এক-শেষ স্বীকারোক্তি--
সীমাহীন বিত্তের তান্ডব,বিএমডব্লিউর স্টাটাস,ঝাড়বাতির জৌলুস, বিসনেস পার্টনারদের জলকালো পার্টি, ডান্স বারে "রূপজীবিদের" সঙ্গ, স্কচ হুইস্কির বোতল, সিগারেট-চুরুটের ধোঁয়ার বিচিত্র কুন্ডলী ইদানিং চরম ক্লান্ত।অতপরঃ গভীর রাতে বাড়ি ফেরার পর তোমার দেখি তুমিও এ্যাপার্টমেন্টে নেই।মাথা ভারী থাকলে কাজের বুয়া বেডরুম পর্যন্ত পৌছিয়ে দেয়।প্রিয় সন্তানেরা বিদেশে। এই বিষাদ, এ একাকিত্বতার কোন ব্যাখ্যা নেই আর ক্লান্তিকর প্রতিটি দিন আমাকে তাড়া করে চলেছে। ডিপ্রেশনের ওষুধ খেয়ে কোন লাভ হয়নি আমার। আমার সব কিছুই তোমাদের দিয়ে চললাম। জীবনে কাউকে কোনদিন চিঠি লিখিনি। বলতে পারো পুলিশি হয়রানি বন্ধের জন্য এ আমার শেষ স্বীকারোক্তি। এই অপমৃত্যু আমার এবং একান্ত স্বনির্বাচিত।
(যথানিয়মে খালি করা হুইস্কির বোতলের নীচে পাওয়া)
দুই--বৃদ্ধ বাবার শেষ চিরকুট
বাবা মুনীর,
ডায়বেটিস ধরা পড়ার পর থেকে বৌমা আমার খাবার একছত্র নিয়ন্ত্রন করে।ফলে আমার শরীরটা একেবারে দুর্বল হয়ে গেছে। মুনীর,তোর সাথে কথা বলতে চাইলে তুই বলিস "আমি অফিস থেকে আসি তারপরঃ।" তুই এতই ব্যস্ত যে, আমার খবর নেয়ার সময় নেই।আমার খবর নাহয় নাইবা নিলি কিন্তু গত কয় বছর একটা মিনিটও তোর সাথে কথা বলতে চেয়েও পারিনি।বৌমা মাসের শুরুতে কয়েকটা ট্যাবলেট এর স্ট্রিপ দিয়ে বলে সারা মাস সেগুলো দিয়ে চলতে হবে। তাই ট্যবলেটগুলোকে ভেঙ্গে ভেঙ্গে চালানোর চেষ্টা অনেকদিন করেছি। কিন্তু চলে না রে বাপ।রাতে পানি মিশিয়ে আধাবাটি দুধ আসতো তাও বন্ধ হয়ে গেছে। আমি জানি আত্মনিধন মহাপাপ কিন্তু এ সংসারে আমার কানাকড়ি দাম নেই। ত্রিশ বছর আগে তোর মা চলে গিয়ে বেঁচেই গেছে। আমি আজ তোর মায়ের কাছে চললাম। কাউকে অভিশাপ দিলাম না।
তোমার বাবা।
(বাড়ির দারোয়ানের কাছে দেয়া)
তিন- তরুন কবির শেষ কবিতা--
ভার্সিটিতে তোমার সাথে দেখা।আমার কবিতা শুনে মুগ্ধ হতে। আমিও তোমাকে কবিতা শুনিয়ে অপার আনন্দ পেয়েছি। ছয় বছর তো হবেই । শেষ সেমিস্টারের ভাইভা দিয়ে তুমি বললে, "আজ ক্লান্ত,কবিতা শুনবেো না।আগামীকাল একই সময়ে একই স্থানে,0k। সে "আগামীকাল" আর আসেনি। তুমি সুইডেনে।আমি একা পড়ে থাকলাম। আজ এ অবেলায় মনে পড়ে অনেক কিছুই.... মাদক বিরোধী দিবসে কত র্যা লি-মানববন্ধন করেছি আর আবৃত্তি করেছি মাদক বিরোধী কবিতা।কী আশ্চর্য আজ মাদকই আমার পরম বন্ধু।আসক্তির পর্যায় চুড়ান্ত। মা আগেই গত হয়েছে। অসুস্থ বাবার চিকিৎসার কথা বলে বন্ধুদের কাছ থেকে নেয়া টাকা মাদকের পেছনে ব্যয় করেছি।গতকাল এক বন্ধু জানালো বাবা ইমার্জেন্সীতে। মাদকের নেশা কাটিয়ে উঠতেই চলে গেলাম মেডিকেল। ইমার্জেন্সির রুমের বাইরে দেখি আত্মীয় স্বজনদের মাথায় টুপি। প্রিয় বাবার মুখ দেখার মুখ আমার নেই।ফিলে এলাম।কখন কোথায় কীভাবে দাফন হলো জানিনা। এখন রাত বারোটা। সেতুর উপর একা দাঁড়িয়ে আছি। এক এলোমেলো বাতাস রাতের ডানায় ভর করে খেলে গেল। আকাশে চাঁদ, নক্ষত্র ও গ্রহ সব জাগরূক থাকবে।সূর্যের কিরণ প্রতিটি ঢেউয়ের ভঙ্গুর শীর্ষে রূপালী চিরুনী দিয়ে আচঁড় কাটবে। অথচ কিছুক্ষন বাদে আমার কাছে সব অর্থহীন হয়ে যাবে।
(ভেসে উঠা লাশের পকেটে থেকে পাওয়া )