দেশ ও জাতিকে উদ্ধারের নিমিত্তে একটা মহাগুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে লেখা শেষ করলাম মাত্র। শেষ করে লেখাটাকে উল্টে পাল্টে শেষবারের মতো চোখ বুলিয়ে নিজের পারফরমেন্সে মুগ্ধ হয়ে হৃষ্টচিত্তে আমার ব্লগবাড়িতে প্রবেশ করলাম, সর্বশেষ পরিস্থিতির খবরাখবর নেয়ার জন্য। হঠাৎ ডানপার্শ্বে চোখ আটকে গেল। সেখানে লেখা, ''ব্লগ লিখেছি: ৫ বছর ১৭ ঘন্টা''। কি সর্বনাশের কথা! মেঘে মেঘে বেলা এতো গড়িয়েছে!!! ভাবলাম, দেশ ও জাতি যখন এতোদিন অপেক্ষা করতে পেরেছে, আরো কিছুদিন না হয় অপেক্ষা করুক। ত্রাতা হিসাবে তো আমি আর পালিয়ে যাচ্ছি না!! আর ক'টা দিন দেরী হলে খুব একটা ইতরভেদও হবে না। বরং এই মুহুর্তে আমার ব্লগীয় দায়িত্ব হলো, এতোবড় একটা অর্জন উপলক্ষ্যে ভালো-মন্দ কিছু কথা বলা। ''এতোবড় অর্জন'' কথাটাকে হাল্কাভাবে নেয়ার কোনই উপায় নাই। কারন, আমার জন্য এটা বড় একটা অর্জনই বটে! একটানা এতো বছর আগ্রহ সহকারে কোনকিছু নিয়ে পড়ে থাকা আমার ইতিহাসে নাই। তো এই ভাবনারই বহিঃপ্রকাশ এই পোষ্ট।
এই পাচ বছরে আমি কি পাইলাম, আর কি হারাইলাম……..তার দিকে একটু নজর ফেরানো যাক।
পাইলামের বৃত্তান্ত পরে; আগে সংক্ষেপে দেখি, কি কি হারাইলাম। ডাকটিকেট সংগ্রহ আমার ছোটবেলার শখ যেটাকে আমি এই বুড়া বয়সেও ধরে রেখেছি। আগে এটাতে প্রচুর সময় দিতাম। ডাকটিকেট সংক্রান্ত প্রচুর কাজ জমে গিয়েছে, কিন্তু শেষ কবে আমি এতে সময় দিয়েছি, মনেই করতে পারছি না। আমার আরেকটা নেশা ছিল, অনলাইনে বিভিন্ন দেশের খেলোয়াড়দের সাথে নিয়মিত দাবা খেলা। এটা তো এখন একেবারেই বন্ধ। এমনিতেই অসামাজিক হিসাবে বন্ধুমহলে আমার একটা সুনাম আছে, আর এখন বন্ধু-বান্ধব কমতে কমতে এক ক্রিস ছাড়া আর কেউ অবশিষ্ট নাই। শুধুমাত্র সুমনাভাবীদের বাসায়ই যা একটু যাওয়া হয়। একসময়ে উইক-এন্ডগুলোতে পাবে প্রায়ই যেতাম। শরাব পান বন্ধ করে দেয়া, আর ব্লগে সময় দেয়া শুরু করার পর সেটাও বেশ অনেক বছর ধরে একেবারে বন্ধ। অরেকটা শরমের কথা না বললেই না, সেটা হলো বউয়ের ভালোবাসা বেশ খানিকটা হারিয়েছি। আমার বউয়ের ভাষ্যমতে সামু তার একটা সতীনের নাম!!!!
এবার অর্জনগুলো দেখি।
প্রথমেই একটা কথা বলে নেই। নিজেকে জানার জন্য আপনার এখন ডেল কার্নেগী পড়ার দরকার নাই। আপনি কি, সেটা আপনি না জানলেও ব্লগে কিছু মহান ব্যক্তি আছেন যারা জীবনে আপনাকে না দেখেও বলে দিতে পারবে, আপনি কে এবং কি। ঠিক এমনিভাবেই ব্লগে লেখালেখি শুরু করার আগে আমি যে জামাত-শিবির-রাজাকার, এটা একেবারেই অজানা ছিল। এখন জেনেছি। আরো জেনেছি, আমি ব্লগের সবচেয়ে বড় মাস্তান গ্রুপের একজন সন্মানীত সদস্য। ব্লগের একটা অন্যতম সিন্ডিকেটেরও সদস্য। আর হালে এক ব্লগারের সৌজন্যে জেনেছি, আমি একজন ভন্ড, বেয়াদপ (বেয়াদব হবে আসলে, উনার বানানের দিকে নজর দেয়া উচিত) এবং ফালতু লোক। আমার ভাষা বস্তির ভাষা। মানসিকতা অত্যন্ত নীচু। আমি সবসময়ে ভালোমানুষের মুখোশ পড়ে থাকি, কিন্তু আদপে আমি একটা অতি দুষ্ট লোক এবং ব্লগের জন্য ক্ষতিকর! তবে সান্তনা এই যে, এই বিশেষণগুলোতে আমি একা ভুষিত হই নাই। আমার কিছু সঙ্গী-সাথীও আছে!! ডুবলে একা ডুববো কোন দুঃখে!!!
কপাল ভালো যে, আমার বউ ব্লগের ব্যাপারে খুব একটা উৎসাহী না। মন চাইলে সে কালে-ভদ্রে ব্লগে আসে আমার পোষ্ট পড়তে। আমার উপর প্রয়োগ করা এই বিশেষণগুলো ওর নজরে যদি পড়তো, তাহলে আমার ব্লগিংয়ের দফা-রফা হয়ে যেতো তখনই। বিষয়টা আরেকটু পরিস্কার করি। আমার বউ আম্মার একজন চর হিসাবে কাজ করে। আর এই কাজে সে মোসাদের চাইতেও বেশী দক্ষ। আমার যে কোনও খবরাখবর আমি জানানোর আগেই আম্মা সব সময়ে জেনে যান। এদিকে আম্মার ব্লগ বিষয়ে ধারনা বেশ খারাপ। আমি ব্লগিং করি, সেটাও উনি জানেন না। আমার বউ আমার এই ব্লগিংকে খুব একটা সুনজরে না দেখলেও সংসারের বৃহত্তর স্বার্থে মেনে নেয়। আমার কাতর অনুরোধেই এই বিষয়টা সে আম্মার কাছে এখন পর্যন্ত গোপন রেখেছে। এসব দেখলে সে এই সুযোগ হেলায় হারাবে না; আর আম্মা যদি উনার কীর্তিমান সুযোগ্য ছেলের এই অর্জনগুলো একবার জেনে যান, তাহলে কি হবে বুঝতেই পারছেন। আম্মার কঠিন কোন আদেশ অবহেলা করার সুযোগ এই বয়সেও আমার নাই, সেই ইচ্ছাও নাই।
যাই হোক, মাস্তান গ্রুপের বিষয়টা আমি ঠিক পরিস্কার না; যিনি বলেছেন তিনি বিষয়টা পরিস্কারভাবে ব্যাখ্যা করেন নাই। আমিও জিজ্ঞেস করার সাহস সঞ্চয় করতে পারি নাই। এটা আমার জন্য দুর্ভাগ্যজনক, কারন একটা বিশেষজ্ঞ মতামত পেতে পেতেও হারিয়েছি। তবে সিন্ডিকেট নিয়ে দু'টা কথা বলি। আমাদের দেশে সিন্ডিকেট শব্দটাকে মূলতঃ নেতিবাচক অর্থে ব্যবহার করা হয়। সিন্ডিকেটেড ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের স্বার্থে সকল সময়ে একসাথে কাজ করে। এবং সাধারনভাবে এই কাজগুলো ক্রাইম-রিলেইটেড হয়ে থাকে। আমাদের এই ব্লগের কতিপয় ব্লগার, যাদের ন্যায়-অন্যায় বোধশক্তি কম কিংবা রহিত, তারা তাদের করা অন্যায় কাজগুলোর প্রতিবাদকারীদেরকে এই ট্যাগে ট্যাগাইতো করে থাকে। এটা ব্লগের অত্যন্ত পুরানো একটা প্র্যাকটিস। এখন নিজের ঢোল নিজে তো পেটাতে পারি না! বরঞ্চ আমি আসলেই কোন মাস্তান গ্রুপ বা সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত কিনা, সেটা বিবেচনার ভার সন্মানীত ব্লগারদের উপরেই ছেড়ে দিলাম।
অনেক কথা যেহেতু বললামই, মনের মধ্যে ঘুরপাক খাওয়া আরেকটা কথা বলে ফেলি। অন্যায়ের প্রতিবাদ করে আমার দেয়া পোষ্টগুলোকে ক্যাচাল পোষ্ট বলা হয়। ইনফ্যাক্ট, কথাটা এই ধরনের যে কোনও পোষ্টের ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করা হয়। এটা নিয়ে আসলে তেমন কিছু বলার নাই। এগুলো হলো বুদ্ধি-প্রতিবন্ধী মানুষের শব্দ-চয়ন। অন্যায়ের প্রতিবাদকারীদেরকে ক্যাচালবাজ হিসাবে আখ্যায়িত করাও পুরানো কালচার। আমাদের সরকার বাহাদুরও তাদের আমলা-কামলাদের কৃত অন্যায়ের প্রতিবাদকারীদেরকে ক্যাচালবাজ হিসাবে চিহ্নিত করে থাকে, আর এদেরকে শায়েস্তা করার জন্য আইনে বিভিন্ন ধারা-উপধারার প্রচলন করে থাকে। অন্যায়ের প্রতিবাদ বন্ধ করার এই যে অপচেষ্টা, এটা কোন সুস্থ চিন্তাধারার মানুষ করতে পারে না, করা উচিতও না।
মেইন ডিশ আর সাইড ডিশের মতো আমার মেইন অর্জনগুলো আপনাদের জানালাম। এবারে ব্লগের সাইড অর্জনগুলো সম্পর্কে কিছু কথা বলি। অনেকে হয়তো বলবেন, এগুলোই তো মূল অর্জন হওয়া উচিত!! তবে আমি উনাদের এই মনোভাবের তেব্র পরতিবাদ জানিয়ে আমার সাইড অর্জনগুলোতে আলোকপাত করছি।
ব্লগে আসার কারনেই আমি চমৎকার চমৎকার কিছু ব্লগার তথা মানুষের সাথে পরিচিত হতে পেরেছি। এ্যনোনিমাস ব্লগিংয়ের বাধ্য-বাধ্যকতা না থাকলে দেশে গিয়ে এনাদের সাথে দু'দন্ড বসে চা খেতে খেতে রাজা-উজীর মারার প্রিভিলেইজ নিতে পারতাম। আমার ফাটা কপাল…….সেটা সম্ভবপর হয়ে উঠে না। তবে বেচে থাকতে থাকতে যদি কোনদিন ব্লগিং বন্ধ করি, আমি নিশ্চিতভাবেই এই ইচ্ছাটা পূরণ করবো। ব্লগে ফিচার বা আর্টিকেলধর্মী লেখা আমি দিতে যেমন পছন্দ করি, তেমনি পড়তেও পছন্দ করি। সবচেয়ে বড় কথা, এই ধরনের একটা লেখা লিখতে গেলে বিষয়টা নিয়ে বেশ পড়াশোনা করতে হয়। সেটা যেমন লেখার প্রয়োজনে, তেমনি সম্ভাব্য মন্তব্য কিংবা আক্রমনকে মোকাবেলা করার প্রস্তুতির জন্য। কারন, ব্লগে যেনতেন একটা কিছু লিখে পার পাওয়া মুশকিল। এই ব্যাপারটাকেই আমি অনেক উপভোগ করি। আর অন্যদের লেখা পড়ে তো বহুকিছু জানা সম্ভব, যেটা আজকালকার সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে পাওয়া কঠিন। সবমিলিয়ে একটা কোয়ালিটি সময় কাটানোর মাধ্যম হিসাবে ব্লগের তুলনা ব্লগই! এটাই আমার এখনকার আড্ডাস্থল। পরিবারের বাইরের পরিবার!!
এই সুযোগে একটা প্রসঙ্গ নিয়ে সংক্ষেপে কিছু কথা বলেই আমার লেখাটার ইতি টানছি। ব্লগে আমার দেখা একজন অতি চমৎকার ব্লগার হলেন করুণাধারা। দারুন সব লেখা তিনি আমাদের উপহার দিয়েছেন। উনার গঠনমূলক মন্তব্য যে কোনও পোষ্টে তাৎক্ষণিক প্রাণ সঞ্চার করে। সেই উনি কিছুটা ত্যক্ত-বিরক্ত হয়েই এক মন্তব্যে ব্লগ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। জানা মতে, করুণাধারা আপা একটা পারবারিক দুঃসময় পার করছেন। এমন সময়গুলোতে মন এমনিতেই দূর্বল থাকে। অনেক কিছুই সহ্য করা কঠিন হয়ে পড়ে। আপাকে অনুরোধ করবো, ব্লগ ছাড়ার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেন। আমি জানি, ব্লগ তথা আমাদেরকে ছেড়ে থাকার মতো কঠিন হৃদয় আপনার নাই। কয়েকটা দিন ব্লগ থেকে দুরে থাকতে পারেন, তবে বেশীদিন না। তাহলে এটার আকর্ষণ হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর মডারেশান প্যানেলের উপর ভরসা রাখেন। বিভিন্ন কারনে উনাদের সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগতে পারে। একজন প্রফেশনাল হিসাবে এসব তো আপনার জানার কথা। আপনি আমাদের মনে দুঃখ দিবেন না, এই আশা করা কি খুব অন্যায় হবে? এখন সিদ্ধান্ত আপনার।
আপনারা যারা এই পর্যন্ত পড়েছেন, তাদের ধৈর্যের প্রশংসা করতেই হয়। সময় নষ্ট করে আমার এই আজাইরা পোষ্ট পড়া চাট্টিখানি কথা না। সবাইকে ধৈর্য প্রদর্শনের জন্য অভিনন্দন। আর হ্যা, যারা যারা আমাকে আমার এই অভূতপূর্ব অর্জনের জন্য অভিনন্দন দিতে চান, দয়া করে খালি হাতে আসবেন না; নিদেনপক্ষে একটা খাম নিয়ে আসবেন। তা না হলে কিন্তু আমি পুরাই ফাস্টেড হয়ে যাবো!!!!
সবাইকে আবারও প্রাণঢালা অভিনন্দন এবং সেইসাথে খানিকটা ধন্যবাদ!! একেবারেই ফ্রী!!!!!
ফটো ক্রেডিটঃ পিক্সাবে, ফ্রী ফটো কালেকশান।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:২০