ইশ্বর যদি থেকেও থাকেন তাহলে উনি সবচেয়ে বেশি
কিসে খুশি হতে পারেন???
গতকাল আমার এক ধর্মপ্রচারকের সাথে কথা হয়েছিল।
উনার সাথে আলাপকালে উনি বললেন, পৃথিবীতে যা
কিছুই সৃষ্টি হয়েছে সবকিছুরই একটা উদ্দেশ্য আছে।
আপনি যে ভার্সিটি পড়েন, আপনার উদ্দেশ্য কি??
অবশ্যই আপনি ভার্সিটির পড়ালেখা শেষ করে ভালো
চাকুরী করবেন। এটাই আপনার ভার্সিটি জীবনের
উদ্দেশ্য। এখন কথা হল,আপনাকে যে সৃষ্টিকর্তা
পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। অবশ্যই সেটারো একটা উদ্দেশ্য
আছে। অবশ্যই খাওয়া,দাওয়া,চাকুরী করার জন্যে না।
তাহলে কি সেই উদ্দেশ্য........??
উনি যেহেতু ধর্ম প্রচারক সেহেতু উনি বলতে চাচ্ছিলেন,
ইশ্বরের আরাধনা আর ধর্ম প্রচারটাই উনার জীবনের
মোক্ষম উদ্দেশ্য। তার সাথে উনি এটাও বললেন যে, সকল
মানুষের সৃষ্টির একটাই উদ্দেশ্য, সৃষ্টিকর্তার আরাধনা
করা।
আমার জবাবঃ আমি খুব মনোযোগ সহকারে শোনছিলাম
কথাগুলো। চিন্তা করলাম, উনি (ইশ্বর)তো রাজনৈতিক
নির্বাচন দলের প্রার্থী নন যে ক্ষমতার জন্যে তার দলে
কর্মী ভিড়িয়ে নির্বাচনী ইশতেহার প্রচারনা করার
মাধ্যমে ভোট আদায় করবেন। উনি এক এবং অদ্বিতীয়।
উনার তো কোন বিরোধী দল কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বী নেই।
তাছাড়া উনি এমন দাম্ভিক তো হতে পারেন না যে,
শুধুমাত্র উনার আরাধনার জন্য, ওনার জয়গান শোনার
জন্য আমাদের সৃষ্টি করবেন। যাক সে কথা এইটা আমার
আলোচনার মূল বিষয়বস্তু নয়।
ধরেন, আমার এক ধার্মিক ব্নধু সারা দিনরাত মন্দিরের
এককক্ষে একমনে, এক ধ্যানে উনার আরাধনা করে।
নিয়মিত বড় বড় ধর্ম প্রচারকের সাথে ধর্মপ্রচারনাতেও
যোগ দেয়।
আর অন্য দিকে আমার আরেক বন্ধুর মন্দিরে যাওয়ার
পরিমান এতই কম যে, যাইনা বললেই চলে। তবে সে
অন্নহীনের মুখে অন্ন,বস্ত্রহীনের জন্য বস্ত্র, অন্ধকে পথ
দেখায়, অসহায়ের পাশে সর্বদা পাশে দাড়ায়।
এখন ইশ্বর সবচেয়ে বেশি কিসে খুশি হবেন??
নিজের আরাধনায় নাকি নিজের সৃষ্টির সেবায়???
আমি মনে করি, আমরা মনের অন্তদৃষ্টিকে জাগ্রত করে
আমাদের চারদিকে সৃষ্টির মাঝে স্রস্টাকে খুজে
পেতে পারি। তখনি পাব ঐশ্বরিক ভালবাসা ওঁ সুখ।
আর মনে রাখতে হবে যে,প্রতিটি মানুষই এক একটি
উপাসনালয়। নজরুলের ভাষায়, “মানুষের অন্তরের চেয়ে
বড় মসজিদ, মন্দির, কাবা ঘর আর নাই” দেখবে প্রতিটি
সৃষ্টির মাঝেই ঐশ্বরিক অংশ বিদ্যমান।
সুতরাং,
মানুষের ঐশ্বরিক অংশকে ভালবেসো; আমি যদি
তোমাকে ভালবাসি তবে তোমার ঐশ্বরিক অংশকেই
বাসা উচিত, যা বস্তুগত নয়। প্রকৃত ভালবাসা বা সুখ
উপাসনালয়ের দেয়ালে নয়; ইহা উপাসনার
অন্তঃর্ণিহীত ভাবে বিদ্যমান। সুতরাং নিজের
ঐশ্বরিকতা বা ঐশ্বরিক ভালবাসা যদি ছড়িয়ে দিতে
পারো তবেই হতে পারবে প্রকৃত সুখী। আর তাকেই
ভালবেসো যে স্রষ্টাকে ভালবাসে।
ছোটবেলায় পড়া এই কবিতা কে শ্রেষ্ঠ সত্য বলে মনে
করি,
কোথায় স্বর্গ? কোথায় নরক? কে বলে তা বহুদূর?
মানুষেরই মাঝে স্বর্গ-নরক, মানুষেই সুরাসুর।
রিপুর তাড়নে যখনি মোদের বিবেক পায় গো লয়
আত্মগ্লানির নরক অনলে তখনি পুড়িতে হয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০১৫ রাত ৯:৪২