মানব জীবনের ইতহাস শ্রেনী সংগ্রামের ইতিহাস। অনেক নাস্তিক মানবতাবাদীরা কমিউনিজম তথা মার্কসবাদ সম্পর্কে কিছুই জানে না কিন্তু তারা ঘোরতর কমিউনিজম বিরোধী। তাদের জন্য আজ এই লেখা। এই নোটে প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্র হতে হালের কমিউনিজম বা মার্কসবাদ নিয়ে আলোচনা করা হবে....
প্লেটোর ন্যায়পরায়ণতার ধারনার অপরিহার্য পরিণাম হলো সাম্যবাদ। প্লেটোর সাম্যবাদের মনস্তাত্ত্বিক ভিত্তি হলো, সাম্যবাদ ব্যতীত প্রজ্ঞা ও প্রবৃত্তির মধ্যে সংঘাত দেখা দিবে। সম্পত্তি, পারিবারিক আর্কষন এবং ব্যক্তিগত স্বার্থ মানুষকে তার সমাজের প্রতি কর্তব্য থেকে বিমুখ করে তোলে। প্লেটো তার সাম্যবাদব্যবস্থায় অভিভাবক শ্রেণীর জীবন থেকে ব্যক্তিগত পরিবার ও সম্পত্তির উচ্ছেদের কথা বলেছেন। অভিভাবক শ্রেণী হলো প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের ধারক ও বাহক। অভিভাবক শ্রেণির সাহসী অংশ রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত। শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে এই অভিভাবক শ্রেণী থাকবে সকল প্রকার প্রবৃত্তি এবং শঙ্কা থেকে মুক্ত। তারা হবে ন্যায়ের পতাকাধারী। অভিভাবক শ্রেণীকে প্লেটো সামন্যতম স্বার্থপর হবার সুযোগ দিতে নারাজ। আর তা সুনিশ্চিত করার জন্যই তিনি এই শ্রেণীর জন্য সম্পত্তি ও পরিবার উচ্ছেদের কথা বলেছেন। সম্পত্তিবিহীন এই অভিভাবক শ্রেণীর নামই প্লেটোর সাম্যবাদ। প্লেটো সামাজিক ন্যায় সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যেই সাম্যবাদের অবতারনা করেন। রাষ্ঠ্রে ন্যায় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সাম্যবাদ হলো একটি বৈষয়িক ও অর্থনৈতিক অনুসিদ্ধান্ত। প্লেটো মনে করতেন, শুধুমাত্র নৈতিক উপায়ে সমাজ ও ব্যক্তিকে সংস্কার করা যায় না। সেখানে বৈষয়িক উপায়ও প্রয়োগ করা দরকার, ব্যক্তিগত সম্পদ থেকে বিচ্ছিন্ন না হলে মানুষ নিঃস্বার্থ লোভহীন হতে পারে না। প্লেটোর আদর্শ মুষ্ঠিমেয় মানুষের সুখলাভ নয়, সমগ্র জনগণের সুখই এর উদ্দেশ্য। প্লেটোর চিন্তাধারা আধুনিককালের মার্কস ও আঙ্গেলসের শ্রেণীবৈষম্য ও শ্রেণীসংগ্রামের সাথে সামন্জ্ঞস্যপূর্ণ। মার্কসের মতে, প্লেটো বেঁচে থাকলে তিনি হতেন সবচেয়ে বড় সাম্যবাদী। মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে রাষ্ট্রের উদ্ভব, প্রকৃতি ও ভূমিকার সন্ধান পাওয়া যাবে শ্রেণী ও শ্রেণীসংঘর্ষের মধ্যে। রাষ্ট্র কোনো চিরন্তন প্রতিষ্ঠান নয়। ব্যক্তিগত সম্পত্তিবোধ, পরস্পরবিরোধী স্বার্থসম্পন্ন শ্রেণী ও শ্রেণীসংগ্রাম সৃষ্টি হওয়ার প্রয়োজনবোধের তাগিদে রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়েছে। মার্কস সমগ্র বিষয়টিকে অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যালোচনা করেছেন। এই তত্ত্বে রাষ্ট্রকে শ্রেণীগত দ্বন্দ্বের ফল ও একটি শ্রেণীর প্রধান্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যম বা যন্ত্র হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। লেলিনের মতে- রাষ্ট্র একশ্রেণীর দ্বারা অন্যশ্রেণীকে নিপীড়ন করা ও শ্রেণীশাসন প্রতিষ্ঠা করার যন্ত্র। মার্কসীয় রাষ্ট্রতত্ত্বের ভিত্তি হল দ্বন্দ্বমূলক ও ঐতিহাসিক বস্তুবাদ। দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের সূত্রের সাহায্যে বস্তুর অন্তর্নিহিত দ্বন্দ্ব ও তার ফলে বস্তুর বিকাশের চিরকালীন ও সার্বজনীন নিয়ম প্রতিষ্ঠা করা হয়। রাষ্ট্রের উৎপত্তি ও প্রকৃতি বিশ্লেষনের ক্ষেত্রে মার্কস-এঙ্গেলস সমাজ বিকাশের চারটি স্তরের কথা বলেছেন। (১) আদিম সাম্যবাদী সমাজ। (২) দাস সমাজ। (৩) সামন্ততান্ত্রিক সমাজ। (৪) পূঁজিবাদী সমাজ।
আদিম সাম্যবাদী সমাজে ব্যক্তিগত সম্পত্তি ছিল না, তাই কোনো শ্রেণী বা শ্রেণীশোষণও ছিলো না। শোষন ছিলো না বলেই শোষনের অস্ত্র রাষ্ট্রও ছিলো না। দাসসমাজে দাসসমেত সকল উৎপাদন, উপাদান এবং উৎপন্ন সামগ্রীর মালিক ছিলো পরশ্রমভোগী দাসপ্রভুরা। দাসযুগের দাসদের নির্মম নির্যাতনের উপর নির্ভর করত রাষ্ট্রের সুখ-সমৃদ্ধি। সামজ বিকাশের এই যুগেই শ্রেণীশাসন ও শ্রেণীশোষনের সূত্রপাত হয়। এই শুরু হলো শ্রেণীশোষনের ইতিহাস। দাসব্যবস্থার পরিণতি হিসাবেই সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার সূত্রপাত হয়। এসময় দাস শোষনের ব্যবস্থা অর্ন্তহিত হলেও সামন্তপ্রভু ও ভূমিদাস নামক দুটি শ্রেণীর সৃষ্টি হয়। তবে কৃষকরা তুলনামূলকভাবে স্বাধীন ছিল এবং তারা জমিতে স্বত্ব পেয়েছিল। কিন্তু উৎপাদিত ফসলের বিরাট অংশ খাজনা আকারে সামন্ত প্রভুকে দিতে হত। এই সময় শ্রেণী সংগ্রামের তীব্রতা ও ব্যপকতা বৃদ্ধি পায়। এরপর আসে ধনতান্ত্রিক সমাজ। এসময় বূর্জোয়া শ্রেণী পূঁজির মালিক হয়। আর শ্রমজীবি সর্বহারা শ্রেণী কলকারখানায় উৎপাদন করে। উৎপাদিত সকল প্রকার উপাদান থেকে শ্রমিকশ্রেণী বঞ্চিত থাকে। মালিকশ্রেণী শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত রাখে। আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রীয় পেঁটোয়া বাহিনী গড়ে তোলা হয়। রাষ্ট্রব্যবস্থা গণতান্ত্রিক হলেও সেই গণতান্ত্রিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে বুর্জোয়াশ্রেণী। শোষক ও শোষিত শ্রমিকশ্রেণীর মধ্যে শ্রেণীসংগ্রাম ক্রমশ তীব্রতর হয় এবং একসময় বিপ্লবের মাধ্যমে ধনতন্ত্রের পতন ও সামজতন্ত্রের আর্বিভাব হয়। রাষ্ট্রক্ষমতা এই সময় সর্বহারাশ্রেণীর হাতে থাকে। এই পর্যায়ে উৎপাদনের উপাদানগুলোর উপর সামাজিক মালিকান প্রতিষ্ঠিত হয় এবং পরশ্রমভোগী শোষকশ্রেণী না থাকায় ব্যক্তিগত সম্পত্তির ধারনার বিলুপ্তি ঘটে। সর্বপ্রকার শোষনের অবলুপ্তি এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য।
আলোচিত ব্লগ
বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই
বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন
রাজাকারের বিয়াইন

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?
কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।
রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।
রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন
দাসত্বের শিকল ভাঙার স্বপ্ন দেখা এক ক্রান্তদর্শী ধূমকেতু ওসমান হাদী।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে যে ধরণের রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তাহলো বিদেশী প্রভুরদের দাসত্ব বরণ করে রাজনৈতিক দলগুলোর রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দেশের মানুষের উপর প্রভুত্ব করা , আর... ...বাকিটুকু পড়ুন
দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন
সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।