জীবনে কখনো শখ করে কোনো গল্পের বই পড়িনি। যখন শখ করেছিলাম তখন মায়ের ঝারি খেয়ে গল্পের বইয়ের সাথে সাথে শখ টা কেও গুটিয়ে রেখে দেই। না, এমন নয় যে আমার মা গল্পের বই পড়তে পছন্দ করতেন না, বরং আমি তার মেয়ে হয়ে যে গল্পের বই পড়িনা, এ শুনেই মানুষ অবাক হয়, কেননা আমার মা শুধু মাত্র বই পোকা ছিলেন না, তিনি ছিলেন বই 'মহা' পোকা। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে কেনো যেন মা মনে করতেন, আমরাও যদি এই বই পড়ার নেশায় মত্ত হই, তবে সেটা সামাল দেয়ার সাধ্য আমাদের থাকবেনা। অত্ঃপর আমরা স্কুল- কলেজের পড়া-শোনা ছেড়ে,ক্লাসের পাঠ্য-পুস্তকের উপর গল্পের বই্য়ের আসর জমিয়ে রাখবো এবং পরীক্ষায় করবো 'ফেইল'। তিনি এমনটা বলেছেন কারণ তিনিও একদা এমনই ছিলেন জানিনা আমাদের কে নিয়ে মায়ের এই ধারণা আদৌ সত্য হত কিনা, কিন্তু বইয়ের নেশায় যেহেতু আমি সেকালে অভ্যস্ত হইনি, সেহেতু পরবর্তি জীবনেও আমি নিজ ইচ্ছায়ও কখনও নিজ হাতে একটি গল্পের বই তুলেও দেখিনি। (এই আফসোস টা আমার রয়েই যাবে)।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে নিজের মধ্যে একটি সুপ্ত প্রতিভা অনুভব করি ( আদৌ তা প্রতিভার কাতারে পরে কিনা সন্দেহ ) আমার মনে হলো আমার মধ্যে 'হয়ত' লেখা-লিখি করার একটা ছোট-খাট প্রতিভা লুকিয়ে আছে। প্রায় সময়ই ছোট ছোট ছড়া, কবিতা, গানের লিরিক লেখতাম। যেহেতু সাহিত্য সম্পর্কিত জ্ঞানটা আমার কম ছিলো (এবং এখনো আছে), তাই নিন্দিত হওয়ার ভয়ে আমার লেখা গুলো কখনো কাওকে দেখাতাম না।
পরবর্তিতে একটা সময় আসে যখন 'হুমায়ুন আহমেদ' এর কিছু গল্প পড়া শুরু করি!!!
বাহহহ!!! কি সহজ এবং সাবলীল ভাষায় কত গভীর একটা গল্প রচনা করে ফেলেন তিনি। না পড়তে কষ্ট,না বুঝতে সমস্যা, না দাঁত ভাঙা শব্দকোষের আড়ালে লুকিয়ে থাকা সামান্য একটি ঘটনা। একদমি যেন আমার বোধগম্য হওয়ার জন্য গল্পগুলোতে এমন স্বাভাবিক ভাষার প্রয়োগ। সে থেকে আমি একটা ব্যাপার উপলব্ধ করলাম; লেখা-লিখির জন্য শুধু যে বিপুল পরিমাণ সাহিত্যিক শব্দ সম্পর্কেই জ্ঞান থাকতে হবে তা কিন্তু নয়, বরং একটি ঘটনা কে কীভাবে নিপুণতার সাথে পাঠকের কাছে ফুটিয়ে তোলা যায়, সেটাই হচ্ছে লেখকের আসল সার্থকতা। তাই মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম; 'আমিও লিখবো। মনের অব্যাক্ত যত কথা, জীবনে সম্পর্কে আমার যাই ধারণা, মোট কথা, মনে যা আসে তাই লিখবো'..... কিন্তু আমার এই লেখা কেও দেখবেনা এবং কেও জানবেনাও যে 'আমি' লিখি।
আমার সমস্ত শর্তাবলি কে মাথায় রেখে ভাবলাম, ব্লগে লেখার মাধ্যমে এই যাত্রা শুরু করা যাক। ব্লগে নিয়মিত ( ) লিখবো, অন্যান্য ব্লগার দের লেখাগুলো পড়বো,যেমন জ্ঞানচর্চা হবে, তেমন সাহিত্য চর্চাও হবে। কিন্তু হতাশার বিষয় হল, এ দুইটার একটা উদ্দেশ্যও সফল হলোনা। ব্যস্ত সময়ে ব্যস্ত থাকি, আর বাকি সময় বিশ্রাম নেয়ায়, আলসামি করায় মেতে থাকি। আর হঠাৎ করে যখন মনে পরে যে অনেকদিন হয় ব্লগে তো কিছু লেখা হয়না, তখন পুরা মাথা ঘাটা-ঘাটি করেও একটা বিষয়ও খুঁজে পাইনা লেখার মত। বাাসস! এমনেই সময়, দিন, মাস পার হয়ে যায়, আমার কল্পিত সাহিত্যচর্চাও জম্পেশ চলতে থাকে।
এমন অনেক গড়ি-মোইশি করার পর যখন কিছু একটা লেখার জন্য ব্লগে আসি, তখন সাহিত্য নিয়ে সবার স্পৃহা,, ব্লগে তাদের ঊৎকর্ষিত সময়, এসব দেখে আবারও হতাশ হয়ে পরি। নাহ!! এই লেখা-লিখির কাজ আমার মত দুর্বল, নিষ্কর্মার জন্য নয়।
তাই আজ, আমার ব্লগার বন্ধুরা, যারা নিয়মিতভাবেই তাদের অসাধারণ প্রতিভা আমাদের মাঝে ফুটিয়ে তুলছেন, আমাদের আনন্দ, বিনোদন সহ দেশ-বিদেশের নানা খবর খুব সুন্দর ভাষায় প্রকাশ করছেন, তাদের জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ ও প্রাণ ভরা অভিনন্দন। আমি আপনাদের মতই একজন ব্লগার হতে চাই।