ইসলাম শান্তির ধর্ম। তাই ইসলামের দৃষ্টিতে কোন প্রকার শ্রেণী বৈষম্য, শোষণ, অত্যাচার -অনাচার জায়েজ নয় ।
ইসলাম শ্রমিকদের হীনমন্যতা থেকে মুক্তি দিয়েছে। নবী করিম (সা.) এরশাদ করেছেন, শ্রমজীবীর উপার্জনই উৎকৃষ্টতর যদি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সৎ উপার্জনশীল হয়! মুসনাদে আহমদ (৪র্থ)। একবার রসুল (সা.)কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল কোন উপার্জন শ্রেষ্ঠতম? তিনি উত্তরে বলেন, নিজেরে শ্রমলব্ধ উপার্জন (মুসনাদে আহমদ)। রসুল পাক আরো বলেন, যে ব্যক্তি নিজের শ্রমের উপর জীবিকা নির্বাহ করে, তার উপর উত্তম আহার আর কেউ করে না। জেনে রাখো, আল্লাহর নবী হযরত দাউদ (আ.) নিজের শ্রমলব্ধ উপার্জনে জীবিকা চালাতেন। (বুখারী-মিশকাত), কুরআন হাদিসের আলোকে শ্রমিকের অধিকার (১) মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই। সুতরাং তোমরা তোমাদের মধ্যে সদ্ভাব স্থাপন করে দিবে। আল হুজুরাত। (২) তোমাদের অধীন ব্যক্তিরা তোমাদের ভাই, আল্লাহ যে ভাইকে তোমার অধীন করে দিয়েছেন, তাকে তাই খেতে দাও যা তুমি নিজে খাও। তাকে তাই পরিধান করতে দাও যা তুমি নিজে পরিধান করো। (বুখারী আবু হুরায়রা (রা.)। (৩) ক্ষমতার বলে অধীনস্ত চাকর বাকর দাস দাসীদের প্রতি খারাপ আচরণকারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। হযরত আদম (আ.) কৃষক ছিলেন। হযরত নুহ (আ.) কাঠ মিস্ত্রি ছিলেন। হযরত দাউদ (আ.) কর্মকার ছিলেন। হযরত ইদ্রীস (আ.) দর্জি ছিলেন। হযরত ইব্রাহিম (আ.) রাজমিস্ত্রি ছিলেন। হযরত ইসমাঈল (আ.) রাজমিস্ত্রির যোগাড়ী ছিলেন। হযরত মুছা (আ.) ছাগলের রাখাল ছিলেন। হযরত মুহাম্মদ (সা.) ছাগল চরিয়েছেন। ইসলাম এসেছে মানবিক মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতে। সে জন্মগতভাবে পেশাগতভাবে যত নি¤œমানের হোক না কেন সে আপন কর্মের মাধ্যমে সমাজের মর্যাদা লাভের নিশ্চয়তা পায়। এই মৌলিক সত্যটির দিকে ইঙ্গিত দিয়ে আল্লাহ বলেছেন, তোমাদের মধ্যে তারাই বেশি মর্যাদাবান যারা তাকওয়ার অধিকারী। রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন, অনারবী ব্যক্তির উপর আরবের, কৃষ্ণাঙ্গের ওপর শ্বেতাঙ্গের বা শ্বেতাঙ্গের ওপর কৃষ্ণাঙ্গের কোন প্রাধান্য নেই। (যাদুল মায়াদ) রসুল (সা.) আরো বলেছেন, দুনিয়াতে আল্লাহ এমন কোন নবী পাঠাননি যিনি বকরী চরাননি। সাহাবারা জিজ্ঞাসা করল আপনিও? তিনি বললেন আমি এক কিরাত দু’ কিরাতের বিনিময়ে বকরি চরিয়েছি। ১৮৮৬ সালের ১ মে আমেরিকার শিকাগো শহরের ‘হে' মার্কেটে অধিকার বঞ্চিত শ্রমিকরা ৮ ঘণ্টা কাজসহ বিভিন্ন দাবিতে সংগঠিত হয়ে আন্দোলন শুরু করে। বিক্ষোভ সমাবেশে নিরীহ শ্রমিকদের ওপর গুলী চালায় পুলিশ। নিহত হন অনেক শ্রমিক। শ্রমজীবী মানুষের আপসহীন মনোভাব ও আত্মত্যাগের ফলে মালিক পক্ষ শ্রমিকদের দাবি অনুযায়ী, ৮ ঘণ্টা কাজের স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। ১ মে শ্রমিক আন্দোলনের প্রতীকে পরিণত হয়। হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর হাদিস, শ্রমিকদের সাধ্যের অতীত কাজে কখনো খাটাবে নাÑ এ নির্দেশনামূলক কথাটির কিছু অংশ হলেও ১ মে'র আন্দোলনে প্রতিফলিত হয়। আগামী দিনে বাংলাদেশসহ বিশ্ব শ্রমিকরা নিজেদের প্রয়োজনে ইসলামের দেয়া শ্রমের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসবেন।