আমার একজন পরিচিত ব্যক্তি। পেশায় শিক্ষক। উদয়স্ত পরিশ্রম করেন। সকাল বেলা শুরু করেন ব্যাচে প্রাইভেট পড়ানো। সারাদিন পড়ান। মাঝখানে আবার প্রতিষ্ঠানে ক্লাশও নিতে হয়। উদয়স্ত এই পরিশ্রমের ফসলটাও ভালো পান। মাস শেষে বেতন, প্রাইভেট পড়ানো নিয়ে দুই লক্ষাধিক টাকা আয়। সারাদিন চিন্তায় থাকেন কিভাবে আরও দু'চারটা ছাত্র বাগানো যায়।
একজন পরিচিত স্বনামধন্য আইনজীবী। সারাদিন চেম্বার, কোর্ট, আইনের সাহায্যপ্রার্থীদের সাথেই ওঠাবসা। বিশ হাজার টাকার নিচে কোনো কেস হাতে নেন না। আইন সেবা দিয়ে তিনিও গড়ে দুই লক্ষের বেশি টাকা আয় করেন প্রতি মাস। আইনজীবীদের অর্থ নাকি মক্কেলদের পকেটে থাকে। তাই সারাদিন চিন্তায় থাকেন কিভাবে আরও মামলা হাতে নেওয়া যায়।
পরিচিত একজন সরকারি চাকুরে। মাঝারি মানের আমলা। সরকারের দায়িত্বপূর্ণ পদে আছেন। সরকারি বেতন যা পান তাতে সমাজে মর্যাদা রক্ষা করে চলা যায় না। তাই বাড়তি কামাইয়ের ধান্ধায় থাকেন। ফাইলটাকে কিভাবে আরও দু'দিন ঘুরিয়ে টুপাইস কামাই করে নিবেন সে চিন্তায়ই তাকে মগ্ন থাকতে হয়।
ঢাকার একটি মাঝারিমানের হাসপাতালের কেবিন বয়। মাসে তিনহাজার টাকা বেতন। মতিঝিল কলোনীতে সাবলেট থাকেন। তিন হাজার টাকা ভাড়া। স্ত্রী এবং সন্তান আছে। বেতন যা পান তাতে ঘর ভাড়ায়ই চলে যায়। সংসার চালান কিভাবে এ প্রশ্নের জবাবে জানালেন রোগীরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার সময় খুশী হয়ে যা দেন তাতেই সংসার চলে যায়। তাই হাসপাতালের এই বয়টি প্রতিদিনই আশায় থাকেন অন্ততঃ দু'চারটি রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি যাক। তাতে তার কিছু আয় হবে।
আচ্ছা ধরুন, চাকরির পাশাপাশি মেধা, শ্রম, সময় ব্যয় করে আপনি মাসে প্রচুর টাকা আয় করেন। সারাদিন আপনার আয়-ইনকামের ধান্ধায় কেটে যায়। এখন ভাবুন, আপনার একটি হাত দুর্ঘটনায় ভেঙে গেল। চিকিৎসা খরচ আপনি যেভাবেই হোক ম্যানেজ করবেন। সন্তান বা প্রিয়জনের বড় কোনো অসুখ হলো। ঋণ নিয়ে হলেও আপনাকে চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে হবে। অথবা আপনার এমন একটি শারিরীক রোগ আছে প্রতিদিনই আপনাকে ওষুধ খেতে হয়। একদিন ওষুধ না খেলে আপনি সুস্থির থাকতে পারেন না। বিদেশী এ ঔষধের জন্য মোটা অঙ্কের অর্থ আপনাকে ব্যয় করতে হয়। আপনার টেবিল ভর্তি সুস্বাদু সব খাবার। আপনি ডায়াবেটিস রোগের কারণে খেতে পারছেন না। আপনার হাঁপানি রোগ আছে। প্রতি মাসে আপনাকে চিকিৎসা বাবদ অর্থ ব্যয় করতে হয়। হার্ট ব্লক হয়ে যাওয়ার কারণে আপনি হার্টের রোগী। চিকিৎসা নিয়মিত নিতে হয়।
মনের তাগিদে আপনি কয়েকজন গরীব শিক্ষার্থীকে পড়াশুনার খরচ যুগিয়ে যাচ্ছেন। নিরবে নিভৃতে আপনি কয়েকজন গরীব অসুস্থ ব্যক্তির চিকিৎসার খরচ দিয়ে যাচ্ছেন। আপনার এলাকায় জনকল্যাণমূলক একটি কাজ আপনি নিজ অর্থে করে দিলেন। পঙ্গু ব্যক্তি দেখলে আপনি তাকে হুইল চেয়ার কিনে দেন। কেউ বলে দেয়নি এ কাজগুলো করতে। মনের তাগিদেই আপনি এগুলো করে যাচ্ছেন। পরিবার বা সমাজের কাছে পাগলামো মনে হলেও আপনার কাছে তা নয়। আল্লাহ আপনাকে শারিরীক এবং মানসিকভাবে সুস্থ রেখেছেন। আপনার শরীরে তেমন বড় কোনো সমস্যা নেই। আপনি সুস্থ শরীরে সুস্থ মনে দৈনন্দিন কাজ করে যাচ্ছেন। চিকিৎসার জন্য যে খরচটুকু আপনাকে করতে হত, তা আপনার লাগছে না। সমাজের সুস্থতার জন্য এ অর্থটুকু আপনি কাজে লাগাতে পারেন। যদি মনের আনন্দে এ কাজগুলো করে যেতে পারেন, তাহলে আপনার শরীর ও মন সুস্থ থাকবে। বাড়তি চিকিৎসা ব্যয় লাগবে না।