somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চাঁদে হাঁটা নবম ব্যক্তিঃ ক্যাপ্টেন জন ইয়াং

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৩:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অ্যাপোলো- ১০ মিশনের সময় তোলাঃ ক্যাপ্টেন জন ইয়াং

১৯৬৯ সালের অ্যাপোলো-১১ মিশনে নীল আর্মস্ট্রং ও বাজ অলড্রিন এর চাঁদে অবতরণ নিয়ে নানান মুখরোচক গল্প ও বিতর্ক আমাদের মাঝে প্রচলিত আছে। এই বিতার্কিদের খুব বড়সড় একটা অংশ এইটা ফোকাসেই আনেন না যে, এই দু'জন ছাড়াও '৬৯ পরবর্তী ৩ বছরে আরও পাঁচটি এপোলো মিশনে উপরের দুইজন ছাড়াও আরও ১০জন ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি চাঁদের বুকে পা রেখেছেন এবং লুনার রোভারও চালিয়েছেন।

ঠিক তেমন একজন ব্যক্তি হলেন অবসরপ্রাপ্ত আমেরিকান নভোচারী ক্যাপ্টেন জন ইয়াং। তিনি নবম ব্যক্তি হিসেবে ১৯৭২ সালের ২১শে এপ্রিল চাঁদে অবতরণ করেন। তিনদিন চাঁদের বুক চষে তিনি এবং তাঁর টীম ৯৫.৭১ কে.জি. নমুনা সংগ্রহ করে ২৪শে এপ্রিল তবেই চাঁদের বুক ত্যাগ করে চাঁদের কক্ষপথে ফিরে আসেন। অ্যাপোলো-১৬ এর এই মিশনের তিনি মিশন কমান্ডার ছিলেন। এই মহান নভোচারী ১৯৩০ সালের ২৪শে সেপ্টেম্বর ক্যালিফর্নিয়ার সান-ফ্রানসিসকোতে জন্মগ্রহন করেন । গতকাল ছিল তাঁর ৮৬তম জন্মবার্ষিকী। তাঁর দীর্ঘ বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে তিনি ছিলেন একাধারে নৌ-অফিসার, নভোচারী, বিমান প্রশিক্ষক এবং এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার।

তাঁর নামের আগে ঘটা করে "মহান" বলার কিঞ্চিৎ রহস্য আছে। কারণ তিনি অনেক দিক থেকেই পৃথিবীর মানুষদের মাঝে প্রথম এবং একমাত্র!!

চলুন সংক্ষেপে তার ছোট্ট(?!) ক্যারিয়ার থেকে একটু ঢুঁ মেরে আসি।

নৌ-বাহিনীতে চাকরীর শেষভাগে এসে ক্যাপ্টেন জন ইয়াং, ১৯৬২ সালে নাসায় যোগ দেন। এ সময় তিনি "এস্ট্রোনাট গ্রুপ-২" তে ছিলেন, যেখানে নীল আর্মস্ট্রংও একই গ্রুপের অধীন ছিলেন।

পরবর্তীতে ইয়াং ১৯৬৫ সালে "প্রথম" মনুষ্যবাহী অভিযান "জেমিনাই মিশন"এ অংশ্ নেন এবং তার পরের বছরের "জেমিনাই মিশনের" কমান্ডার হন।

এবারও আরেকদিক থেকে তিনি "প্রথম" হলেন। এবার তিনি "প্রথম স্পেস স্মাগলার" হিসেবে অভিযুক্ত হলেন!! মজার ঘটনা হল, সেবার তিনি ভুট্টা আর মাংসের তৈরী একটা স্যান্ডুইচ স্মাগলিং করেছিলেন। এজন্য অবশ্য তাকে কম মূল্য দিতে হয়নি। ফলস্বরূপ পরবর্তী কয়েকটি ফ্লাইটে তিনি আর অংশ নিতে পারেননি।

নাসা অবশ্য চতুর এই পাইলটকে নিয়ে কি করা যায় যে ব্যাপারে খুবই চিন্তিত ছিল। কারণ তিনি অন্যদের তুলনায় ছিলেন অনেক মেধাবী এবং সাহসী। তাই তাঁকে আবারও স্পেস প্রোগ্রামের আওতায় আনা হল, তবে কিছুদিন পর।

এবার ১৯৬৯ সালে অ্যাপোলো-১০ মিশনে তিনি অংশ নেন এবং "প্রথম" ব্যক্তি হিসেবে একা চাঁদের কক্ষপথ আবর্তন করেন। ২৬শে মে, ১৯৬৯ সালে পৃথিবীতে ফেরার সময় ইয়াং এর অ্যাপোলো-১০ অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে (ঘন্টায় প্রায় ৪০ হাজার কিলোমিটার বেগে) ছুটে চলে আরও একটি রেকর্ড করে। এবং এটাই ছিল মনুষ্যবাহী যেকোনো যানের পক্ষে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে ছুটে চলা।

পরবর্তীতে ইয়াং, ১৯৭২ সালের অ্যাপোলো-১৬ মিশনে অংশ নেন। এ সময় তিনি মিশন কমান্ডার ছিলেন। তিনি এবং তাঁর দল ১৯ শে এপ্রিল চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করেন এবং ২১শে এপ্রিল তিনি নবম ব্যক্তি হিসেবে চাঁদে অবতরণ করেন। এরই সাথে এবারই প্রথমবারের মত তিনি চাঁদের বুকে পা রাখেন। ২১শে এপ্রিল থেকে ২২শে এপ্রিল পর্যন্ত তিনি এবং ডিউক  চাঁদের বুকে ৭১ ঘন্টা থাকেন।

এর মাঝে প্রথম দিন ৭ঘন্টা ১১মিনিট ২ সেকেন্ড , দ্বিতীয় দিন ৭ঘন্টা ২৩ মিনিট ৯ সেকেন্ড এবং তৃতীয় দিন ৫ ঘণ্টা ৪০ মিনিট ৩ সেকেন্ড সহ তিন দিনে মোট ২০ ঘন্টা ১৪ মিনিট ১৪ সেকেন্ড তাঁরা চাঁদের বুকে হেঁটে বেড়ান। এসময় ইয়াং চাঁদের বুকে "লুনার রোভিং ভেহিকল" নামক চন্দ্রযানও চালান। এই চন্দ্রযান দিয়ে তিনি চাঁদের বুকে ২৬.৭ কিলোমিটার পর্যন্ত ঘুরেও বেড়ান। চাঁদ থেকে ফেরার সময় তিনি এবং তার সহযোগী ডিউক মিলে পৃথিবীর জন্য ৯৫.৭১ কে.জি. চাঁদের নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন।

ক্যাপ্টেন জন ইয়াং সেই তিনজন সৌভাগ্যবান ব্যক্তির মাঝে একজন , যাঁরা দুবারের মত চাঁদ-ভ্রমণ(?) করেন। 

পরবর্তীতে ইয়াং, ১৯৮১ সালে "স্পেস শাটল"এর প্রথম যাত্রা সহ দুইবার "স্পেস শাটল ফ্লাইট"এর কমান্ডার ছিলেন।

তিনি ১৯৭৪ থেকে ১৯৮৭ সাল্ পর্যন্ত "এস্ট্রোনাট অফিস"এর প্রধান ছিলেন।

ইয়াং, ২০০৪ সালে নাসা থেকে অবসর গ্রহণ করেন। 
দীর্ঘ ৪২ বছর নাসাতে কর্মরত অবস্থায় তিনি ছয়টি স্পেস ফ্লাইট এ অংশ নেন এবং তিনিই "একমাত্র" নভোচারী যিনি এত্তবছর যাবত নাসাতে কর্মরত ছিলেন সক্রিয় ভাবে।

তিনি আরও অনেকদিক থেকেই একমাত্র! যেমন, তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যার, নভোচারী এবং কমান্ডার হিসেবে চারটি ভিন্ন ধরণের মহাকাশযান (১. গ্যামিনি, ২. এপোলো কমান্ড/সার্ভিস মডিউল, ৩. এপোলো লুনার মডিউল এবং ৪. স্পেস শাটল) চালানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে।

২০০৪ সালের ডিসেম্বরে নাসা থেকে অবসর নেয়া এই অদম্য সাহসী অ্যাস্ট্রোনাট ২০১২ সালে তাঁর আত্মজীবনীমূলক বই "ফরএভার ইয়ং" প্রকাশ করেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৩:২৬
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×