somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মোঃ জাহিদুল ইসলাম (অভ্র)
মহান সৃষ্টিকর্তার নশ্বর পৃথিবীতে আমি একজন ঠুনকো ছায়া। হয়তো একদিন চলে যাবো,চলে যাবে আমার সব চাওয়া-পাওয়া কিংবা পদরেখা। তবে, রেখে যেতে চাই নিজের তৈরী করা কিছু কীর্তি। যাতে, আমার প্রতি ভালোবাসা কারো কমে না যায়। ভালোবাসুন ভালো থাকুন....

কোলবালিশ

৩০ শে জুন, ২০১৫ রাত ১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাঝরাত ..!!
চারপাশ শুনসান নীরবতা। ঘুম আসছেনা এখনো। একবার ডানপাশ, একবার বামপাশ করছে। বিছানাটাও অতটা ভালোনা। ডাবল বেড কিন্তু এখন একজনই ঘুমোনো যায়। স্প্রিংটা নষ্ট তাই রীতিমত ক্যাচর ক্যাচর শব্দ করে।
.
ছোটবেলায় বাবা-মা'র সাথে একসাথে ঘুমোনোর সময় মাঝখানে দেয়া হত আমাকে। মনে পড়তেই ঠোঁটের কোণে হাঁসি চলে আসলো। দেখতে দেখতে আমিও বড় হচ্ছিলাম। আমার সাথে সাথে বড় হচ্ছিলো চারপাশের সবকিছু।
.
শেষপর্যন্ত আমার ঠাঁই হলো নতুন এক রূমে। একাকী ঘুমানোর চেষ্টা চালাতে বলা হলো। সেই রাতগুলোতে অবশ্য আমার ঘুম হতোনা। মনে হতো, কেউ বুঝি এসে গলা চেঁপে ধরবে। সত্যিই, অদ্ভুত এক অনুভূতি। মাঝরাতে টের পেতাম বাবা প্রায়ই এসে আদর করে দিয়ে যাচ্ছে। একটা সময় হঠাৎ শুরু হলো 'বোবায় ধরার' উপদ্রব।
.
বাবাকে বলতেই ঘরে আমার বিছানায় অংশীদার নিল আরো একজন। দেখতে ভালোই তুলতুলে, লম্বাটে। জড়িয়ে ধরে ঘুমোতে ভালোই লাগতো। কেউ যদি তখন আমায় জিঙ্গেস করতো,
"জীবনের শ্রেষ্ট সময়গুলো তুমি কার সাথে কাটিয়েছো..??"
' আমি এক কথায় জবাব দিতাম আমার কোলবালিশ'
.
কোলবালিশ কখনো আমার সাথে রাগ করতোনা, করতোনা জেদ..!!
যখন যেভাবে রাখতাম সেভাবেই থাকতো। নিজের বাহুতে জড়িয়ে কত কথা ভেবেছি। কখনো কোন চিন্তা করে মনের অজান্তেই কেঁদেছি। কখনোবা প্রাণ খুলে হেঁসেছি। কখনো কখনো জেদ করে লাথি, কিল কিংবা কামড়েও দিয়েছি। কোলবালিশ তবুও নিরব।
.
এরপর থেকে কত চাদর, কাথা, বালিশ চেঞ্জ হলো কিন্তু কোলবালিশটা ঠিকই রয়ে গেলো নিত্য সঙ্গী হিসেবে ।
মাঝে মাঝে এটাকে নতুন জামা পড়ানো হয়। বিভিন্ন উৎসবে বিছানার চাদরের সাথে সাথে নতুন নতুন সেট জামা। কখনোবা লাল কখনোবা নীল। কতকাল জড়িয়ে শুয়েছি। অনেকসময় মাঝরাতে ভয়ে আঁতকে উঠে কাউকে পাশে পেতাম না। আনমনে কোলবালিশটাকে বুকে নিয়ে আবার পাশ মুড়ে শুয়ে পড়তাম।
.
একবার ছোট খালাতভাই এসে দুষ্টুমি করতে করতে ছিঁড়ে ফেলে আমার সাধের কোলবালিশকে। কিছুদিন একাকী থাকতে হয়। তখনও ঘুমিয়েছি কিন্তু কোলবালিশ না থাকার বেদনার কারণে মাঝরাতে প্রায়ই জেগে উঠতাম শুধু পাশে পেতাম না সাধের কোলবালিশকে।
.
কোলবালিশটাকে একটা অপরিহার্য জিনিস হিসেবেই বানিয়ে নিয়েছিলাম নিজের জীবনে । শুনতে আজব লাগলেও এটা সত্য যে
কোলবালিশটাকে নিজের পরম বন্ধু মনে করে গত ১৯ টা বছরের প্রায় প্রতিটা রাতেই কোলবালিশটাকে আমার পাশেই রেখেছি । একটা সময়ছিল কোলবালিশ আমাকে তার গভীরে আগলে রাখতো কিন্তু ইদানিং কোলবালিশটা একটু সমস্যার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। সময়ের সাথে সাথে সবই বেড়েছে শধুমাত্র আমার কোলবালিশটা সেই আগের সাইজেই আছে । মাঝখানে এটাকে দু-তিনবার ভেঙ্গে নতুন তুলা ভরা হয়েছে কিন্তু সাইজের কোন পরিবর্তন হয় নি । তাই ইদানীং প্রায়ই ছোট কোলবালিশটাকে নিয়ে ভীষণ
হচ্ছে।
.
হঠাৎ ঘটে গেলো এক ঘটন। বাড়িতে অনুষ্ঠান থাকায় সব বন্ধুকে আসতে বলা হলো। বন্ধুরা এসে তো শুরু করে দিলো তুলকালাম কান্ড,
.
"দোস্ত আমার গার্লফ্রেন্ড নাই দেইখ্যা কোলবালিশের উপর ঝাল মেটায়"
.
সেদিন বাসা থেকে শুরু করে পুরো ক্যাম্পাসে রটিয়ে দেয়া হলো এ খবর। ক্লাসের মেয়েগুলোও এরপরে কেমন যেন ভ্যাবলার মত তাঁকিয়ে থাকে। সবকিছু একসময় মানিয়ে নেয়া সম্ভব হয়। কিন্তু, এ ধরনের পরিবেশ অদ্ভুত লাগে। বাসায় এসে নিজের রূমে মনে মনে ভাবতে থাকে,
.
"ইস..!!!
যদি আমার একটা গার্লফ্রেন্ড হতো"
বলতে বলতে 'মা' এর হুড়মুড়িয়ে।
.
'আর যাই করেন, বৌমা যাতে সুন্দর হয়। অমন বেঁটে, কালো, অশিক্ষিত মেয়ে চলবেনা'
"মা, আমি তো কালো..??"
.
'সে জন্যই বলছি আর লেখাপড়াটা যেন ঠিক থাকে '
"আচ্ছা, দেখা যাবে"
.
কোলবালিশটার কাভারটা নিয়ে মা চলে গেল। প্রতি সপ্তাহে এটাকে ধুয়ে দেয়া হয়।
আমার বিছানা নাকি মা'র কাছে ডাষ্টবিনের চেয়ে খারাপ। বাবা তো প্রায়ই বলেন,
.
" তোর বিছানা আর হাসাপাতালের বেড একই"
.
ভাবছি কি হয়, কি হয়...!!!
ক্যাম্পাসের মাসির দোকানে চা খেতে বসার সময়, সামনে দিয়ে কোন মেয়ে গেলে বন্ধুরা চেঁচিয়ে উঠে, "এ্যাই কোলবালিশশশশ"। মাথা নিচু করে শুধু মাটির দিকে তাঁকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার থাকেনা আমার।
.
একদিন বৃষ্টির দিনে ক্যাম্পাসে যাচ্ছি। ছাতা নিতে মোটেও ভালো লাগেনা আমার। তাই ছাতা ছাড়াই হাঁটছিলাম। হঠাৎ, আকাশের কোণে এক টুকরো মেঘের গর্জনে পুরো আকাশ জুড়ে শুরু হয় ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামা। আকাশের দিকে মুখ তুলে বৃষ্টির পানি খাওয়ার চেষ্টা করছিলাম।
.
হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখ পড়ে এক অপ্সরীর দিকে। এ যেন সত্যিই নীলপরি। সবার কাছে শুনতাম, তাদের প্রত্যেকের চোখে প্রত্যেকের গার্লফ্রেন্ড নীলপরির মত দেখতে।
মেয়েটা দেখতে তেমন আহামরি সুন্দর না। তবে টাইটানিক ছবির রোজ কিংবা ম্যালোনি ছবির নায়িকার চেয়ে কম যায়না।
.
কিছু কিছু সুন্দর মানুষের চোখে কামনা জাগায়। কিন্তু এ সৌন্দর্য মানুষকে ভালোবাসতে শেখায়। মনের ভিতরের অণুভূতি প্রকাশের সাহসিকতা জাগায়। অর্থাৎ, এ সৌন্দর্যে নাই কোন কামনা আছে শুধুই ভালোবাসা, অদ্ভুত মায়াময় ভালোবাসা।
.
এভাবে অনেকক্ষণ হা করে তাঁকিয়ে তাঁকিয়ে হাটতেই কাঁদায় গিয়ে পড়লাম। মেয়েটা কিঞ্চিৎ মুচকি হাসলো পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে। অদ্ভুত মায়াময় সে হাসির সৌন্দর্য। সারারাত সেদিন কোলবালিশ জড়িয়ে মেয়েটার হাসির কথাই ভেবেছি ....
.
"এ্যাই ছেলে এদিকে তাঁকিয়ে কি দেখছো"
'কিছুনা, ঐ গাছটা'
.
"ও, তা গাছ দেখতে দেখতে বুঝি কাঁদায় পড়ে যেতে হয়"
'না, এমনি। খুব সুন্দর গাছটা'
.
"গাছই দেখুন তাহলে বলে মেয়েটা পাঁশ কাটিয়ে চলে যেতে থাকে"
হঠাৎ মনে হলো এখন বলা না হলে আর কখনোই হয়তো বলা আর হয়ে উঠবেনা।
'আচ্ছা, তুমি কি আমার কোলবালিশ হবা'
.
এমন অদ্ভুত আর অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্নে নিজেই অনেকটা থতমত খেয়ে ফেল্লাম। পরক্ষণেই আমাকে অবাক করে দিয়ে বলে উঠলো,
"আমাকে আবার কোলবালিশের মত প্রতিনিয়ত বদলাবে না তো..?"
.
সত্যিই লাইফ ইজ সো রোমান্টিক ..!!!!
.
মোবাইলের গাঁইগুই শব্দে পরক্ষণেই ফ্রেন্ডের ফোন।
"কি রে আজকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্যুর আছে, মনে নেই। নাকি কোলবালিশের সাথে এখনো কুতকুত খেলস"
.
অদ্ভুত সত্যিই অদ্ভুত..!
কোলবালিশটাকে এখনো জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছি। তাইতো গুরু বলছেন, "ব্যাচেলরদের কখনো সুন্দরী মেয়েদের দিকে তাঁকাতে নেই"।
.
আর আমার মতে, "যতদিন ব্যাচেলর আছি ততদিন ভালবেসে যাবো এই
কোলবালিশকে ।"
.
----------
অন্ধকার আকাশ্
--------
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১৫ রাত ১:১৩
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠিক কোন বিষয়টা মৌলবাদী পুরুষরা শান্তি মত মানতে পারে???"

লিখেছেন লেখার খাতা, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৭


ছবি - গুগল।


ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম এখন আর শুধু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নয়, রোজগার এর একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্মও। একটু স্মার্ট এবং ব্রেন থাকলে ফেসবুক/ইনস্টাগ্রাম থেকে রোজগার করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×