আমি সজল । সেদিন ইউনিভার্সিটির প্রথম সেমিস্টার মিড-টার্ম এক্সাম দিয়ে ইউনিভার্সিটির সিঁড়ি বেঁয়ে নিচে নামার সময় একটি মেয়েকে লক্ষ্য করলাম । প্রথম দেখাতেই মেয়েটিকে আমার ভাল লেগে গেল । কিন্তু মেয়েটির সাথে কিভাবে বা কি বলে কথা শুরু করব বুঝতে পারল না।
আমি লক্ষ্য করলাম আমার ক্লাস এর একজন ক্লাসমেট পাশ থেকে এসে মেয়েটার কাছে গিয়ে বলল “কিরে লাবণ্য তুই এখানে একা বসে কি করিস” ।
তখন আমাদের কেবল ১ম সেমিস্টার চলছিল তাই তেমন কোন ভালো বন্ধুত্ব রিফাত ছাড়া কারো সাথে গড়ে ওঠেনি ।সেদিনের মতো আমি বাসাতে চলে আসলাম ।
রাতে চোখের সামনে অলক্ষনিও ভাবে লাবণ্যর চেহারা ভেসে উঠল ।আমার অস্থির মন আমাকে পড়তে দিল না ।কালকে এক্সাম ছিল । কিছুই ভালো লাগছিলো না ।শেষমেশ মন ভালো করতে গিটার হাতে গান গাইতে বসে পড়লাম । কিছুক্ষণ আগে লাবণ্যকে নিয়ে লেখা একটা কবিতা গানে রূপান্তর করলাম । লেখাটি ছিল-
“শুধু তোমার জন্য”
কবিতার লেখাগুলো ফুরিয়ে যাচ্ছে
আকাশে মেঘ জাগতে শুরু করেছে
হয়ত একটু পরে বৃষ্টি নামবে।
পথ হাঁটতে থাকি আমি একা একা
শুধু তোমার একটু ছোঁয়ার জন্য।
এই বুঝি বৃষ্টি নামতে শুরু করল
তবু তোমার জন্য হাঁটছি
এই পথের শেষ কোথায়
হয়ত তিনটি শব্দেই শেষ “ আই লাভ ইউ”।
আমার মনে হতে লাগল হয়ত আমি লাবণ্য কে ভালোবেসে ফেলেছি । ।হটাৎ করে আমার মনে হল ফেসবুক এর মাধ্যমে লাবণ্যর সাথে ফ্রেন্ডশিপ করা যায়।লাবণ্যকে friend request পাঠালাম । কিছুক্ষণ পর পর আমি ফেসবুক ওপেন করে দেখলাম লাবণ্য friend request accept করেছে কিনা ।ঠিক দুই ঘণ্টা বাদে লাবণ্য আমার friend request accept করল । কি বলে কথা শুরু করব বুঝতে পারছিলাম না।হটাৎ মনে হল জিজ্ঞাসা করা যাক –ওর এক্সাম কেমন হল ?
প্রশ্ন করার পর উত্তরে এলঃআপনি কি করে জানলেন ?
-আমি তো তোমার ব্যাচ মেট ।
-ওহ!ভালো,তোমার এক্সাম কেমন হল ?
-হম।ভালো।
এভাবে আমাদের মধ্যে ফেসবুকে কথা শুরু হল।
পরের দিন Campus এ আমি লাবণ্য কে দেখতে পেলাম না ।এক্সাম শেষে বাড়ি গিয়েই ফেসবুক ওপেন করলাম কিন্তু লাবণ্য কে Online এ দেখলাম না। রাতে লাবণ্য কে Online এ দেখতে পেয়েই text দিলামঃ আজকে তোমাকে তো Campus এ দেখলাম না যে ।
কিছুক্ষণ পর reply- আজ আমার এক্সাম ছিল না ।
-হম!কি করেন ?
-আপনি বলতে হবে না তুমি বলতে পার ।যেহেতু আমরা একই ব্যাচমেট।তেমন কিছুই করি না ।
এভাবে ফেসবুক এর মাধ্যমে আমাদের মধ্যে কিছুটা বন্ধুত্ব গড়ে ওঠল । কিন্তু সামনা-সামনি মেয়েদের সামনে কথা বলতে আমি সাবলিল নই ।
যাই হোক ভাগ্যবসত পরবর্তী সেমিস্টার এ লাবণ্য আমাদের Section এ চলে আসে ।কিন্তু লাবণ্য আমাকে না চেনার দরুন আমার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময়ও আমার দিকে লক্ষ্য করল না।সেদিন বাসায় গিয়ে ফেসবুক এ মেসেজ দিলামঃ আমাকে দেখেও না দেখার ভান করলি ?
-কই?
-Campus এ তোর সামনে দিয়ে গেলাম তো ।
-তোকে তো আমি সামনা-সামনি কোন দিনও দেখি নাই। তুই বল কিভাবে চিনব ।আর তুই ফেসবুক এ তোর কোন প্রোফাইল পিক ও দেস নাই।
-কালকে তোকে এসে দেখা দিয়ে যাব...ঠিক আছে ।
-হম।ঠিক আছে ।
পরের দিন Campus এ দেখা করলাম তখন ওর সাথে কেউ ছিল না।স্বাভাবিক ভাবেই দু’জনের মধ্যে কথা হল। কিন্তু আমার মনের ভিতর কি রকম আন্দোলন হচ্ছিল তা হয়ত ও জানতো না।কাছ থেকে লাবণ্যকে আরও সুন্দর লাগছিল।
সৌভাগ্যক্রমে আমি এবং লাবণ্য একই এলাকায় থাকতাম । তাই লেকচার শেষে আমরা দুজন একই সাথে আসতাম । একদিন আমি অজান্তে ওর হাত ধরে রাস্তা পার হলাম। সেদিন আমার জীবনের সবচেয়ে ভালো দিন ছিল ।একই এলাকায় আমাদের দুজনের বাসা হউয়াতে আমরা বিকেলে মাঝে মধ্যে ঘুরতে বের হতাম ।মাঝে মধ্যে লাবণ্যর সাথে আমার ফোন এ কথা হতো ।
আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব আরও গাঢ় হতে থাকে । কিন্তু আমি এখনও লাবণ্যকে বলতে পারি নাই যে আমি ওকে ভালবাসি । আমি ভাবতে থাকি আমি যদি ওকে ভালবাসার কথা বলি তাহলে যদি আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যায়।এরই মাঝে একটি বছর কেটে গেল কিন্তু লাবণ্যকে আমার ভালবাসার কথা বলতে পারলাম না।ভাবলাম আর তো কিছুদিন পর Valentine’s ডে সেই দিনই লাবণ্যকে আমার ভালোবাসার কথা বলব ।
এলো সেই দিন; দ্বিধাদন্দে ছিলাম আজকে বলব কি বলব না ।বললে ওর reaction কি হবে।তারপরও campus এর বাইরে থেকে একটি গোলাপ ফুল কিনলাম ; কিনে ব্যাগে রাখলাম যাতে কেউ না দেখে ।কিন্তু লাবণ্যকে দেখতে পেলাম না । লেকচার শেষ করে campus এ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম কিন্তু লাবণ্যর দেখা পেলাম । ঘণ্টা দুই অপেক্ষা শেষে বাসায় চলে আসলাম।
বাসায় এসে লাবণ্যকে কল দিলাম ; কিন্তু কোন response পেলাম না।নীরবতা নিয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকলাম ।পরে জানতে পারলাম লাবণ্য অসুস্থ ছিল।
কিছুদিন পর হটাৎ আমাদের বাসার দরজা খুলে দেখলাম লাবণ্য আমার সামনে।উল্লেখ আমি কিছু দিন যাবত campus এ যাই না ।আর ফেসবুক এ লাবণ্য খুব একটা আসে না।এই তিন দিন phone এ কথাও হয় নি।
যাই হোক আমি তো পুরাই অবাক ।কি হল যে একদম বাড়ি তে তাও আবার শাড়ি পড়ে ।শাড়ীতে লাবণ্য কে অসম্ভব সুন্দর দেখাছিল ।
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম কিরে কি হয়েছে ?
ওর চোখে ও মুখে একটা বিরক্তি প্রকাশ দেখতে পেলাম।
লাবণ্য আমাকে আপনি করে সম্বোধন করে বললে –
আপনি campus এ গেলেন না কেন ?
আমি বললাম – এমনি ।
-এটা কোন কারণ হতে পারে ?চল আমার সাথে ।
-কোথায় ?
ও কিছু বলল না শুধু আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল।
আমি আর দেরি না করে ওর সাথে বের হলাম।
আমি তখনও জানতে পারিনি যে আজকে লাবণ্যর জন্মদিন ।unfortunately আমার ফেসবুক নোটিফিকেশান ও বন্ধ ছিল।
কিছুক্ষণ হাঁটার পর একটা restaurant এ দেখাম রাসেল, তিশা , রিফাত বসে আছে ।
আমি আরও অবাক – কি হল ?
রিফাতঃ মামা তোমার surprise দেয়ার কথা লাবণ্য কে ..................আর লাবণ্য কিনা তোকে উল্টা surprise দিলো ।
কেউ কোন কথা বলছে না............
আমি তখনও বুঝতে পারি নাই যে লাবণ্যর আজ জন্মদিন।
-আরে গাধা তোর best friend এর জন্মদিন আর তুই জানস না ।
ওরা চলে যাবার পর লাবণ্য কে নিয়ে একটু ঘুরলাম..................... লাবণ্য কে যখন sorry বলছিলাম ঠিক তখন লাবণ্যর চোখ এর পাতা না নড়ে আমি একটু অশ্রুর আভা দেখতে পেলাম।
সেদিন “শুধু তোমার জন্য” কবিতাটা লাবণ্যকে শুনালাম।বলব বলব করেও লাবণ্যও কে আমার ভালোবাসার কথা বলা হল না ।
লাবণ্যর বাবা ছিল না।কাকাই ওর study র খরচ দিত। এবং লাবণ্যর কাকা DV লটারি পেয়ে দুই বছর যাবত America তে আছেন । এখন কয়েকমাসের মধ্যে ওরা সবাই আমেরিকা তে চলে যাবে এবং সেখানে বসবাস করবে এবং লাবণ্য ওখানেই study ও continue করবে ।
লাবণ্যও বিষয় টা জানতো না যে ওকে আর কিছু দিনের মধ্যেই চলে যেতে দেশ ছেড়ে বিদেশ এ পাড়ি জমাতে হবে ।
আমি সেদিন ডাক্তার এর কাছে গিয়ে ছিলাম মাকে নিয়ে টাই সেদিন class আর করতে যাওয়া হয়নি । tired হয়ে সেদিন দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ে ছিলাম ।পরের দিন campus এ গিয়ে জানতে পারলাম লাবণ্যর আমেরিকা যাওয়ার কথা।তিশা আমাকে একটা চিরকুট দিল............যেটা লাবণ্য আমাকে দিয়েছে।গত কাল আমার মোবাইল এর switch off ছিল।ও হয়ত রাতে কল করেও আমাকে পায়নি।
চিরকুট এ লেখা “শেষের কবিতা শুধু তোমারই জন্য”।কথাটার অর্থ বুঝতে আমার বাকি রইল না।
জানতে পারলাম যে সেই দিনই সকাল ১১ টায় ওদের air flight. আমি campus থেকে বের হয়েই airport এর উদ্দেশে রওনা দিলাম।
লাবণ্যর ফোন switch off ছিল । হয়ত আমার উপর অভিমানেই ফোন অফ রেখেছে।
আমি ১০ টায় সেখানে পৌঁছে দেখলাম যে লাবণ্য সহ ওর family র আরও অনেকে boarding pass দিয়ে ভেতরে ঢুকছে। আমি সজোরে লাবণ্য বলে ডেকে উঠলাম ।লাবণ্য পেছন ফিরে তাকাল । আমি ওর সামনে গিয়ে হাঁটু গেরে বললাম “ I love u” .কিছুক্ষণ পর সজোরে শব্দ হল ; কি হল আমার গালে থাপ্পর পড়ল এবং ও আমাকে জরিয়ে ধরল।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ৯:৪৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




