আমি আমার গ্রোসারী আর কাচাবাজার ছাড়া বেশীরভাগ কেনাকাটাই করি ইবে থেকে। প্রচুর বিক্রেতার মধ্যে থেকে দামাদামি করে খুজেপেতে ভালো জিনিস কেনা যায় বলে আমার খুবই পছন্দের মাধ্যম এটা। গত সপ্তাহে একাউন্টে লগ ইন করে দেখি, ইবে আমাকে একটা কুপন দিয়েছে, হঠাৎ হঠাৎই তারা অবশ্য এ'রকম দেয়। ১০ পাউন্ড বা ততেোধিক মুল্যমানের কিছু কেনাকাটা করলে ৫ পাউন্ড অফ। ভালো কথা, কিন্তু কি কেনা যায় খুজেই পাচ্ছিলাম না। মনে মনে শালাদেরকে কয়টা গালি দিলাম, কারন তার দুই দিন আগেই ১৪ পাউন্ড দিয়ে আমার ল্যাপটপের জন্য একটা পাওয়ার এডাপ্টার চার্জার কিনেছি। দিবি তো দিবি, দুইদিন আগে দে! তা না। সময়ের কাজ সময়ে করার মুল্য এরা কবে বুঝবে? যাই হোক, অনেক চিন্তা-ভাবনা করেও কিছুই খুজে পেলাম না, এদিকে কুপনের মেয়াদ আছে আর মাত্র তিনদিন। হঠাৎ মাথায় একটা আইডিয়া এলো। ভাবলাম, খুজে দেখি তো, হোরাসের চোখের কিছু পাওয়া যায় কিনা! শুরু করলাম ঘাটাঘাটি। ও খোদা…...সার্চ দিতেই হোরাসের চোখের উপরে হাজার হাজার জিনিস এসে হাজির। কি নাই সেখানে!! যাই হোক, দেখতে দেখতে হঠাৎ একটা ব্রেসলেট পছন্দ হয়ে গেল। ১২ পাউন্ড দাম। আমাকে দিতে হবে ৭ পাউন্ড। আগুপিছু না ভেবে অর্ডার দিয়েই দিলাম।
শনিবার সকালে দেখি জিনিস এসে হাজির। সিদ্ধান্ত নিলাম, এখন পরবো না। দুপুরে গোসল টোসল করে ফ্রেশ হয়ে পরবো। নতুন জিনিস, একটু আয়োজন করেই ব্যবহার শুরু করি! দুপুরের আয়েশী ভূড়িভোজনের পরে দেশী স্টাইলে একটা ভাতঘুম দিলাম, হোরাসের কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। বিকালে উঠে মনে পড়লো। নতুন চকচকে ব্রেসলেটটা পরে ল্যাপটপ নিয়ে বসলাম…….দেখা যাক সামু'র লেটেস্ট খবরাখবর! এরই মধ্যে বউ চা আর আমার অতিপ্রিয় চানাচুরমাখা নিয়ে এলো। চানাচুর নেয়ার জন্য গামলার দিকে হাত বাড়িয়েছি, বউ বললো,
- তোমার হাতে এইটা কি?
- দেইখা বুঝো না! এইটার নাম ব্রেসলেট। গম্ভীর হয়ে বললাম।
- হঠাৎ নতুন ব্রেসলেট? কতো দিয়া কিনলা? আর এইটা কেমন ব্রেসলেট! দেখতে তো ততোটা সুন্দর না!
- এইসব জিনিসের সুন্দর হওয়া জরুরী না, কাম হওয়া জরুরী। আর পরবো তো আমি, তুমি তো পরবা না। তোমার এতো চিন্তা করার দরকার নাই।
- কাম মানে? ব্রেসলেটের আবার কিসের কাম? বেহুদা পয়সা নষ্ট করো!!
বউয়ের নির্বুদ্ধিতায় নিতান্তই বিরক্ত হয়ে বললাম, জানো এইটা কি? ইবে'র ঘটনাটা ওকে সবিস্তারে বর্ণনা করলাম। বললাম, এইটা হোরাসের চোখের ব্রেসলেট। যে কোনও খারাপ নজর থেকে ইহা ধারনকারীকে রক্ষা করে। সেইটা ব্লগে, সংসারে কিংবা যে কোনও জায়গায়ই হোউক না কেন। এইটা হাতে থাকা মানে, আমি সেইফ। কোই ভি বুড়ি নাজার সে ইয়ে হামে বাচায়েগা। উত্তেজনায় আমার মুখ দিয়ে সবেগে হিন্দী বের হয়ে গেল।
এতো মুল্যবান মুল্যবান কথা শুনেও বউয়ের চেহারায় কোন ইতিবাচক ভাব খেললো না। বরং চোখ সরু করে বললো, ব্লগ আর যে কোনও জায়গা বুঝলাম; কিন্তু সংসারে কু-নজরের ব্যাপারটা বুঝলাম না। সংসারে তোমার উপরে কার কু-নজর, বুঝায়ে বলো।
বললাম, তুমি থাকতে আর কেউ লাগে! লকডাউনের গত কয়েকমাস ধরে যা শুরু করছো তুমি!! সামনে সেকেন্ড ওয়েভ আসতেছে। তাই তোমার আগাম শক ওয়েভ থেকে বাচার জন্য এই দাওয়াই আমদানী করা ছাড়া আমার আর উপায় ছিল না।
দুই চোখে যতোটা সম্ভব আগুন ঢেলে আমাকে পুড়িয়ে ছারখার করার চেষ্টা করতে করতে বললো, সব সময়ে তোমার এই ধরনের শস্তা রসিকতা ভাল্লাগে না কিন্তু! বলে চানাচুরমাখার গামলাটা সজোড়ে ধাক্কা দিয়ে উঠে চলে গেল।
বসে বসে ভাবছিলাম। হোরাসের চোখের উপকারিতা তাৎক্ষনিকভাবেই হাতে-নাতে পাওয়া গেল। যেভাবে চানাচুর ভর্তি গামলায় ধাক্কা দিয়েছিল, ওটা উল্টে যাওয়ার কথা! কিন্তু উল্টায়নি। আমার প্রিয় খাদ্য নিরাপদেই আমার উদরপূর্তির অপেক্ষায় আছে। তাছাড়া অন্য সময়ে হলে, এ'ধরনের পরিস্থিতিতে আমার এই মন্তব্যের পরিপূর্ণ ব্যবচ্ছেদ বা বিশদ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ না করা কিংবা আমাকে পুড়িয়ে ছারখার না করা পর্যন্ত সে উঠতো না। আজ আমাকে ঠিকমতো ভস্মীভূত না করেই যে উনি পশ্চাদাপসরন করলেন, সেটা কিসের কল্যানে? হোরাসের চোখের কল্যানেই তো! হোরাসের উপর আমার ভক্তি-শ্রদ্ধা আরো বেড়ে গেল। ব্রেসলেটের মেটালের চোখটাতে একটা চুমু দিয়ে সামু'র দিকে নজর দিলাম।
ঘন্টাখানেক পরে চিৎকার ভেসে এলো। তিনটা চোখ দিয়ে সামু'র দিকেই তাকায়া থাকবা, নাকি উঠবা। সুমনা ভাবীদের বাসায় যে দাওয়াত আছে, সেটা কি মনে আছে? মনোযোগ দিয়ে একটা পোষ্ট পড়ছিলাম, তাই ওর কথাটা প্রথম ধাক্কাতে ঠিকমতো বুঝি নাই। আমার তো সর্বসাকুল্যে দুইটাই চোখ, তিনটা চোখ আবার কি? পর মুহুর্তেই বুঝলাম আমার পৈতৃক সূত্রে পাওয়া দুইটা চোখ, আর ইবে'র কল্যানে পাওয়া হোরাসের চোখ…….যোগফল হলো তিন!! হোরাসের চোখের ক্ষমতায় আরেকবার চমৎকৃত হলাম। বউয়ের হঠাৎ এই গাণিতিক বুৎপত্তি মনে হচ্ছে এই চোখের কল্যানেই!! তাছাড়া পূর্বের সব অভিজ্ঞতা বলে, এমন সিচ্যুয়েশানে সে সব সময়ে ফ্রুট নাইফটা দোলাতে দোলাতে সামনে আসে। তারপরে ড্রাগনের মতো আগুনের হল্কা ছুড়ে মারে আমার দিকে। আজ তো সামনেই আসতে পারছে না। আর দুর থেকে ছোড়া আগুনের হল্কাতেও তেজ অত্যন্ত কম! ওয়াও…...এতো দেখি বড়ই কাজের জিনিস!!!
ভাবীদের বাসায় গিয়ে বসতে না বসতেই আমার বউ বহুকষ্টে তার চেপে রাখা আজকের ঘটনা ভাবীকে সবিস্তারে বর্ণনা করলো। হাল্কা নাস্তা-পানির পরে দেখি ভাই আমাকে বাইরের দিকে ইশারা করছে। সাধারনতঃ আসল খাওয়া-দাওয়ার পরে আমরা বাইরে গিয়ে ধুম্রপান করি। তাই আমি বুঝতে না পেরে বললাম, বাইরে কি? ভাবী চোখ নাচিয়ে বললো, বুঝলেন না! উনারও একটা দরকার, সেজন্যেই আপনাকে বাইরে যাওয়ার ব্যাপারে ইনসিস্ট করছে!
যাই হোক, বাইরে এসে ভাই ধোয়া ছাড়তে ছাড়তে বললেন, ভাবীর কাছ থেকে তো ঘটনা শুনলাম। এবার আপনে বলেন তো! আসল ঘটনা কি? জিনিসটা কি সত্যিই কাজের? আপনের রিয়াল অভিজ্ঞতা বলেন।
আমি বললাম, কি বলেন এইটা…...অবশ্যই কাজের। বলে আরো রংচং মেখে বিস্তারিত উনাকে বললাম। শুনতে শুনতে ওনার চোখদুটো দেখি রসগোল্লার মতো বড় বড় হয়ে গিয়েছে। একটা বড়সড় ঢোক গিলে উনি আমার হাত চেপে ধরে বললেন, ভাই অনুরোধ, আমার জন্যও একটা অর্ডার করেন।
আমি বললাম, কিন্তু কুপন তো আমি ব্যবহার করে ফেলেছি। এইটার দাম তো ১২ পাউন্ড। আপনাকে তো পুরোটাই দিতে হবে।
উনি বললেন, আরে রাখেন আপনের ১২ পাউন্ড। দরকার পরলে আপনেও কিছু কমিশন রাখেন। এমন কামের জিনিস…….টাকা কোন ফ্যাক্টর না। কিণ্তু যতো জলদি পারেন, আমার জন্য একটা আনানোর ব্যবস্থা করেন। তবে অবশ্যই ডেলিভারীর ঠিকানা আপনেরটা দিয়েন, নয়তো ওর হাতে পড়লে তৎক্ষনাৎ ফালায়া দিবে।
মনে মনে বললাম, সব শিয়ালেরই দেখি একই রা। একজন হুক্কা হুয়া বললে, সবাই সমস্বরে জিজ্ঞেস করে, কেয়া হুয়া কেয়া হুয়া! ঘরে ঘরে নির্যাতিত পুরুষদের নতুন রক্ষাকর্তার আবির্ভাব হলো দেখি! পুরুষ এবং বিবাহিত যে সকল ব্লগারগণ সাংসারিক নানা জটিলতায় কাতর; সংসারে অতীষ্ঠ হয়ে সুন্দরবনের কাছাকাছি কোন গ্রামে মাইগ্রেট করার চিন্তা-ভাবনা করছেন, তারা শেষ চেষ্টা হিসাবে অনতিবিলম্বে একটা হোরাসের চোখ সংগ্রহ করে অঙ্গে ধারন করুন। সাফল্য অবধারিত।
জয়তু হোরাসের চোখ!!!
ছবিঃ আমার নতুন কেনা, অত্যন্ত করিৎকর্মা…..হোরাসের চোখ খোদিত ব্রেসলেট।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০২০ সকাল ১১:৪৩