somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি গৃহের স্বপ্ন: সমস্যা ও সম্ভাবনা

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ দুপুর ১২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোট্ট একটি গৃহের স্বপ্ন দেখেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াটায় যেন দূষ্কর। কঠিন বাস্তবতার মুখমুখি দাঁড়িয়েও যেন এই স্বপ্নটি মানুষ তার বুকে লালন করে চলে। স্বপ্ন একদিন ঠিকই ধরা দিবে বাস্তব হয়ে, এই ভাবনায় যেন আচ্ছাদিত হয়ে মানুষ বেঁচে থাকতে চায়। খুব বেশী চাওয়া নয় কেবল আশ্রয়ের প্রত্যাশায় ছোট্ট একটি ছাদের স্বপ্ন। কঠিন বাস্তবতার করালগ্রাসে মাঝে মাঝে সেই স্বপ্ন কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে, তবুও সূর্যোদয়ের প্রত্যাশায় উন্মুখ হয়ে থাকা। জীবনের কঠিন বির্বতণে গৃহের সংস্থান করা যেন রীতিমত দূর্সাধ্যে ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। নিজস্ব সকিয়তার মাধ্যমে আপন ভুবনের সৃষ্টি কে না চায়। তাইতো অন্ন, বস্ত্রের ব্যবস্থা করেই মানুষ ছুটে চলে সুন্দর একটি বাসস্থানের প্রত্যাশায়। মনের সকল কল্পনা দিয়েই যেন তার গৃহটিকে সাজানোর প্রাণবন্ত এক চেষ্টা। জীবনের চলতি পথে স্বাদ আর সাধ্যের মধ্যেকার অনেক পার্থক্য সম্মুক্ষে এসে ধরা দেয়। নিজস্ব একটি গৃহের সংস্থান করা যেন এখন মরিচিকা। জনসংখ্যার প্রতিনিয়তই বেড়েই চলেছে কিন্তু জমি তো আর বাড়ছে না বরং আনুপাতিক হারে হ্রাস পেয়েই চলেছে। একদিকে লাগামহীনভাবে নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি, জমির দাম বৃদ্ধি, সবকিছুর উপরে নানা রকম সরকারী ট্যাক্স, রেজিস্ট্রেশন খরচ, স্ট্যাম্প ডিউটি সহ অন্যান্য খরচ দ্বারা পণ্যমূল্য বৃদ্ধি হয়ে পড়ছে। এর ফলে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ক্রয়ক্ষমতার বাহিরে চলে যাচ্ছে পণ্যের মূল্য। ঘর ভাড়া ও পরিবারের অন্যান্য ব্যয় নির্বাহের পর জমি বা ফ্ল্যাট ক্রয় করার চিন্তা এ যেন কল্পনাবিলাস ব্যতীত আর অন্যকিছু নয়। সীমিত আয়ের মানুষের জন্য যেন তা মরীচিকা। ঢাকা শহরে একখন্ড জমি কেনার দু:স্বপ্নও দেখতে পারেনা সাধারন মধ্যবিত্ত পরিবার। আজকের এই সমস্যা হয়ত উদ্ভব ঘটতো না বা ঘটলেও এত তীব্র সংকটের জন্ম দিত না যদি সরকার এই ব্যাপারে এত উদাসিন না হত। পরিকল্পিত নগরায়নের চিন্তা চেতনার কথা শোনা যাচ্ছে বহুকাল থেকে কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তীতে কোন সরকারই এই বিষয়ে তেমন কোন ভুমিকা রাখতে সক্ষম হয়নি। আসলে সরকার গঠনের মাধ্যমে যারা ক্ষমতায় যান তাদের তো আর আবাসন সমস্যার কবলে পড়তে হয় না সুতরাং তারা এই বিষয়টি অনুধাবন করবেনই বা কি করে। গৃহহীন হয়ে ফুটপাতে দিনাতিপাত, বস্তিতে মানবেতর জীবনযাপন, বাঁশের গৃহ নির্মাণ করে কোন নদীর ধারে বসবাসের কষ্ট সবার পক্ষে তো আর অনুধাবন করা সহজতর নয়। কেবল এই কষ্ট সেই উপলব্ধি করতে পারে যে এই পরিস্থিতিতে নিজের সাথে প্রতিনিয়তই যুদ্ধ করে চলেছ। পরিকল্পিত নগরায়নের যদি প্রতিফলন করা যেত তবে ব্যাঙের ছাতা মত অযাচিতভাবে এত দালানকোঠা গড়ে উঠে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যতা বিনিষ্ট করতো না। আমাদের সমাজের অনেকগুলো সমস্যা সৃষ্টির মূলেই রয়েছে এই আবাসন যেমন: যানজট, জলাবদ্ধতা, পানি দুষণ, পাহাড় ধস এছাড়াও আরো অনেক। আসলে সমস্যাসমূহের মূলে আবাসন বললে অবশ্য ভুল হবে দোষটি হচ্ছে মূলত অপরিকল্পিত আবাসন। বর্তমানে আবাসিক, অনাবাসিক আর বানিজ্যিক এলাকা কাকে বলে সেটা ঢাকায় আসলে কারো পক্ষে বুঝার উপায় নেই। আবাসিক এলাকা মনে করে ঢুকে দেখা যায় ওখানে ক্লিনিক, স্কুল, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, অফিসও রয়েছে ... আবাসিক এলাকায় আবাসিক দালানের চেয়ে বানিজ্যিক দালানই বেশি। অপরিকল্পিত নগরায়নের চিত্র দেখে যতটা কষ্ট অনুভব করি তার চেয়ে বেশী কষ্ট অনুভব করি এগুলো দেখার কেউ নেই দেখে। আবাসন সমস্যা নিরসনে এখন অনেকগুলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। আবাসন সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে ঠিকই কিন্তু সৃষ্টি করছে নতুন নতুন আরো অনেক সমস্যার। আবাসিক ভবনগুলোর দিকে দৃষ্টিপাত করলে সেই সব সমস্যাসমূহ নিমিষেই যে কোন সাধারণের চোখেই ধরা দিব। বেশীর ভাগ বহুতল ভবনই নির্মিত হচ্ছে যাতে রয়েছে গাড়ী রাখার অপ্রতুল ব্যবস্থা। আবার এপ্যার্টমেন্ট হিসেবে অখ্যায়িত ভবনসমূহে আসা অতিথিদের জন্য ব্যবস্থা নেই কোন গাড়ী রাখার। অবশ্য অতিথিদের জন্য সুযোগ কোথাই যেখানে এপ্যার্টমেন্টে অবস্থানরতদের জন্যই গাড়ী রাখার সংকট। বেশীর ভাগ বহুতল ভবনেই এপ্যার্টমেন্টের তুলনায় গাড়ী রাখার ব্যবস্থা অনেক কম হয়ে থাকে। যার ফলে দেখা যায় অতিথিদেরকে বেশীর ভাগ সময়ই গাড়ী বাহিরে রেখেই ভিতরে প্রবেশ করতে হয়। এর ফলে এক দিকে এটি যেমন রাস্তায় যানজটের সৃষ্টে করছে আরেকদিকে গাড়ীর মালামাল চুরির ভয়ে মালিক থাকেন অতঙ্কিত। আবার দেখা যায় মার্কেট ও এপার্টমেন্টের সমাগম একই সাথে যার ফলে স্থানটি হয়ে পড়ে ব্যতিব্যস্ত। বাণিজ্যিক বা আবাসিক ভবন নির্মাণ সমস্যার বিষয় নয় কিন্তু পর্যাপ্ত পরিকল্পনার অভাব ও সমন্বয়হীনতার দরূণ তা সমস্যার উদ্ভব ঘটাচ্ছে। আপাতদৃষ্টিতে বড় বড় দালান এবং এতে থাকা মানুষগুলোকে যানজট বৃদ্ধির জন্য দায়ী করা হলেও আসল গলদটা নগরায়ন পরিকল্পনাতে। আবার গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠায় আমরা নিদিষ্ট কিছু এলাকার গন্ডি হতে বাহির হতে পারছি না। যার দরূণ এলাকাসমূহের উপর চাপ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। যে হারে মানুষ বাড়ছে সেই তুলনায় নগরের সম্প্রসারণ ঘটছে না। আয়তন বৃদ্ধি না হলেও জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে ঢাকা হারাচ্ছে ভারসাম্য স্বাভাবিক নাগরিক জীবন হচ্ছে ব্যহত। তাই শহরকে একমুখি না রেখে বিকেন্দ্রিকরনের পরিকল্পনা গ্রহণ আজ সময়ের দাবিতেই পরিণত হয়েছে। রাজধানীর প্রতি উন্নয়ন অব্যাহত না রেখে যদি বিকল্প শহরের সৃষ্টি করা যায় তবেই আবাসনের সমস্যা কিছুটা হলেও হ্রাস পাবে। কেননা মানুষ যদি নাগরিক সুবিধা গ্রামে বসেই ভোগ করতে পারে তবে সে কখনই শহরমুখি হবে না। এছাড়াও শহরে যত্রতত্র গড়ে ওঠা শিল্পকারখানা সমূহ যদি শহরের বাহিরে স্থানান্তর করা যায় তবে নাগরিকদের বসবাসের মান বৃদ্ধি পাবে। সার্বিক অর্থে সমগ্র দেশের উন্নয়ন পরিকল্পিতভাবে সাধিত হলে কোন একটি বিশেষ এলাকার উপর চাপ অব্যাহত থাকবে না। নির্বিচারে আবাসন প্রকল্প ও শিল্প এলাকা গড়ে ওঠায় নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে ও দূষিত হয়ে পড়ছে। এর প্রভাবে ফসল উত্পাদনের পরিমাণও কমছে। যে কেউ চাইলেই নদী থেকে বালু তুলতে পারে না ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়েল ১৯৯০ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকেরা বালুমহাল চিহ্নিত করেন এবং সর্বোচ্চ দরপত্র প্রদানকারীর কাছে এক বছরের জন্য ইজারা দেন। ইজারায় বিভিন্ন শর্ত মেনে চলতে হয় যেমন—কত গভীর থেকে বালু উত্তোলন করা যাবে, নদীর জনপদে যেন ভাঙনের সৃষ্টি না হয়, নদীর নাব্যতা প্রভাবিত না হয়, নৌযান চলাচলে যেন বাধা সৃষ্টি না হয় ইত্যাদি। অথচ অপরিকল্পিতভাবে এসব কর্মকান্ড করার ফলে হালকা বৃষ্টি হলেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। যে হারে ভবন নির্মিত হচ্ছে সেই হারে পানি বা পয়ঃ নিস্কাশন ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। মূলত পানি প্রবাহের গতি ঠিক রাখার নিমিত্তে যে হারে আবাসন গড়ে উঠছে তার সাথে একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ পরিকল্পনা গ্রহণ বাঞ্চনীয় হয়ে পড়েছে। অপরিকল্পিত আবাসনের ফলে একদিকে যেমন সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা ঠিক তেমনি পানিকে করছে দূষণ। যত্রতত্র বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থার দ্বারা নিরাপদ পানি এখন অনেকটা অপ্রতুল হয়ে পড়েছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃষ্টির পানি প্রবাহ, খাল, লেক, জলাধার, খেলার মাঠ, গাছপালা, কৃষি জমি এবং পাহাড় রক্ষায় সরকার ও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মধ্যে মারাত্নক সমন্বয়হীনতার অভাবের জন্যই এসব ঘটনা ঘটছে। আসলে অস্বাভাবিক বেড়ে ওঠার মাঝে স্বাভাবিক আচরণ প্রত্যাশা করাটাই তো অমূলক। স্বাভাবিক দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যালোচনা করলে একটি দেশের অন্তত ২৫% ভাগ বনায়ন বা সবুজ গাছপালার উপস্থিতি কাম্য। অথচ বর্তমানে যে গতিতে আমরা চলছি তাতে আগামী কয়েক বছর পর শহরের বুকে গাছপালা খুঁজে পাওয়াটাই কষ্টসাধ্য ব্যাপারে পরিণত হয়ে পড়বে। কেবল ভবনের পর ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে অথচ সুন্দর মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশের কথা বিবেচনা যেন এখানে বিবেচ্য বিষয় নহে। একটি বাড়ি নির্মাণকে কেন্দ্র করে হয়ত কেটে ফেলা হচ্ছে অগনিত গাছ কিন্তু এই ঘাটতি পূরণের যথপোযুক্ত কোন পদক্ষেপ গৃহিত হচ্ছে না। আবাসনের বিষয়টি এমন একটি বিষয় যার সাথে অনেকগুলো বিষয় ওতপ্রোতভাবে জড়িত তাই এগুলোকে বাদ দিয়ে কেবল আবাসনের সমস্যা সমাধান সম্ভব নহে। আবার জমি ব্যবসায়ের নামে অনেক ব্যবসায়ী পাহাড় কেটে তৈরী করছে বাসযোগ্য জমি যার দ্বারাও বিনিষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এর দ্বারা কেবল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই বিনিষ্ট হচ্ছে বরং প্রাকৃতিক ভারসাম্যও মারাত্নকভাবে হুমকির সম্মুক্ষিণ হচ্ছে। এছাড়া তো রয়েছে পাহাড় ধসের মতো মর্মান্তিক ঘটনা। সাম্প্রতিকভাবে সবচেয়ে লক্ষ্যণীয় বিষয় হল প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের প্রচন্ড রকম তীব্রতা। এর ফলশ্রুতিতে বারে বারে ভূমিকম্পের ভয়াবহ আঘাত হানছে আমাদের এই দেশে। অথচ দেশের বেশীর ভাগ ভবন পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে তা ভূমিকম্প সহায়ক করেই গড়ে তোলা হয়নি। যার কারণে বেশীর ভাগ ভবন মারাত্নক ঝুঁকির দায় নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে দেশের বুক জুড়ে। মানুষের মৌলিক চাহিদার সঙ্গে সম্পর্কিত হলেও আবাসন খাত বিকাশে সরকারী উদ্যোগ খুবই সামান্য যার দরুণ দিনে দিনে সমস্যা জটিল আকার ধারণ করছে। আবাসনের ব্যবস্থা সরকারিভাবে যেখানে সম্ভব হচ্ছে না, তখন বেসরকারি খাতকেও নানাভাবে করা হচ্ছে নিরুৎসাহিত। বেসরকারী উদ্যোক্তারা এই সংকট নিরসনে উদ্যোগী হলেও পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাবে তা বারে বারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। বিশেষত সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাবই আবাসন সমস্যা সৃষ্টির জন্য সবচেয়ে বেশী দায়ী। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ও অন্যান্য সরকারি অফিস সমূহ ও কর্তৃপক্ষসমূহের কারণে কাজের গতি ত্বরাণ্বিত হওয়ার পরিবর্তে হচ্ছে বাধাগ্রস্ত। একটি প্ল্যান পাস করাতে ক্ষেত্রবিশেষে লাখ থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন আইন-কানুন দিয়ে আবাসন খাতের অগ্রগতিকে রাখা হয়েছে থামিয়ে। বর্তমান সময়ে বসবাসে অনুপযোগী শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা অন্যতম। মানুষের জন্য নেই কোন স্বাস্থ্যসম্মত ও প্রাকৃতিক বান্ধব আবাসন ব্যবস্থা। এবং এর মূল কারণ হল ৪০ বছরেও দেশে কার্যকরী কোনো ভূমি নীতিমালা হয়নি আর যা আছে তার কার্যকারীতা পরিলক্ষিত হওয়া দুষ্কর। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও লক্ষ্যণীয় বিষয় হল বিভিন্ন কারণে ঢাকায় বসবাস করলেও বসবাসরতদের ৮০ ভাগেরই নেই নিজের বাড়ি-ঘর। আর সহায়-সম্বলহীন ২৫-৩০ ভাগ মানুষ বস্তিতে মানবেতর জীবনযাপন করে। আর রাস্তায় ঘুমায় প্রায় লখ্যাধিক মানুষ যা সত্যিই অনাকাঙ্খিত। এই ক্ষেত্রে ব্যাংকসমূহ ইচ্ছে করলেই অনেক দায়িত্ববানের পরিচয় দিতে পারে। কিন্তু ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদের হার একদিকে আবাসন উদ্যোক্তাদেরকে যেভাবে করছে অনুৎসাহিত ঠিক তেমনিভাবে জমি ও এপ্যার্টমেন্ট ক্রেতাদেরকে করছে হতাশ। এছাড়া বাড়ী ভাড়া যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে তেমনি বৃদ্ধি পাচ্ছে জমির ও এপার্টমেন্টের দাম। সুতরাং যাদের নিজস্ব গৃহ নেই তাদের স্বপ্ন কি স্বপ্নই থেকে যাবে। কিন্তু তা তো কখনোই হতে পারে না কেননা যেখানে সমস্যা সেখানেই লুকিয়ে রয়েছে সম্ভাবনা। সমস্যার মাঝে বেঁচে থাকতে চাইনা তাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত কাঙ্খিত সমাধান। প্রতিটি মানুষের কাছে নিজস্ব আবাসন নিশ্চিত করা হয়ত এত সহজতর ব্যাপার নয়। তবে স্বপ্ন দেখার শুরুটা তো করতে পারি। স্বপ্ন দেখাই যদি শুরু না করি তবে বাস্তবে তা ধরা দিবে কোথা থেকে। মূলত দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পিত নগর ব্যবস্থার উদ্যোগ নেয়ার মাধ্যমে জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করা গেলে আবাসন সমস্যা সমাধান কেবল সময়ের ব্যাপারে পরিগণিত হবে। প্রতিটি পরিবারের জন্য একটি নিরাপদ বাসস্থান নিশ্চিত করার নিমিত্তে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। আবাসনের জমি কমে যাচ্ছে গড়ে উঠছে অপরিকল্পিত নগর তাই ব্যস্ত শহরসমূহের বাইরে গড়ে তুলতে হবে বাসযোগ্য আবাসস্থল। বর্তমানে রাজধানীর উপর মানুষের প্রচন্ড চাপ বাড়ছে যার কারণে ইহা বসবাস অযোগ্য হয়ে পড়ছে। অথচ রাজধানীর অনেক কর্মকান্ড বিকেন্দ্রিকরণের মাধ্যমে তা সারা দেশ জুড়ে ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব। এর ফলে একদিকে রাজধানীর উপর যেমন চাপ কমবে তেমনি অনুন্নত এলাকা হিসেবেখ্যাত স্থানসমূহ অগ্রসর হতে শুরু করবে উন্নয়নের পথে। সারা দেশব্যাপী নাগরিক সুবিধা ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হলে এলাকাভিত্তিক বসবাসের প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে। আর এর দ্বারা আবাসনের যে সমস্যা দেশব্যাপী এখন বিরাজমান তা অনেকাংশে হ্রাস পাবে। গৃহায়ন শুধুমাত্র আজ কেবলমাত্র গৃহের সংস্থান করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। বাসস্থানের সংস্থান করার পাশাপাশি ইহা এখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে অর্থনৈতিক অঙ্গনে। বিশেষত গৃহায়ন এখন পরিণত হয়েছে শিল্পে। এই শিল্পটি প্রচুর কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অরেকটি সমস্যা নিরসনে নিরলস কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এবং এই শিল্পটি এতই জনপ্রিয়তা লাভ করেছে যে অনেকেই আজ এই শিল্পের উদ্যোক্তা হিসেবে নাম লিখিয়ে গর্বিতবোধ করছেন। একদিকে ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে খাতটি যেমন লাভজনক ঠিক তেমনি দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধানে ভূমিকা রাখার সুযোগ। দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে আবাসন খাতে বিনিয়োগই সবচেয়ে লাভজনক এবং নিরাপদ আর এর জন্য অনেকে এই খাতটিকে নিরাপদ বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তাই কিছুটা সঞ্চয়ের মাধ্যমে মানুষ এখন ঝুঁকছেন এপার্টমেন্ট ক্রয়ের দিকে যেহেতু জমি ক্রয় মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জন্য এখন কল্পনাবিলাস হিসেবে মনে করা হয়। এপার্টমেন্ট কেনার প্রতিযোগিতায় নেমেছে সাধারণ মধ্যবিত্ত শ্রেণী যা একটি ইতিবাচক দিক হিসেবে বিবেচ্য। এবং এই বিষয়টি প্রমাণ করে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত ও সামাজিক উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে। ভূমি মালিকরাও যাদের সামর্থ্য বাড়ি করার মত নয় বা বাড়ি করার ঝামেলায় যেতে চান না তাদের জন্য এটি একটি অন্যতম ব্যবস্থা। যেখানে বাড়ির একক মালিক হওয়ার কথা সেখানে গড়ে উঠছে বহু মালিকানা সম্পন্ন দালানকোঠা। এর সুবাদে একই স্থানে অনেক মানুষের আবাসন যেমনি হচ্ছে ঠিক তেমনি জায়গাটির সঠিক ব্যবহারও নিশ্চিত সম্ভব হচ্ছে। আর দেশের স্বল্প জায়গার মধ্যে সকলের জন্য গৃহের সংস্থান করার এর চেয়ে আর কোন সহজ বা বিকল্প ব্যবস্থাও নেই। বর্তমানে কেবল একটি এপার্টমেন্ট কেনার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি বহুবিদ সুবিধার সুযোগ পাচ্ছেন যা তার একক মালিকানায় হয়ত সম্ভব নাও হতে পারত। পরিকল্পিতভাবে কার্যক্রম না চালালে আর কিছুদিন পরে চাষের জন্যে জমি পাওয়াই দূরহ হয়ে পড়বে তাই সময়ের মধ্যেই কাঙ্খিত পদক্ষেপ কাম্য। কৃষিজমি বাঁচিয়ে মানুষের বাসস্থান নিশ্চিত করা ও পরিকল্পিত নগরায়নের স্বার্থে আবাসন শিল্পের সঙ্গে জড়িত সবাইকে সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে হবে। তবে এই ক্ষেত্রে সরকারকেই অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। আবাসনের সমাধানে গৃহায়ণ শিল্প যেভাবে ভূমিকা রাখছে তার সাথে কেবল প্রয়োজন নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব কথাটি যুক্ত করা। আর উক্ত কথা দুটি সংযোজনের দ্বারা গৃহায়ণ শিল্প তার অর্থনৈতিক খাতে পদক্ষেপের পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতাও পূরণ করতে সক্ষম হবে। শুধু ব্যবসাকেই প্রাধান্য দিলে হবে না এর মাধ্যমে সামাজিক কর্মকান্ডও পরিচালনা করতে হবে। পরিবেশের ক্ষতি সাধিত না করেও আবাসন পরিকল্পনা গৃহিত করার মাধ্যমেই আবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। সরকার অনেক বিষয়েই গুরুত্ব দিয়ে যাচ্ছে তবে মানুষের অন্ন, বস্ত্রের পরেই যে বিষয় তার প্রতি আশানুরুপ দৃষ্টি পরিলক্ষিত হচ্ছে না। অথচ সরকারের প্রথম ও প্রধান উদ্দেশ্যই হওয়া উচিত একটি পরিকল্পিত নগর গড়ে তোলা। সরকারী কর্মকান্ডের অংশ হিসেবে নগর কর্তৃপক্ষের উচিত নগরবাসীকে বহুতল ভবন নির্মাণে উৎসাহিত করা কেননা এখন স্বল্প পরিসরে নির্মিত করতে হবে অনেক আবাসস্থল। আবাসন সমস্যা নিরসনে অধিক আবাস নির্মাণের প্রতি অধিক মনযোগী হতে হবে। নকশা অনুমোদনের নামে রাজউকের হয়রানি ও ঘুষ-বাণিজ্য বন্ধ করে আবাসন শিল্পবান্ধব ভূমি নীতিমালা তৈরি করতে হবে। সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় সমস্যা পরিণত হতে পারে সম্ভাবনায় এবং তা অল্প সময়ের মধ্যে। সরকার সহযোগিতা করলে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্যও আবাসন প্রকল্প হাতে নেয়া সম্ভব। ছোট আকৃতির এপার্টমেন্ট নির্মাণের দ্বারা সরকারী পর্যায়েই উদ্যোগ নেয়া সম্ভব। মানুষের আয় বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে পারলে নিজেই তার আবাসন তৈরি করে নেবে। তাই প্রতিটি মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা গ্রহণ প্রয়োজন। তাছাড়া সরকার ইচ্ছা করলেই অযাচিতভাবে পড়ে থাকা খাস ও বেদখলি জমি বিক্রি অথবা উচ্চ ভবন নির্মাণে ব্যবহার করতে পারে। আবাসন সমস্যা সমাধানে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের আরো কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। কেননা সরকারের একার পক্ষে দেশের এত জটিল সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। কিন্তু সবাই মিলে সম্মিলিত প্রয়াস চালালে সহজতরভাবেই কাজটি সমাধা করা সম্ভব। ব্যাংকসমূহকে সহজ শর্তে ঋণদান ব্যবস্থাসহ আনুষঙ্গিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। এই ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের সামর্থ্যের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। কেননা স্বনির্ভর দেশ গড়তে হলে সকলকেই নিজ নিজ ক্ষেত্র থেকে স্বাবলম্বী হিসেবে আত্নপ্রকাশ করতে হবে। যাদের একখন্ড জমি আছে তারা কোনরকম একটি বাড়ি তৈরী করে বাজিমাত মনে না করে দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও আবাসন সমস্যা নিরসনে অধিক গৃহ নির্মানের দিকে নজর দিবেন। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সরকারের স্থায়ী দীর্ঘ মেয়াদী ইচ্ছা ও উন্নয়ন নীতি এই সমস্যা নিরসনের অনন্য ভূমিকা রাখবে। মূলত সব কথার শেষ কথা হল, সকল কর্ম সম্পাদন বা বাস্তবায়নের জন্য মৌখম ও অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে স্বদিচ্ছা। আবাসনের সমস্যা অত্যন্ত প্রকট এবং তীব্র, যার সমাধানের জন্য প্রয়োজন একটি বলিষ্ট পদক্ষেপ এবং সৌন্দর্যমন্ডিত দূরদর্শী চিন্তা চেতনা।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ১১:৩৭
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×