somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

বিএম বরকতউল্লাহ
পড়াশোনা করি। লেখালেখি করি। চাকরি করি। লেখালেখি করে পেয়েছি ৩টি পুরস্কার। জাতিসংঘের (ইউনিসেফ) মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১ ও ২০১৬ প্রথম পুরস্কার। জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্পগ্রন্থের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

কাপড় বিতরণ সভা

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কাপড় বিতরণ অনুষ্ঠান হচ্ছে। যত না কাপড় তারচে' বেশি অনুষ্ঠান।
একটা বড় সামিয়ানার তলে ক’জন নেতা ব্যস্ত হয়ে ঘোরাফেরা করছে। একটি টেবিলে শীতের জামার স্তূপ। তাদের চারপাশে ব্যস্ত ক্যামেরাম্যান।
তাদের সামনে যবুথবু বসে আছে গরিব দুখী নারী-পুরুষেরা। তারা শীতে কাঁপছে।
অনেকক্ষণ ধরে বসে আছেন তারা।
‘এই, বাবারা তোমরা কাপড় দিবা কোন সোময়। ঠাণ্ডায় শইল্যে কারফি উঠছে।' এক দুর্বল মহিলা বলল।
নেতারা দুহাত বাড়িয়ে বারবার বলছে, ‘শান্ত হোন, আপনারা অধৈর্য হবেন না, কাপড় পাবেন সবাই। প্লিজ, আপনারা চুপ করে বসুন। বড় নেতা আসছেন। তাঁর হাত দিয়ে বিতরণ হবে কাপড়। আজ আপনারা বড় ভাগ্যবান।'

ঠক্ঠক্ করে কাঁপতে কাঁপতে দুর্বল বুড়ি সামিয়ানার তলে গিয়ে বলল, ‘বাবারা আর টিকতে পারছি না। একটা কাপড় দিলে গায়ে দিয়ে বসি।'
নেতাটি বলল, আরে বলেন কি, বড় নেতার হাতে কাপড় নিবেন। এই সুযোগ পাবেন কই?'
বুড়ি বলল, কেন আপনেগর হাত নাই। দিলে দেন না দিলে যাইগা। ঠাণ্ডায় শইল জইম্যা যাইতাছেগা।'
মাথা কাৎ করে দুই আঙুল এক করে নেতাটি বললেন, প্লিজ আর একটু...।

দুই.
বড় নেতা এলেন। তিনি দামি গাড়ি থেকে নামলেন। নেতা ও কর্মী পরিবেষ্টিত হয়ে সামিয়ানার তলে এলেন। কর্মী ও ক্যামেরাম্যানদের ব্যস্ত ছোটাছুটি। অসংখ্য কণ্ঠে দৃপ্ত শ্লোগান উঠল ‘আমার ভাই, তোমার ভাই, জনদরদী ... ভাই’।
শ্লোগান আর হাততালির শব্দে গোটা এলাকা কেঁপে উঠছে। এই পবিত্র আনন্দ উৎসবের ভেতর দিয়ে কাপড় বিতরণ সভার কাজ শুরু হয়ে গেল।

বুড়ির ডাক পড়লো। কর্মীরা সমাদর করে যত্নের সাথে বুড়িকে সামনে নিয়ে এলো।
বুড়িকে নানা ঢঙ্গে দাঁড়াতে বলল ক্যামেরাম্যানরা।
শীতে প্রায় জমে গেছে বুড়ি। নেতার হাতে একজন একটা কাপড় তুলে দিলো। ক্যামেরার সুবিধা মতো করে কয়েকজন বুড়িকে ধরে নানাভাবে দাঁড় করালেন। নেতা কাপড় হাতে নিয়ে বুড়ির দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন। বুড়ি কাপড় নিয়ে চলে আসতে চায়। নেতা কাপড় ছাড়ে না।
দুর্বল বুড়ি কাপড় ধরে ভিড়ের চাপে বলে উঠল, ‘মরণ, ইত্তা কী করতাছেন আফনেরা, কাপড় ছাড়েন না কেরে।'
নেতা কান পর্যন্ত লম্বা হাসি মেলে ধরে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আছেন। আর ডান-বাম থেকে ক’জন কর্মী এসে বুড়িকে ঘিরে ধরে বলছে, চাচি হাসেন, হাসেন, ফটু উঠতাছে, হাসেন।'
চাচি একটু হাসি দিয়ে কাপড়টা টেনে ধরে বলে, ‘এলা ছাড়েন।'
নেতা বলল, রাখেন, রাখেন। আপনার হাসিটা চিমসে গেছে চাচি। বড় নেতার সাথে ফটো উঠতাছে, বড় করে একটা হাসি দিয়া রাখেন, কালকে পত্রিকায় ছবি ছাপবে, আপনি দেখবেন, সারা দুনিয়া দেখবে।'
চাচি ভিড়ের চাপে অস্থির। রেগে মেগে বললেন, ‘আমার গায়ে এত তেল নাই যে হাসি দিয়ে থাকুম। বড় হাসি দিমু ক্যামনে, ঠোঁট ফাইট্টা বাঙ্গি হইয়া আছে। হের পরেও হাসি দিছি হেই কোন সোময়। খালি আজাইড়া কথা। এতখন আবার হাসি মাইরা থাহে ক্যামনে?'
একজন বলল, দেখছেন না, নেতা যে ক্যামনে হাসি মাইরে আছে, আপনিও এভাবে বড় কইরা হাসেন, ফটো উঠতাছে।'
চাচি অনেক কষ্ট করে আবার হাসি মেলে ধরলেন।
অসহায় দুর্বল ও ক্ষীণকায় বুড়িকে কাপড় বিতরণ করা হচ্ছে এমন ছবি স্মরণীয় করে রাখার জন্য নেতার পেছনে ডানে বামে ছবি তোলার জন্য প্রচণ্ড ভিড়। বুড়িকে ঘিরে ধরে কাপড়ে হাত লাগিয়ে নেতা-কর্মীরা একের পর এক ছবি তোলার জন্য পোজ দিচ্ছে। আর ক্যামেরাম্যান রেডি, রেডি, ওকে, ওকে বলছে। সবার মুখে লম্বা হাসি। ক্যামেরা জ্বলে উঠছে। ক্লিক্ ক্লিক্ ক্লিক্।

তিন.
হঠাৎ ক্যামেরার আলো নিভে গেল। ব্যাপার কী!
বুড়ি কই? বুড়ি কই?
ডানে বামে কোথাও বুড়ি নেই।
অনুষ্ঠান শেষ হলো। নেতারা কাপড় বিতরণ সভা শেষ করে হাসিমুখে বাড়ি ফিরছেন।
তাঁর বাড়ি ফেরা হলো না। পদতলে পিষ্ট হয়ে পড়ে রইল অসহায় বুড়ি।
ছবি: নেট থেকে সংগৃহীত
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:১৩
১২টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×