আমার চার পাশের মানুষগুলোর ধারনা আমি মরে গেছি। ডাক্তাররা বললেন, “ ক্লিনিক্যালি ড্যাড, লাইফ সাপোর্ট রেখে লাভ নেই্।” আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই এ্যাম্বুলেন্সে ক্লিনিক থেকে সোজা ছেলের বাসায়। এ কী ধরনের মৃত্যু? প্রাণস্পন্দন নিস্ক্রিয় অথচ শরীরের অন্ধ কুয়োয় কোন এক প্রদীপ টিকে অছে। এ কারণে দুনিয়ার সাথে আমার সম্পর্কটি টিকে আছে। আমি দেখতে পাচ্ছি কিন্তু কিছুই বলতে পারছি না , নড়াচড়া করতে পারছি না। মুঠোফোনে মৃত্যুর খবর দ্রুততম সময়ে ছড়িয়ে পড়লো চারিদিকে। আত্মীয়রা আসতে শুরু করলো। ঘরের ভেতরে বাইরে সবাই হাহাকারে ব্যস্ত।
কেউ বলছে "কেমনে এমন হলো?"
আরেক জন বলছে "আচমকা কোথায়!এটা তো থার্ড হার্ট এটাক!"
"বেশ ভালো মহিলা ছিলেন।"
"কারো মনে কোনদিন কষ্ট দিতে দেখিনি।"
ছেলের অফিসের নতুন কর্মচারি বলল, "স্যার, মাকে কীভাবে যে সেবা করেছেন ভাষায় বুঝাতে পারবো না।" কেন জানি, কাজের মেয়েটাই শুধু চুপচাপ ।এদিকে আমার একমাত্র ছেলে বুক চাপড়াচ্ছে। তার বৌয়ের কান্না বাঁধভাঙ্গা। কয়েকজন মহিলা আঁচল মুখে তাকে শান্ত চেষ্টা করছে। আমার ছেলে চিৎকার দিয়ে বিলাপ করে উঠে, "আমি আর বাঁচতে চাই না-তোমরা আমার মাকে ফিরিয়ে দাও- মা, তুমি আমাকে নিয়ে চল- তুমি, কেমনে আমাদের ছেড়ে চলে গেলে ? -----।"এর সাথে বৌ এসে যোগ দেয় "আমার নিজের মায়ের চেয়ে তিনি বেশী স্নেহ করতেন---আমাদের আ -র ছায়াবলে কিছুই থাকলো না---মা,আপনার নাত-নাতনীরা কাকে দাদু বলে ডাকবে ? " আত্মীয় দেখলে সে এভাবে চিৎকার করে উঠতে উঠতে আছাড় খেয়ে পড়ছে। টিস্যুর ব্যাগ প্রায় শেষ। ছেলে পরম মমতায় আমার মুখে হাত বুলিয়ে দেয় আর আমার নিশ্বাস পরীক্ষা করে দেখে আমার মৃত্যু নিশ্চিত কিনা।
আমি তাদের জবরদস্ত অভিনয়ে হতবাক।
তখন হৃদয়ে কারো জন্য না ভালোবাসা, না ঘৃনা। মনে হচ্ছে, সম্পর্ক, বন্ধন, রাগ-অনুরাগ সব কিছুই আবছা হয়ে আসছে, সব আবছা-----সব ----
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩২