somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মা...........................।

০২ রা মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান রকি। পড়াশোনার জন্য আলাদা কোনো টেবিল নাই তার। দিনের বেলায় বাড়ান্দায় পাটি পেতে আর রাতের বেলায় বিছানায় কেরোসিনের বাতি জ¦ালিয়ে পড়ালেখা করে সে। আজ রাতেও পড়তে বসল রকি। প্রথমে দুপা ভাজ করে শরির দুলিয়ে দুলিয়ে জোরেজোরে ডাক পড়া পড়তে থাকল রকি। এভাবে পড়ার ক্লান্তি অবচেতনেই তাকে বিছানায় শুইয়ে দিল্,বুকের নিচে বালিস রেখে বইয়ের কাছে চোখ নিয়ে পড়তে থাকল। সময় যত দীর্ঘ হচ্ছে তার গলার স্বর তত নিচে নামছে।একটা সময় মিনমিন করতে লাগল, কি বলছে তা অন্য কেউ তো দূরে থাক তার নিজের কানেও স্পষ্ট নয়।এবার অলসতা আরো বেড়ে গেল। নাহ,পড়তে আর ইচ্ছে হচ্ছে না। এখন লিখা যাক একটু। প্রথমেই বাড়ির কাজগুলো লিখতে হবে নয়তো কাল ক্লাসে অপমানিত হতে হবে। শুয়ে থাকা অবস্থাতেই খাতা কলম গুছিয়ে নিল রকি।
কিরে খোকা পড়ার শব্দ পাচ্ছিনা তো,ঘুমিয়ে গেলি নাকি? না মা ঘুমোই নি,লিখতেছি। সত্যিই ঘুম আকর্ষন করতেছিল রকিকে। মায়ের হঠাৎ শব্দে ঘুমের ঝোক থেকে ফিরে এল রকি। আপন মনে তাকিয়ে থাকল মায়ের দিকে কিছুক্ষন।
ঘরির কাটা দশটা অতিক্রম করেছে। মা। দোয়ারে বসে হাতের কাজ করছে। বড় বাজারের দর্জিদের কাজের চাপ থাকে অনেক।সেলাই করার পর বোতাম লাগানো আর ঘর কেটে হাতে সেলাই করাটা জামেলা বোধ হয়। এজন্য এই কাজগুলো অন্যদের দিয়ে করায়। মা কাজগুলো বাজার থেকে সন্ধায় এনে রাতে করে সকালে দিয়ে দেয়। প্রতি পিছ এ পাঁচ-দশ টাকা পাওয়া যায়।যা মায়ের বাড়তি উপার্জন। ভাগ্যিস কয়েকটা দিন সূর্য্য কাকু তার চাদ বেয়াইকে একটু বেশিই আলো ধার দেয় যার দরুন রাতে কেরোসিনের খরচটা কমে আসে।আম্মু কতক্ষন কাজ করবে জানা নাই। কারন কোনো রাতেই মায়ের কাজের শেষ দেখা যায়নিএর আগেই ঘুমের রাজ্যে যেতে হয়।
সকালে যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন দেখা যায় বইগুলো গুছানো,বালিস মাথার নিচে,রান্না বান্না তথা বাড়ির সমস্ত কাজ শেষ। গোসল খাওয়া শেষে মা বেড়িয়ে পড়েন রাতের করা কাজগুলো নিয়ে। দোকানে জমা দিয়ে হাটা ধরেন-গন্তব্য নিজের কর্মস্থল বাজারের একটু দূরে গড়ে ওঠা গার্ন্টেস। সেখানে কাজ করেন বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত কখনো আবার সন্ধাও পেরিয়ে যায় কাজের সময়।বেতন তিন হাজার পাঁচশত টাকা। যা দিয়ে চলে মা ছেলে দুজনার এই সুখের সংসার।
বাসায় ফিরে আবারো কাজ। সারাদিনের এত কাজের পরেও ছেলের সামনে মা যেন নিতান্তই ক্লান্তিহীন। কষ্টের ছিটেফুটাও বুঝতে দেয় না ছেলেকে পাছে ছেলের মানসিকতার পরিবর্তন হয়,লেখাপড়ায় ব্যঘাত ঘটে। সারা মাসের একার উপার্জনের সিংহভাগই খরচ হয় ছেলের পেছনে। স্কুলের বেতন,পরীক্ষার ফিস,খাতা কলম,পড়ার জন্য কেরোসিন,নতুন নতুন কাপড়,ভালো ভালো খাবার এসবেই ব্যয় হয় সব। নিজের জন্য কিছুই করেন না মা। ছেলের যেখানে কয়েক জোড়া জুতো,প্যান্ট,শার্ট মায়ের সেখানে দুটোই অতিরিক্ত মনে হয়।
এত কষ্টের পরেও ছেলেকে সাহেবদের সন্তানদের কাতারে দাড় করাতে সচেষ্ট মা। কোনা মা ই চায় না ছেলে অন্যের থেকে পিছিয়ে থাকুক। ছেলের চাহিদার বাইরেও ছেলেকে দিতে মন চায় উনার হয়ত দেওয়া হয় না। এত কিছুর পর ছেলের কাছে মা শুধু একটি জিনিস ই চায় তা হল মন দিয়ে পড়াশোনা করা। মানুষের মত মানুষ হবে ছেলে এমনটাই তার স্বপ্ন।
প্রতি মাসের বেতনের টাকা আগেই হিসেব করে রাখা হয়। কোথায় কত টাকা বাকি পড়েছে,কাকে কি বাবদ কত টাকা দিতে হবে সমস্ত খরচ আগেই মিলিয়ে নেওয়া হয়। বেতন উঠার পর তা যথাযথ জায়গায় খরচ করা হয়। এই মাসেও এমনটাই ঠিক করা ছিল। কিন্তু জামেলা পাকালো স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাহেব। উনার মর্জি হল স্মৃতিসৌধ দেখতে যাবেন। সাথে নিবেন শিক্ষার্থীদেরকেও । যদিও সবাইকে জোড় করবেন না তবুও যাওয়ার দাওয়াত দিবেন।যাদের মন চাইবে তারাই যাবে। আর যেতে হলে চাদা দিতে হবে তিনশত টাকা। যথারীতি মাকেও গতকাল বাসায় এসে বলা হল। শিক্ষকের সামনে অসংকোচে রাজি হয়ে গেল মা। যখন উনি চলে গেলেন মা কিছুক্ষন চুপ করে ছিলেন হয়ত হিসেব কষছিলেন,খরচের খাতা থেকে কোনটি বাদ দিয়ে এই টাকাটা দেওয়া যায়। পরক্ষনেই মৃদু হাসলেন। হয়ত উপায়টা পেয়ে গেছেন উনি। কিন্তু কিভাবে! খরচের খাতাটা তো আমিই লিখে দিছি।এ মাসের সবইতো খুবই দরকারি।
আম্মু হাসলেও আমি চিন্তিত। আচ্ছা? আম্মু তার কাপড় কেনার টাকাটা নিয়ে ভাবলেন নাতো! না না এটা হতে পারে না। আম্মুর একটা কাপড় কয়েক জায়গায় ছিরে গেছে, হাতের সেলাইগুলো স্পষ্ট বোঝা যায়। আমাকে দিতে গিয়ে মা তো নিজের জন্য কিছুই করেন না।আজ আমি ঘুরতে যাব আর এজন্য মা তার কাপড় কেনার টাকা দিয়ে মা ছেড়া কাপড় পড়বে এটা আমি মানতে পারবো না। যদি এমনটাই হয় তাহলে কালই ইচ্ছে করে পায়ে ব্যথা পাবো। আর ব্যথার ভান ধরে বিছানায় পড়ে থাকব। হ্যা,একটি মিথ্যে অভিনয় করব তবেই যদি আম্মুর কাপড় কেনাটা হয়। আম্মুওতো অভিনয় করে। ভালো ভালো খাবার আমাকে খাওয়াতে গিয়ে বলে-আমার এসব ভালো লাগেনা বাবা তুই খেয়ে নে।
খোকা,খোকা জলদি ওঠ। আর কত ঘুমাবি। স্কুলের সময় হয়ে গেল তো। মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গল রকির। সত্যিই আজ ঘুমটা বেশি হয়ে গেছে। হাতে সময় একদম নেই । তড়িগড়ি করে সব কাজ সেরে স্কুলে চলে আসল রকি।
বাংলা স্যার ক্লাসে ঢুকলের। নাম ডাকার পড়েই বাড়ির কাজ জমা নেওয়ার নির্দেশ দিলেন ক্লাস ক্যাপ্টেন কে। সবাই দিল। রকিও খাতা বের করল। কিন্তু এসব কি লেখা খাতায়! আজ ক্লাসে ‘আমার মা’ রচনা পড়া ছিল। সবাই বই থেকে হুবহু মুখস্ত করে লিখে এনেছে। রকিও মুখস্ত করেছিল। কিন্তু লিখতে গিয়ে মুখস্ত কিছুই লেখা হয়নি।
রকির সামনে স্যার দাড়ানো,পা কাপছে,আজ হয়ত খুব মার খেতে হবে। কি ব্যপার রকি বাড়ির কাজ লিখ নাই কেন?
স্যার,ইয়ে মানে।
কি বলছ আবল তাবল।দেখি তোমার খাতা বের কর দেখি।
খাতা বের করল রকি। রচনার নামের জায়গায় আমার মা’ লেখাটি নেই।কিন্তু কিছু লেখা আছে খাতায়। খাতাটি হাতে নিল স্যার। লাইন টু লাইন পড়তে থাকল।
রকি তোকে ব্যথা পেতে হবে না। তুই শুধু বাসায় গিয়ে আম্মুকে বলবি তোর লেখা সব থেকে সুন্দর হয়েছে বলে আমি তোর টাকাট পুরস্কার হিসেবে দিব। তাতে করে তোর মা.তোর,আর আমার তিনজনের ইচ্ছাই পূরণ হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৬
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×