somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্থান পেলে ইতিহাসের কালো তালিকায়

০৫ ই জুন, ২০১০ দুপুর ১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মূহুর্তের মধ্যে রাক্ষুষে মৃত্যু এসে কেড়ে নিল পুরানো ঢাকার নিমতলীর শতাধিক মানুষের মূল্যবান জীবন!... আগুনের লেলিহান শিখায় ভর করে আসা মরণের তীব্র যন্ত্রণার কাছে পরাজিত হলো নানা বয়েসের ১১৭ জন মানুষ... হায় রে!!!

জীবন আমাদের সবার কত না প্রিয়... ওই চরম মৃত্যুময় বিপদের মাঝেও ওরা সবাই বাচতে চেয়েছিল... শেষবারের মত 'আল্লাহ-ঈশ্বর-ভগবান-গোড'... এই মহাশক্তি'র নামগুলো তাদের মুখে হয়তো উচ্চারিত হলেছিল অসংখ্যবার... কিন্তু তারপরও ওই মানুষগুলো এতটুকু পরিত্রাণ পায়নি... তাদের চরম বিপদ কেটে যায়নি একমূহুর্তে... বরং মৃত্যু এসে এখানে চরম নিষ্ঠুরতার প্রমাণ দিয়ে গেল...জাতির জন্য '৩ জুন ২০১০, বৃহস্পতিবার' দিন স্থান পেলে ইতিহাসের কালো তালিকায়।...

দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রধান শিরোনাম- ‌'সব জ্বলেপুড়ে ছারখার'। এই প্রতিবেদন থেকে দু'টি ঘটনা তুলে ধরছি :
নিমতলীতে গিয়ে দেখা যায়, বুক চাপড়ে হাহাকার করছে আগুনের সূত্রপাত যে ভবন থেকে, সেই বাড়ির তিন মালিক তিন ভাই- গুলজার, দিদার আর ফারুক। এই তিন সহোদরের বংশের সব প্রদীপ এক ফুৎকারে নিভে গেছে। প্রহসনের মতো বেঁচে আছেন শুধু তাঁরা তিনজন। বারবার তাঁরা বিলাপ করে বলছেন- কী অপরাধ করেছিল নিষ্পাপ শিশুরা? নিমতলীর নবাব কাটরায় ৪৩/৩ নম্বর এই ভবনটির মালিক এই তিন ভাই গুলজার, সাবেক ফুটবল তারকা ফারুক আর দিদার। তাঁদের আটা, ময়দা, রাবারের গুদাম, মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশ বিক্রির দোকানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বড় ভাই গুলজার থাকেন পঞ্চম তলায়, মেজ ভাই ফারুক তৃতীয় তলায়, আর দিদার দ্বিতীয় তলায়। ঘটনার সময় ফারুক ছিলেন তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মোটর পার্টসের দোকানে। গুলজার আর দিদার গিয়েছিলেন মসজিদে নামাজ পড়তে। বিলাপ করতে করতে গুলজার কালের কণ্ঠকে জানান, আগুনে তাঁর স্ত্রী ইয়াসমিন মিনু, দুই ছেলে হৃদয় ও সৌরভ, ছোট ভাই ফারুকের স্ত্রী মাহমুদা রানী, মেয়ে আনিকা ও অংকিতা এবং আরেক ভাই দিদারের স্ত্রী শিল্পী, মেয়ে আদৃতা ও ছেলে ইমরান মারা গেছে। মারা গেছে তাঁদের মা সাবেরা বেগম, চাচি মনোয়ারা বেগম আর এক কাজের মেয়ে। আগুনের লেলিহান শিখা গ্রাস করে নিয়েছে তাঁদের পরিবারের ১২ জন সদস্যকে। ফারুক ও দিদার কান্না চেপে বলেন, তাঁদের বংশের প্রদীপ জ্বালানোর মতো আর কেউ-ই রইল না।

ঘটনার আরেক প্রত্যক্ষদর্শী ইকবাল হোসেন। পাশের ৫৭ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা তিনি। আরেক ভয়াবহ মৃত্যুর বর্ণনা দেন ইকবাল। তিনজনকে তাঁর চোখের সামনে পুড়ে মরতে দেখেন তিনি। বললেন, ঘটনার সময় ৪৩/৩ নম্বর বাড়ির নিচে মুদি দোকানে বসে ছিলেন মালিক রহিম মিয়া আর তাঁর আরেক কর্মচারী। এ সময় ছোট্ট এক শিশু ওই দোকানে কিছু কিনতে যায়। ঠিক এ সময়ই ঘটে বিস্ফোরণ। শিশুকে জাপটে ধরে কোলে তুলে নেন রহিম মিয়া। বন্ধ করে ফেলেন দোকানের শাটার। শেষ পর্যন্ত এই তিনজনকেই উদ্ধার করা হয় মৃত অবস্থায়। মৃত রহিম মিয়ার বুকেই জাপটে ছিল শিশুটির লাশ।...

এই চরম কঠিন শোক তাদের প্রিয়জন কীভাবে বইবে? বেচে যাওয়া স্বজন-প্রিয়জনহারা মানুষগুলোর কান্না-বুক ফাটা আর্তনাদের জল কতদিনের শুকাবে? তারা এখন কোথায় দিয়ে দাড়াবে? এইসব প্রশ্নের উত্তর আমাদের জানা নেই!... যদিও আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট মহলকে নির্দেশ দিয়েছেন আহত সবাইকে চিকিৎসা, অর্থসহ নানা ধরণের সহযোগিতা নিশ্চিত করার বিষয়টি প্রতি।... কিন্তু তার পরও কথা থেকে যায়।... তারা তো আর কোনো কিছুর বিনিময়েই তাদের 'প্রিয়জন'-দের ফেরত পাবেন না।... এই দু;খ, এই বেদনা, এই কালো অধ্যায়টি যে তাদের আজীবনের দু:সহ্য ক্ষত!

এই দু;সহ্য মৃত্যু বেদনা আর লাশের মিছিল দেখে আমরা কি সংশোধন করতে পারবো আমাদের নিজেদের হাতে রয়ে যাওয়া ঝুকিপূর্ণ ভুলগুলো।...এমন আরো ঝুকিপূর্ণ ভবন রয়েছে ঢাকাসহ বড় বড় শহরে। যার থেকেও এমন আরো ঘটনা হয়তো জন্ম নেবার অপেক্ষায় আছে। আমরা ভুলেও আর এমন ঘটনার পুনোরাবৃত্তির দৃশ্য দেখতে চাই না।

আসুন প্রিয় ব্লগার,
আমরা সমবেতভাবে অকাল প্রয়াত মানুষগুলোর বিদেহী আত্মার চির শান্তি, মুক্তি কামনা করি।



উপরের ছবিটি : নিমতলী অগি্নকাণ্ডে নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ গতকাল দাফনের উদ্দেশ্যে আজিমপুর কবরস্থানে নেওয়া হয়। ছবি- দৈনিক কালের কণ্ঠ
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০১০ দুপুর ১:৫৫
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×