দুই বার সরকার গঠন করা, বর্তমান বাংলার প্রধান বিরোধী দল বিএনপি কর্তৃক নতুন করে আগামী ৩০ নভেম্বর'১০ দেশের বিদ্যমান সমস্যা সংকট নিরসনের দাবিতে হরতাল আহবান করা হয়েছে। যেহেতু হরতাল সরকারের অন্যায়, শোষণ কিংবা দুর্নীতি তুলে ধরে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার একটি অন্যতম রাজনৈতিক মাধ্যম, সেহেতু হরতালের বিরোধী আমি নই। কিন্তু বর্তমান সময়ে হরতালের হালচাল নিয়ে কিছু ভাবনা না লিখে পারছিনা।
আমি হরতাল সম্পর্কিত আম্র একান্ত সামাজিক ভাবনাগুলো শেয়ার করার পাশাপাশি পুর্ববর্তী কিছু সংশ্লিষ্ট বিষয় তুলে ধরে কিছু প্রশ্ন রাখব সুধী সচেতন সমাজের কাছে।
দেশে বিদ্যমান গ্যাস সংকট, বিদ্যুত সংকট, গার্মেন্টস শিল্প কারখানা বন্ধ, এবং দ্রব্যমুল্যের উর্ধ্বগতি ইত্যাদি নানা সমস্যা সমস্যা সমাধানের দাবিতে বিএনপি এই হরতাল ডেকেছে বলে তাদের সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেছেন। জনগণের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট এবং অধিকার বিষয়ক ইস্যুতে হরতাল ডেকেছেবলে বিএনপির সচেতনতাকে ধন্যবাদ দেয়ার পাশাপাশি তাদের চরিত্রগত কিছু দিক তুলে ধরে আগামী হরতাল সমর্কে আমার প্রশ্নসমূহ উল্লেখ করছি।
প্রথমেই বলি দ্রব্য মুল্যের উর্ধ্বগতি বিষয়ে। ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসীন হবার পর ঠিক এই প্রক্রিয়ায় বরং আনুপাতিক হারে কোন কোন সময় বর্তমানের চাইতেও বেশি হারে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি লক্ষ করা গেছে। বিএনপির আমলেও বর্তমান সরকারের মত সিন্ডিকেট এর প্রভাব ছিল অত্যাধিক মাত্রায়। এবং অধিকাংশ সিন্ডিকেট সরকার দলীয় এমপি/মন্ত্রীদের নিয়ন্ত্রনে ছিল।
প্রশ্ন -১ : আসলেই কি তারা দ্রব্যমুল্য কমুক, তা চায়?
পাঁচ বছর মেয়াদি দুই বার ক্ষমতায় আসলেও বিদ্যুত সমস্যার সমাধানে কোন উদ্যোগ নিয়েছিলো কি? তাদের সময়ে লোডশেডিং এর মাত্রা কোন অংশে কম ছিলনা। বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের মত তারাও বেসরকারিভাবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করতে চেয়েছিল।
গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ করার কারন তারা দেখিয়েছে; যেন গার্মেন্টস শ্রমিকের দুঃখে তারা অতি কাতর। কিন্তু ২০০৩ সালে, বিএনপি যখন ক্ষমতায়, নারায়নগঞ্জে ন্যয্য মজুরির দাবি সহ বিভিন্ন দাবিতে গার্মেন্টস শ্রমিকরা পুরো একদিন অবরধ করে রেখেছিল শহর। তখন গার্মেন্টস শিল্প সম্পর্কিত বিএনপির ভাবনা কোথায় ছিল? এছাড়াও মাত্র ৩/৪ মাস আগে সংঘঠিত গার্মেন্টস শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে বিএনপির কোনপ্রকার রাজনৈতিক দায়িত্ব চোখে পড়েনি।
প্রশ্ন-২ : তাহলে আজ হঠাত করে এহেন ভাবনা কি আসলেই জনগনের স্বার্থে?
তাছাড়া কারখানা বন্ধের কথা তারা উল্লেখ করেছেন, কিন্তু তাদের ক্ষমতা থাকাকালীন সময়েই এশিয়ার বিখ্যাত পাটকল ‘আদমজী’ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।আদমজী বন্ধের ফলশ্রুতিতে প্রায় ৩০০০০ শ্রমিক তাদের পরিবার সহ পড়েছিল দুর্বিষহ বিপাকে। ঠিক যেমনভাবে আওয়ামীলীগএর আমলে বন্ধ হয়েছিল চট্টগ্রামের ইস্পাত কারখানা।
প্রশ্ন-৩: কোথায় তখন বিএনপির শিল্প বান্ধবতা?
গ্যাস সংকট এর কথা বলে আজ বিএনপি জল ঘোলা করা ছাড়া আর কিছুই করছে বলে মনে হচ্ছেনা। কেননা ২০০৫ সালে ‘তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুত-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি’ গ্যাস রক্ষার দাবিতে ঢাকা থেকে বিবিয়ানা পর্যন্ত লং মার্চ করেছিল যখন তারা ক্ষমতায় বসেই দেশের গ্যাস সম্পদ বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দিতে চাইছিল। এছাড়াও কিছুদিন আগেও বর্তমান মহাজোট সরকারের অনুরূপ চক্রান্তের প্রতিবাদে জাতীয় কমিটি হরতাল পালন করেছে। এতোদিন পরে বিএনপির মনে হল?! গত ২৪-৩০ অক্টোবর দেশের অন্যতম প্রাকৃতিক সম্পদ কয়লা রক্ষার দাবিতে ‘তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুত-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি’ আহুত ঢাকা থেকে ফুলবাড়ি পর্যন্ত লং মার্চ হয়ে গেল, কিন্তু কয়লা রক্ষার দাবিতে কি বিএনপি কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেছে??? করবে কিভাবে? তারাই তো এশিয়া এনার্জি নামক ঐ বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করেছিল।
প্রশ্ন-৪ : আসলেই কি জাতীয় সম্পদ তারা রক্ষা করতে চায়?
এছাড়াও তাদের আমলেই টিপাই বাঁধের চুক্তি হয়েছিল যার কারনে ২০০৫ সালে সিলেট থেকে জকিগঞ্জ পর্যন্ত বাসদ লং মার্চ করেছিল। সাম্প্রতিক সময়েও তারা একি ইস্যুতে (যখন এই সরকার আবার বিএনপির কাজের পুনরাবৃত্তি করতে যাচ্ছিল) পদযাত্রা করে। কথায় কথায় মুক্তিযুদ্ধের কথা বল্লেও নিজেদের জোটে রাজাকার নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যুদ্ধাপরাধীর বিচার নিয়ে তাদের কোন বক্তব্যই নেই। ঠিক যেমনটি টালবাহানা করছে বর্তমান সরকার।
প্রশ্ন ৫ : কথায় কথায় দুই দল একে অপরের বিরোধীতা করলেও আসলে তাদের চরিত্র কি কোন পার্থক্য নির্দেশ করে?