ভালবেসেই হয়তো বাবা-মায়ের বিয়ে। মেয়েটি বা ছেলেটি এরই মধ্যে তা জেনে গিয়েছে।
উঠতি বয়সে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ সকল সুস্থ মানুষের মধ্যেই বিদ্যমান। এই বয়সের ভাল লাগা অনেক ক্ষেত্রে ভালবাসা নাও হতে পারে। তবে অভিভাবকের কিছু ভুলের কারণে হয়ে উঠতে পারে এই ভাল লাগাই আপনার সন্তানের জন্য কাল।
একজন অভিভাবক যখন জানতে পারেন, তাঁর ছোট্ট মেয়েটি বা ছেলেটি কোন সম্পর্কে জড়িত ঠিক তার পরই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চলতে থাকে মেয়েটি বা ছেলেটির ওপর মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার। আর তাতেই বখে যায় শতকরা পঞ্চাশ ভাগ সন্তান। ভাবতে থাকে, বাবা-মা ভালবেসে বিয়ে করার পরও তার প্রতি কেন এই অত্যাচার? কেনই বা বাধা?
সত্যিই তো (!) অল্প বুদ্ধির মাথায় তো এর বেশি কিছু আসার কথাও না। তাই আজ এই বিষয় নিয়েই লিখছি। লেখার সুবিধার্থে আমি কিছু পয়েন্ট ব্যবহার করছি।
#বাবা-মায়ের এই সম্পর্কে বাধা দেওয়ার কারণ
১। অপরিপক্ক বয়সে গড়ে ওঠা প্রেমের সম্পর্কগুলোর সুখি সমাপ্তি হয়ে থাকে শতকে একটির চেয়েও কম। আর আমাদের সমায় আজ অবধি অতোটা আধুনিক নয় যে, একটি প্রেমের সম্পর্কে তারা ভাল চোখে দেখবেন। তার কারণেই বাবা-মায়েরা সমাজের কথা ভেবে, আত্নীয়, বন্ধু-বান্ধব ভেবেই তার সন্তানের এই অপরিণত বয়সের ভালবাসা মেনে নিতে পারেন না।
২। মুলত বাবা-মা তার সন্তানকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে থাকে সন্তান পৃথিবীতে আসার পর থেকেই। তার সাথে সন্তানের ভাল মন্দ ভাবনা তো আছেই। অল্প বয়সের সম্পর্কগুলো যেহেতু অধিক সময় ছেলে মেয়েদের হতাশার সাগরে ডুবিয়ে দেয় তাই বাবা-মা তার স্বপ্ন নষ্ট হবার ভয়েই এর প্রতিবাদ করে থাকেন। যদিও বাবা-মায়ের ভালবাসার সংসার হয়ে থাকে। তত দিনে তারা বুঝতে শিখে যায়, নিজেদের ভুলগুলো।
৩। ভালবাসার নামে আজকাল যা ঘটছে তা সত্যিই অভিভাবকদের জন্য এক বিশাল চিন্তার কারণ। ভালবেসে বিফল হলে আজকাল খুন করতেও মানুষ দ্বিধা করছে না। প্রেমিক বদ্রুলের নির্মমতা কিছু দিন ধরেই চায়ের দোকান থেকে সংসদ, প্রায় সবার মুখে মুখে বিদ্যমান। পার্ক ও কিছু রাস্তার ধার যেনো আজ কপোত-কপোতিদের অবাধ মিলনের কেন্দ্রবিন্দু। সমাজের এই দৃশ্য দেখার পর কোন বাবা-মা ই পারবে না তার সন্তানের কোন সম্পর্ক হোক।
৪। উনবিংশ শতাব্দীতে যারা ভালবেসে সংসার করেছেন তাদের বেশির ভাগের জীবন সংগ্রাম অতি তিক্ত। আজ ২০১৬ তে দাড়িয়েও আপনি বলতে পারেন, ভালবাসাকে সমাজ আজ অবধি সম্পূর্ন ভাবে গ্রহন করে নেয়নি। তাই সন্তানের যেনো সেই সংগ্রামী জীবনের পথে হাটতে না হয় তার কারণেও অনেক বাবা-মা এই অপরিপক্ক ভালবাসার বিরোধিতা করেন।
৫। প্রায় ক্ষেত্রে দেখা যায়, ধর্মের কারণেও এই সম্পর্ক অনেকে পছন্দ করেন না। তবে এটা গ্রামাঞ্চলে বেশি বিদ্যমান।
সবচেয়ে বড় কথা, সমাজ মান সম্মান এই সব কিছুর কথা ভেবেই বাবা-মা এই সম্পর্কে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
এবার আসা যাক, এর প্রতিকার বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলি এড়াতে অভিভাবক ও সন্তানের কি কি করণীয়।
প্রথমে অভিভাবকের করণীয় সম্পর্কে বলা যাকঃ
১। ঠিক ছোট বেলা থেকে, যখন আপনার সন্তানের বোঝার মত জ্ঞান হবে তাকে বন্ধুর মত সময় দিন। তার আচরণ পর্যালোচনা করুন। ভুল্গুলোকে শুধরে দিন। বকা-বাদ্য যত সম্ভব কম করুন। ছোটবেলা থেকেই বুঝিয়ে শোধরানো শিক্ষা দিন।
২। সন্তানকে বন্ধু ভাবুন। স্বভাবগত ভাবেই মানুষের অজানার প্রতি আকর্ষণ বেশি। সাথে সাথে শিশুদের যেটি নিষেধ করা হয়ে থাকে তার প্রতি। তাই প্রেম অথবা ভালবাসা খারাপ এমন ধারণা না দিয়ে, বড় হলে তার ভালো সে বুঝবে সেই ধারণা দিন। সাথে সাথে পরিবারে তার কর্তব্য সম্পর্কে শিক্ষা দিন।
৩। বয়ঃসন্ধি কালে তার সাথে ভালো ব্যবহার করুন। নতুন নতুন জিনিসগুলো তাকে জানতে সাহায্য করুন। নয়তো তার নতুন নতুন জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে সে অন্য কারো সঙ্গ চাইবে এটাই স্বাভাবিক। তার জন্য সে হয়তো কিছু বন্ধু অথবা বিপরীত লিঙ্গের কাউকে বেছে নিবে। তাই যত পারা যায় তার সাথে খোলা মেলা কথা বলুন। সুফলটা আপনিই পাবেন।
৪। বন্ধু নির্বাচনে সাহায্য করুন। ভালো মন্দ শিক্ষা দিন।
৫। এরপরও যদি দেখেন, আপনার সন্তানের হঠাৎ কিছু পরিবর্তন দেখতে পারছেন। দেরি না করে তার সাথে কাউঞ্ছিলিং কুরুন। বন্ধুর মত সব শুনুন, এবং বন্ধুর মত করেই সমাধান করুন। সঠিক সময়ের পদক্ষেপই সব ধরনের বিপদ থেকে মুক্ত রাখতে পারে।
৬। ভুলেও ভালবাসার জন্য সন্তানকে মারধর করবেন না। মানসিক চাপ বা যার প্রেমে পড়েছে তাকে কোন ধরণের হুমকি দিবেন না। টিন এইজে ছেলে মেয়েরা একটু বেশিই ইমোশনাল থাকে। আপনার এই ভুলের কারণে আপনার সন্তানের গোঁড়ামি আরো বাড়তে পারে।
৭। সম্ভব হলে আপনি ঐ মেয়েটার/ছেলেটার সাথে বসুন, তাদের বয়স, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বুঝিয়ে বলুন। মনে রাখবেন, বুঝিয়ে যত সহজে উদ্দেশ্য হাসিল হয় বকাবকি করে ঝামেলা বৃদ্ধি ছাড়া কমে না।
সন্তানদের করণীয়ঃ
১। সবার আগে পরিবারকে প্রাধান্য দিন।
২। হুট করে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
৩। টিন এইজদের অনুভূতি একটু বেশিই কাজ করে থাকে। তাই নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবা শিখতে হবে।
৪। সমাজে নিজের নিরাপত্তা নিজেকেই করে নিতে হয়। সাংসারিক জীবনে অন্যের প্রতি নির্ভর হয়ে থাকলে তা হতে পারে আপনার ভবিষ্যতের নির্যাতন ও পারিবারিক অশান্তির কারণ। তাই এমন সব কিছু থেকে বিরত থাকুন যাতে আপনার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয়।
৫। কাউকে চিনতে সময় নিতে হবে। রাষ্টীয় আইন অনুযায়ী আত্ন বুদ্ধি সম্পন্ন হলে একজন সাবালক বা সাবালিকা হবেন। (মেয়ে-১৮, ছেয়ে-২১) এই সময় পর্যন্ত আপনি নাবালক বা নাবালিকা। তাই রাষ্টীয় ভাবেও আপনাদের সম্পর্ক বেআইনি হবে। এমন সময় সম্পর্ক করলে আপনাদেরও সমস্যা হতে পারে। তাই আপনার প্রিয় মানুষটির জেল যুলুম থেকে রক্ষা করতে হলেও সম্পর্কটা স্থাপন করতে কিছুটা সময় নিন।
আপনাদের সকলের মঙ্গল কামনা করছি। -আজনাদ
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ ভোর ৪:৫৭