গতকাল ছিল রবিবার।
সকালে ঘুম থেকে উঠে মনটা ভালো হয়ে গেল। কি সুন্দর একটা দিন। রৌদ্রজ্জল। আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানাচ্ছে সারাটা দিন এমনই থাকবে। তাপমাত্রা উঠানামা করবে ১৮ থেকে ২০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে। অলসতা করার জন্য একটা মোক্ষম দিন। ব্লগ ডে'র ম্যাগাজিনটা হাতে পাওয়া অবধি এখন পর্যন্ত একটু চেখে দেখেছি, পুরাপুরি রস-আস্বাদন করা হয়ে ওঠেনি এখনও। ভাবলাম, মধ্যাহ্ন ভোজনের পরই ওটা হাতে নিবো। দুপুর দু'টার দিকে ভোজন সেরে ম্যাগাজিনটা নিয়ে ব্যাকইয়ার্ডের ফোল্ডিং চেয়ারটাতে কাৎ হলাম। দেখি বউ আমার আশেপাশে পোষা কবুতরের মতো ঘুর ঘুর করছে। পাত্তা দিলাম না। করুক ঘুর ঘুর। কোন বদ মতলব আছে কিনা জানি না, তবে থাকলেও লাভ হবে না। আজকে এত্তো সুন্দর একটা দিন আমি মাঠে মারা যেতে দিতে পারি না। আমার প্রোগ্রাম ফিক্সড।
পড়তে পড়তে যথারীতি ঘুম চলে এলো। ভরপেট খাওয়া বিশেষ প্রানীটার মতো কুই কুই শব্দ করে একটা টানা দিলাম; তারপরে কাৎ হয়ে শুয়ে ঘুমের প্রস্তুতি নিলাম। আবেশে দু'চোখ মুদে আসছে। ঠিক এমনি সময়ে হঠাৎ শুরু হলো বউয়ের বাকবাকুম।
এ্যাই চলো না, সুমনা ভাবীদের ওখান থেকে ঘুরে আসি। এতো সুন্দর একটা দিনে পরে পরে ঘুমানোর কোন মানে হয়?
কথার উত্তর না দিয়ে মটকা মেরে পরে রইলাম। কথা বললেই কথার পিঠে কথা আসবে। তারচেয়ে চুপচাপ থাকাই ভালো। তাছাড়া এখন কথা বললে আমার আরামের তন্দ্রাভাবও বিঘ্নিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। কিন্তু এ'তো ছেড়ে দেয়ার জিনিস না। হুমকি দিয়ে বললো,
তুমি যদি এখন কথা না বলো, আর ঘুমানোর চেষ্টা করে তাহলে গায়ে পানি ঢেলে দিব কিন্তু!!
আর থাকা গেল না। বললাম, দ্যাখো, ঝামেলা করবা না। তোমার যদি খুব বের হতে ইচ্ছা করে তো মার্টিনকে গিয়ে বলো। ও তোমাকে নিয়ে যাবে, যেখানে যেতে চাও।
বউ ফোস করে উঠলো, মার্টিন আমার কি লাগে যে ওকে বলবো? আর ওই বা আমাকে নিয়ে যাবে কেন? তুমি কি মরে গেছ?
আমি বললাম, ধরে নাও আমি গেছি। এ্যবসোলিউটলি গন! যথেষ্ট হইছে! খবরদার, আমাকে আর বিরক্ত করবা না। কিছু হলেই তো আমাকে মার্টিনের ভয় দেখাও। যাও, এবার ওর কাছেই যাও। তারপরে সখেদে বললাম, শালার কি লাইফ! একটা দিন একটু আরাম করবো তারও উপায় নাই।
শুনি বউ ধুপধাপ করে চলে যাচ্ছে। যেতে যেতে বানী দিয়ে গেল, একটা চরম আইলসা মানুষের সাথে সারাজীবন ঘর-সংসার করে গেলাম। এই জীবনে কোন শখ-আহ্লাদই পূরণ হইলো না।
বলে কি এইটা!! সে গেল তো গেল, ঘুমটার বারোটা বাজিয়ে দিয়ে গেল। এখন আর চেষ্টা করলেও ঘুম আসবে না। কিছুক্ষণ শুয়ে থেকে ভাবলাম এই জীবনে ওর কি কি শখ-আহ্লাদ পূরণ করি নাই! নিজেকে বোঝালাম, আসলে এই লকডাউনের সময়ে ঘরে বসে বসে সবাই বোরড হয়ে যাচ্ছে। ওর মাথা আউলা-ঝাউলা হলে দোষ দেয়া যায় না! আবার এদিকে বের হলে সমস্যাও আছে। পুলিশ থামালে, আর যথাযথ কারন দেখাতে না পারলে ফাইনও করে দিতে পারে! সাত-পাচ চিন্তা করে উঠলাম। ওর জীবনে কোনও শখ-আহ্লাদই যখন পূরণ করি নাই, এটা অন্ততঃ করি!
আমার বাসা থেকে সুমনা ভাবীদের বাসায় যাওয়ার পথে একটা ধনুকের মতো বাকা রাস্তা আছে। উইক ডে গুলোতে মাঝে-মধ্যে ওখানে পুলিশের গতি-মাপার ক্যামেরাসহ গাড়ী পার্ক করা থাকে, তবে উইক এন্ডে কখনও দেখি নাই। একেবারেই শুনসান রাস্তায় ৩০ মাইলের স্পীড লিমিটের জায়গায় ৪০ এ গাড়ী ছোটালাম। বাকটা নিতেই দেখি খাইছে আমারে! হালার পুলিশের গাড়ী দাড়ানো। স্পীডোমিটারের দিকে আর তাকানোর সময় নাই। তড়িঘড়ি ব্রেক করে স্পীড কমালাম। একটু এগুতেই পুলিশের একটা গাড়ী থামার সিগন্যাল দিল। থামলাম। গাড়ী থেকে নেমে এলো মৈনাক পর্বতের মতো এক বিশালদেহী পুলিশ।
হ্যালো স্যার, গুড আফটারনুন। তুমি কি খুব তাড়াহুড়ার মধ্যে আছো? জরুরী কোন কাজে বের হয়েছো?
আমি বললাম, জরুরী তো বটেই। বাসায় আলু শেষ হয়ে গিয়েছে। স্টোরে যাচ্ছি, আলু কিনতে।
কিন্তু স্টোরতো চারটার সময়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এখন বাজে পাচটা!
যাচ্চলে! স্টোর যে রবিবারে বিকাল চারটার সময়ে বন্ধ হয়ে যায়, টেনশানে মনেই ছিল না। বললাম, হ্যা, তাইতো! কিন্তু আলু আমার জন্য খুবই জরুরী। ঘরে খাবার মতো আর কিছুই নাই। দেখি, কোন কনভিনিয়েন্ট স্টোরে পাই কিনা!
কতো বড় আলুর বস্তা কিনবা যে, দু‘জনের বের হওয়া লাগলো? আমি আমতা আমতা করছি দেখে বললো, তুমি যে স্পীডিং করছো তা কি জানো?
আমি বললাম, স্পীডিং করছি? হায় হায়!! বলো কি? আসলে সব সময়ে তো স্পীডোমিটারের দিকে নজর রাখা যায় না! হিউম্যান এরর হতেই পারে। তা, কতোটুকু ওভার স্পীডিং হয়েছে? আমার অভিনয়ে তেমন একটা কাজ হলো না। অবশ্য হওয়ার কথাও না। তবু বিপদে পড়লে মানুষ খড়কুটা আকড়ে ধরেও তো বাচার চেষ্টা করে।
তুমি ৩০ এর রাস্তায় ৩৪ এ চালাচ্ছো!!
মনে মনে বললাম, তোর তো দেখি ঠিক মতোন ট্রেনিংই হয় নাই। ট্রেনিংয়ের জন্য তোরে বাংলাদেশে পাঠানো দরকার। ৩০ আর ৩৪ এ তফাৎ কতোটুকুনরে ব্যাটা ব্যাক্কল! এর জন্য এখন কি ভোগান্তি হয়, কে জানে? গাধাটা আমার ডিটেইলস নিয়ে ছেড়ে দিল।
এই ভোগান্তির জন্য আমার পাশে বসা সিন্দাবাদের ভুতটাই দায়ী। কিছু বলার জন্য রাগে কটমট করে ভুতটার দিকে তাকালাম। দেখি তার আগেই সে কটমট করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি কিছু বলার আগেই বললো, চালাও! আরো জোরে চালাও! কতোবার বলছি একটু দেখেশুনে গাড়ি চালাও। তা না। কে শোনে কার কথা! যেন চলছে গাড়ি, যাত্রাবাড়ি!!!
সুন্দর একটা দিন এমন অসুন্দরভাবে শেষ হবে কে জানতো!
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ গুগল।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:১৯