somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফতোয়াবাজী এবং অপপ্রচার

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সমাজের ঘৃণ্য ব্যাবস্থা গুলোর একটি ফতোয়াবাজী। অতি দুঃখজনক হলেও সত্য যে এই আধুনিক যুগে যখন আমরা ঘরে বসে মিশরের প্রেসিডেন্টের গালমন্দ করি, আমাদের দেশেরই একদল বর্বর মানুষ হিংস্রতায় মেতে উঠে ফতোয়ার নামে কেড়ে নিচ্ছে নিঃষ্পাপ প্রাণ। আর এইসব জঘন্য মানুষ গুলোকে সাপোর্ট দিচ্ছে আরেকদল মানুষ। যারা শিক্ষা,টাকা,ক্ষমতা দিয়ে দখল করতে চায় সবকিছু।

১৪ বছরের কিশোরী হেনা।তার ঘটনাতো জানতে কারও বাকি নেই। কি নিষ্ঠুর পরিণতিই ঘটলো তার জীবনে।যদিও তার শরীরে ধর্ষণের চিহ্ন ছিল তবুও তার বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল। শুধু তাই না তার পরে ৭০-৮০ টা দোররা মারা হয় তাকে। যৌবন বোঝার আগেই যৌনতার অভিযোগে তাকে দিতে হল জীবন।এমনকি ময়নাতদন্তের রিপোর্টে এ বিষয় চেপে যাওয়া হয়।পরবর্তীতে হাইকোর্ট পৃথক দুটি ময়নাতদন্তের গ্রমিল তদন্তের নির্দেশ দেয়।
আদালতে শরীয়তপুর ও ঢাকার দুটি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পড়ে শোনান শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন গোলাম সারওয়ার। এ সময় আদালত বলেন, আগের ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হয়েছে হেনার শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই। দ্বিতীয় রিপোর্টে বলা হলো আঘাতের কারণে রক্তক্ষরণ হয়েছে। এ দুটি রিপোর্টের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য বিষয়ে তার মতামত জানতে চান আদালত। জবাবে তিনি বলেন, দুটি রিপোর্ট ভিন্ন। আদালত বলেন, কোনটা সত্যি, কোনটা মিথ্যা। এত পার্থক্য কী করে এলো? সিভিল সার্জন বলেন, এ বিষয়ে আমি অভিজ্ঞ নই। আদালত জানতে চান, আপনি কত বছর চাকরি করছেন? জবাবে তিনি বলেন, ৩২ বছর। আদালত বলেন, ৩২ বছর চাকরির বয়সে আপনি বুঝতে পারলেন না রিপোর্টের গরমিলটা কোথায়। এ গরমিলের জন্য দায়ী কে? সত্য কথা না বললে আমরা কাউকে ছাড়ব না। যে ব্যক্তি এমবিবিএস পাস করেছেন তার পক্ষে কি এ পার্থক্য বের করা সম্ভব নয়? আপনারা মানুষের জীবন নিয়ে অহরহ ছিনিমিনি খেলছেন। এখন আপনারাই বলেন, রিপোর্ট কোনটা সত্য, কোনটা মিথ্যা। হেনাকে কবর দেওয়ার আগে নিশ্চয়ই গোসল দেওয়া হয়েছিল। আপনারা তো রিপোর্টে বলেছেন, হেলদি অ্যান্ড বডি নিল। ঢাকার রিপোর্টে ইনজুরি পাওয়া গেল, আপনাদের রিপোর্টে কিছুই পাওয়া গেল না। এটা কী করে হয়? আদালত বলেন, আপনারা যদি সত্যি কথা বলেন তাহলে আমরা অনুকম্পার বিষয়টি বিবেচনা করব। না হলে সবাইকে নাজিমউদ্দিন রোডে পাঠিয়ে দেব। কাউকে ছেড়ে দেব না। আদালত আবার জানতে চান, হেনা কীভাবে মারা গেল? এ সময় সিভিল সার্জন হেনার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ৩০ জানুয়ারি সে হাসপাতালে ভর্তি হয়। পরদিন রাতে মারা যায়। আপনারা রিপোর্টে বলেছেন, তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তাহলে ভর্তি হওয়ার ৩৪ ঘণ্টা পর সে কীভাবে মারা গেল? এ সময় আদালত আবারও সিভিল সার্জনকে সত্য কথা বলতে নির্দেশ দেন। না হলে জেলখানায় যেতে হবে বলে জানান। জবাবে সিভিল সার্জন বলেন, আমাদের ওখানে পরীক্ষা করার মতো যথেষ্ট যন্ত্রপাতি নেই। তাহলে কি আপনারা প্রতিনিয়তই এ ধরনের মিথ্যা রিপোর্ট দিচ্ছেন, এটা কি ঠিক? এরপর আদালত বলেন, দুটি রিপোর্ট সত্য হতে পারে না। যে কোনো একটি সত্য। কোনটা সত্য বলুন। আদালত বলেন, জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে আপনি (সিভিল সার্জন) বলেছেন, হেনার মৃত্যু নিয়ে সাংবাদিকরা অতিরঞ্জিত লিখেছেন। কোন সাংবাদিক অতিরঞ্জিত লিখেছেন, এটা বলুন। আদালত বলেন, ঢাকার রিপোর্টে ক্ষতচিহ্ন দেখতে পেল, আপনারা পারলেন না কেন? এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম একটি দৈনিকের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, বডিতে দাগ না থাকলে আমি কী করব_ এসব কথা বলেছেন সিভিল সার্জন। এরপর চিকিৎসক ডা. হোসনে আরা বলেন, ঢাকার রিপোর্টের ব্যাখ্যা আমি দিতে পারব না। আদালত বলেন, কার চাপে, কার প্রভাবে এসব কাজ করেছেন। জবাবে চিকিৎসক বলেন, আমরা কারও চাপে ছিলাম না।
এসব কাজ যারা করে তারা না হয় বর্বর তা নাহয় মেনে নিলাম। কিন্তু এই নির্মম ঘটনাটাকে যারা আমাদের সামনে বিকৃত করে তুলে ধরছে তাদের কি বলবো? তারা কোন স্বার্থে আমাদের বিভ্রান্ত করছে?

হেনার ঘটনা থেকে একটু পিছনে সরে যাই। ফতোয়াকে বেআইনি ঘোষণা করে ২০০১ সালে হাইকোর্ট রায় দিয়েছেন। কিন্তু সেই রায় এখনো কার্যকর করা যায়নি। কারণ ওই রায়ের বিরুদ্ধে দুজন ধর্মীয় নেতা আপিল করেছেন এবং গত ১০ বছরেও তার শুনানি হয়নি।

সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের ওপর ভিত্তি করে আইন ও সালিশ কেন্দ্র ফতোয়াবাজির ঘটনাগুলোর যে হিসাব প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, ১৯৯৫ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত দেশে ৫০৩টি ফতোয়াবাজির ঘটনা ঘটেছে। ফতোয়াবাজির কারণে মৃত্যু ও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ১৫টি। কিন্তু এই ১৫ বছরে মামলা হয়েছে মাত্র ১১৭টা। তবে কতজনের সাজা হয়েছে, তার পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।
আর বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির হিসাব অনুযায়ী, ১৯৯৯ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ১১ বছরে ফতোয়ার ঘটনা ঘটেছে ৩৩১টি।

কিন্তু এভাবে আর কতদিন? মানুষের প্রাণ কি এতই মুল্যহীন??
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১২:৩৯
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×