somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার 'মোনালিসা'

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবি আঁকার জন্য একটা নিরিবিলি পরিবেশ দরকার। আমার অ্যাপার্টমেন্টটা ছবি আঁকার জন্য আদর্শ বলা চলে। চার দেয়ালে কম করে হলেও বিশ পঁচিশটা ছবি ঝুলছে। মেয়েদের ছবি। কেনটাতে কেউ হাসছে, মন খারাপ করে আছে ,গান গাওয়ার ঢঙে কিংবা কেউ আবার ভাবুক। সবগুলোই হাতে আঁকা। কিন্তু আমি কোনদিন আঁকতে চেষ্টা করিনি। আমার কাছে মনে হয় আমার ছবি আঁকার তত্ত্বীয় জ্ঞান শূন্যের নিচে। আর ব্যবহারিক জ্ঞান তো নেই ই। আমি ছবি সংগ্রহ করি। ঘরের দেয়ালে টানানো ছবিগুলোকে প্রতিদিন দেখি, হাত বুলোই, ওদের নিয়ে ভাবি। সৃষ্টিকর্তা নারীকে যত সুন্দর করে বানিয়েছে, তার চেয়েও সুন্দর কিছুর স্রষ্টা এই ছবি আঁকিয়েরা। তবে উপরে থেকে, নিচ থেকে আমার কম জ্ঞানে যাধরে তা হল ছবি আঁকতে হলে ছবির ভেতরে ঢুকতে হয়। ছবির ভেতরে ঢোকা মানে একটা মানুষের মনের গভীরে যাওয়া। মানুষটার ভাল লাগা, মন্দ লাগা, পছন্দ-অপছন্দ সবকিছুর উপর অনিন্দ্যসসুন্দর একটা দখল নিয়ে নেওয়া। মোনালিসার যে ছবিটা আছে আমি তো ওটার রহস্য এখনও ভেদ করতে পারি না। লিওনার্দো তো একটু মন খারাপ করা একটি মেয়েও আঁকতে পারতো। কিংবা অট্রহাস্য এক তরুনিকে তুলে আনতে পারতো। কিন্তু ওই রহস্যময় হাসিটার জন্যই ছবিটা মোনালিসা।

ছোট মাথায় বেশি কিছু কাজ করলে সেটা জগাখিচুড়ি হয়ে যায়। আমিও একটি 'মোনালিসা'র ছবি আঁকতে চাই। কিন্তু তা হবে একান্তই আমার। সেখানে লিওনার্দোর কোন ভাগ নেই। সিগারেটে মুখে মেয়েদেরকে একদম অন্যরকম দেখায়। প্রচলিত ধারনার বাইরে গিয়ে সিগারেট ফুঁকে ফুঁসফুঁস নষ্ট করা মেয়েরা আমার কাছে অনেক আকর্ষনীয়। এই মেয়েগুলো অনেক শক্ত মনের অধিকারী হয়। ঘন্টার পর ঘন্টা আয়নায় দাঁড়িয়ে থেকে নিজের দেহের সাইজ মেপে বড় হয় না এরা। ঠোঁট কালো করে সিগারেট খেয়ে এরা অট্রহাস্য করে। দুনিয়াকে মধ্যমাঙ্গুলি দেখিয়ে যখন এক একেকটা টান দেয় সিগারেটে, আমার ভাললাগার পারদটা উপরে উঠতে থাকে। আইডিয়া একটা পাওয়া গেলো। সিগারেট! এবার সিগারেট ধারনের জন্য দুটো ঠোঁট দরকার। প্রচলিত সাহিত্যের সদ্য প্রস্ফুটিত গোলাপের মত গোলাপি ঠোঁটের চেয়ে আমার কাছে পাতলা কালচে লাল ঠোঁটই ভাল লাগে। আমি সাহিত্যিকদের মত ঠোঁটের বর্ননা করতে পারি না। আমি নিজের দু'ঠোঁটের চাহিদা মেটানোর থেকে সিগারেটধারী ঠোঁটগুলোর দিয়ে রহস্য নিয়ে তাকাতে চাই। নিকোটিন ফুকে ঠোঁট কালো হবে, কিন্তু আফসোস থাকবে না। আঁকা শুরু করেছি আগেই। হাত কাঁপছে। মেয়েদের ছবি আঁকতে হলে দারুন সাহসী হতে হয়।

সুন্দরী মেয়েদের নাক নাকি একটু চিকন ও লম্বা হয়। তবে নাক নিয়ে একটু আধটু গবেষনা আমার করা আছে। মেয়েটা সিগারেটে একটু একটু করে টান দিচ্ছে, আর নাক দিয়ে ধোঁয়া অল্প করে বেরুচ্ছে। বোঝা যাচ্ছে মেয়েটা সিগারেট খাওয়ায় একেবারে প্রফেশনাল পর্যায়ে যায় নি। নাকটা প্রচলিত সুন্দরী মেয়েদের মত এতটা লম্বা হওয়া যাবে না। বরঞ্চ জাপানি মেয়েদের মতো হোক। দেরিতে দেখা করতে আসলে প্রত্যাশিতভাবে নাক ফুলোবে। আমি নাক টিপে দিয়ে বলবো,'নাকটা একটু চিকন হতে পারলোনা?'

এবার চোখের দিকে নজর দেয়ার পালা। 'চোখ যে মনের কথা বলে' কিন্তু আমার আঁকায় চোখটা পরে কেন? কার চোখটা ভাল সময় দিয়ে আঁকতে হবে। ছোটবলায় টানা চোখওয়ালা মেয়েদের প্রতি এক বিশেষ ধরনের দুর্বলতা ছিল। চোখের পিউপিল হবে নীল রঙের মুক্তোর মত। আমি আমার প্রতিচ্ছবি আমার 'মোনালিসা'র চোখে দেখতে পাবো। কিন্তু বড় হওয়ার সাথে সাথে ওই নীল চোখের আগ্রহ কমে গেছে। চোখ হবে কাজল-কালো, দু'চোখে থাকবে আবেদন; একটু ভালবাসা পাওয়ার আবেদন!

মানুষে মানুষে বিভেদ করার মন নিয়ে ভালবাসা যায় না। আমার 'মোনালিসা'র চুলগুলো হবে কোকড়ানো। তেল দিয়ে ভালভাবে চিরুনি দিয়ে আচড়ানো ভদ্র মেয়ে হবে না মোনালিসা। চোখ এবং ভ্রুর সাথে সামঞ্জস্যতায় বানানো প্রসস্ত কপাল ও আফ্রিকান কৃষ্ঞসুন্দরীদের মত চুল থাকবে। তেলের অভাবে চুলগুলোর কোমলতা চলে গেলে। হালকা লাল হয়ে গেছে। কিন্তু সে জন্য মনে থাকবে না আফসোস।
আর গায়ের চামড়া?.... কেউ কি কালো চামড়ার মেয়েদের কখনো ভালবেসেছে? কিংবা সেই মেয়েদের যাদের দেখলে আমরা পাঁচ কদম দূরে যাই 'ধবলরোগী' বলে! তাই আমার মোনালিসাকে কোন রঙে বেঁধে রাখবো না। সিম্পল স্কেচে আঁকছি। চুলগুলো বাতাসে উড়ছে। কপালে কয়েকটা ভাঁজ পড়েছে। নাকটা বাতাস নিচ্ছে, আবার ছাড়ছে। ঠোঁট দুটোতে লেগে আছে সিগারেট। এইতো আমার 'মোনালিসা'।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:৩৩
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×