১৪ মে বিকাল ৪ টায় ছিল আমাদের সেমিনার। সেমিনারের বিষয়বস্তু- শিক্ষা, ইন্টারনেট এবং আপনার সন্তান। ব্লগের ব্ন্ধুরা সবাই আমন্ত্রিত অতিথি। ইএফএলবিডি কম্পিউটার লার্নিং সেন্টারের শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের দাওয়াত দেওয়া সম্পন্ন। ব্লগার দূর্ভাষী ভাই আগেই নিশ্চিত করেছিলেন তিনি আসবেন। সাথে ১০/১২ জন ট্রেইনী। ব্লগার নুরুন নেসা বেগম, বাবুল হোসেইন, একরামুল হক শামীম, এস.কে ফয়সাল আলম নির্ধারিত সময়েই অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত। আরও কয়েকজনের ব্লগার বন্ধুর আসার কথা ছিল। নানা কারণে শেষ পর্যন্ত আসতে পারেন নি।

সেমিনারের জন্য ইএফএলবিডির স্বেচ্ছাসেবকরা পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। প্রাণের টানে অতিথিরা আসবেন দূর দূরান্ত থেকে। তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে কথা বলবেন। ইএফএলবিডি কম্পিউটার লার্নিং সেন্টারের শিক্ষার্থীরা উৎফুল্ল। ইন্টারনেট নামক নতুন এক জগতের সাথে তাদের পরিচয় হয়েছে কিছুদিন হলো মাত্র। এরই মধ্যে এই কিশোররা কিছুটা বুঝে উঠতে পেরেছে যে তথ্যপ্রযুক্তি হচ্ছে তথ্যের মহাসমুদ্র। ওদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু ভার্চুয়াল বন্ধুরা। তাঁদের কাছ থেকে এই প্রযুক্তির সম্ভাবনার বিষয়গুলো শোনা।

সাড়ে চারটার মধ্যেই সবাই এসে হাজির। সেমিনারের স্থলে প্রজেক্টরের মাধ্যমে মেঘনাপাড় ধীবর বিদ্যানিকেতনের বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ প্রদর্শিত হচ্ছে। সেমিনারে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় অতিথিদের কাছ থেকে নতুন কিছু জানবে, শিখবে।

বিকাল ৫.০০ টায় সেমিনার শুরু হয়। শ্রদ্ধাভাজন ব্লগার নুরুন নেসা আপাকে প্রধান অতিথি করে সেমিনার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। আমন্ত্রিত ব্লগার বন্ধুরা সবাই মঞ্চে উপবিষ্ট। প্রথমেই বক্তব্য রাখেন ব্লগার বন্ধু এস.কে. ফয়সাল আলম। তথ্যপ্রযুক্তির অপার সম্ভাবনার কথা দিয়ে সাজানো ছিল ফয়সালের বক্তব্য। তথ্যপ্রযুক্তি আজ শুধু তথ্যের বাহনই নয় এটি মানুষের রুটি-রুজিরও ব্যাপার। অনেকেই অনলাইন আয় করে জীবিকা নির্বাহ করছে তথ্যপ্রযুক্তিকে ব্যবহার করে। ইএফএলবিডি কম্পিউটার লার্নিং সেন্টারের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজসাধ্য হওয়ায় কিশোরদের প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত সহায়তা দিবেন বলে তিনি সবাইকে আশ্বস্ত করেন।

তারপর বক্তব্য রাখেন ব্লগার একরামুল হক শামীম। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব শামীম সুন্দর করে উপস্থাপন করেছেন তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্বে কি বিপ্লবই না বয়ে এনেছে। তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে বিশ্বব্যাপী ফ্রি কথা বলা যায় প্রিয়জনদের সাথে। ব্যবসায়-বাণিজ্যে আজ তথ্যপ্রযুক্তি এতটাই স্থান দখল করে নিয়েছে যে এর সাথে মানিয়ে চলতে না পারলে আমরা বিশ্ব থেকে ক্রমশঃ পিছিয়ে পড়বো- এই সাবধান বাণীও ছিল শামীমের বক্তব্যে। এরকম একটি উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে এই উদ্যোগের সাথে সম্পৃক্ত থাকার কথা বলে তিনি বক্তব্য সমাপ্ত করেন।


আইটি ইঞ্জিনিয়ার বাবুল হোসেইনের উদ্দীপনামূলক বক্তব্য শ্রোতারা গভীর আগ্রহে শুনেছে। চমৎকার উপস্থাপনায় বাবুল হোসেইন তুলে ধরেছেন তথ্যপ্রযুক্তির অপার সম্ভাবনার কথা। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম তথ্যপ্রযুক্তিকে আপন করে নিয়ে নিজেদের সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি দেশকে ও সমৃদ্ধ করবে। তথ্যপ্রযুক্তিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করার জন্য কিশোর বয়স থেকেই প্রযুক্তিপ্রেমী হতে হবে। ইন্টারনেটের নেতিবাচক দিকগুলোকে সফটওয়্যারের মাধ্যমে ব্লক করে রাখা সম্ভব- অভিভাবকদের কাছে এ বিষয়টি উপস্থাপন করে তিনি আবেদন জানান তাদের সন্তানকে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে দেওয়ার জন্য। কম্পিউটারকে টাইপ মেশিন কিংবা বিনোদনের যন্ত্র হিসেবে না দেখে এটিকে জীবনের দৃষ্টি পরিবর্তনের বাহন হিসেবে দেখার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বক্তব্য শেষ করেন।


লাইসিয়াম আইডিয়াল স্কুলের অধ্যক্ষ জনাব ইব্রাহীম খলিল নিজ স্কুলে শিশুদের কম্পিউটার ব্যবহারের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। ছোট ছোট শিশুরা যখন কম্পিউটার ব্যবহার করে সেটি আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের স্মার্ট হয়ে ওঠারই ইঙ্গিত বহন করে। কম্পিউটারের সহায়তায় ছবি আঁকা, পাঠ প্রস্তুত করা ইত্যাদি বিষয়ের উপর তিনি আলোকপাত করেন। শিশুদের উপযোগী কম্পিউটার সিলেবাস প্রণয়নের উপর তিনি জোর দেন।

শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি এবং আপনার সন্তান শীর্ষক আলোচনায় আইটি প্রফেশনাল এবং ডি.নেট এর সহকারি পরিচালক জনাব খায়রুজ্জামান (ব্লগার দূর্ভাষী) আমন্ত্রিত অতিথি, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের এক ডালি শুভেচ্ছা জানিয়ে তাঁর বক্তব্য শুরু করেন। ভার্চুয়াল পরিচয় থেকে আজ এখানে আসা- তথ্য প্রযুক্তির এই প্রত্যক্ষ সুফলের উদাহরণ টেনে তিনি তথ্যপ্রযুক্তিকে সবার মাঝে ধারণ করার কথা বলেন। শিক্ষা ক্ষেত্রে অডিও ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনা যে শিক্ষার্থীদের পাঠ গ্রহণে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে তা মিনা কার্টুন এবং সিমিপুরের উদাহরণ টেনে প্রাসঙ্গিক আলোচনা করেন। ইএফএলবিডি কম্পিউটার লার্নিং সেন্টারের সহায়তায় ডি.নেট সবসময় পাশে থাকবে বলে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। ডি.নেট এক প্রকল্প পরিচালক মহোদয়কে এই সেন্টারটি পরিদর্শনে নিয়ে আসবেন বলেও তিনি কথা দেন। কিশোরদের পাঠ উপযোগী বই 'এসো কম্পিউটার শিখি' এবং সিডি 'কম্পিউটারের মাধ্যমে ইংরেজি শেখা' উপহার প্রদান করেন।


প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রদ্ধাভাজন ব্লগার নুরুন নেসা বেগম তথ্যপ্রযুক্তিকে আপন করে নেওয়ার মাধ্যমে বিশ্ব জয়ের কথা তুলে ধরেন। তথ্যপ্রযুক্তিই পারে আমাদের দেশের অনেক সমস্যার সমাধান করতে। এজন্য কিশোর-তরুণদের তথ্যপ্রযুক্তিকে আপন করে নিতে হবে। উন্নত বিশ্ব তথ্যপ্রযুক্তিকে ধারণ করে উন্নতির চরম শিখরে উঠছে। আমাদেরও এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়লে চলবে না। প্রাক্তন ব্যাংকার প্রধান অতিথি তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে অনলাইন ব্যাংকিং বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে আজকাল কেনাকাটা সহ দৈনন্দিন জীবনযাত্রা সহজ হয়ে যাওয়ার বিষয়টিও বক্তব্যে সুন্দরভাবে তুলে ধরেন।

সবশেষে অনুষ্ঠানের সঞ্চালক জনাব মোঃ আখতারুজ্জামান ভূঁইয়া ইএফএলবিডি ভিশন ২০১০-২০৩৪ পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন করেন। কর্মসংস্থানমূলক শিক্ষা বাস্তবায়নের নিমিত্তে ইএফএলবিডি পরিচালিত বিভিন্ন প্রকল্পের ভিডিও ফুটেজ প্রদর্শন করা হয়। পরিশেষে আমন্ত্রিত অতিথিদের কষ্ট করে সেমিনারে যোগ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ এবং ভবিষ্যতে এধরনের আয়োজনে ব্লগার বন্ধুসহ সবাইকে আবারও আমন্ত্রণ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।