somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মায়ের জন্য একদিন....

৩০ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গতকাল দুপর ২ টা মাথার ঠিক উপরে সূর্য মামা। গ্রীষ্মের ক্রুদ্ধ তাপদাহে শুষিত হওয়া রুক্ষ, তৃষ্ণার্ত বাংলাদেশকে তার পিপাসা মেটাতে বর্ষা ঋতুর আগমন কিছুদিন আগে ঘটে গেলেও সূর্য মামার ছেলে রুদ্র ভাইয়ের তেজী বহ্নিশিখায় বাংলাদেশ পোড়ানর দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে তার জেদ এখনো কমেনি। দক্ষিণের জানালাটা খুলে দিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম ঘুমবাবু হালকা ভর করছে চোখের পাতা মিলিত হতে যাচ্ছে এমন সময় ফোন বেজে উঠল ঘুমবাবুকে পাস কাটিয়ে ফোনটা হাতে নিলাম মিস্কাত রাসেল এর ফোন, রিসিভ করেঃ
_ কিরে আমাবস্যার চাঁদ মনে পড়ল আমাকে?
_ মানে কি?
_ না তোকে ত ইদানিং হারিকেন দিয়েও খুজে পাওয়া মুশকিল।
_ দোস্তরে বাসার সব দায়িত্ব আমার উপর আব্বা থাকতে বুজিনাই সংসার এর কাজ কত। বাসার কাজ করতে করতে আজ আমি ক্লান্ত। যাইহোক, আজ চলে আয় পুস্পদাম রিসোর্ট এ ইফতার করি একসাথে একটু আড্ডাও দেওয়া যাবে।
_ যা গরম পড়ছে রে, ওকে দেখাযাক গেলে তোকে কল দিব।
_ আমি কিন্তু অপেক্ষায় থাকবো আসিস কিন্তু।
_ হুম যাবোনে।
_ ঠিক আছে রাখলাম তাহলে।
_ হুম বায়।
ফোনটা পাশে রাখার একটু পরেই ঘুমবাবুর কাছে হার মানলাম। চলে গেলাম অন্য জগতে।
যখন চেতনা ফিরে পেলাম তখন ৫.৩০ বাজে। জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালাম প্রকৃতির রূপ পাল্টে গেছে। রুদ্রদাহ অনেকটা কমে গেছে। ঢলে যাওয়া গাছের পত্ররাজি অল্প অল্প করে নিজেকে মেলে ধরতেছে। প্রকৃতির সতেজতা স্পষ্ট হচ্ছে। বিছানা ছেড়ে আনুষাঙ্গিক কাজকর্ম সেরে বের হলাম গন্তব্য পুস্পদাম রিসোর্ট । আম্মা পেছন থেকে ডেকে বলল
_বাবা কোথায় যাচ্ছ এখন আজ ইফতারটা বাসায় করো প্রতিদিন একা একা ইফতার আমার ভাল লাগেনা।
কথাটা আমার শ্রবণেন্দ্রিয় স্পর্শ করেনি এমন ভান করে এগুলাম। আবার বলল:
_আমার কথার কোন মুল্য নাই তোমার কাছে?
_ যেখানে আমার চাওয়ার মূল্য তোমাদের কাছে নাই। সেখানে আমাকে নিয়ে ইফতার করাটা জরুরী বোধকরছিনা। আমি চললাম।
মা আমার পথের দিকে তাকিয়ে রইল কোনো কথা বলল না।
৪০ মিনিটের ব্যবধানে পৌঁছে গেলাম ওখানে।বাহিরে থেকেই কল করলাম প্রানের বন্ধু রাসেল কে। ওর বাসাটা বেশি দূর না এখান থেকে মাত্র ৫ মিনিটের ব্যবধান। সে বল্ল ভিতরে গিয়ে অপেক্ষা করতে অনতিবিলম্বে সে আসবে। আমি ভিতরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম । ভিতরে বসে এফ. বি তে মনোনিবেশ করলাম। একটু পরেই রাসেলঃ
_ কিরে দোস্ত এত মনোযোগ দিয়ে কি দেখা হচ্ছে।
_ না কিছুনা বস।

রাসেল আমার বিপরীতে বসল। গল্প শুরু করলাম। অল্পক্ষণ পরেই দেখলাম আমাদের বয়সি একটি ছেলে ৪০ বয়সি একজন ভদ্র মহিলাকে হাতে ধরে ধরে এনে আমাদের পাসের টেবিলে বসাল। মা বলে সম্বোধন করা থেকে বোঝতে পারলাম উনাদের সম্পর্ক। মাকে রেখে ছেলেটি রিছিভসনের দিকে গেল। ভদ্র মহিলাটির চোখে কালো চশমা ছিল। সেটি খুলে টেবিলে রাখতে গিয়ে হাতের অনাকাঙ্খিত স্পর্শে টেবিলের একটি গ্লাস পড়ে গেল। উনি তরিগরি করে সেটি আয়ত্তে আনতে চাইল কিন্তু সঠিক দিকনির্দেশনা না পাওয়ায় সম্ভব হচ্ছিলো না। গ্লাসটি টেবিল থেকে পড়ে যাওয়ার মুহূর্তে আমি গিয়ে ধরলাম। তখনই বোঝলাম উনি দৃষ্টিহীন।
ইফতারের সময় হল। আমি আর রাসেল এদিকে মনোযোগ দিলাম। কিছুক্ষণ পর আবার ওই টেবিলে তাকালাম দেখলাম ছেলেটি মাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিচ্ছে। মা খাচ্ছে আর উনার চোখে স্পষ্টতর বারিধারা। কারণটা জানার আগ্রহি হলাম। অল্পতেই খাওয়া শেষ করে চলে এলাম মায়ের কাছে। জানতে চাইলাম কান্নার কারণটা।
আমাদের নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার।নয়নকে কখনো দামি কিছু পরিয়ে, খাইএ বড় করতে পারিনি। মাধ্যমিক এর পর লেখাপড়াটাও করাতে পারিনি খরচের অভাবে। আজ আমার ছেলে নিজের উপার্জিত টাকা দিয়ে দামি কাপর কিনে দিছে। আর এখন আমাকে এই দামি হোটেল এ নিয়ে আসছে ইফতার করাতে। ছেলেটি বলল মা তুমি আমাকে তোমার সাধ্যের ভিতরে সর্ব উচ্চ দিয়ে লালন পালন করেছ আর আজ আমি আমার সর্ব উচ্চ দিয়ে তোমাকে খুশি রাখতে চাইতেছি। বোঝলাম এই কান্না মায়ের খুশির কান্না। মা কখনো ছেলেকে দিতে কৃপণতার পরিচয় দেয় না যেইটা দেয় সেইটা আমাদের বিপরীতমুখী ধারণা। অনুসুচনায় ভিতরটা কেদে উঠল।
আড্ডা দেওয়ার জন্য নিজেকে উপযোগী করতে পারলাম না। রাসেল কে বিদায় জানিয়ে সঙ্গে সঙ্গে চলে এলাম বাসায়। নিজের ঘরে গেলাম। কোন কিছুই ভাল লাগল না। ঈদের খরচের টাকার জন্য মায়ের সাথে যে অন্যায় করেছি তার প্রায়াসচিত্ত কিভাবে করব সেই ভাবনায় অস্থির হয়ে গেলাম। রাতের খাবার না খেয়েই বিছানায় গেলাম।
সকাল বেলা মা আমার ঘরে আসল । আমার হাতে অনেকগুলো টাকা দিয়ে বললঃ
_এই নে তবু মন খারাপ করিছ না। তোর এমন মুখমন্ডল দেখলে আমার ভাল লাগেনা। যা মনের মত কেনাকাটা করে আয়।
আমি কোন কথা না বলে বসে রইলাম। দুপুরের পর বাসা থেকে বাহির হলাম। চলে গেলাম মার্কেট এ সবগুলো টাকা দিয়ে আব্বু আম্মুর জন্য কেনাকাটা করে যখন বাসায় ফিরলাম তখন ইফতার এর সময় ঘনিয়ে।
সবকিছু আম্মুর হাতে দিলাম মা হতবাগ হয়ে গেল এসব দেখে। মায়ের পাশে বসে বললাম মা তুমার সাথে যে অন্যায় করেছি তার জন্য ক্ষমা কর । আর কোনদিন তোমাকে কষ্ট দিয়ে কথা বলব না। আজ থেকে প্রতিদিন তোমার সাথে ইফতার করব।
আমার কথা শুনে মা হাসল আর বলল আমার ছেলেতো অনেক বর হয়ে গেছে। সবকিছু বোঝার ক্ষমতা তার হয়ে গেছে।....................................।

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৭
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নেতানিয়াহুও গনহত্যার দায়ে ঘৃণিত নায়ক হিসাবেই ইতিহাসে স্থান করে নিবে

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৩৮

গত উইকেন্ডে খোদ ইজরাইলে হাজার হাজার ইজরাইলি জনতা নেতানিয়াহুর সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।
দেখুন, https://www.youtube.com/shorts/HlFc6IxFeRA
ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার উদ্দেশ্যে নেতানিয়াহুর এই হত্যাযজ্ঞ ইজরায়েলকে কতটা নিরাপদ করবে জনসাধারণ আজ সন্দিহান। বরং এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×