somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘৃণার কুৎসিৎ রূপ!

১৯ শে এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ১২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সুইডেন। একটা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের দেশ। এই দেশটাই অশান্ত হয়ে উঠেছে একজন বর্ণবাদী ঘৃণিত ব্যক্তির কারনে। সে ঘোষনা দিয়ে মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন পোড়াতে চেয়েছে এবং পুড়িয়েছে। ঘটনা সবাই জানেন, তাই বিস্তারিততে গেলাম না। এই লোক, অর্থাৎ রাসমুস পালুদান আগামী সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য সংসদ নির্বাচনে অংশ নিবে। বস্তুতঃ এই কারনেই মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকার জন্য সে এই ঘৃন্য পথ বেছে নিয়েছে। নিজের লাভের জন্য এই ধরনের লোকেরা নিজের দেশের শান্তি বিনষ্ট করতেও পিছপা হয় না।

এই প্রসঙ্গে ২০১৯ এর একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল। আমাদের পাশের শহরে একটা বিশ্ববিদ্যালয় আছে। সেখানে উপমহাদেশের অনেক শিক্ষার্থী পড়তে আসে। এরা শান্তিপূর্ণভাবেই সহাবস্থান করে। কোন এক ঘটনায় তর্কাতর্কিতে এক পাকিস্তানী ছাত্র এক বাংলাদেশের ছাত্রকে ''গাদ্দারের বাচ্চা'' বলে গালি দেয়। এই ছাত্র প্রায়শঃই বাংলাদেশ সম্পর্কে আজেবাজে কথা বলতো। এই গাদ্দারের বাচ্চার শানে নুযুল হলো, ১৯৭১ এ তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তান ভারতের সাথে যোগসাজশের মাধ্যমে পশ্চিম-পাকিস্তানের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে, পাকিস্তানের অখন্ডতা বিনষ্ট করে। তো, এই গালি সহ্য করতে না পেরে আমাদের দেশী ছাত্র তার চাইতে সাইজে দেড়গুন বড় পাকি'র নাকে ঘুষি মেরে বসে। এই ঘটনা সেখানেই থামে নাই। উভয় দেশের কমিউনিটি এতে জড়িয়ে পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিসিপ্লিনারী কমিটি সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ছড়ানোর দায়ে ওই পাকি ছাত্রের ছাত্রত্ব বাতিল করে দেশে পাঠিয়ে দেয় আর মারামারির জন্য বাংলাদেশী ছাত্রকে জরিমানা করে। একজন বাংলাদেশী হিসাবে আমিও এতে জড়িয়ে পড়েছিলাম। ওই ছাত্রের জরিমানার টাকা আমাদের কমিউনিটিই পরিশোধ করেছিল। তাই ঘটনার বিস্তারিত আমার মনে আছে।

স্থান-কাল-পাত্র হিসাবে এই দুই ঘটনা আলাদা হলেও এক জায়গাতে এর মিল আছে। দু'টাতেই ঘৃণা ছড়ানো হয়েছে। একটাতে ধর্মের নামে, আরেকটাতে দেশ বা সম্প্রদায়ের নামে। দু'টা ঘটনাতেই ভুক্তভোগী/ভোগীরা প্রতিবাদ করেছে। সেটা এক পর্যায়ে সহিংসতায় রূপ নিয়েছে আর এর ফলে দিনশেষে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে মানবতা।

সুইডেনের মুসলমানদের করনীয় কি ছিল? তারা ভাবতে পারতো, ওই হারামজাদা কোরান পোড়াতে চাচ্ছে, পোড়াক! আমার কি? আমার চলাফেরা, চাকুরী-বাকুরি কিংবা খাওয়া-দাওয়াতে তো কোন সমস্যা হচ্ছে না। আমি কেন হুদাই ঝামেলায় জড়াতে যাবো? না, তাদের অনেকেই তা ভাবে নাই। ধর্মের কোন ধরনের অবমাননা তারা সহ্য করে নাই। তারা প্রতিবাদ করেছে। আর যে কোনও প্রতিবাদই একলাফে সহিংসতায় রূপ নেয় না। নেয় ধাপে ধাপে। এই সহিংসতার দায়ভার কার? সূত্রপাত কে বা কারা করলো?

ওই বাংলাদেশী ছাত্রও ভাবতে পারতো, আমি পড়তে এসেছি, পড়ালেখাতেই মনোযোগ দেই। ওই শুয়োর আমার জাত তুলে গালি দিয়েছে, দেক না! ওরই পাপ হবে। আমি কেন মারামারির ঝামেলায় জড়িয়ে আমার আখের বরবাদ করতে যাবো? সেও এমনটা ভাবে নাই। তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। বুঝিয়ে দিয়েছে, দেশ বা জাতি সংক্রান্ত যতো সমস্যাই আমাদের থাকুক না কেন, এই বিষয়ে ভিনদেশী কোন ঘৃণামূলক কর্মকান্ড বা বক্তব্য আমরা একেবারেই সহ্য করি না।

একটা সমাজে চলতে গেলে কিছু সামাজিক রীতি-নীতি মানতে হয়। তার মধ্যে অন্যতম হলো, পরমতসহিষ্ণুতা। তবে এর মানে এই না যে, মতের স্বাধীনতার বহিঃপ্রকাশ হিসাবে কারো বাবা-মা, ধর্ম, সামাজিক স্ট্যাটাস ইত্যাদি তুলে আজেবাজে কথা বললাম। আর আশা করলাম যে, অন্য পক্ষ সহিষ্ণুতা দেখাবে!

আমাদের এই ব্লগটা কি এর বাইরে? এখানে সবাই শান্তিতে ব্লগিং করতে আসে। যে যার পছন্দ অনুযায়ী পোষ্ট দেয়। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই মন্তব্যের সুবিধা উন্মুক্ত থাকে। কেউ চাইলেই যুক্তিসঙ্গত আলোচনা-সমালোচনা করতে পারে। আর কারো যদি কোন কিছু একেবারেই পছন্দ না হয়, এড়িয়ে যাওয়ারও সুযোগ আছে। এখন কেউ যদি ক্রমাগত উস্কানীমূলক পোষ্ট দিতে থাকে, অপমানজনক অশালীন ভাষায় মন্তব্য করতে থাকে; তাহলে ঠিক কতোক্ষণ পর্যন্ত আপনি সেটা সহ্য করবেন? কোন সহ্য-মিটার বা ব্লগীয় নীতিমালায় কোন সীমারেখা কি আছে?

আসলে দেশ-কাল ভেদে কোন মানুষই ঝামেলায় জড়াতে চায় না। একজন ধার্মিক হিসাবে ধর্মীয় অবমাননা, দেশ বা জাতির অংশ হয়েও এই সংক্রান্ত অপমান আমরা, মানুষেরা অনেক সময়েই অবলীলায় হজম করে যাই। কিন্তু সব সময়ে কি পারি? নাকি পারা উচিত? যাদের মনে এই ধরনের ঘৃণার বিষবাস্প জমা হয়, তারা প্রতিনিয়ত সেটার উদগীরণ ঘটাতে থাকে। কতোক্ষণ আপনি সহ্য করবেন? আপনি যতো সহ্য করবেন, তারা ততোটাই উৎসাহিত হবে। কারন, ঘৃণা যারা ছড়ায় তাদের প্রকৃত শিক্ষার অভাব রয়েছে। তাদের যেটা আছে, সেটা হলো সার্টিফিকেট নির্ভর কু-শিক্ষা। অন্যের মত, পথকে সন্মান জানানোর যে মহত্ব আর উদারতা; এটার উপলব্ধিই এদের নাই। এদের কাছে অশালীন কথা, অন্যকে আঘাত করতে পারা এসব এক ধরনের বীরত্ব। নিজেকে জাহির করার একটা মাধ্যম। এর মনস্তাত্বিক বিভিন্ন বিশ্লেষণ কিংবা পর্যালোচনামূলক গবেষণা সমাজবিজ্ঞানীগণ প্রতিনিয়তই করে যাচ্ছেন। তবে, সে অন্য আলোচনা; আরেকদিনের জন্য তোলা থাক। মূল কথা হলো, ঘৃণা ছড়িয়ে, অশালীন কথা বলে, অন্যের বিশ্বাসে আঘাত দিয়ে এরা একধরনের বিকৃত বিমলানন্দ ভোগ করে।

সুতরাং সুশীল ভাব না ধরে এর প্রতিবাদ করা সবার দায়িত্ব। এটা করা দরকার আমাদের এই প্ল্যাটফর্মের সুন্দর একটা স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থেই। সব সময়ে না পারেন, মাঝে-মধ্যে তো করতে পারেন! আর যদি ভাবেন, আমার লাইক-মন্তব্য-ভিউতে তো কোন সমস্যা হচ্ছে না। আমি কেন হুদাই প্রতিবাদ করে ঝামেলায় জড়াতে যাবো, তাহলে অবশ্য আমার বলার কিছুই নাই!!

ভালো থাকবেন সবাই। আদিওস!!!


ছবিসূত্রঃ ইন্টারনেট।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ১২:৪৫
৩৯টি মন্তব্য ৩৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×