গতকাল ইউটিউবে দু’জন খাদ্যরসিক ট্রাভেলারের ভ্লগ দেখছিলাম। একজন বৃটিশ, নাম জ্যাসন বিলাম; অন্যজন ক্যানাডিয়ান, নাম ট্রেভর জেমস। এদের দু’জনেরটা বিশেষভাবে দেখছিলাম এই কারনে যে, দুজনেই সম্প্রতি বাংলাদেশ........তথা ঢাকা থেকে ঘুরে এসেছে এবং সেখানে তাদের স্ট্রীট ফুডের অভিজ্ঞতার ভিডিও আপলোড করেছে। এমন আরো অনেক ইউটিউব সেলেব্রিটি আছে যারা বিভিন্ন দেশ ঘুরে ঘুরে সেদেশের খাবার, বিশেষ করে স্ট্রীট ফুড এর বিভিন্ন দিক তুলে ধরে। যেমন, মার্ক ওয়েইন। ইউটিউবে এদের লক্ষ লক্ষ ফলোয়ার। এরা একটা ভিডিও আপলোড করলে তার ভিউ কিছুদিনেই কয়েক মিলিয়ন হয়ে যায়। এই সেলেবগন খাবারের সাথে সাথে সেই দেশের বিভিন্ন দর্শণীয় স্থান, সামাজিক অবস্থা এবং সমকালীন চিত্র একেবারে গ্রাসরুট লেভেল থেকে তুলে দর্শকদের দেখায়। এর ফলে সে’দেশের পরিচিতি বাড়ে। বিভিন্ন দেশের ব্যাকপ্যাকাররা সেই দেশে আসতে আগ্রহী হয়।
বর্তমানে যে কোনও দেশের পর্যটনে ''ব্যাকপ্যাকার ট্রাভেলার'' একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। এরা সস্তা হোটেলে থাকতে চায়, সস্তা খাবার খায় আর প্রচুর ঘোরাঘুরি করে। তবে এরা গুরুত্বপূর্ণ এই কারনে যে, একবার কোনও দেশের রেটিং ভালো দেখলে এরা আসে ঝাকে ঝাকে। আবার এরা একটা দেশ ঘুরে তাদের দেশে বা কমিউনিটিতে ফিরে গিয়ে সেই দেশ সম্পর্কে লেখালেখি করে। ফলে যদি ভালো রিভিউ দেয়া হয় তাহলে একজনকে দেখে দশজন সেই দেশে আসে। তাই বর্তমানে একজন ধনী, নাকউচু পর্যটকের (যে কিনা তারকাচিহ্নিত হোটেলে থাকবে, ট্যাক্সিতে ঘুরবে, নামী দামী রেস্টুরেন্টে খাবে আর শপিং করবে) চেয়ে এরা যে কোনও দেশের পর্যটন পলিসিতে অধিকতর গুরুত্ব পায়।
ব্যাকপ্যাকারদের গুরুত্ব বোঝাতে একটা ছোট্ট উদাহরন দেই, তাহলে ব্যাপারটা আরো ভালোভাবে বোঝা যাবে। ট্রেভর জেমস যখন পুরানো ঢাকায় রিকশায় বসে বলে, Wow! Look at the crowd guys!! কিংবা পুরানো ঢাকার গলিতে হাটতে হাটতে বলে, You can feel the energy here, it's soooo magical!! অথবা রাস্তার পাশের হোটেলে গিয়ে নতুন শেখা বাংলায় বলে, কেমন আচো মামা!! তখন তার ফলোয়ারদের অনেকেই উত্তেজিত হয়ে তার কমিউনিটি আলাপ করবে, চলো, নেক্সট ট্রিপটা বাংলাদেশেই দিয়ে আসি। আর একজন নাকউচু পর্যটক চিন্তা করবে.........বাংলাদেশ? এমন ভিড়, অস্বাস্থ্যকর খাবার, নোংরা, ধুলাবালি? কক্ষোনও না!!! পার্থক্যটা এখানেই।
এই পার্থক্যটা বুঝতে পারে বলেই অনেক দেশের পর্যটন বিভাগ এদেরকে নিজেদের দেশে ঘোরার আমন্ত্রণ জানায়। রাস্তাঘাটের খাবার খাওয়ায়, আবার ভালো রেস্টুরেন্টেও নেয়। সরকারী খরচে আদর-যত্ন করার কোন কমতি রাখে না। লক্ষ্য একটাই, নিজের দেশের ব্র্যান্ডিং। ব্যাকপ্যাকার ট্রাভেলারদের প্রলুদ্ধ করা। আর ফাকতালে ধনী পর্যটক দু’একটা এসব দেখে যদি এসেই পরে.......সেটাতো বোনাস! উদাহরন হিসাবে বলা যায়, কয়েক মাস আগে উজবেকিস্থান মিনিস্ট্রি অফ ট্যুরিজমের আমন্ত্রণে মার্ক ওয়েনের সেদেশে ভ্রমন এবং ভিডিও।
আচ্ছা, বাংলাদেশেও তো এমন একটা মন্ত্রণালয় আছে তাই না! কি যেন নাম? ও মনে পড়েছে........মিনিস্ট্রি অফ সিভিল এভিয়েশান এন্ড ট্যুরিজম। নামের কিন্তু ওজন আছে (পুরান ঢাকার ভাষায় বললে, নামের ে*াদন আছে)! অত্যন্ত গালভরা নাম। এরা কি জানে ট্যুরিজমের এই লেটেস্ট ট্রেন্ড সম্পর্কে? এমন ক’জনকে এরা দেশটা দেখার, এদেশের বিভিন্ন খাবার চেখে দেখার আমন্ত্রণ জানিয়েছে? ওকে......মেনে নিচ্ছি মন্ত্রণালয়ের অনেক কাজ, কর্তারা দম ফেলার সময় পায় না! তাছাড়া এদেরকে আবার বিমান এবং বিমানবন্দরের দেখাশুনাও তো করতে হয় (কি দেখাশুনা করে তাতে একটু পরেই আসছি)! বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশান না কি যেন আছে না একটা? এদের কি কাজ? প্রতি বৎসর পর্যটন সপ্তাহ কিংবা মাস উদযাপন আর মন্ত্রীকে দিয়ে ফিতা কাটানো? এরা কি কাউকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে? এই অফিসের কর্তাব্যক্তিদের স্যুটেড-বুটেড হয়ে অফিসে আসা যাওয়া আর জনগনের পয়সা নষ্ট করতে লজ্জা করে না?
এবার আসি বিমানবন্দরের রক্ষণাবেক্ষনের কথায়। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। বাংলাদেশে প্রবেশের প্রধানতম প্রবেশদ্বার। প্রত্যেকবার আমি যখন দেশে ঢুকি আর দেশ থেকে বের হই; এখানের মশকবাহিনীর তৎপরতায় মুগ্ধ হই। আমাদের জাদীদভাই এদের কাছ থেকে ট্রেনিং নিতে পারেন, কারন এরা ২৪ ঘন্টাই তৎপর থাকে। এদের ভালো দিক হলো যে, এরা বর্ণবাদী না। সব রং বা শ্রেণীর মানুষকেই এরা সমানভাবে হুল ফোটায়। এদের কল্যানে সাদা চামড়ার কাউকে যখন নিজের শরীরে চড়-থাপ্পড় দিতে দেখি, বিমলানন্দ ভোগ করি। যারা ভুক্তভোগী তারা এদের সাইজ দেখে মুগ্ধ হয়েছেন কি না জানিনা, তবে আমি হয়েছি! ঢাকার ভিতরে সচরাচর এই সাইজের মশা দেখা যায় না। আমার মনে হয় এরা মন্ত্রণালয়ের পোষা, না হলে এদের কেউ কিছু বলে না কেন? আর এদের শরীর-স্বাস্থ্যই বা এতো ভালো কেন?
বিমানবন্দরের মশা নিয়ে এতো কথা বলার কারণ হলো, দু’দিন আগে মহামান্য হাইকোর্ট বিমানবন্দরের মশা তাড়ানোর জন্য রুল জারি করেছেন!!! কি বিচিত্র আমাদের সোনার দেশ!!!!
আমাদের দেশের মন্ত্রী, সচীবসহ অন্যান্য যেসব বিভিন্ন গালভরা নামের রক্ষক (কিংবা অন্য কথায়, ভক্ষক) আছে এদের লজ্জা-শরম কি কোনও দিনই হবে না? একটা দেশে কিছুদিন থাকলে আর চোখ-কান খোলা রাখলে সেদেশের প্রশাসন সম্পর্কে আপনি কিছুটা হলেও ধারণা পাবেন। আল্লাহর রহমতে আর আপনাদের দোয়ায় আমি পৃথিবীর অনেক দেশ ঘুরেছি, অনেক বিমানবন্দর দেখেছি। বলতে আমার লজ্জাই করছে........এমন জঘন্য প্রশাসন, এতো জঘন্য বিমানবন্দর আমি খুব কমই দেখেছি।
দেশের ভক্ষকদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক!!!
ট্রেভর জেমস এর একটা ভিডিও-র লিংক দিলাম। আগ্রহীরা দেখতে পারেন view this link
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:০৮