সারাদিন বিনা চিকিৎসায় পড়ে থেকে সন্ধ্যায় এক মুমূর্ষু রোগীর মৃত্যুর পর তার ভর্তি নিলেন ডাক্তার। গতকাল মাত্র ৫৫ টাকার অভাবে এক্সরে করানো যায়নি তার। পরে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের গেটের সামনে মৃত্যু হয় ইকবাল হোসেন (২৮) নামের এ রোগীর। পরিবারের অভিযোগ, টাকার অভাবে পরীক্ষা করা সম্ভব নয় জানালেও ডাক্তাররা কর্ণপাত করেননি। সন্ধ্যায় রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনকভাবে খারাপ হলে তাকে আবার জরুরি বিভাগে নেয়া হয়। ততক্ষণে অবশ্য মৃত্যু হয়েছে তার। তবে দায়িত্বরত ডাক্তাররা স্বজনদের অবহেলার কারণে রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেন। ইকবালের বড় বোন পারভীন বেগম জানান, গতকাল ভোরে লালবাগ থানাধীন শহীদনগর বেড়িবাঁধ এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন ইকবাল। সকাল নয়টার দিকে তাকে স্থানীয় কয়েকজনের সহযোগিতায় স্ত্রী আমেনা বেগম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। জরুরি বিভাগের ডাক্তার প্রথমে চক্ষু পরীক্ষা করাতে বলে স্বজনদের। চক্ষু পরীক্ষা শেষ হলে বক্ষ পরীক্ষা করাতে বলেন। কিন্তু পরীক্ষার ফি ৫৫ টাকা ছিল না তাদের কাছে। এ কথা ডাক্তারদের জানালে তারা কর্ণপাত করেননি। ফলে সারাদিন গেটের বাইরে ট্রলিতে পড়ে থাকেন ইকবাল। সন্ধ্যার দিকে তার অবস্থার মারাত্মক অবনতি ঘটে। এ সময় স্বজনদের কান্নাকাটি শুনে তাকে আবার ভিতরে নেয়া হয়। এর পরপরই ইকবালকে মৃত ঘোষণা করেন ডাক্তার। মৃত্যুর পর ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি দেখানো হয় তাকে। অথচ সারাদিন বিনা চিকিৎসায় পড়ে ছিলেন তিনি।
পারভীন বেগম বলেন, আমরা গরিব মানুষ। টাকার অভাবে ভাইটা মারা গেল। একজন ডাক্তার একটু দেখলোও না। তবে রোগীর স্বজনদের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দায়িত্বরত ডাক্তাররা। জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত ডা. তাহসিনা খান বলেন, তাকে সকালে পরীক্ষা দিয়ে রেডিওলজি বিভাগে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তারপর ওরা আর যোগাযোগ করেনি। সন্ধ্যায় এসে বলে আমাদের কাছে টাকা নেই। তাই পরীক্ষা করতে পারিনি। তখন দ্রুত আমরা ভেতরে নিয়ে আসি। তিনি বলেন, রোগীকে বারবার পানি খাওয়াতে বারণ করেছি। কিন্তু তারা দেড় লিটার পানি ও প্রচুর ভাত খাওয়ায়। মূলত এ কারণেই মৃত্যু হয়েছে তার। দায়িত্বরত আর এস হরিদাস সাহা বলেন, পরিচয়হীন রোগীও আমাদের এখানে বিনা চিকিৎসায় মারা যায় না। এটা আসলে রোগীর স্বজনদের ভুলের কারণে হয়েছে।
ইকবাল হোসেন একজন ভ্যানচালক। স্ত্রী ও ছোট দুই ছেলেকে নিয়ে শহীদনগরের চার নম্বর গলির আলী আকবরের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন তিনি।