তুমি তো জানো,আগে কখনো সমুদ্র দেখিনি আমি।তাই কক্সবাজার যখন গিয়ে পৌঁছালাম আমি ছিলাম ভয়াবহ উত্তেজিত।শুধু একা আমিই নই,অন্য যারা
আগে সমুদ্র দেখেনি তারা সবাই।
আমরা পৌঁছেছি ২৫ ফেব্র“য়ারী সকাল ১০:০০টায়।নাস্তা করতে করতে বেজে গেল
১০:৩০টা।বারবার মনে হচ্ছিল কী দরকার নাস্তা করার!
অবশেষে আমাদের ট্যুর গাইড তারেক ভাই এসে বললেন,চল।
পেটের মধ্যে একটা গুড়গুড়ে অনুভূতি আর বুক ঢিপঢিপ নিয়ে সম্মোহিতের মতন
হাঁটতে শুরু করলাম।কিছুদূর যেতেই সামনে ঝাউগাছ,তারপর শোঁ শোঁ শব্দ আর
তারপর.....................অবশেষে সমুদ্রের সামনে.............।
কিন্তু বিশ্বাস কর,আমি হতাশ হয়েছিলাম।এই.......এই সমুদ্র...............!
আমি এরকম ভাবিনি,আমি এরকম স্বপ্ন দেখিনি।
আর সবার সাথে এগিয়ে গেলাম।
তারপর সোজা পানিতে।লাফালাফি,দাপাদাপিতে কোন দিক দিয়ে যে ১:৩০টা বেজে
গেছে টের পাইনি।
বিকেলে প্ল্যান হল হিমছড়িতে যাওয়া।আগে যারা এসেছিল,তাদের কাছে শুনলাম দেখার কিছু নাই।শুধু পাহাড় বেয়ে ওঠা ছাড়া।যেতে আর এতটুকু ইচ্ছে ছিল না,বরং
মেয়েরা সবাই বার্মিজ মার্কেটে যেতেই বেশি আগ্রহী ।কিন্তু দলের সবাইকে একসাথে
থাকতে হবে।গেলাম হিমছড়ি.................পাহাড়ে উঠলাম।হ্যাঁ,এখানে ভাল লাগছিল।কারণ জায়গাটা সুন্দর।একদিকে পাহাড় আর একদিকে সমুদ্র।সূর্যাস্তের একটু আগে গিয়েছিলাম আমরা।সোনালী আলোয় সোনা হয়ে ছিল চারদিক।ছবি তুললাম একগাদা।
কে যেন বলল পাহাড়ের উপর থেকে সূর্যাস্ত দেখতে বেশি সুন্দর।কিন্তু আমি বললাম সৈকতে বসে দেখব।তারপর আর কি যত দ্রুত সম্ভব নেমে গেলাম..............সোজা সৈকতে।সূর্য ডুবে যাচ্ছে,সূর্যকে হাতের তালুতে নিয়ে ছবি তুলতে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ল।আমিও তুলেছি।কিন্তু জানো,আমার ভাল লাগছিল না।কিছুই ভাল লাগছিল না।কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছিল না।অন্যদের কাছ থেকে দূরে সরে গেলাম।
জায়গাটা ফাঁকা,আমরা ছিলাম একেকটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতন।সবাই একসাথে কিন্তু কেউ কারো সাথে না।
কী য়ে মনে হল হাঁটতে শুরু করলাম।সাগর গর্জন করে চলেছে,একেকটা ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে পায়ে,ভিজিয়ে দিচ্ছে পায়ের পাতা আর একটু একটু করে ডুবিয়ে দিচ্ছে আমাকে।কোথায়?
আমি জানি না।তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না কেমন লাগছিল তখন আমার।
নিজেকে কী যে একা লাগছিল।মনে হচ্ছিল কোথাও বুঝি কেউ নাই,আমি একা........
বুকের ভেতর কী য়ে হাহাকার,যেন দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে যাচ্ছে,গুড়িয়ে যাচ্ছে।তুমি জানো,নিজেকে কখনো এতটা অসহায় মনে হয়নি আমার।
কতণ ঐভাবে হেঁটেছিলাম জানি না।অনেকণ পরে শুনলাম কেউ চিৎকার করছে।
চিৎকার করছিল আমার এক বন্ধু,ডাকছিল আমাকে।কিন্তু ওটা যে আমারই নাম এটা বুঝতেই আমার অনেকটা সময় লেগে গিয়েছিল।ফিরতে হবে এখন.........
চুপচাপ হেঁটে যাচ্ছি বাসের দিকে।এক ফ্রেন্ড এসে বলল,তোমার মন খারাপ?
কোনরকমে মাথা নাড়লাম,না।ও কিছুণ চুপ করে থেকে আবার বলল,তুমি কি কাঁদবা নাকি এখন?
জানি না তারপর কী হল।যেন ভেতরে কোন একটা সুইচ অন হয়ে গেল,কেঁদে উঠলাম হু হু করে।মুন এসে হাত ধরে নিয়ে গেল বাসে।আসার পথে আধাঘন্টা সময় আমি শুধু কেঁদেছি।যেন বুকের ভেতর যত কষ্ট,যত ােভ সব নিংড়ে বের করে দেবো।
তুমি জানো সোহেল ভাল গায়।সোহেল তার জীবনের শ্রেষ্ঠ গান গেয়েছিল ঐ আধাঘন্টা।একটার পর একটা.........
কারণ সবারই তখন একই অবস্থা।
কী যে হল........কী যে হল.............
সবাই বলেছিল সমুদ্র নাকি বারবার ডাকে।তখন টের পাইনি কিন্তু এখন বুঝি,সমুদ্র ডাকছে..............ডাকছে..........ডাকছে..............