াম করা হয়েছে। ৩. বিখ্যাত আলহামরা প্রাসাদ। ৪. আলহামরা প্রাসাদের দৃষ্টিনন্দন ডেকোরেশন।
তারিখ: ০১ এপ্রিল, ২০১৭ খৃ.
আবুধাবি, ইউ.এ.ই।