somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি রিমোট কন্ট্রোল ডিভাইস এবং শূন্য বাটন(১)

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১১ দুপুর ১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জহির সাহেবের আজকাল সবকিছুতেই কেমন যেনো ঘোর লাগা একটা ব্যাপার এসে দাঁড়িয়েছে। ঘোরের মধ্যেই হাঁটছেন, ঘুরছেন, খাচ্ছেন-দাচ্ছেন এবং অফিসেও যাচ্ছেন। ঘোরের মধ্যেই ঘুমোচ্ছেন পর্যন্ত। কেমন যেনো একটা ঘোরলাগা জীবন। আর এটাকে নিয়ন্ত্রণ করছে সুদূর কোনো এক রিমোট কন্ট্রোল ডিভাইস। এই রিমোটের পিছনের শক্তিটাকে জহির সাহেবের আয়ত্বে আনতে ইচ্ছে হয়। নিজের হাতে রেখেই তিনি জীবনটাকে নিয়ন্ত্রণ করার কথা ভাবছেন। রিমোটটা কোথায় কার কাছে আছে তা তিনি ভেবেও কূল কিনারা করতে পারছেন না। কল্পনায় তিনি রিমোট ডিভাইসের বাটনগুলোকে দেখতে পান। মাত্র তিনটি বাটন আছে ডিভাইসটিতে।

জহির সাহেবের কল্পনায় রিমোটের বাটনগুলো অদ্ভূত। এক নাম্বার বাটনটি চাপলে জহির সাহেব সকাল বেলা এলার্ম দেওয়া সময় অনুযায়ী ঘুম থেকে জেগে অফিসে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকেন। নাস্তাটা খেয়ে অফিসের গাড়িতে স্ত্রীকে তার কর্মস্থলে নামিয়ে, সন্তানদের স্কুলে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে নিজে অফিসে যান। অফিসে অনেক কাজ। ভিজিটরদের অ্যাটেন্ড করতে হয়। গুরুত্বপূর্ণ নথিতে স্বাক্ষর করতে হয়। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সভায় অংশগ্রহণ করতে হয়। অফিস আওয়ার শেষে অফিসের গাড়ীতে করে বাসায় পৌঁছেন। মুখ হাত পা ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে পরিবারের সবার সাথে বৈকালিক আড্ডায় বসে যান। স্ত্রীর সাথে সংসারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পরামর্শ করেন। ছেলে মেয়েদের পড়াশুনার খোঁজ খবর নেন। সন্তানদের সাথে খোশগল্পে সময় কাটিয়ে দেন। রাত দশটা বাজতেই ঘুমিয়ে পড়েন। পরদিন আবার সেই নিয়ম করে অফিসে যান, কাজ করেন, বাসায় ফিরে আসেন।

মাঝে মাঝে দুই নাম্বার বাটনটা টিপলে জহির সাহেবের ক্ষেত্রে অদ্ভূত এক প্রোগ্রাম চালু হয়ে যায়। নাম্বার দুই কথাটার মধ্যেই কেমন যেনো দুই নাম্বারী গন্ধ থাকে। এ সময়ে জহির সাহেব সমস্ত নীতি কথা ভুলে যান। ফাইলের প্যাঁচে ফেলে ক্লায়েন্টদের হয়রানি করেন। অফিস থেকে একগাদা দুই নম্বরী টাকার ধান্ধা করে ফেলেন। স্ত্রী নতুন একসেট গয়নার বায়না ধরেছে। পুত্র কন্যাদ্বয় একটি ফ্ল্যাট এবং গাড়ি কেনার বায়না ধরেছে। বড় বড় অংকের টাকার কাজের কিছু ফাইল জহির সাহেবের কাছে আছে। এই ক্লায়েন্টদের সাথে বসে টাকা পয়সার ভাগটা ফাইনাল করে ফেলতে হবে। স্ত্রীর সাথে মিথ্যে করে বলেন অফিসের জরুরী কাজ আছে। আরও অনেক বাহানা দিয়ে কোনো ক্লাবে গিয়ে সময় কাটান।

রিমোটের তিন নাম্বার বাটনটা নিয়ে জহির সাহেব খুবই চিন্তিত। এই বাটনটি জহির সাহেবকে অস্থির করে তোলে। নাহ্! এই জগত সংসার সব মিছে। এই যে দিনের পর দিন জগত সংসারে অভিনয় করে চলেছি- তার কোনো মানে নেই। স্ত্রী-পুত্র-কন্যারা কেউই তোমার দুই নাম্বার বাটনের অপকর্মের দায় নেবে না। কি হবে দুই নাম্বারী করে অর্থ-বিত্ত কামিয়ে। মনের সুখ তো তুমি পাচ্ছ না। সংসার টিকিয়ে রাখার স্বার্থে স্ত্রী তোমার সাথে অভিনয় করে যাচ্ছে। তুমিও অভিনয় করছ দিনের পর দিন। সন্তানরা দেখছে তুমি টাকা কামানোর মেশিন হয়ে গেছ।

রিমোটের এই তিনটি বাটনের ছকে বাধা জীবনে জহির সাহেব অস্থির বোধ করেন। তার পানির পিপাসা পায়। এখানে পানি পাবেন কোথায়। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে। সচিব সাহেবের এপিএস এর রূমে বসে আছেন। একটি চিঠি নিয়ে এসেছেন। চাকুরির সমস্যা সংক্রান্ত চিঠি। সচিবের কাছে সমস্যাটা জানিয়ে দ্রুত এর সমাধান করতে হবে। নতুবা তিনি হেরে যাবেন। অনেকদিন ধরেই তিনি সমস্যাটা নিয়ে ভাবছিলেন। কিন্তু কিভাবে সমস্যার সমাধান করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না।

জীবনের কাছে হেরে যাওয়াটা নিয়তি নির্ভর হয়ে উঠেছে এখন জহির সাহেবের কাছে। ঘোর লাগা এই জীবন থেকে মুক্তি না নিলে তিনি হেরে যাবেন ই। এপিএস সাহেব খবর এনেছেন সচিব মহোদয়ের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় মিটিং আছে। তাই এখন দেখা করা যাবে না। জহির সাহেব নিয়তি মনে করেই চিঠিটা পকেটে ভাঁজ করে রাখলেন। সচিবালয় থেকে বের হয়ে এসে মনে মনে ভাবলেন ভালোই হলো। হুট করে চাকুরি ছেড়ে দেওয়ার চিঠি নিয়ে সচিবের সাথে দেখা করাটা ঠিক হতো না। । এখন অস্থিরতা কিছুটা কম মনে হচ্ছে। কিন্তু ভাবনায় ঘুরে ফিরে সেই সুদূর নিয়ন্ত্রিত রিমোট ডিভাইসের কথাই মনে আসছে। রিমোট কন্ট্রোলের কারণেই বোধহয় তিনি আবেদনটি ফিরিয়ে এনেছেন।

জহির সাহেব সচিবালয় থেকে বের হয়ে গুলিস্তানমুখী রাস্তা ধরে ঘোরের মধ্যে হাঁটতে থাকেন। এখন কোথায় যাবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। ইচ্ছেমতো কারও দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে তিনি চলছেন ভাবতে ভালো লাগছে না। নিজেকে নিজেই নিয়ন্ত্রিত করার জন্য রিমোটটি খুবই দরকার। গুলিস্তানের স্টেডিয়াম মার্কেটের সামনের ফুটপাথে টুকরিতে করে ইলেক্ট্রনিক নানান ডিভাইস বিক্রয় হয়। বিভিন্ন ধরনের রিমোটও পাওয়া যায়। জহির সাহেব একটি রিমোট খুঁজতে থাকেন। পাগলের মতো তিনি খুঁজছেন এমন একটি ডিভাইস যার মাত্র চারটি বাটন থাকবে। তাঁকে নিয়ন্ত্রণ করা তিন বাটনের রিমোট কন্ট্রোল পেলে তিনি তা গুঁড়িয়ে দেবেন। জহির সাহেবের এখন প্রয়োজন চার বাটনের রিমোট কন্ট্রোল।

ফুটপাথের এ দোকান থেকে সে দোকানে অনেক ঘুরেও তিন কিংবা চার বাটনের কোনো রিমোট কন্ট্রোল তিনি পেলেন না। জাতীয় স্টেডিয়াম মার্কেট, আউটার স্টেডিয়াম মার্কেট সব দোকানে দোকানে গিয়ে তিনি খোঁজ নিলেন। নাহ! কোথাও তিন বা চার বাটনের কোনো রিমোট ডিভাইস নেই।

অনেক ঘুরে ক্লান্ত হয়ে জহির সাহেব হাল ছেড়ে ভাবতে বসেন। জহির সাহেবকে নিয়ন্ত্রণ করা তিন বাটনের রিমোট ডিভাইসটিতে নিশ্চয়ই আরেকটি বাটন আছে। সেটি নিশ্চয়ই শূন্য বাটন। জহির সাহেব এই শূন্য বাটনে চাপ দিলে কি ঘটতে পারে তা দেখার জন্যই হন্যে হয়ে চার বাটনওয়ালা রিমোট ডিভাইস খুঁজছেন। এই জগত সংসার বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কোথাও না কোথাও চার বাটনের রিমোট ডিভাইসটি আছে। এটিকে যে করেই হোক নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। তারপর শূন্য বাটনে চেপে দেখবেন কী হয়!

চলবে...
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১১ দুপুর ২:০৩
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২১


(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×