somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মনের চিকিৎসা ব্যয়

০৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার একজন পরিচিত ব্যক্তি। পেশায় শিক্ষক। উদয়স্ত পরিশ্রম করেন। সকাল বেলা শুরু করেন ব্যাচে প্রাইভেট পড়ানো। সারাদিন পড়ান। মাঝখানে আবার প্রতিষ্ঠানে ক্লাশও নিতে হয়। উদয়স্ত এই পরিশ্রমের ফসলটাও ভালো পান। মাস শেষে বেতন, প্রাইভেট পড়ানো নিয়ে দুই লক্ষাধিক টাকা আয়। সারাদিন চিন্তায় থাকেন কিভাবে আরও দু'চারটা ছাত্র বাগানো যায়।

একজন পরিচিত স্বনামধন্য আইনজীবী। সারাদিন চেম্বার, কোর্ট, আইনের সাহায্যপ্রার্থীদের সাথেই ওঠাবসা। বিশ হাজার টাকার নিচে কোনো কেস হাতে নেন না। আইন সেবা দিয়ে তিনিও গড়ে দুই লক্ষের বেশি টাকা আয় করেন প্রতি মাস। আইনজীবীদের অর্থ নাকি মক্কেলদের পকেটে থাকে। তাই সারাদিন চিন্তায় থাকেন কিভাবে আরও মামলা হাতে নেওয়া যায়।

পরিচিত একজন সরকারি চাকুরে। মাঝারি মানের আমলা। সরকারের দায়িত্বপূর্ণ পদে আছেন। সরকারি বেতন যা পান তাতে সমাজে মর্যাদা রক্ষা করে চলা যায় না। তাই বাড়তি কামাইয়ের ধান্ধায় থাকেন। ফাইলটাকে কিভাবে আরও দু'দিন ঘুরিয়ে টুপাইস কামাই করে নিবেন সে চিন্তায়ই তাকে মগ্ন থাকতে হয়।

ঢাকার একটি মাঝারিমানের হাসপাতালের কেবিন বয়। মাসে তিনহাজার টাকা বেতন। মতিঝিল কলোনীতে সাবলেট থাকেন। তিন হাজার টাকা ভাড়া। স্ত্রী এবং সন্তান আছে। বেতন যা পান তাতে ঘর ভাড়ায়ই চলে যায়। সংসার চালান কিভাবে এ প্রশ্নের জবাবে জানালেন রোগীরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার সময় খুশী হয়ে যা দেন তাতেই সংসার চলে যায়। তাই হাসপাতালের এই বয়টি প্রতিদিনই আশায় থাকেন অন্ততঃ দু'চারটি রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি যাক। তাতে তার কিছু আয় হবে।

আচ্ছা ধরুন, চাকরির পাশাপাশি মেধা, শ্রম, সময় ব্যয় করে আপনি মাসে প্রচুর টাকা আয় করেন। সারাদিন আপনার আয়-ইনকামের ধান্ধায় কেটে যায়। এখন ভাবুন, আপনার একটি হাত দুর্ঘটনায় ভেঙে গেল। চিকিৎসা খরচ আপনি যেভাবেই হোক ম্যানেজ করবেন। সন্তান বা প্রিয়জনের বড় কোনো অসুখ হলো। ঋণ নিয়ে হলেও আপনাকে চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে হবে। অথবা আপনার এমন একটি শারিরীক রোগ আছে প্রতিদিনই আপনাকে ওষুধ খেতে হয়। একদিন ওষুধ না খেলে আপনি সুস্থির থাকতে পারেন না। বিদেশী এ ঔষধের জন্য মোটা অঙ্কের অর্থ আপনাকে ব্যয় করতে হয়। আপনার টেবিল ভর্তি সুস্বাদু সব খাবার। আপনি ডায়াবেটিস রোগের কারণে খেতে পারছেন না। আপনার হাঁপানি রোগ আছে। প্রতি মাসে আপনাকে চিকিৎসা বাবদ অর্থ ব্যয় করতে হয়। হার্ট ব্লক হয়ে যাওয়ার কারণে আপনি হার্টের রোগী। চিকিৎসা নিয়মিত নিতে হয়।

মনের তাগিদে আপনি কয়েকজন গরীব শিক্ষার্থীকে পড়াশুনার খরচ যুগিয়ে যাচ্ছেন। নিরবে নিভৃতে আপনি কয়েকজন গরীব অসুস্থ ব্যক্তির চিকিৎসার খরচ দিয়ে যাচ্ছেন। আপনার এলাকায় জনকল্যাণমূলক একটি কাজ আপনি নিজ অর্থে করে দিলেন। পঙ্গু ব্যক্তি দেখলে আপনি তাকে হুইল চেয়ার কিনে দেন। কেউ বলে দেয়নি এ কাজগুলো করতে। মনের তাগিদেই আপনি এগুলো করে যাচ্ছেন। পরিবার বা সমাজের কাছে পাগলামো মনে হলেও আপনার কাছে তা নয়। আল্লাহ আপনাকে শারিরীক এবং মানসিকভাবে সুস্থ রেখেছেন। আপনার শরীরে তেমন বড় কোনো সমস্যা নেই। আপনি সুস্থ শরীরে সুস্থ মনে দৈনন্দিন কাজ করে যাচ্ছেন। চিকিৎসার জন্য যে খরচটুকু আপনাকে করতে হত, তা আপনার লাগছে না। সমাজের সুস্থতার জন্য এ অর্থটুকু আপনি কাজে লাগাতে পারেন। যদি মনের আনন্দে এ কাজগুলো করে যেতে পারেন, তাহলে আপনার শরীর ও মন সুস্থ থাকবে। বাড়তি চিকিৎসা ব্যয় লাগবে না।
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×