শহরের বাইরে সুন্দর একটি জায়গা। ছিমছাম,শান্ত একটা নদী বয়ে যাচ্ছে পাশ দিয়ে, কৃত্তিম একটা ঝর্না এবং মস্ত এক রেইনট্রি। রেইনট্রিটার নিচে একটি সুন্দর ছাউনি। ছাউনির নিচে ভাঙাচোরা কাঠে বানানো পলিশ করা চারপেয়ে টেবিল। আর দুটো চেয়ার। বসে আছি। পাক্কা আধাঘন্টা। তুলি আসছে না। জানতাম এরকমই কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। গতকাল ফোনে কথা কাটাকাটি হয়েছে। ওর কথাতে বিরোধ করলেই এমনটা করে।
হঠাৎ এসে ঝুপ করে সামনের চেয়ারটাতে বসে পড়ল তুলি। তারপর চুপ। কোন কথা নেই। আমিও চুপ। কোন কথা বলবো না।
'কেমন লাগে? কেমন লাগে একা থাকতে?'
আমি চুপ।
'চুপ করে আছো কেন? অর্ডার কি আমি দিবো?'
-হুম, দাও।টাকা নাই, বিল দিতে পারবো না।
'লজ্জা করে না? শ্বশুরের টাকায় খাইতে আসছো! ঘরজামাই থাকার ইচ্ছা আছে?'
এরপর আর চুপ থাকা যায় না, কথাও বলা যায় না। কথাটা বলেই তুলি টিপে টিপে হাসতে লাগলো। রাগও করে থাকা যায় না। দুটো কফি আসলো। আমাকে কিছু না বলেই কফিতে চুমুক দেওয়া শুরু করে দিলো তুলি। 'শুরু করছি' এটাও তো মানুষ বলতে পারে! আমি আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে আছি। কফির মগটা তুলে চোখ বন্ধ করে খুব আলতো করে ছোট ছোট চুমুক দিয়ে যাচ্ছে। তাকিয়ে আছে বয়ে চলা শান্ত নদীটার দিকে। আমার সময় থেমে যাচ্ছে। আমি তাকাতে পারছি না। আমি নেশায় বুঁদ হয়ে যাচ্ছি। আমাকে এই নেশার ঘোর থেকে বাঁচিয়ে তোলার কেউ নেই; কেউ নেই।
'কফি তো ঠান্ডা হয়ে গেল! খাবে না?'
- ও হ্যাঁ! খাবো তো!
'আজকে সারাদিন রিক্সায় ঘুরবো। খবরদার, আজকে কিন্তু রিক্সার হুড তোলা যাবেনা! খবর আছে কিন্তু'
—আচ্ছা।
আমবাগানে যাবো। রিক্সার হুড দেয়া নেই। তুলি ভাল মেজাজে আছে।বাতাসে খোলা চুলগুলো উড়ছে। চুলগুলো উড়ে এসে আমার চোখে পড়ছে। কথায় কথায় কি নিদারুন শাসন করে মেয়েটা আমাকে! শাসন বললে ভুল বলা হবে। শোষন করে। কিন্তু প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে এরকম শোষন করার মত একটা মানুষ থাকা চাই।
ফেসবুক লিংক- Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১:৩৯