somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সত্যায়িতকরণ এবং দায়বদ্ধতা

০৬ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১০:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-আসসালামু আলাইকুম,
-ওয়ালাইকুমআসসালাম।
-আপনি কি কবি নজরুল কলেজের...এটুকু বলেই ছেলেটি ইতস্তঃত ভাব নিয়ে আমার দিকে তাকায়।
সায়েন্স ল্যাবরেটরী মোড় থেকে বাসে উঠেছি। গন্তব্য গুলিস্তান। গত শুক্রবার (০৪/০৭/১৪) ধানমণ্ডি স্টার কাবাব হাউজে আমাদের ভার্সিটির বন্ধুদের একটা ইফতার এবং আনন্দ আড্ডা শেষ করে বাসার উদ্দেশে রওনা হয়েছি। ইফতারের পর মোটামুটি বাসটি খালিই ছিল। আমার পাশেই ছেলেটি বসা। একনজর ছেলেটিকে দেখলাম। কলেজের স্টুডেন্ট হতে পারে। কলেজে শত শত ছাত্র-ছাত্রী। সবাইকে চেনা সম্ভব নয়।
আমি মাথাটা ঝুঁকিয়ে বললাম তুমি কি কবি নজরুল কলেজের স্টুডেন্ট? কোন ইয়ারে পড়ছ?
-না স্যার, আমি কবি নজরুল কলেজের স্টুডেন্ট না। মাসখানেক আগে একটা চাকুরির নিয়োগপত্র নিয়ে গিয়েছিলাম। নিয়োগপত্রে দু'জন গেজেটেড কর্মকর্তার রেফারেন্স প্রয়োজন ছিল। আপনি তা করে দিয়েছিলেন।
ঘটনাটা আমার মনে পড়ল। ছেলেটি অনেক ঘুরে শেষ পর্যন্ত আমার কাছে এসেছিল। আমি নিয়োগপত্রটা দেখে প্রত্যয়ন করে ছিলাম। সাথে আরেকজন সহকর্মীকে অনুরোধ করে দু'জনের প্রত্যয়নই নিশ্চিত করেছিলাম।
নামটা আবারও জেনে নিলাম। নাজমুল হক সৈকত। ইসলামী ব্যাংকে প্রবেশনারী অফিসার পদে চাকুরি হয়েছে। এখন পোস্টিং নরসিংদী জেলার মাধবদী। কথা প্রসঙ্গে অনেক কথাই বলে চলছে সে। বেশ ক'জনের নিকট গিয়েছিল। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট বিধায় কবি নজরুল কলেজের কোনো শিক্ষকই তাকে চিনে না। তাই কেউই তার নিয়োগপত্রে প্রত্যয়ন করতে চায় নি। আমি খুব সহজেই কাজটি করে দিয়েছিলাম বলে সে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। এমনও বলল যে, আমাকে যেখানেই দেখবে সেখানেই সে চিনতে পারবে।
বিসিএস করা একজন কর্মকর্তা হিসেবে আমার সত্যায়িতকরণ ক্ষমতা আছে। আমি সাধারণত সত্যায়িতকরণের ক্ষেত্রে কাউকে ফিরাই না। যদি মূল কাগজপত্র থাকে সেক্ষেত্রে ফটোকপিতে সত্যায়িত করে দেওয়া আমার পবিত্র দায়িত্ব বলে মনে করি। এ বিষয়ে আমার জীবনের একটি দুঃখজনক অভিজ্ঞতা আছে। ঐ অভিজ্ঞতার পর আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম জীবনে যদি আমার অ্যাটাস্টেশন পাওয়ার আর্জিত হয় তবে আমি কাউকে ফেরাব না।
অভিজ্ঞতাটি শেয়ার করছি-
আমি তখন চিটাগাং ভার্সিটির ছাত্র। সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। হলে সিটের জন্য আবেদন করার নোটিশ দিয়েছে। আমি যখন নোটিশটি পাই হাতে একদিন সময় মাত্র। ভার্সিটির শিক্ষক কর্তৃক কাগজপত্র সত্যায়িত করে আবেদনপত্রের সাথে জমা দিতে হবে।
ভার্সিটি কোনো কারণে বন্ধ ছিল। আমার ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের কোনো শিক্ষকই সেদিন আসেন নি। আমি অ্যাকাউন্টিং ডিপার্টমেন্টে গেলাম। সেখানেও কোনো শিক্ষক নেই। ডিপার্টমেন্টের এক সিনিয়র শিক্ষকের কক্ষ খোলা। সাহস করে কক্ষে প্রবেশ করলাম। বিনয়ের সাথে আমার আগমনের উদ্দেশ্য জানালাম। সত্যায়িতকরণের অনুরোধ জানিয়ে কাগজপত্রগুলো স্যারের হাতে দিলাম। স্যার কাগজগুলো একনজর দেখে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বললেন, তুমি আমাকে চিন? তুমি আমার কাছে এসেছ কাগজপত্র সত্যায়িত করতে? বেরিয়ে যাও! পরে শুনেছিলাম সে স্যার একসময় প্রো-ভিসি ছিলেন।
কাগজপত্রগুলো কুড়িয়ে নিয়ে চলে এসেছিলাম। চোখ দিয়ে পানি চলে এসেছিল। পরে অর্থনীতি ডিপার্টমেন্টে এক নবীন শিক্ষকের কাছ থেকে সত্যায়িত করে নিয়েছিলাম। সেই ঘটনার পর থেকেই আমার এই প্রতিজ্ঞা ছিল যে, জীবনে কাউকে প্রত্যয়ন বা সত্যায়িতকরণের ক্ষেত্রে ফিরিয়ে দেব না। হোক সে আপরিচিত। কাগজপত্র সঠিক থাকলে সত্যায়িতকরণের ক্ষেত্রে কাউকে হয়রানি করা ঠিক না। আমি যদি এ কাজটি না করে দেই তাহলে হয়তো সে নকল সীল বানিয়ে নিজেই স্বাক্ষর করে জমা দেবে। এটি ভয়াবহ অন্যায় হবে। আর এর দায় আমার উপরও বর্তাবে নিশ্চয়ই।
২৯টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×